খতিব তাজুল ইসলাম,
কয়েকটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। মানে কওমি অংগনের অনেকে বলছেন যে, হ্যাঁ সংস্কার আমরা চাই তবে আমাদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে নয়। কেউ বলেন সংস্কারের নামে মাদরাসাকে স্কুল বানানোর একটা ষড়যন্ত্র। মাদরাসা মাদরাসাই থাকবে স্কুল স্কুলই। মাদরাসা আরবি উর্দু ফারসি শব্দ আর স্কুল ইংরেজি। দুর্ভাগ্য আমাদের যে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুভাগে ভাগ করে ফেলেছি। স্কুলে চলবে জাগতিক শিক্ষা মাদরাসায় ধর্মীয় জ্ঞান। অন্য অর্থে বলা যায় এই বিভাজনকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ হাসি মুখে গ্রহন করে নিয়েছেন।
দেশ ওরা চালাক মসজিদ মাদরাসা আমরা চালাবো। তাহলে সমস্যা কোথায়? নাস্তিক মুর্তাদ বলে মুখে ফেণা কেন তুলা হচ্ছে? স্কুল কলেজের প্রতি স্যাকুলার কারখানার তকমা কেন? আবার দেখি আমরা রাজনীতিও করি। ইসলামী রাজনীতির আড়ালে দেশ পরিচালনার আখাংকা। তাহলে আপনি আপনার মসজিদ মাদরাসা ছেড়ে আবার সংসদের দিকে দৌড়? শিখবেন শিখাবেন দোয়া দুরুদ মিলাদ তাবিজের কেরেশমা আর আশা করছেন দেশ পরিচালনায় অংশগ্রন।কী একটা ঘুলাটে পরিবেশ?
পার্থক্য এখানেই যে আমরা দ্বিমুখী নীতি এখতিয়ার করে বসে আছি। একদিকে স্বকীয়তার জিগির অপরদিকে ক্ষমতার কামনা সাথে আছে স্কুল কলেজের সাথে শারিরিক ও মানসিক সংঘাত।
ইসলাম মানে কি নিছক ধর্মীয় আচার নামাজ রুজা ইবাদাত সমুহ? তাহলে ত্রিশ পারা কোরআনের মুয়ামেলাত মুয়াশেরাত সমাজকে শাসন করা আল্লহার আইনে সমাজকে পরিচালিত করার আ্য়াত সমূহের কি হাশর হবে? এগুলো কি ইবাদাত নয়? ব্যাংকার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এই কাজ গুলো কি অনৈসলামিক?
কওমির স্বকীয়তা বলতে আসলে কি? পরিপুর্ণ দ্বীনের উপর চলা ও তার পরিবেশে অবস্থান করে দ্বীন শিখা যদি স্বকীয়তার অর্থ হয় তাহলেতো আসল কথাই হলো।দ্বীনের উপর পরিপুর্ণ রূপে চলার সরঞ্জামও তো সাথে থাকা চাই। দাড়ি টুপি জুব্বা মিসওয়াক কোরআন হাদিসের তরজমা শিখা হাদিসের মতন জামাতের সাথে নামাজ রামাদ্বানের রোজা এই ক’টি বিষয় কি পরিপূর্ণ ইসলামের চিত্র?
জীবন এবং সমাজের অনুষংগ হলো অর্থনীতি। ইসলাম যেভাবে এসেছে মানুষের আত্মার উৎকর্ষ সাধন করতে তেমনি এসেছে মানুষের দুনিয়াকে দ্বীনের মতো করতে। যে কাপড় দিয়ে ছতর ডকছেন যে মুসল্লায় নামাজ পড়ছেন যে ঘরে বসবাস করছেন যে কাগজে কোরআন হাদিস পড়ছেন যা আহার করছেন জীবন চালাচ্ছেন এই জিনিস গুলো কি আসমান থেকে এসে পড়ে? সবকিছুর একটা উৎস আছে। ইসলামে জাগতিক জিনিসকে হালালের উৎস হওয়া শর্ত করে দিয়েছে। সুদী ব্যাংককে মুনাফায় রূপান্তরীত করা হারাম মুয়ামেলাতকে হালালে পরিণত করার দায়ীত্ব কার?
আপনার আমার মা বোন স্ত্রী কন্যাদের আর কতদিন বেগানা বেনামাজী মদখুর পুরুষ দিয়ে চিকিৎসা করাবেন? চিকিৎসা জগতের কসাই পনা কে তাহলে দূর করবে? কারা তাহলে চলার পথে নামাজের ওয়াক্ত হলে গাড়ি থামানো জরুরী মনে করবে?
আসলে আমরা মাদরাসাকে স্কুল আর স্কুলকে মাদরাসা করার কথা বলছিনা আর তা সমাধান ও নয়। বলছি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলো যেন ইসলাম বান্ধব হয় মুসলমানদের জন্য হয় ইসলামের জন্য সার্বজনীন হয়। ইসলামকে খন্ডিত না করে পরিপূর্ন রূপে দেখার চেষ্টা করি। কেন্সার ডিজিজ বডিতে জিইয়ে রেখে উপরে উপরে যতই প্রলেপ মাখানো হউক কোন কাজ হবেনা সমাধান ও আসবেনা। হ্যাঁ আমরা একলাফে কিছু করে নিবো তাও সম্ভব নয়। দুটি শিক্ষাকে আলাদা করে না দেখে একটি অপরটির সম্পুরক হিসাবে দেখার চেষ্টা করি। আর ধীরে ধীরে গোটা সমাজ রাষ্ট্র তথা বিশ্বব্যাপী ইসলামের সোনালী যুগের শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপনের দিকে এগিয়ে যাই।
মাদরাসাকে বিস্কুট ফ্যাক্টরি কিংবা মেডিক্যাল কলেজ অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তরীত করলেই সমস্যার সমাধান !এমন আহম্মকি কথা পাগলেও বিশ্বাস করবেনা। সারা বিশ্বব্যাপী শিক্ষা সিলেবাসের যৌক্তিক একটা দিক নির্দেশনা আছে। ১০ম পর্যন্ত পড়ার আগে কে কি হবে তা নির্ধারীত হয়না। সবাই মুহাদ্দিস মুফাস্সির হতে পারবেনা তেমনি সকলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেনা। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা বিভাগ বাঞ্চনীয়।
আমাদের টার্গেট হবে সার্বজনীন একটা শিক্ষা কারিক্যুালাম গড়ে তুলা। তার আগে আমাদের প্রতিটি কওমি মাদরাসায় ১০ম তথা মেট্রিক পর্যন্ত সমন্বয় সাধিত সিলাবাসের বাস্তবায়ন। আপনার তত্বাবধানে নিজ হাতে একটা ছাত্রকে যখন ১০ম পর্যন্ত পড়িয়ে দিবেন তখন আশা করা যায় সে কলেজ ভার্সিটিতে গিয়ে পরবর্তি শিক্ষা গ্রহন করলে নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকবেনা। ১০মের পর যারা আলেম হবে কওমি অংগনে থেকেই তারা নিবে কোরআন হাদিসের উপর উচ্চতর ডিগ্রী।
কোরআন সুন্নাহ-ই হলো আমাদের স্বকীয়তা এর বাহিরে আলাদা কোন স্বকীয়তা যদি থেকে থাকে তাহলে আর যাই হউক তা কথনো ইসলাম হতে পারেনা।
ছবি: পুর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষার উজ্জল নক্ষত্র, বিশ্ব নন্দিত ইসলামি ইউনিভার্সিটি জামেয়াতুর রাশিদ, পাকিস্তান। মুফতী রশীদ আহমদ রাহঃ কর্তৃক প্রতিষ্টিত।