Saturday 4th May 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: রাত ১১:৪৬
Home / Human Rights / জর্দান থেকে অধিক হারে দেশে ফিরছে সিরীয় উদ্বাস্তুরা

জর্দান থেকে অধিক হারে দেশে ফিরছে সিরীয় উদ্বাস্তুরা

hangeri

জর্দান থেকে দেশে ফিরে যাচ্ছে সিরীয় উদ্বাস্তুরা : অর্থ সাহায্য কমে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি

কমাশিসা ডেস্ক : সিরিয়ায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে অসংখ্য সিরীয় প্রতিবেশী জর্দানে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন তারা আবার তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে যাচ্ছে। সাহায্যের অর্থ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়া, ইউরোপে ঢোকার জন্য পাচারকারীদের অর্থ দিতে না পারা অথবা স্বদেশ কাতরতাই এর কারণ। উদ্বাস্তু ও সাহায্য দানকারী কর্মকর্তারা বলেন, একদিকে ইউরোপে অভিবাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে উদ্বাস্তুদের আশ্রয়দাতা দেশগুলো ক্রমেই অধৈর্য হয়ে উঠছে।উত্তর জর্দানে জাতিসংঘ পরিচালিত জাতারি উদ্বাস্তু শিবিরে উদ্বাস্তু ৪৭ বছর বয়স্ক  আদনান বলেন, কোনো সাহায্য পাওয়া আমাদের বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি শিবির থেকে ৬ মাইল দূরবর্তী সিরিয়া সীমান্তে ফিরে যাবার জন্য তার পরিবারের সবার নাম লেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় উদ্বাস্তুদের দেশে ফেরার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জর্দানে সংস্থার প্রধান অ্যান্ড্রু হারপার বলেন, লোকজন মারাত্মক ঝুঁকি নিচ্ছে। তিনি বলেন, উদ্বাস্তুদের যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় ফিরে আসা, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এ আভাসই দেয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চার বছর পেরিয়ে এবার পাঁচ বছরে পড়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ লাখেরও বেশি লোক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে দেশত্যাগ করে নানা দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই আছে তুরস্ক, লেবানন ও জর্দানের শহর এলাকায়। তাদের কাজ করা নিষেধ, তাই সাহায্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ও নিম্নমানের কাজই তাদেও বেঁচে থাকার উপায়। তহবিলশূন্য সংস্থাগুলো, বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, সম্প্রতি তাদের সাহায্য বিপুলভাবে হ্রাস করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে জর্দানের শহর এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৫ লাখ উদ্বাস্তু ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। তবে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা ১ লাখ উদ্বাস্তু এ সর্বশেষ অর্থ কর্তনের বাইরে রয়েছে। আদনান ও তার পরিবারের বসবাস ছিল জর্দান সীমান্তবর্তী দারা প্রদেশে যেখানে ২০১১ সালে বাশার বিরোধী আন্দোলনের জন্ম হয়। তিন বছর আগে তারা দেশত্যাগ করে। তারা দারার প্রাদেশিক রাজধানী থেকে কয়েক মাইল দূরে জর্দানের রামছা শহরে এসে আশ্রয় নেয়।খাদ্য সাহায্য প্রাপ্তির ভিত্তিতে আদনানের ১২ জনের পরিবারের আহারের সংস্থান হতো। পরিবারের বড় দু’ছেলে বাজারে সবজি বিক্রি করত। তারা ২৫০ ডলার বাড়ি ভাড়া দিত। ২ মাস আগে আয়ের সব উৎস শুকিয়ে যায়। বড় দু’ছেলে, ১৪ বছর বয়সী ভাই ও একটি বোন ইউরোপে পাড়ি জমায়। তাদের ২ জন এখন সুইডেনে ও ২ জন এখনো তুরস্কে রয়ে গেছে। এদিকে পরিবারের বাকিদের খাদ্য সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে। আদনান বলেন, কোনো টাকা-পয়সা নেই। তিনি বাকি ছেলেদের যত দ্রুতসম্ভব ইউরোপ পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু এর জন্য হাজার হাজার ডলার দরকার। একটি সিরীয় পাসপোর্ট করতে লাগবে ৪শ’ ডলার। তাহলে ভিসা ছাড়া তুরস্কে যাওয়া যাবে। এর সাথে আছে বিমান ভাড়া এবং পাচারকারীদের প্রদেয় টাকা। আদনান বলেন, তার পরিবারে এখন আছে তার মা, তার স্ত্রী, ৬ বছরের এক ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও দুই নাতনি। তাদের জন্য টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।তিনি এখন তার গ্রাম সিল-এ ফিরে যাচ্ছেন। সেখান থেকে স্থলপথে তুরস্ক যাবার চেষ্টা করবেন। এ পথ পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে তাকে বললে তিনি বলেন, কিছু করার নেই।জাতিসংঘ শিবিরের নিবন্ধন অফিসার কুসাই তানাশ আদনানের স্ত্রীকে বলেন, ইউরোপ যাওয়ার পথ অত্যন্ত কঠিন। তিনি তাদের জর্দানে থেকে যাওয়ার আহ্বান জানান।২১ বছর বয়স্ক উদ্বাস্তু খালেদ বলেন, তিনি সিরিয়ায় থাকবেন। তিনি বলেন, আমার পরিবার দেশে রয়েছে। জর্দানি কর্তৃপক্ষ তার মাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তারা যদি তাকে প্রবেশ করতে দেয় তাহলে আমি সিরিয়া ফিরে যাব না।  সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যত উদ্বাস্তু আসছে ফিরে যাচ্ছে তার অনেক বেশি। আর এটা ক্রমেই বাড়ছে।   জাতারি শিবিরের পরিচালক হোভিক এতিমেজিয়ান বলেন, জর্দানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৭৫ জন সিরীয় উদ্বাস্তু আসছে। এর কারণ তাদের প্রবেশ করতে দেয়ার জর্দানি প্রক্রিয়া। সম্প্রতি আসা কয়েকজন উদ্বাস্তু বলেন, জর্দানে প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার আগে তাদের কয়েক হাজার লোককে মরুভূমির প্রত্যন্ত এলাকায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। জর্দান বলেছে, নতুন আগতদের পরিচয় যাচাই করতে একটু সময় লাগে। তারা সীমান্তে উদ্বাস্তুদের প্রবেশে অসুবিধা সৃষ্টির কথা অস্বীকার করেন। হারপার বলেন, দেড় বছরের মধ্যে আগস্ট মাসে ৩৮৫৩ জন উদ্বাস্তু দেশে ফিরে গেছে। দেড় বছরের মধ্যে এটাই হলো বৃহত্তম সংখ্যা। সেপ্টেম্বরে
আগস্টের চেয়ে কম লোক ফিরে গেছে। এটা পরিষ্কার নয় যে, কতজন উদ্বাস্তু সিরিয়ায় থেকে যাবার আর কতজন সেখান থেকে সুযোগ মতো চলে যাবে। কেউ কেউ বলেছে তারা দেশে গিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে ইউরোপে চলে যাবে। আাবার কেউ কেউ দেশেই থেকে যেতে চায়।আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানায়, আম্মান থেকে বিমানে তুরস্কে গমনের সংখ্যা বেড়েছে। জুনে তা ছিল ৪৫, জুলাইতে ১৫০ ও আগস্টে ৪৮০ জন। অন্যদিকে এ বছরের জানুয়ারি থেকে  আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার সিরীয় উদ্বাস্তু পূর্বদিকের সাগরপথ দিয়ে গ্রিসে পৌঁছেছে। অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকা থেকে ৭ হাজার উদ্বাস্তু ইতালি গিয়েছে। সংস্থা বলে, সব মিলিয়ে সাগরপথে ইউরোপে যাওয়া উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৪ হাজার। তুরস্ক ও লেবানন থেকে উদ্বাস্তুদের অন্যত্র গমনের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। গত বছর ৯৪ হাজার উদ্বাস্তু সিরিয়া থেকে তুরস্কে যায়। তবে কোবানি থেকে আইএসের বিতাড়িত হওয়ার পর তাদের প্রায় অর্ধেক লোক ফিরে এসেছে। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা বলে, তাদের ধারণা তুরস্কে প্রায় ২০ লাখ সিরীয় রয়েছে।

তাদের বসবাসের অবস্থা জর্দান ও লেবাননের চেয়ে ভালো। লেবাননে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা জানুয়ারির পর ১০ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার হ্রাস পেয়েছে। তারা কোথায় গেছে তা কেউ বলতে পারে না। প্রতিদিন শত শত উদ্বাস্তু ইউরোপের উদ্দেশে লেবানন ত্যাগ করে তুরস্ক যায়। জর্দানে আসা সিরীয় উদ্বাস্তুদের অনেকেই দারা অঞ্চলের। সেখানে বিদ্রোহী অধিকৃত এলাকার উপর সরকারী জঙ্গি বিমান হামলা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ প্রত্যাবর্তনকারীদের সাথে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো নয়।এতিমেজিয়ান বলেন, জর্দানের জাতারি শিবির থেকে একটি পরিবার দারার একটি গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে ছয়মাস কোনো বোমা ফেলা হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন পর গ্রামটির ওপর বোমাবর্ষণ করা হয় এবং ফিরে আসা লোকেরা আহত হয়।

সুত্র: ইনকিলাব

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...