আব্দুর রশীদ তারাপাশী (কুতায়বা আহসান) ::
মাদরাসা কি?
আমাদেরকে সর্বাগ্রে জানতে হবে মাদরাসা কি? একটি দ্বীনী মাদরাসার মান ও মর্যাদা কতটুকু?
মাদরাসা একটি নির্মাণাগার, যেখানে মানুষ এবং মানবতা তৈরির কাজ করা হয়। যেখানে দ্বীনের দাঈ এবং অকুতোভয় সিপাহী তৈরি করা হয়। মাদরাসা এমন এক পাওয়ার হাউজ, যেখান থেকে কুল বিশ্ব তথা সমগ্র মানবজগতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। মাদরাসা এমন একটি ফ্যাক্টরি, যেখানে মন-মস্তিষ্ক এবং চিন্তা-চেতনা গঠন করা হয়। মাদরাসা এমন একটি ক্যালকুলেটর, যেখান থেকে সারা বিশ্বের হিসাবের খতিয়ান টানা হয়। মাদরাসার সম্পর্ক বিশেষ কোনো সভ্যতা, বিশেষ কোনো জাতীয়তা কিংবা বিশেষ কোনো সংস্কৃতির সাথে নয়, যার ফলে তার মধ্যে লয়-ক্ষয়ের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে; বরং মাদরাসার সম্পর্ক সেই চিরন্তন নবুওতে মুহাম্মদীর সাথে যার তারুণ্য সদা রসময়। যার দ্বীপ্তি সর্বদা সমুজ্জল।
মাদরাসাকে কোনো পুরাকীর্তির নিদর্শন তথা যাদুঘর বলার চেয়ে আপত্তিকর আর কোনো শব্দ হতে পারে না। এহেন উক্তি জোরপূর্বক মাদরাসার সুপ্রতিষ্ঠিত মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করার শামিল। অপরাপর প্রতিষ্ঠানসমূহের মোকাবেলায় মাদরাসা হচ্ছে প্রাণবন্ত, যুগোপোযোগী ও শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান। মাদরাসা জীবনের কৃষিক্ষেত্রে নবুওতে মুহাম্মদীর ঝর্ণাধারা থেকে জল সিঞ্চন করে থাকে। মাদরাসা যদি তার কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তাহলে জীবন অচল হয়ে পড়বে। জীবনের চারা-গাছ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। মানুষের পিপাসা যেমন নিবৃত্ত হবার নয়, তেমনি নবুওতে মুহাম্মদির ঝর্ণাধারাও শুকিয়ে যাবার মতো নয়। মাদরাসা কখনো তার জিম্মাদারী থেকে অবসর নিতে পারে না। মাদরাসা যদি তার দায়িত্ব থেকে বিমুখ হয়ে যায়, তাহলে মানবতাকে পয়গামে মুহাম্মদী কে শোনাবে? জীবনের চিরন্তন গীতি কে গাইবে?
মাদরাসার তালাবা ফুযালাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
মাদরাসা কেবল কোনো অবকাঠামোর নাম নয়। মাদরাসা হচ্ছে মুয়াল্লিম আর আর মুতাআল্লিমদের সহাবস্থানের নাম। এখানে প্রত্যেকের কিছু কিছু আলাদা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
মাদরাসার ছাত্রদের দায়িত্ব খুবই ব্যাপক। তাই তাদের মর্যাদাও সীমাহীন উঁচু। দুনিয়ার কোনো জাতির বা সোসাইটির এত বড়, এত ব্যাপক, এত স্পর্শকাতর দায়িত্ব আছে বলে আমাদের জানা নেই। স্মরণ রাখবেন, মাদরাসার মুতাআল্লিমদের একটি প্রান্ত জীবনের সাথে অপর প্রান্ত নবুওতে মুহাম্মদির সাথে শৃঙ্খলিত। নবুওতে মুহাম্মদীর সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে অর্পিত দায়িত্বটা যেমন সুমহান তেমনি বিশাল বিস্তৃত। মাদরাসার ছাত্রদের উপর যে দায়িত্বগুলি বর্তায় সেগুলোর অন্যতম কয়েকটি হলো, তাদের মধ্যে দৃঢ়বিশ্বাস আর পরিপূর্ণ ঈমান থাকতে হবে। এই সৎসাহস ও উদ্দীপনা থাকতে হবে যে, যদি সারাটা দুনিয়াও হাতের মুঠোয় এসে পৌঁছায় তবুও এ কাজ থেকে একটু সরে যাবার প্রশ্নও দেখা দিতে পারে না। মাখলুককে সহায়তা করার জযবা সর্বক্ষণ অন্তরে তরঙ্গায়িত থাকতে হবে। জবান সবসময় এ অমূল্য সম্পদের শুকরিয়ায় সজীব থাকতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অন্তরে সর্বদা সত্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, সর্বকালীনতা, সর্বকালীন গ্রহণযোগ্যতা, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে মজবুত বিশ্বাস থাকতে হবে। বিপরীতে বস্তুজগতের প্রতিটি জিনিসকে নিঃশঙ্কচিত্তে মূর্খতা ও মূর্খতার মীরাস মনে করতে হবে। দৃঢ়তার সাথে এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, সমকালীন এ নূহীয় প্লাবনে কিশতিয়ে নূহ হচ্ছে একমাত্র মাদরাসা শিক্ষা।
এ প্রত্যয়ও রাখতে হবে যে, সমাজ এবং ব্যক্তির উন্নতি আর প্রগতির উৎসমূল হচ্ছে নবুওতে মুহাম্মদীর নিঃশর্ত আনুগত্য। এর মোকাবেলায় দুনিয়াবী বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যাসহ যাবতীয় মাধ্যমকে কল্পকাহিনী আর অর্থহীন প্রলাপ হিসেবে শুমার করতে হবে। মাদরাসার ছাত্রদেরকে তাওহীদের বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে। বিদআতকে গোমরাহি এবং যাবতীয় অনিষ্টের মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে হবে। সমাজে যেন বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট
দুনিয়ার অপরাপর জাতি এবং অপরাপর জ্ঞান অন্বেষুদের জন্যে উপরোক্ত মৌলিক বিষয়াবলীতে ভাসা ভাসা জ্ঞান থাকলেই চলবে; কিন্তু মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস হতে হবে সন্দেহ ও বর্ণনাতীত। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের শুধু দাবিদার হলেই চলবে না; বরং প্রচারকও হতে হবে। অন্যান্যদের প্রজ্ঞা সমাপিকা ক্রিয়ার মতো হলেও চলবে, কিন্তু তাঁদের প্রজ্ঞা হতে হবে অসমাপিকা ক্রিয়ার মতো। তাদের একীন অন্যদের একীনকে করতে হবে পরিপুষ্ট। পৌঁছাতে হবে পূর্ণতায়। অন্যদের জ্ঞান সাধারণ পর্যায়ের হলেও চলবে, কিন্তু মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান হতে হবে পূর্ণাঙ্গ, প্রেমময় ও ফানাইয়াত পর্যায়ের।
আধ্যাত্মিক অবস্থা
এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, নবুওতে মুহাম্মদী কেবল আহকাম ও আমলের অঢেল সম্পদই রেখে যায় নি; বরং কিছু গুণাবলী, বৈশিষ্ট এবং অবস্থাও রেখে গেছে। যেভাবে প্রথম ধরনের সঞ্চয় বংশপরম্পরায় চলে আসছে আর আল্লাহ তাআলা ঐগুলি প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তেমনিভাবে দ্বিতীয় ধরনের সঞ্চয়ও বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসছে এবং আল্লাহ তাআলা ঐগুলোও হেফাজত করার ইন্তেজাম করে রেখেছেন।
ঐ গুণাবলি ও বৈশিষ্টগুলো কী? ঐগুলো হচ্ছে একীন, ইখলাস, আত্মজিজ্ঞাসা, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, আল্লাহর দিকে নত হওয়া, খুশুখুজু, দোয়া ও কান্নাকাটি, পরমুখাপেক্ষিহীনতা, দরদ, মুহাব্বত, আমিত্বত্যাগ, ও তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ।
নবুওতে মুহাম্মদী থেকে কেবল ইলম ও আমল গ্রহণ করা এবং এর গুণাবলি ও বৈশিষ্টকে বাদ দেয়া এটা অসম্পূর্ণ উত্তরাধিকার বৈ কিছুই নয়। যে সমস্ত ক্ষণজন্মা মনীষীদের মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত নবুওতে মুহাম্মদীর সওগাত এসে পৌঁছেছে, তারা কেবল একাংশের প্রতিনিধিত্ব করে যাননি; বরং তারা ছিলেন উভয় অংশের প্রতিনিধিত্বকারী।
মনে কিছু নিবেন না, আজ আমাদের মাদরাসাগুলো সেই সজীব ফুল থেকে বঞ্চিত। উপরোক্ত গুণাবলির মধ্যে দিনকে দিন কেবল অধঃপতনের ধ্বস নেমে চলছে। আমাদের বর্তমান অবস্থা সেই খেদকারী ব্যক্তির খেদোক্তি বাস্তব নমুনা। যে বলেছিল-
‘আমি মাদরাসা ও খানকাহ থেকে অবগাহন করে এসেছি; কিন্তু ওখানে জিন্দেগী, মুহাব্বাত, মা’রিফত এবং অন্তর্দৃষ্টির কিছুই খোঁজে পাই নি। অথচ ঐ গুণ থাকলে একাই একটি জগৎ পাল্টে দেয়া যায়।
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রাহ. এবং হযরত সায়্যিদ আলী হামদানীরা তো একা নিঃসম্বল অবস্থায় এসেছিলেন। কিন্তু ঈমানের প্রদীপ্ত আলো আর মানবতার প্রতি দরদ তথা হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে পুরো উপমহাদেশকে আলোকিত করে গেছেন। হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ অবস্থায় সুবিশাল সা¤্রাজ্যের মোড় পাল্টে দিয়েছিলেন। তিনি একাই চিন্তার রাজ্যে যুগান্তকারী প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছিলেন। হযরত কাসিম নানুতুবী রাহ. পতনের বেলাভূমে দাঁড়ানো নৈরাশ্যের এক আঁধারঘন যুগে দারুল উলূম দেওবন্দ নামক একটি কেল্লা গড়ে তুলে উলূমে নবুওতকে নবজীবন দান করেছিলেন।
কিন্তু হায়! আজ আমাদের মাদরাসাসমূহে উভয়দিক থেকেই পচনের শিকার। এখানে এখন না আছে চিন্তার উৎকর্ষতা, না আছে আধ্যাত্মিকতা। অথচ আজ আলেমদের সংখ্যা বিশাল, খতিব ও বক্তাদের সংখ্যা বে-শুমার।
কেন এ নির্জীব অবস্থা?
এককালে যে মাদরাসাগুলো ছিল প্রাণচঞ্চল জীবনের কেন্দ্রবিন্দু, যেখান থেকে বের হয়ে আসতেন বৈপ্লবিক সত্ত্বাসমূহ, সে মাদরাসাগুলো যেন আজ নৈরাশ্য, উদাসীনতা এবং হীনমন্যতার শিকার। অথচ আজ মাদরাসাগুলো বিল্ডিংয়ের সংখ্যায়, ছাত্র সংখ্যায়, পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যায়, গ্রন্থাগারের সংখ্যায়, বেতনের সংখ্যায় অনেক অনেকগুণ উন্নত। কিন্তু তারপরও যেন মাদরাসাগুলোর জীবনধমনিগুলো ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে মাদরাসাগুলো যেন আজ শ্বাসকষ্টে ভূগছে। আজ আমাদের মাদরাসাগুলো যে অবস্থার শিকার, কোনো প্রাণী যদি এমন অবস্থায় পৌঁছায় তাহলে তার বেঁচে থাকার কথা নয়; আর বেঁচে থাকলেও সে এই দুর্বলতায় পড়ে চিৎকার দিয়ে বলবে-
‘আল্লাহ যেন তোমাকে কোনো তুফানের সাথে মোলাকাত করিয়ে দেন, কারণ তোমার সাগর-তরঙ্গে কোনো উদ্দামতা নেই। তোমাকে কিতাব দ্বারা শান্তি অর্জন করা সম্ভব নয়, কেননা তুমি হলে কিতাব পড়–য়া, কিতাব রচয়িতা নও।’
দুনিয়ার নেতারা আজ অনুকরণের পর্যায়ে
এটা বড়ই বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক বাস্তবতা যে, আজ দুনিয়াবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যে আন্দোলন ও আবেদন, যে হাঙ্গামা ও গোলমাল, যে বিশৃঙ্খলা ও চাঞ্চল্যতা, যে সাংগঠনিক দলাদলি ও বিতর্কপদ্ধতি অগ্রহণযোগ্য ও অধঃপতনের কারণ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, আমাদের মাদরাসাসমূহে সেগুলিই নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে। আফসুস! যাদেরকে হবার কথা কথা ছিল অনুকরণীয় তারাই হচ্ছে আজকে অনুকরণপ্রিয়।
আত্মপরিচিতি এবং স্বকীয়তা
আজ মাদরাসার ছাত্রদেরকে নতুনভাবে তাদের আত্মপরিচয় জানতে হবে। শুনুন! আপনাদের কাছে রয়েছে সেই ইলম ও সেই বাস্তবতা, যেগুলো দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে উধাও হয়ে গেছে। আর ঐগুলো উধাও হয়ে যাবার কারণেই আজ সারাটা দুনিয়া তমসায় আচ্ছন্ন।
মানব জীবনের জন্য যেভাবে আহার-বিহার, পোষাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন, সেভাবে কিছুসংখ্যক মানুষ এ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। অনুরূপ জীবনের উন্নতি-প্রগতির এবং মনুষ্যত্বের শরাফতি অক্ষুন্ন রাখার জন্যও সময় সময় পয়গাম্বরী প্রভাব দ্বারা পদার্থময় এ দুনিয়া ও এর মর্যাদাকে অস্বীকার ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়ে গেছে। আজ ক্ষীণভাবে হলেও কোনো কোনো স্থান থেকে অনুরূপ আওয়াজ বের হয়ে আসছে যে, ‘তোমরা কি আমাদেরকে সম্পদের লোভ দেখাও? আল্লাহ আমাদেরকে যা দান করেছেন তা উত্তম যা তোমাদেরকে দান করেছেন তা থেকে’।
কিন্তু যেদিন এ আওয়াজও বন্ধ হয়ে যাবে তখন সারাটা পৃথিবী এক নিলামবাজারে পরিণত হয়ে যাবে। যেখানে মণি-মুক্তা, ঈমানের আলো, আর ইলমের সঞ্চয় সবকিছু একই মূল্যে বিক্রয় হতে শুরু করবে। মানুষ জড় ও প্রাণীজগতের মতো সস্তা হয়ে যাবে। সেদিন এই দুনিয়া টিকে থাকার উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলবে।
এটা জীবিকা অর্জনের রাস্তা নয়
প্রিয় পাঠক! দুনিয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে বক্তা সম্যক অবহিত, সে আপনাদের কাছ থেকে মাওলানা কাসেম নানুতুবীর যুহদ ও তাকওয়ার ষোলআনাই আদায় করতে চাইছে না। সে কেবল এতটুকুই বলতে চাইছেÑ আপনাদের পথ নিঃসন্দেহে আত্মত্যাগ, উদ্যম, বীরত্ব ও সৎসাহসের। আপনাদের পথ পার্থিব সমৃদ্ধির পথ নয়। আপনাদেরকে যে হীনমন্যতা তাকলিফ দিচ্ছে তার একটা কারণ হচ্ছে আপনারা নিজেদের সম্পর্কে অজ্ঞ। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, আপনারা দুনিয়া সম্পর্কেও অজ্ঞ। আপনারা জানেন না যে, দুনিয়া কতখানি রিক্ত, কতখানি কাঙাল, কতনা পিপাসার্ত। আপনারা দুনিয়ার প্রতি আগ্রহভরা লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। কারণ এর সাথে আপনারা আদৌ পরিচিত নন। অথচ দুনিয়া মুহূর্তে মুহূর্তে তার দেওলিয়াত্ব অনুভব করে আসছে। আপনারা আপনাদের যে দৌলতকে মামুলি মনে মনে করছেন এবং যেগুলোকে আপনারা কোনোই গুরুত্ব দিচ্ছেন না বড় বড় সুশিক্ষিত ব্যক্তিকে এর উপর মাথা কুটতে দেখা গেছে। যখনই তাদের কাছে আম্বিয়াদের বাণী বর্ণনা করা হয়েছে তখনই মনে হয়েছে যেন তাদের উপর উর্ধালোক থেকে কোনো বার্তা এসেছে। তারা এগুলোকে এমনভাবে কান পেতে শুনছে যেন কোনো দিন এমন কোনো কথা তারা শুনেনি।
আপনাদের পূর্বসূরী
আপনাদের পূর্বসূরী যারা ছিলেন তাদের মেধা ও খেদমতের জযবা কখনো কোথাও স্থীমিত হয়ে বসে থাকে নি, বা পুরাতন রীতিনীতির অন্ধ অনুসারী হয়ে বসে থাকে নি। তাঁদের হাত জিন্দেগীর জীবন ধমনীর হাত থেকে কখনো সরে যায় নি। তারা ইসলামের খেদমতের জন্য যখন যে পদ্ধতি ও উপায়কে অবলম্বনের প্রয়োজন মনে করেছেন নির্দ্বিধায় তা গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সময়টা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগ। একে এড়িয়ে যাবার কোনো পথ নেই। এর মধ্যে অনিষ্টতার অনেক কিছু আছে বলে সম্পূর্ণই যদি পরিহার করে চলা হয়, তাহলে আপনি অনেকটা পিছিয়ে পড়বেন। কারণ এটি ব্যতিত আপনি আপনার বাণী বড় জোর কয়েক মাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে আপনার বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কথা পুরো বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারছে। আজকের এই বৈপ্লবিক যুগে যারা দ্বীনের দাঈ হবে তাদের মধ্যে থাকতে হবে বহুবিদ যোগ্যতা। তাদের ইলমে নবুওতের আলোয় কেবল সমৃদ্ধ হলেই চলবে না; বরং এ দৌলতটা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাটা বিশ্বময়। সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে এর শ্রেষ্ঠত্ব। আপনারা হীনমন্যতা পরিহার করে চলে আসুন! দেখবেন, বিশ্ব আজও আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেয়া শিখেনি। আপনাদের সামনে বস্তুবাদের জ্ঞানীরা মাথা নত করতে বাধ্য।
লেখক : শিক্ষক, গলমুকাপন দারুস সুন্নাহ মাদরাসা