শুক্রবার সকাল ৯:৩০ ‘বিখ্যাত’ এক পরিবহণের লাক্সারিয়াস বাসে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করি৷ পথিমধ্যে বিবাড়িয়া ইসলামপুর বাসটি বিকল হয়ে পড়লে দেড় ঘন্টা পর ব্যাকআপ বাস লক্করঝক্কর গতিতে আমাদেরকে যখন সিলেটের প্রবেশ মুখ হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নামায় ততোক্ষণে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে৷
সংগঠনে আত্মনিবেদন এবং দায়বদ্ধতা শিখছি এখনো, বিশেষত সিলেটের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের দেখে দেখে৷ বিকাল ৫টার স্থলে রাত ৮টায় পৌঁছা সত্ত্বেও জৈন্তিয়া দরবস্ত বাজারে স্থানীয় থানা এবং ইউপি শাখা জমিয়ত নেতৃবৃন্দের অপেক্ষা আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে বন্দী করেছে প্রবলভাবে৷ বিশেষত জেলা ছাত্র জমিয়ত সহসভাপতি মাওলানা মাসউদ আযহার, জেলা জমিয়ত নেতা ও দরবস্ত বাজার সমিতির সেক্রেটারী মাওলানা কবীর আহমদ, সুআলোচক তরুণ আলেম মাওলানা রেজাউল করীম সহ নাম না জানা আরো নেতৃবৃন্দ এবং গ্রীনলাইনের কাউন্টারে আমার অপেক্ষায় তিন ঘন্টা বসে থাকা মাসুম আল মাহদী সবার প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ৷ সেখানে অন্তরঙ্গ পরিবেশে জমিয়তের পাশাপাশি আরো নানা বিষয়ে আমরা খোলামেলা কথা বলি৷
ভাই সালিম মাহমুদের সাথে সাক্ষাত;
গত আট মাসে ফেসবুকে যখনি কোনো সমস্যায় পড়েছি, সাথেসাথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট গোয়াইনঘাটের মেধাবী আলেম মাওলানা সালিম মাহমুদ৷ আমার দরবস্ত যাবার সংবাদে তিনি বহু দূর থেকে ছুটে এসে নতুনভাবে আমাকে ঋণী করেছেন৷
সেখান থেকে রাত ৯টার পর চতুল বাজারে জমিয়ত কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করি৷ যেখানে ছাত্র জমিয়তের বারবার কারানির্যাতিত সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল গাজালী, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়ত নেতা এবং কানাইঘাট থানা যুবজমিয়তের নবনির্বাচিত সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷
সেখান থেকে মধ্যরাতে মাসউদ আযহারের মোটরবাইকে আমরা সুরাইঘাট হয়ে কানাইঘাটের উপর দিয়ে জকিগঞ্জের পথ ধরি৷ সুরাইঘাট বাজারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কানাইঘাট থানা শাখা জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেলালউদ্দিন ভাই এবং নবনির্বাচিত ছাত্র জমিয়ত সেক্রেটারী গিয়াসউদ্দীন৷ রাত ১টায় তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার জকিগঞ্জের দিকে ছুটে চলে অবশেষে আমন্ত্রণকারীদের দুর্ভাবনা দূর করে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হই৷
‘জাতি আমাকে চিনেছে!’
জকিগঞ্জ কালিগঞ্জে ছাত্র সমাবেশে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত আমার সিলেট আসা৷ কিন্তু দুদিন পূর্বে কে বা কারা পুলিশে ইনফর্ম করে যে, “ওয়ালী উল্লাহ আরমান হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা৷ বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য বিশেষ মিশনে সে জকিগঞ্জ আসবে৷”
চরম করিৎকর্মা পুলিশ বাহাদুরের দল এই সংবাদে ব্যস্তসমস্ত হয়ে থানা শাখা জমিয়ত নেতাদেরকে প্রথমে সরাসরি সমাবেশ বন্ধের কথা বলে দেন৷ নানামুখী তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, আরমানকে স্টেইজে না উঠানোর শর্তে প্রোগ্রাম করতে পারেন৷
আলহামদুলিল্লাহ অতঃপর ভিন্ন কৌশলে আয়োজকরা সুন্দরভাবেই তাদের ছাত্র সমাবেশ সম্পন্ন করেন৷ সেজন্যে জমিয়তী শুভেচ্ছা জকিগঞ্জ থানা জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা রায়হান উদ্দিন ভাই, মাওলানা শিব্বির আহমদ ভাই, ছোটভাই নূরুল আমীন, বুরহান উদ্দিন, আব্দুল্লাহ মাহফুজ সকলকে৷
মাঝখানে অনর্থক উটকো হয়রানীর শিকার হতে হয় জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়ত দায়িত্বশীলদের৷ কিছুটা বিভ্রান্তিও তৈরী হয় অংশগ্রহণেচ্ছুকদের মনে৷
আর বিনা পরিশ্রমে ব্যাপক পাবলিসিটি পেয়ে আরেকবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ঐসব ‘হিতাকাংখীদের’ যারা এই মফস্বলের প্রোগ্রাম কেন্দ্রিক নতুনভাবে নিজেকে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন!!!!!!!
ফেরার পথে জামিয়া কাসিমুল উলূম মাদানিয়া শাহবাগ এর মুহতামিম এবং ইউরোপ জমিয়ত এর সহসভাপতি কারী মাওলানা আব্দুল হাফিজ সাহেব ও সিলেট জেলা জমিয়ত সহসভাপতি মাওলানা মুশাহিদ সাহেবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করলাম৷ এসময় আমার সাথে আরো ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের সহকারী সেক্রেটারী ও সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফুর রহমান, সহসেক্রেটারী ইমরান আহমদ প্রমুখ৷
জকিগঞ্জ থেকে সিলেটের পথে গোলাপগঞ্জে মোটরবাইক এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত সিলেট মহানগর যুবজমিয়ত সভাপতি বন্ধুবর মাওলানা জুবায়ের আল মাহমুদ ভাইকে দেখে নিজ গন্তব্যে পা বাড়ালাম৷
তৃণমূল নেতাকর্মীই সংগঠনের প্রাণ৷
তারা সংগঠন নামক বৃক্ষে পানি সিঞ্চনের কাজ করেন নিঃস্বার্থভাবে৷
ফুলে ফলে সুশোভিত করেন৷
বটবৃক্ষের ন্যায় সংগঠনকে বিস্তৃত করেন৷
সংগঠনের ভালো সংবাদে তারা উদ্দীপ্ত হন৷ হতাশ, বিমর্ষ হন মন্দ সংবাদে৷
তারা আশা এবং প্রেরণার কথা শুনতে চান৷
সিলেটে এই দুইদিনের সাংগঠনিক সফরে আরেকবার আমি তা উপলব্ধি করেছি৷