সংগ্রহে: জুলফিকার মাহমুদি
এক.
ঝৃতু সমুহের পরিবর্তন যদি পোষাক পরিচ্ছদ ও খাদ্য দ্রব্যাদির পরিবর্তন সাধন করিতে পারে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও পৃথিবীর নানা প্রান্তরে প্রাকৃতিক অবস্থার বিভিন্নতা যদি অধিবাসীগনের জীবন ব্যবস্থা ও রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলিতে পারে – বৃহত্তর ও জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান ভান্ডার হইতে যদি নিত্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যাইতে পারে, সংক্ষিপ্ত টিকা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত উপকারী নোট ও শরাহ সমুহের ব্যপক প্রচলন যদি প্রাচিন লেখক গনের সম্পুর্ন প্রমান্য গ্রন্থ স্থান দখল করার প্রথা আকাবিরীন যুগ হইতে চলিতে পারে তাহা হইলে বর্তমানে ইহাতে অসুবিধার কিছু নাই যে আমরা ভারতবর্ষে স্থান ও কালের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাচিনতাকে এড়াইয়া যাইব এবং প্রয়োজনিয় ও লাভ জনক জরুরী বিষয়ের উপর লিখিত গ্রন্থাবলীকে পাঠ্যসুচির অন্তরভূক্ত করিব। যে গুলি পুরাতন পাঠ্যসূচির কিতাবাদী হইতে তুলনা মূলক ভাবে ফায়দা পৌছানোর ক্ষেত্রে উন্নতমানের অধিকারী। আমরা কোন ক্রমেই এহেন ধ্যান ধারণা ও কর্ম পদ্ধতি কে যোগ্য কর্ম পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারিনা যে প্রাচীন কালের কিতাবাদী কেবল পুর্ব পুরুষদের লিখিত অথবা তাহাদের দ্বারা রচিত বা পঠিত হইত বলিয়াই এখনো প্রয়োজনীয় ও গ্রহনীয় হইতে হইবে। আর ইদানিং কালের কিতাবাদী শুধুমাত্র বর্তমান যোগে অথবা স্বল্প দিন পুর্বে রচিত কিংবা পুর্ব পুরুষগন ঐ সব অধ্যায়ন করেন নাই, এই কারণে এই অজুহাতে পরিত্যাক্ত হইবে। রাসুল আকরাম স. হাদিস এ কথার প্রসিদ্ধ দলিল ও স্বীকৃতি বহন করে যে হুজুর স. যায়েদ ইবনে হারিস কে ইবরানী ভাষা শিক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর অনারব রাষ্ট্র কর্তৃক শীল মোহর ব্যতিত চিঠি গ্রহন না করার কারণে রাসুল ই করিম স. কেও শীলযুক্ত আংটি প্রস্তুত করিতে হইয়াছিল। সুতরাং বর্তমান যুগের ঘটনা প্রবাহের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আমাদের কে ও নানা ভাষা ও বিষয়ের জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান দান করিতে হইবে। এ ক্ষেত্রে শিতিলতা প্রকাশকরা মোটেই সঠিক হইবে না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, জীবিকার্জনের প্রয়োজনীয়তা তথা পৃথিবীর জাতি গোষ্ঠী সমূহের রুসম ও রেওয়াজ সর্বোপরি তাহাদের শিক্ষাদিক্ষা ইত্যাদি বিষয় বস্তু সর্ম্পকে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। শিক্ষার্থীদের কে সমূহ বিষয়াবলি ও শাখা প্রশাখার ধারক ও বাহক বানাইয়াদেওয়া কোন সিলেবাসের উদ্দেশ্য নহে। বরং এমন এক যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ করিয়া দেওয়া যা দ্বারা সে যে কোন বিষয়ের উপর পূর্ণ যোগ্যতা ও পারদর্শিতা অর্জনে সক্ষম হইবে। যাহাতে কর্মময় জিবনে কোন অনুসুচনা ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।
দুই.
সিলেবাসের মূলনীতি কেমন হওয়া চাই :
১. সিলেবাসে দ্বীন শিক্ষা ও আরবী বিষয় সমূহকে অত্যান্ত গুরুত্ব দিতে হইবে। ভাষা শিক্ষার প্রতি লক্ষ রাখিতে হইবে। নিজ ভাষাকে মাতৃভাষা হিসাবে, আরবী কে ধর্মী ভাষা হিসাবে ও ইংরেজীকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে গুরুত্ব দিতে হইবে। ইংরেজী কে অবহেলা করিলে চলবেনা। যেহেতু ব্যবসা বানিজ্যে সারাবিশ্বে ইংরেজীর প্রচলন ও আমাকে সারা বিশ্বে তা’লিম, তরাবিয়ত ও দাওয়াত দিতে হবে সেহেতু ইংরেজীকে ও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হইবে।
২. শিক্ষার্থীরা যেন কখনোই কুরআন শরিফ হইতে অপরিচিত না থাকে সেই জন্য পবিত্র কুরআনুল করিম এর সাথে সম্পকর্ বৃদ্ধির প্রতি যতাযত খিয়াল রাখিতে হইবে। অত্যান্ত আফসুসের কথা যে আমরা এর প্রতি চরম ঔদাসিনতা দেখাই সাধারণ এক জন ক্বারী সাহেব কে দিয়ে ১ম শ্রেণি থেকে নিয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অথবা তারও কিছু উপরে পড়াই কিন্তু তখনও সে ভাল করে নাযেরা পড়তে পারেনা। এ ব্যপারে আমাদের কে বিশেষ খিয়াল রাখিতে হইবে।
৩. বাংলা, ইংরেজী, আরবী, আধুনিক বিজ্ঞান, গণিত, পরিমাপ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সিরাত স. ইতিহাস ও প্রয়োজন অনুযায়ী যুগপযোগি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা পারদর্শী অবিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হইবে
৪. ইসলামের মৌলিক বিষয় সমুহ যেমন নামায, রুজা, হালাল- হারাম, পর্দা -পুশিদা, ইমানিয়াত (অর্থাৎ ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা ) ইত্যাদি বিষয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল মুসলিম বাচ্চাদের কে আবশ্যকিয় ভাবে শিক্ষাদিতে হইবে। এ ব্যপারে কাহাকেও অপরিচিত রাখা যাইবে না।
৫. মাধ্যমিক ও উচ্চতর বিভাগের ছাত্রদেরকে বিশ্বের সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে অবগত থাকিতে হইবে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে মতামত সৃষ্টি, পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা, মন্তব্য লিখা ও প্রচার প্রচারনায় যুগপযোগি যোগ্যতা অজর্ন অত্যন্ত জরুরি। সমসাময়িক নেতৃবৃন্দ ও তাহাদের চিন্তা দ্বারা, মতাদর্শ সম্পর্কে সচেতনতা থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য যেহেতু আবশ্যক সেহেতু প্রতিটি মাদরাসায় লাইব্রেরী থাকা নিতান্ত প্রয়োজন। যাহাতে সর্বপ্রকার সংবাদ পত্র, সপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা, ম্যগাজিন ও বই পুস্তক থাকিতে হইবে। মাধ্যমিক থেকে উপরের ছাত্ররা প্রতিদিন নিদির্ষ্ট সময়ে আদাঘন্টা করে সময় দেওয়াকে বাদ্যতামূলক রাখিতে হইবে।
৬. মাধ্যমিক ও উচ্চতর ক্লাসের ছাত্রদের কে বাধ্যতামূলক হস্থশিল্পের যে কোন কাজ শিখিতে হইবে।
তবে বিষয় নির্বাচনে তাদের এখতিয়ার থাকিবে।
৭. মাধ্যমিক ও উচ্চতর ক্লাসের ছাত্রদের কে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিদিন শরির চর্চার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
ক্লাস শুরুর আগের আধঘন্টা মুনাসিব সময় বলে মনে হয়। (আমরা যাকে পি.টি বলে থাকি অনুবাদক)
৮. ছাত্রদের নিয়মিত উপস্থিতি ও চরিত্র ঘটনের প্রতি বিশেষ নেগরানী করিতে হইবে। প্রয়োজনে শ্রেণি ভিত্তিক ম’ুশির নিগরানের ব্যবস্থা করা যাইতে পারে।
৯. মাধ্যমিক ও উচ্চতর বিভাগে বিষয় ভিত্তিক ক্লাস করা যাইতে পারে।
ছাত্রদের প্রয়োজন অনুসারে প্রতিমাসে তিন দিন ছুটি দেওয়া যাইতে পারে।
১০. প্রতি তিন বৎসর অন্তর অন্তর যুগচাহিদার আলোকে, আলোচনা পর্যালোচনা করে। বিজ্ঞজনের মতামত অনুসারে নেসাব সংযোজন ও বিয়োজন করা যাইতে পারে এবং নেজাম কে সু শৃংখল ভাবে স্তর বিন্নাস করে সাজানো যাইতেপারে।
(মাদানী রহ. আরো অনেক মূলনীতি উলেখ্য করেছেন। কলেবর বড় হবে বিদায় আজ এখানে রাখা হল। অনুবাদক )
Home / অনুসন্ধান / আওলাদে রাসুল, শাইখুল ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র শিক্ষা সংস্কারে ঐতিহাসিক বাণী
Check Also
কানাডীয় নও-মুসলিম মিসেস ‘লারা’
অনলাইন ডেস্ক :: ইসলাম শান্তি, মানব-প্রেম, ন্যায়বিচার, বুদ্ধিবৃত্তি, যুক্তি, সংলাপ ও পরমত-সহিষ্ণুতার ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ...