বর্তমান সময়ে ইসলমের ঝাণ্ডাবাহী নির্ভীক সিপাহসালার শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি দা. বা.। যিনি এদেশের লক্ষ্য লক্ষ্য উলামায়ে কেরামের উস্তাদ ও মুর্শিদ। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত অব্যাহত যার জীবনের পবিত্র সফর। সাধনা ও আত্মত্যাগের পথ বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধকালকে পেছনে ফেলে। দাওয়াতের পুণ্যময় আলোয় উদ্ভাসিত যার কর্ম জীবন। মহিমামণ্ডিত যার জীবন, সংযম-সাধনায় বিনয়ী অভিযাত্রী যিনি, এদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে বরিত যার গ্রহণ যোগ্যতা। তিনিই আল্লামা আহমদ শফি দা. বা.।
এই মনীষী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫১ হিজরী সনে বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীনদার আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হযরতের মরহুম পিতার নাম জনাব বরকত আলী ও মরহুমা মাতার নাম মুসাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম।
হযরতের পিতা-মাতা তাঁকে কুরআনে করীম শিক্ষার জন্য জনাব মাওলানা আজিজুর রহমান রাহ. এর নিকট প্রেরণ করেন। এর ফাঁকে নিয়মিত চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতপর শরফভাটা মাদ্রাসায় প্রাথমিক কিতাব পাঠে মনোনিবেশ করেন। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, বিনয়ী চিন্তাশীল, প্রখর মেধাবী, তীক্ষè বুদ্ধির অধিকারী হওয়ায় অতি অল্প বয়সে তিনি কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত ও প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষা সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করে কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন। অতপর ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরাবিয়া জিরি মাদ্রাসায় চলে যান। এখানে ৫/৬ মাস অধ্যয়ন করেন।
পরবর্তীতে বৃটিশ ও জার্মানিতে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠার ফলে সেখান থেকে ১৩৬১ হিজরীতে হাফিজ ইমতিয়াজ সাহেবের প্রচেষ্টায় দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তখন হযরতের বয়স মাত্র ১০ বছর।
ইত্যবসরে তাঁর মাতা-পিতা ক্রমান্বয়ে তাঁকে চিরকালের জন্য এতিম করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।
১৩৭১ হিজরীতে চলে যান ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দে। দারুল উলুম দেওবন্দে তার উস্তাদবৃন্দের মধ্যে অন্যতম হলেন শায়খুল আরব ওয়াল আযম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ.। দেওবন্দে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই এই মহা মনীষীর নিকট থেকে খিলাফত প্রাপ্ত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
ছাত্র থাকাকালীন সময়ে শায়খুল ইসলাম মাদানী রাহ. কর্তৃক খেলাফত প্রদানের ফলে তবিবুল উম্মাত আল্লামা আহমদ শফীকে তার সহপাঠীরা নানা প্রকার ঠাট্র- বিদ্রুপ করতো। একদিন সহপাঠীদের এহেন ঠাট্রা-বিদ্রুপের কারণে স্বীয় শায়খের কাছে তার কারগুজারী শোনান। মাদানী রাহ. কিছুক্ষণ নীরব থেকে সকল ছাত্রকে বলেছিলেন, এখন তো সবাই ঠাট্রা-বিদ্রুপ করছো। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি, বাংলার ওলামায়ে কেরাম তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ! আজ হযরত মাদানী রাহ.’র এই কথার বাস্তবতা বাংলার সকল তৌহিদী জনতা প্রত্যক্ষ করছে। আল্লামা আহমদ শফী দেওবন্দে ফুন্নাতে আলিয়া, দাওরায়ে হাধীস, দাওরায়ে তাফসীর কোর্স সম্পন্ন করেন। দারুল উলুম দৌবন্দ হতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর স্বীয় উস্তাদ জামিয়ার তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা আব্দুল ওয়াহ্হাব রাহ. তাঁর চরিত্রমাধুরী, পান্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, সততা, উদারতা, ইখলাস ও দায়িত্ত্বসচেতনতাকে-সর্বোপরি ইলমের গভীরতা অবলোকন করে বিমোহিত হয়ে যান।
ফলে হযরতকে এই জামিয়ার শিক্ষক পদে নিয়োগ করেন। ১৪০৭ হিজরীতে তদানিন্টতন জামিয়ার মুহতামীম হাফিজ মাওলানা ক্বারী হামেদ ইন্তেকাল করলে জামিয়ার সর্বোচ্চ মজলিসে শুরা সর্বসম্মতিক্রমে মুহতামীমের দায়িত্ত্ব অর্পণ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. এর উপর। হযরতের পরিচালনায় এ পর্যন্ত জামিয়া অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, ইলমি, ও আমলী তথা সব ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি লাভ করেছে। হযরত বর্তমানে বাংলাদেশ ক্বাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক্ব) এর চেয়ারম্যান এবং হেফাযতে ইসলামের আমীর। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রয়োজনে যেখানে যখনই আহ্বান করা হয়, তখন হযরতের মুখে না শব্দটি আসে না। এক কথায় , হযরত হচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-সংগঠন ও ইসলামী আন্দোলনের সমন্বয়স্থল।
ইসলামের বিভিন্ন দিকে রয়েছে যেমনি হুযূরের কৃতিত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা, ঠিক তেমনিভাবে কলমি জিহাদের ময়দানেও রয়েছে হযরতের অসাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তীক্ষè গবেষণার দুর্লভ প্রতিভার বাস্তব প্রতিফলন। লিখনীর ময়দানে হযরতের ক্ষুরধার ক্বলম বাতিলের আতঙ্ক স্বরুপ।
মোটকথা যাদের দেখে সাহাবায়ে কেরামের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে উঠে, যাদেরকে সত্যিকারের নায়েবে রাসুল বলা যায়- তাদেরই একজন আল্লামা আহমদ শফি দা. বা.
মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট আমরা প্রার্থনা করি, তিনি যেন হযরতের সু-স্বাস্থ্যময় হায়াত দান করেন। যাতে হযরতের ফয়েজ বরকত ও দিকনির্দেশনা আরো দীর্ঘকাল আমরা লাভ করতে পারি।
Check Also
Can anyone become a Muslim?
Yes anyone can. There are two declarations, which are necessary: 1- To bear witness that ...