Friday 10th May 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: সকাল ১০:০২
Home / Today / মালদ্বীপের ঐতিহাসিক একটি ঘটনা

মালদ্বীপের ঐতিহাসিক একটি ঘটনা

লিখেছেন: এম আব্দুল গণি,

Ibn e botutaযে ঘটনা ইসলামের সাড়া জাগালো মালদ্বীপে প্রায় পাঁচশত বৎসর আগের কথা। এক অলৌকিক ঘটনায় মালদ্বীপে ব্যাপকভাবে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন দলে দলে দাখিল হয়েছেন ইসলামে। প্রখ্যাত মুসলিম পর্যটক আল্লামা ইবনে বতুতা (রহ.) বড়মাপের ইতিহাসবিদ। তিনি সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করেছেন। তিনি তার সফরনামায় মালদ্বীপের উক্ত ঘটনা সম্পর্কে লিখেছেন যে, ভ্রমণ করতে করতে তিনি মালদ্বীপে পৌঁছলেন।
দেখলেন, মালদ্বীপের প্রতিটি শহর-নগর আজানের মধুময় ধ্বনিতে মুখরিত। মালদ্বীপ ভূমি নামাযের সিজদায় আলোকিত। এ অবস্থা দেখে আল্লামা ইবনে বতুতা খুবই বিস্মিত হলেন। কারণ, তার জানা মতে, কোনো ইসলাম প্রচারক মালদ্বীপে আসেননি। তাহলে এখানে এভাবে ইসলামের আলো ছড়ালো কীভাবে! ইবনে বতুতা (রহ.) তখন সেখানকার অধিবাসীদেরকে মালদ্বীপের মানুষের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তারা অতি আশ্চর্যজনক একটি ঘটনা তাকে শোনালেন। ঘটনাটি হলো– আরবের কোনো এক বাণিজ্য জাহাজ পূর্ব বিশ্বের দিকে যাত্রা করে যাচ্ছিলো। ঘটনাচক্রে জাহাজটি তুমুল সমুদ্র ঝড়ে পতিত হয় এবং ঝড়ে পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজের অভিযাত্রী দলের সবাই মারা যান। সেই মুসলিম যাত্রী দলের একজন মাত্র লোক কোনো এক কাষ্ঠখ-কে অবলম্বন করে আল্লাহর মেহেরবানীতে বেঁচে যান এবং এই দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন। তিনি ছিলেন এক আরব যুবক এবং হাফেজে কুরআন। তার নাম হাফেজ আবুল বারাকাত। এই অচেনা অপরিচিত দ্বীপে কোথায় যাবেন তিনি?ibn-e-battuta 1

কে তাকে আশ্রয় দিবেন? এখানেতো তার কোনো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন নেই! অবশেষে এ আরব যুবক এক বৃদ্ধার বাড়ীতে আশ্রয় নিলেন। যুবকটি জঙ্গলে কাঠ
কেটে তা বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করতো। এভাবেই চলছিলো তার জীবন। একদিন যুবকটি বাড়ীতে এসে দেখলেন, বৃদ্ধা কাঁদছেন এবং তার পাশে তার যুবতী মেয়ে কাঁদছেন। যুবক জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে আপনাদের? আপনারা কাঁদছেন কেন? বৃদ্ধা বললেন, আজ আমার মেয়ে মারা যাবে। যুবক বললেন, কেন? তিনি মারা যাবেন কেন? তিনিতো সুস্থ! বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেন, ওই যে দেখুন, মৃত্যু আমাদের সামনে। যুবক বাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখলেন, রাজার সৈন্যরা দাঁড়ানো। যুবক বললেন, তারা কি আপনার মেয়েকে হত্যা করবে? বৃদ্ধা বললেন, না, ব্যাপারটি তা নয়। রাজার এ সৈন্যরা আমার মেয়েকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছে। কেননা, আমাদের এই দ্বীপে প্রতি বৎসর একটি নির্দিষ্ট তারিখে এক সামদ্রিক বিপদের উদ্ভব হয়। যার থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতি হলো-আমাদের দ্বীপবাসীদেরপক্ষ থেকে এক যুবতী মেয়েকে ওইদিন সূর্য ডোবার পর সমুদ্র উপকূলে একটি মন্দির আছে সেখানে রেখে আসতে হয়। পরের দিন সকালে সরকারী লোকজন সমুদ্রের কিনারা থেকে ওই মেয়েকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। প্রতিবারই লটারীর মাধ্যমেই নিরূপণ করা হয়Ñকোন্ মেয়েকে পাঠানো হবে। এবার লটারীতে আমার মেয়ের নাম উঠেছে। তাই আজ রাতে তাকে সমুদ্র উপকূলে পাঠাতে হবে। সেখানে তার মৃত্যু অনিবার্য। যুবক বৃদ্ধার মুখে এ বেদনাদায়ক ঘটনা শুনে বললেন, আজ আপনাদের মেয়েকে সেখানে পাঠাবেন না। আজ রাতে আমিই সেখানে যাবো। দেখি, সেখানে কীতে কী হয়। প্রয়োজনে আপনার মেয়ের পরিবর্তে আমার জান দিয়ে দেবো।maldives
.
.এরপর যুবক বললেন, রাজার সৈন্যরা যাতে বুঝতে না পারে, তাই আপনার মেয়ের পোশাক আমাকে পরিয়ে দিন। আমিই আজ তাদের সাথে যাবো। উল্লেখ্য যে, যুবকের বয়স ছিলো খুবই কম। তাঁর দাড়ি-গোফ কিছুই গজায়নি। কাজেই মেয়ের বেশে তার ধরা পড়ার আশংকা ছিলো
না। বৃদ্ধা যুবকটিকে নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিতে রাজী হচ্ছিলেন না। কিন্তু যুবকটি বুঝালেন যে, তিনি মুসলমান। মুসলমানগণ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। আর জীবন ও মৃত্যু একমাত্র মহান আল্লাহর হাতে। আল্লাহর হুকুম না হলে, কেউ তাকে মারতে পারবে না।
তা ছাড়া তিনি হাফেজে কুরআন। তাই তার বিশ্বাস, কুরআন শরীফের বরকতে মহান আল্লাহ তাকে হিফাজত করবেন। এভাবে যুবকটি বৃদ্ধাকে নানাভাবে বুঝালেন। শেষ পর্যন্ত যুবকটির অত্যধিক পীড়াপীড়িতে বৃদ্ধা রাজী হলেন। যুবকটিকে মেয়ের পোশাক পরিয়ে দেয়া হলো। অতঃপর রাজার সৈন্যরা তাকে সমুদ্রের উপকূলস্থ সেই মন্দিরে নিয়ে গেলো। তারা তাকে সেখানে রেখে চলে এলো। যুবক সেখানে উত্তমরূপে উজু করে ইশার নামায আদায় করলেন। তারপর খোলা তলোয়ার সামনে রেখে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে লাগলেন এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। রাত গভীর হতে লাগলো। চারিদিক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। প্রকৃতি নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লো। শুধুমাত্র তিনটি প্রাণ জেগে রইলো। যাদের চোখে নিদ্রার সুখ বিদুরিত হয়ে গিয়েছে। তাদের একজন হলো আরব যুবক। যার চোখ ছিলো পানির সমুদ্রের দিকে আর বুকে ছিলো ঈমানের বল।
আরেকজন জাগ্রত ছিলো, সে হলো গরীব বৃদ্ধা। উদার দিল আরব যুবকের চিন্তায় বৃদ্ধা ছিলো অস্থির। তার মেয়েকে রক্ষা করার জন্য যুবক নিজের প্রাণকে বিপন্ন করতে যাচ্ছেন। তৃতীয় যে প্রাণটি জেগে রইল, সে হলো বৃদ্ধার সেই যুবতী কন্যা। আরব যুবকের চিন্তায় সেঅনবরত
কেঁদেই চলছিলো। হাফেজে কুরআন যুবকটি অন্ধকার রাতের এই নিথর পরিবেশে সমুদ্রের কিনারস্থ সেই ভয়ংকর মন্দিরে বসে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী সুরে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে যাচ্ছিলো। এ মুহূর্তে সকল অপশক্তির মুকাবিলায় কুরআনই যে তার অমোঘ হাতিয়ার। হঠাৎ করে সমুদ্রের দিগন্ত থেকে বিশাল আকৃতির এক ভয়ংকর দৈত্যের উদয় হলো। দৈত্যটি ধীরে ধীরে সমুদ্রের কিনারার দিকে মন্দিরের অভিমুখে আসতে লাগলো। মন্দিরের কাছাকাছি এসে দৈত্যটি থেমে গেলো। যুবক কুরআন তিলাওয়াত করে যাচ্ছিলেন। কুরআন তিলাওয়াতের কারণে দৈত্যটি সামনে অগ্রসর হতে পারলো না। অবশেষে হার মানলো ভয়ংকর দৈত্যটি। সামান্য সময় অবস্থান করে যে পথে এসেছিলো সেই পথে ফিরে গেলো। দৃশ্যের
অন্তরালে হারিয়ে গেলো দৈত্যটি। সকাল হলো। সরকারী লোকজন মেয়েটির লাশ নেয়ার জন্য মন্দিরে এলো। এসে তারা হতভম্ব হয়ে গেলো। সেখানে কোনো লাশ নেই। কোনো মেয়েও নেই। তার পরিবর্তে সেখানে এক মুসলিম যুবক রয়েছে। তারা যুবকটিকে রাজার দরবারে নিয়ে এলো।
যুবকটি রাজার নিকট সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। তখন রাজা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বৃদ্ধা ও মেয়েকে ডেকে আনলেন। তারা রাজার কাছে ঘটনাটির সত্যায়ন করলেন। যুবক রাজাকে বললেন, আমি যা করেছি, তা ইসলামের শিক্ষার তাগিদে করেছি। এটা আমার প্রতি বৃদ্ধার ইহসানের সামান্য বদলা মাত্র। যুবকের মুখে সব শুনে রাজা সীমাহীন প্রভাবিত হলেন। রাজা বললেন, হে যুবক! এতো বড় বিপদের সামনে তুমি একাকী দাঁড়ালে কীভাবে? যুবক বললেন, আমি একা ছিলাম না, আমার সাথে আমার আল্লাহ ছিলেন। আর আমার হাতিয়ার ছিলো মহান আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ভয় পাওনি কেন? যুবকটি বললেন, মুসলমান একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। জীবন ও মৃত্যুর মালিকতো একমাত্র মহান আল্লাহ।maldives-1

এরপর রাজা বললেন, তুমি কি আগামী বৎসরও এভাবে একা ওখানে যেতে পারবে? যুবক দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিলেন, আল্লাহর হুকুমে একাই যেতে পারবো। তখন রাজা অতি আবেগের সাথে বলে উঠলেন, যদি তুমি পারো, তাহলে আমরা সবাই ইসলামের সততার সামনে মাথা নত
করবো। রাজার এ কথাকে দরবারের সকলে সমস্বরে সমর্থন করলো। এরপর পরবর্তী বৎসর নির্ধারিত তারিখে সেই হাফেজে কুরআন আরব যুবক একা একা সেই মন্দিরে গেলেন এবং সারারাত সেখানে কুরআন তিলাওয়াত করে কাটালেন। অতঃপর সকাল বেলা সহীহ সালামতে সবার মাঝে ফিরে এলেন। এই ঘটনার পর থেকে সে বিপদ আর কখনো মালদ্বীপে আসেনি। তখন রাজা ও তার দরবারের সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর সেই রাজ্যের মানুষ দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হলেন। প্রথম দিনেই পয়ষট্টি হাজার লোক মুসলমান হলেন এবং এ ধারা অব্যাহত গতিতে চলতে থাকলো। (সুবহানাল্লাহ!)
[ তথ্যসূত্র : তারীখে ইবনে বতুতা]

Check Also

11377093_768919959891693_8552450127626177621_n

Can anyone become a Muslim?

Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...