(১ম পর্ব) পবিত্র কোরআন বলেছে: মুসলমানদের প্রতি “আশাদ্দে আদাওত” তথা কঠিনতম শত্রুতা রাখে যে জাতি, তারা হলো ‘ইহুদি জাতি’।
কিন্তু তাদের শত্রুতার কারণ ছিল বড়ই হাস্যকর। ঠুনকো এই অজুহাতের দরুণ ইহুদ জাতি মুসলিম উম্মাহর শত্রু হবার কথা ছিল না। কথা ছিল জাযিরাতুল আরবে তারাই হবে ইসলামকে সর্বপ্রথম স্বাগতম জানানো জাতি।
কারণ আমরা দেখতে পাই— বুখতে নাসারের জাতিনির্মূল অভিযান থেকে বেঁচে যাওয়া হযরত হারুন আ. এর কতিপয় ইহুদি আওলাদ আরবের ইয়াসরিবে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। এখানে তাদের বসতি স্থাপনের একমাত্র কারণ এটাই ছিল যে, তারা তাওরাতের বাণীর আলোকে বুঝতে সক্ষম হয়েছিল— এ জায়গাটাই হবে শেষ নবীর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রস্থল। কেননা মক্কা থেকে উত্তর দিকে ঘণ খেজুর বাগান সমৃদ্ধ এলাকা শুধু এটাই হতে পারে।
তাদের বংশের কেউ মারা গেলে সে তার অধস্তন বংশধরকে এই বলে অসিয়ত করে যেত যে, তোমরা যদি শেষ নবীর যুগ পাও, তাহলে কোনো দ্বিধাদ্বন্ধ ছাড়াই তাঁর ধর্মমত গ্রহণ করে নেবে। কেননা তাঁর ধর্মমত হবে কিয়ামত অবধি স্থায়ী এবং বিশ্বজয়ী।
স্থানীয় ইয়াসরিবীদের সাথে যখনই তাদের সংঘাত বাঁধতো এবং তারা পরাজিত হতো, তখন এই বলে নিজেদের প্রবোধ দিত— সবুর কর “ফারাকলিত” (মুহাম্মাদ সা.) আসুক, আমরা তখন তাঁর অনুসারী হয়ে এ অন্যায়ের শোধ তুলবো।
কিন্তু যখন মক্কায় যখন নূরে নবুওতের আবির্ভাব ঘটলো তখন তারা হতাশ হয়ে পড়লো। একটা ইহুদিও তাঁকে স্বাগতম জানাতে এগিয়ে গেল না। বরং অন্তরে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ শুরু করলো। এ বিদ্বেষের কারণটা ছিল একেবারেই ঠুনকো। একেবারেই হাস্যকর। কারণটা ছিল প্রবল আসাবিয়্যাহ বা প্রচণ্ড জাত্যাভিমান। তাদের শতভাগ কাঙ্খা ছিল শেষ নবী আসবেন বানি ইসহাকের সদস্য হয়ে। এতে ইসরাইল জাতি কেয়ামত তক মাথা উঁচু জাতি হিসেবে থাকবে। কিন্তু দেখা গেল শেষ নবী এসেছেন হাজেরার গর্ভে জন্ম নেয়া ইসমাঈলের বংশধর হয়ে। এই অগ্রহণযোগ্য কারণটাই পথ রোধ করে দাঁড়ালো তাঁদের ইসলাম গ্রহণের।
উম্মুল মু’মিনিন হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই বিন আখতাব রাযি. বলেন: যেদিন প্রিয় নবী সা. মক্কা থেকে মদীনায় চলে আসেন সেদিন তাঁর আগমন প্রত্যক্ষ করার জন্যে বাবা এবং চাচাও ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা মদীনার আনসারদের প্রাণখোলা আনন্দ দেখে মরমে মরমে জ্বলে যাচ্ছিলেন। বিকেলে বিরস বদনে ফিরে আসলেন। তাঁদের চোখ মুখ থেকে ক্লান্তি আর হতাশা ঝরতে দেখা যাচ্ছিল। বাড়ি এসে বাবা চাচাকে জিজ্ঞেস করলেন ইনিই কি সেই? চাচা বললেন খোদার কসম ইনিই সেইজন, যার প্রতিক্ষা আমরা করছিলাম। বাবা জিজ্ঞেস করলেন এখন কী সিদ্ধান্ত? আনুগত্য না আদাওত (শত্রুতা) ? চাচা বললেন: ওয়াল্লাহি আল আদাওয়াহ! খোদার শপথ শত্রুতা শত্রুতা শত্রুতা।
এই শত্রুতার কারণেই জাযিরাতুল আরব থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছিল ইহুদি জাতিকে। এদের অপরাধের কোনো সীমা পরিসীমা ছিল না। ইসলামের শুরু থেকেই ছিল তাদের শত্রুতা। এই পাপিষ্ট জাতি প্রিয় নবী সা.কে তাদের কেল্লায় দাওয়াত দিয়ে উপর থেকে পাথর ছুড়ে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে। খাবারে বিঁষ মিশিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ইসলামের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়েছে। বদর যুদ্ধে মক্কার কুরায়েশদের করুণ পরিণতিতে কুরাইশরা যে টুকু না মর্মাহত হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশী মর্মাহত হয়েছে ইহুদিরা। বদরের পরিণতির পর কাব বিন আশরাফের মতো কুখ্যাত ইহুদি কবি অহর্ণিশ উস্কিয়ে গেছে কুরাইশদের। এরই পরিণতিতে সংঘটিত হয় উহুদ যুদ্ধ। খন্দকের যুদ্ধের সময়ও তারা ওয়াদাভঙ্গ করেছে। পরিণতিতে তাদেরকে প্রথমে মদীনা থেকে বিতাড়িত করা হয়। তারা আস্তানা গাড়ে খায়বারে। কিন্তু অভ্যাস তাদের পাল্টায়নি মোটেও। ইসলামের ক্ষতিসাধনে তারা একটি মুহূর্তও বাদ দেয়নি। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে খলিফায়ে সানী হযরত উমর রাযি. তাদেরকে জাযিরাতুল আরব থেকেই উচ্ছেদ করে দেন।
কিন্তু তারপরও ইয়েমেনের সানায় থেকে যায় বনেদী শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসর একটা পরিবার। এমনিতেই জাতি হিসেবে ইহুদিরা হয়ে থাকে শিক্ষিত। বলা হয়ে থাকে ছোট্ট এই জাতির উপর ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে যে সব দুর্যোগ এসেছিল এতে অনেক আগেই এরা ধরাপৃষ্ট থেকে বিলীন হবার কথা। কিন্তু তিনটি বস্তু এদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে সকল দুর্যোগের পরও। বস্তু তিনটির একটি হচ্ছে শিক্ষা, দ্বিতীয়টি অর্থনৈতিক শক্তি, (সুদের মাধ্যমে) তৃতীয়টি হচ্ছে প্রবল জাত্যানুভূতি। সানার এই ইহুদি পরিবারটির ছিল আলাদা বৈশিষ্ট। পুরো ইহুদি জগৎ এদেরকে সম্ভ্রমের চোখে দেখতো। সেই পরিবারের এক যুবক, নাম ছিল আব্দুল্লাহ। অত্যন্ত ধীমান এ যুবকটি তার যৌবনের শুরুতেই নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিল তার জাতির জন্য। সমবয়সী ছেলেরা যখন খেলাধুলা আর শিকার নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তখন ঐ যুবকটি তাদের উপাসনালয়ের লাইব্রেরিতে বুঁদ হয়ে থাকতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই নিয়ে।
অল্প বয়সেই যুবকটি গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী বনে গিয়েছিল। চারিদিকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তার অন্তরে ছিল একসাগর আবেগ আর স্বজাতিপ্রেম। তার অধ্যয়ন আর গবেষণার বিষয় বস্তু ছিল ধর্ম ও জাতিসমূহের উত্তান-পতন ও এর অন্তর্নিহিত কারণ। সে প্রথমে নিজ জাতির ইতিহাস নিয়েই স্টাডি শুরু করেছিল। সে দেখেছে ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে তার জাতি কেমন বিপর্যস্ত হয়েছে, আবার কেমন করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু সে তার জাতির একেবারে সমকালীন পর্যায়ে এসে হতাশ হয়ে পড়ল। কারণ তার দৃষ্টিতে আর তার জাতির মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ নেই। এর একমাত্র কারণ হিসেবে সে ইসলামকেই চিহ্নিত করতে বাধ্য হলো। সে এ উপলব্ধিতে পৌঁছাল — এমন জীবন্ত ও বিশ্বজয়ী একটা ধর্মমতের মতের উপর তার বিকৃত হয়ে যাওয়া ধর্ম মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না , সুতরাং তার জাতিও পারে না মাথা তুলে দাঁড়াতে।
যুবকটির আবেগের সাগরে প্রচণ্ড সুনামী বইতে লাগলো। সে সুনামীর তাণ্ডব তার বিবেককে অজানা সুদূরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এ পর্যায়ে সে তার অধ্যয়ন ও গবেষণার মোড় আমূল পাল্টে ফেলল। সে তার জীবনটাকে ইসলাম ও মুসলমানের বিনাশের জন্য নিবেদিত করে ফেলল। এবার তার গবেষণার, তার অধ্যয়নের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়াল ইসলাম ও মুসলমানদের দুর্বলতা খুঁজে বের করা। কোন্ জাতি কোন্ জাতিকে পদানত করার সময় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা তালাশ করা। যুবকটি ছিল অত্যন্ত মেধাবী। খোদাদাদ তীক্ষ্ণ মেধা এ ব্যাপারে তাকে যথেষ্ট সহায়তা করছিল। সে সীমাহীন ধৈর্য আর অভিনিবেশ সহকারে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল। অধ্যয়ন ও গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে যে পয়েন্টটাকে সে ইসলামের বিপক্ষে ব্যবহার করা যায় মনে করছিল তা একটা নোটে লিখে রাখছিল, যেন অনুকুল সময়ে সে এগুলোর প্রয়োগ ঘটাতে পারে। ইতিহাস এই চতুর যুবকটকে ‘ইবনে সাবা’ নামে আপন বক্ষে ঠাই দিয়ে রেখেছে।
দূরন্ত সাবাপুত্র অধ্যয়ন ও গবেষণার ফাঁকে ফাঁকে যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তার স্মৃতির নোটপ্যাডে নোট করে রেখেছিল সেগুলো ছিল নিম্নরূপ।
১। এমন কোনো ধর্মমত, যার পেছনে ঐশী সাপোর্ট বিদ্যমাণ; জগতের কোনো শক্তিই তাকে ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিল তার নিজ জাতির ইতিহাস। ইহুদিরা কালের প্রতিটি বাঁকে এমন সব দুর্বিপাকের মোকাবেলা করেছে যার ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ থেকে মুছে গিয়ে স্মৃতির দেশে চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেছে ওরা বার বার ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠেছে।
২। ঐশী কোনো ধর্মাবলম্বী জাতির উপর বিজয়ী হবার একমাত্র পথ হলো প্রতিপক্ষের ধর্মের সমান্তরালে নতুন আরেক ধর্মমত গড়ে তুলা। যেন ঐ ধর্মটা বিকৃত হয়ে যায়। বিকৃতি চাপিয়ে দিতে পারলে আপনাতেই অটুট ঐক্যে ফাটল ধরবে এবং সেই ফাটলপথে অভ্যন্তরে ঢুকে ধর্মের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয়তার পুরো বিল্ডিংটাই ধ্বসিয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
৩। যে কোনো নতুন মতবাদ প্রচার করতে গেলে জনসমর্থনের প্রয়োজন। কিন্তু ইবনে সাবা তার গবেষণার আলোকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, এটা কোনোই ফ্যাক্টর নয়। কারণ সে তার গভীর অধ্যাপনার পরও জগতের কোনো মতবাদ আবিস্কারকারীকে সমর্থক না পাবার অভিযোগ করতে পায়নি। সে এই ধারণায় উপনীত হয়েছিল— একটা নেংটা পাগলও যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু বলে তাহলে সেও অন্তত একজন সমর্থক পেয়ে যাবে। কারণ কুদরত মানুষের মন মস্তিস্কটাই এমনভাবে গঠন করেছেন যে, তা প্রতিটি নতুনের দিকে আলোর দিকে পতঙ্গের ধাবিত হবার মতো ধাবিত হয়।
একটা ভিখারিও যদি গাছ তলায় মানুষের ভবিষ্যত গড়ে দেয়ার দাবী নিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে কিছু বোকা মানুষকে তার কাছে দীক্ষা নেবার জন্য ছুটে আসতে পাবেই পাবে।
৪। ধৈর্য ধরে যদি কোনো মিথ্যাকে অবিরাম চালিয়ে নেয়া যায় তাহলে তা যতই নির্জলা মিথ্যা হোক না কেন একসময় তা মানুষের বোধিতে সত্যের রূপ পরিগ্রহ করে নেয়। মানুষ তখন বিবেক দ্বারা চালিত না হয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে ঐ মিথ্যার দিকেই ঝুকে পড়বে।
৫। কোনো মতবাদকে এগিয়ে নিতে হলে সবচেয়ে মোক্ষম উপায়টা হলো অত্যন্ত সতর্কভাবে ধর্মীয় সসের বোতল থেকে একটুখানি সস মিশিয়ে নেয়া। কারণ ধর্ম হচ্ছে কতিপয় বিশ্বাসের নাম। আর বিশ্বাস হচ্ছে একটা শক্তি। এটা এমন এক শক্তি যার মোকাবেলায় জগতের সমস্ত অস্ত্র অকেজো। বিশ্বাস যতই অবাস্তব ও যুক্তিহীন হোকনা কেন এটা জগতে বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। বইয়ে দিতে পারে রক্তগঙ্গা। পারে এক অরাজক ও বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থায় শান্তির হিল্লোল বইয়ে দিতে। ইবনে সাবা তার গবেষণায় দেখেছে— সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবদি আওলাদে আদমের যে পরিমাণ রক্ত ঝরেছে সেই রক্তের তিন চতুর্থাংশ ঝরেছে বিশ্বাসে বিশ্বাসে সংঘাতের কারণে। বিশ্বাস কোনো দিন ভাঙ্গে না মচকায়ও না। শক্তিপ্রয়োগে বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে আসলে তা বরং আগুনে বাতাস লাগলে যেভাবে দাউ দাউ করে জ্বলে তেমনি করে অধিকতর চাঙা হয়ে ওঠে। একটা অবাস্তব বিশ্বাসকে কেবল সেই বিনয়ী দাঈদের দাওয়াতই ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে যে দাঈরা সীরাতে এবং সূরাতে হবে সত্যের মূর্তপ্রতীক।
৬। কোনো মতবাদকে গতিশীল করতে হলে সে মতবাদে ইবাদতের আকারে জৈবিক চাহিদার স্টীম মিশিয়ে দাও, দেখবে পালে বাতাস লাগলে নৌকা যেমন তরতর করে এগিয়ে যায় তেমনি আবিস্কৃত মতবাদটিও কেমন গতি পাচ্ছে!
৭। কোনো মতবাদের সমান্তরালে অন্যকোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐ মতবাদের সমালোচনা করা চলবে না। কেননা সমালোচনার বৈশিষ্টই হচ্ছে মানুষের চোখ খুলে দেয়া। বরং ঐ মতবাদের একজন হিসেবে নিজেকে জাহির করাই হবে জরুরী।
৮। মতবাদ প্রতিষ্ঠাকারীকে কখন টনটনে প্রেস্টিজের অধিকারী হওয়া চলবে না। যতো সমালোচনা আসুক হাসি মুখে তা বরণ করে নিতে হবে। যত লাঞ্চনা গঞ্জনা আসুক, মুখ বুঝে তা সয়ে নিতে হবে।
৯। “ফিহর”উত্তর তার আওলাদরাই (খান্দানে কুরাইশ) জাযিরাতুল আরবে সবচেয়ে সম্মানি হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। তার বংশধরদের মধ্যেও বানু হাসিম হচ্ছে আলাদা সম্মানের দাবীদার। এর মূলে রয়েছে বায়তুল্লাহর খেদমত। বানু হাশিমের দুই শাখা গোত্র বানু আব্দুল মুত্তালেব ও বানু উমাইয়া প্রায় কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী। বানু আব্দে মুত্তালিব মর্যাদায় কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বানু উমাইয়ারা ক্রমশ তাদেরকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নবীয়ে আখিরুজ্জামান বানু আব্দে মুত্তালিব বংশে জন্ম নিলে বানু উমাইয়ার সম্ভাবনা চিরতরে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।
১০। আরব জাতির একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রবল জাত্যানুভূতি। বংশীয় কৌলিণ্য টিকিয়ে রাখার খাতিরে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মোটেও কুন্ঠিত হয় না। যদিও ইসলামের পরশে পাথরের মূর্তিগুলো ভেঙে চুরমার হবার মতো এই জাহেলী আসাবিয়্যাও মরুর বালিতে মুখ বুঝেছিল কিন্তু ইবনে সাবার বিশ্বাস ছিল— মরুর বালি খুঁড়ে সেই আসাবিয়্যাহর গায়ে বাতাস দিয়ে একে জীবন্ত করা সম্ভব। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে এই একটা মাধ্যমই হবে শত শত মাধ্যমের চেয়েও মোক্ষম। অতএব আমাকে যেমন করেই হোক সেই মৃত আসাবিয়্যাহকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।
মদীনায় ইবনে সাবা
এসব বিষয়কে স্মৃতিতে রেখে সাবাপুত্র মুসলিম সমাজে ঢুকে পড়ার গরজ অনুভব করলো। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিতে সে মোটেও দেরি করলো না। সে হযরত উসমান রাযি. এর খেলাফতের শেষ দিকে ইয়ামেন থেকে মদীনায় চলে আসে এবং উসমান রাযি. এর হাতে হাত রেখে বাহ্যত ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর কাছে সম্মান এবং হুকুমতের একটা পদ চেয়ে বসে। উসমান রাযি. তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করলে সে নিজেকে অপমানিত বোধ করে। যদি সে দিন তার চাওয়াটা বাস্তবায়িত হয়ে যেতো, তাহলে তার মিশনের একটা স্বর্ণ ফটক উন্মোচিত হয়ে যেত। কিন্তু অপমানটা সে গায়ে মাখায়নি। কেননা এমন প্রতিক্রিয়া দেখালে মিশনকে এগিয়ে নেয়া যাবে না।
সে বানু উমাইয়ার ও বানু আব্দুল মুত্তালিবের মধ্যকার পুরনো বিবেধ জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হলো। এবং এ জন্য নিজেকে এবং তার মুষ্টিমেয় অনুসারীদেরকে “শিয়ানে আহলে বায়ত” বা “হামিয়ানে আহলে বায়ত” নামে পরিচিত করতে লাগল। ঘটনা ক্রমে সে সুযোগটাও পেয়ে গিয়েছিল। কারণ উসমান রাযি. এর চাচাতো ভাই মারওয়ান বিন হাকাম— যে তাঁর সেক্রেটারি হয়ে উঠেছিল, সে কোনো গুণধর লোক ছিল না। সে উসমান রাযি.এর নম্রতার সুযোগ নিয়ে খান্দানি পাসদারি শুরু করে দিয়েছিল। আর ইবনে সাবা সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সত্য-মিথ্যা প্রোপাগান্ডার তুফান চালিয়ে যাচ্ছিল।
এটা মানুষের স্বভাবজাত একটা প্রবণতা যে, কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যেও তোমার গুণগান গায় তাহলে সহজে তুমি তার উপর সন্দিহান হয়ে উঠবে না। তেমনি প্রক্রিয়ায় সে বানু আব্দুল মুত্তালিবের কিছু সংখ্যক অদূরদর্শী লোককে বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল। সে সতত তাদেরকে বিদ্রোহের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে উসমান রাযি. অতিষ্ট হয়ে তাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেন।
বসরায় ইবনে সাবা
মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে সে বসরায় হাকিম বিন জাবালা নামক এক দুর্বৃত্তের আশ্রয়ে চলে যায়। এই দুর্বৃত্ত মুসলিম সেনাদলের সাথে মিশে জিম্মিদের মাল-সামানা লুটতরাজ করে কেটে পড়তো। তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবার মুসলিম সমাজের ভাব মর্যাদাকে রক্ষার জন্যে বসরার গভর্ণর উসমান রাযি. এর অনুমতি নিয়ে তাকে তার ঘরেই অন্তরীণ করে রাখেন।
ইবনে সাবা বসরায় পৌঁছে নিজেকে একজন সাচ্চা মুসলমান এবং আহলে বাইতের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেকে পরিচয় দেয়। এরপর ওখানে থেকে বসরার লুটেরা আর বদমাইশগুলোকে তার দলে টেনে নেয়। অতঃপর অব্যাহত প্রোপাগান্ডা চালিয়ে ইসলামি আকাইদে একটার পর একটা ভ্রান্ত আকাইদ ঢুকিয়ে দেয়ার প্রয়াস পায়।
ইবনে সাবার প্রোপাগান্ডা
ইবনে সাবা তার মিশনটাকে সফলতার রাজপথে দ্রুতবেগে দৌঁড়ানোর জন্য যে যানটাকে সবসময় ব্যবহার করতো সেটার নাম হচ্ছে প্রোপাগান্ডা।
মানুষের গ্রহণক্ষমতা পরিমাপের জন্য সে সর্বপ্রথম যে আকিদাটির প্রচার করেছিল সেটি হচ্ছে— “মুহাম্মাদ সা. কিয়ামতের পূর্বে আবারো ধরাধামে ফিরে আসবেন”। প্রকৃত মুসলমানরা এ বিশ্বাসটি কেবল হযরত ঈসা আ.এর ব্যাপারেই পোষণ করে থাকেন।
সে তার এই মিথ্যেদাবীর সপক্ষে নিম্নোক্ত আয়াতের বিভ্রান্তকর ব্যাখা দিয়েছিল।
আয়াতটি হচ্ছেঃ ” যিনি তোমার জন্য কুরআনকে করেছেন বিধান, তিনি অবশ্যই তোমাকে ফিরিয়ে আনবেন প্রত্যাবর্তন স্থলে”।
মানুষের বোধ আর বোধির কথা বলবেন না, যে কোনো স্থরের যে কোনো মানুষ যতই অযৌক্তিক আর হাস্যকর আকিদা আবিস্কার করুক না কেন, তা স্বীকার করার জন্যে লোকের অভাব পড়ে না। যদি মন লাগিয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাওয়া যায় তাহলে ক্রমশ দলটা ভারী হতে থাকে। রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর থেকে এ যাবৎ কত মানুষ যে, খোদায়ী আর নবুওতের দাবী করেছে তার ইয়ত্বা নেই। কিন্তু কাউকেই অনুসারী না পাবার অভিযোগ করতে শুনা যায় নি।
প্রোপাগান্ডা একটা সাংঘাতিক কার্যকরী অস্ত্র। এটা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যের রূপ দিতে সক্ষম।
দুরন্ত সাবাপুত্রের আবেদন কারো কানে পৌঁছে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে ফিরে আসতো না।
বেলায়েত, অসীয়ত ও ইমামত
ইবনে সাবা যখন আন্দাজ করতে পারলো তার প্রচারণা কাজ দিচ্ছে, মৎসের দল খাবারের লোভে টোপের দিকে দৌঁড়ে আসছে তখন সে অত্যন্ত সন্তর্পনে আকীদার বরশীতে আরেকটি লোভনীয় টোপ গেঁথে দেয়। এবার প্রোপাগান্ডা চালায় রাসূল সা. এর পর আলী রাযি.ই হচ্ছেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। মুহাম্মদ হলেন নবীউল্লাহ, আর আলী হলেন ওলী উল্লাহ। বাহ্যিকভাবে আকিদাটা ছিল সাদা মাটা। কিন্তু এটা ছিল তার কুকীর্তিগুলোর প্রথম ধাপ। প্রথমে এ দাবীর সপক্ষে আহাদিসে সহীহায় বর্ণিত মানাকিবে আলী সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে খুব ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। এরপর সে তার স্বভাবসুলভ দাজ্জালির মাধ্যমে এ ব্যাপারে মনগড়া অসংখ্য হাদীস বানিয়ে নেয়।
দু’টি আকীদার প্রবর্তন ঘটানোর পরও যখন সে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো না, তখন তার দুঃসাহসটা বেড়ে গেল। এক পর্যায়ে দাবী করে বসলো প্রত্যেক নবীরই একজন ‘অসী’ থাকেন, যেমন মুসা আ. এর অসী ছিলেন হযরত ইউশা বিন নূন আ., তেমনি প্রিয় নবী সা.এর অসী হচ্ছেন হযরত আলী রাযি.। বেলায়েত প্রমাণের ক্ষেত্র সে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছিল, অসীয়ত প্রমাণের ক্ষেত্রও একই পন্থা অবলম্বন করেছিল।
দুঃসাহসী সাবা তনয় এরপর দাবী করে বসল, প্রকৃত মুসলমান হবার জন্য যেমন তাওহীদ, রিসালত, বিলায়ত এবং অসীয়তের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরী তেমনি ইমামতের উপরও বিশ্বাস রাখা অবশ্য কর্তব্য। আর রাসূলের পর আলী রাযি.ই হচ্ছেন ইমাম। এ ইমামত রাসূলের বংশধারা তথা আলী এবং ফাতেমার আওলাদদের মধ্যেই প্রবাহিত হবে।
সে তার অনুসারীদের কানে একথাও বলে দিত— আলী রাযি. থেকে যে সব অলৌকিক ঘটনা পেয়েছে তা মানবিক ক্ষমতার অনেক উর্ধে। তবে এর সাথে এ কথাটাও বলতে ভুলত না যে, আমি যা বলছি তা নিজ পক্ষ থেকে বলছি না। এগুলো আমার অন্তরে ইলহাম করা হচ্ছে।
ইবনে সাবা ছিল অত্যন্ত চতুর। যখন সে অনুভব করতে পারলো যে, তার কথা কিছুটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তখন সে দেরী না করে এ কথার প্রোপাগান্ডা চালাতে লাগলো যে, নবীজি সা. তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে আলী রাযি কে খলীফা হিসেবে অসিয়ত করে গিয়েছিলেন। এ দাবীর স্বাভাবিক চাহিদানুযায়ী যা বলতে ক্রমান্বয়ে সে সবগুলোই প্রচার করতে লাগলো। সুতরাং প্রথমে বলল: প্রিয় নবীর সা. অসিয়তের উপর আমল না করে সকল সাহাবায়ে কেরাম হক থেকে প্রত্যাবৃত্ত হয়ে গেছেন। তাঁরা দ্বীনকে না মেনে মুরতাদ হয়ে গেছেন। আবু বকর আর উমর রাযি. জোরপূর্বক খেলাফত দখল করেছিলেন, সুতরাং খুতবায় তাদের বিরুদ্ধে “তাবাররা” (অভিশাপ হানা) ওয়াজেব। উসমান রাযি. ও একই ধারাবাহিকতায় খেলাফতের মঞ্চে এসেছেন, ইনিও জালিম। এঁকে পদচ্যুৎ কিংবা হত্যা করে খেলাফতব্যবস্থাকে বানু আব্দিল মুত্তালিবের হাতে পৌঁছে দেয়া ওয়াজেব। কারণ বর্তমান খলিফা একদিকে যেমন অযোগ্য, তেমনি জালিম। তাঁর প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট মারওয়ান আজ ক্ষমতাটা কুক্ষিগত করে রেখেছে। তিনিই তাকে শ্বেত কৃষ্ণ তথা পুরো মিল্লাতের উপর ফ্রান্কেস্টাইন বানিয়ে রেখেছেন। আজ প্রশাসনের যে দিকেই তাকান কেবল বানি উমাইয়াদের কল্লাই দেখতে পাবেন। চরম আত্মীকরণের ফলে ওরা যাচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে। মানবাধিকার আজ ওদের নিষ্টুর চাবুকের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত। সে যাদের কাছে একথাগুলো বলতো তাদেরকে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিত যে, খবরদার! কথাগুলো আমি বলেছি বলে কাউকে জানাবে না। আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে কথা বলছি না। বলছি আওলাদে রাসূলদের স্বার্থে। সত্য না হলেও যে সমস্ত মানুষ বানি আব্দুল মুত্তালিবের প্রতি দুর্বল ছিল তাদের অন্তরে কথাগুলো কিছুটা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছিল।
একেরপর এক এ ধরনের বিভ্রান্তি চালাতে থাকলে একদিন বসরার গভর্ণর তাকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কে তুমি? কোথায় তোমার আবাস? তোমার উদ্দেশ্যটা কী? ইবনে সাবা দুঃসাহসের সাথে উত্তর দিল এখানে ইহুদিবাদের গন্ধ পাচ্ছি, ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগই আমাকে এখানে টেনে এনপেছে। গভর্নর বললেন: খুঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তুমি দল পাকাচ্ছ। ষড়যন্ত্র বিস্তার করে মানুষকে ধোঁকা দিতে যাচ্ছ। আসলে তুমিই একজন ইহুদি। ইসলামের বেশ ধরে ইসলামের ক্ষতি সাধনই তোমার উদ্দেশ্য। সময় থাকতে ঠিক হয়ে যাও। না হয় পরিণতি হবে ভয়াবহ।
ইবনে সাবা এ হুমকি পেয়ে বসরাকে আর নিরাপদ ভাবতে পারলো না। হাকিম বিন জাবালাকে তার মিশনের দায়ভার সমঝিয়ে দিয়ে তার হাতে একটা খসরা সংবিধান ধরিয়ে দিয়ে ওখান থেকে তৎকালীন সময়ের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রভূমি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেেল।
কুফায় ইবনে সাবা
সাবা পুত্রের সৌভাগ্যই বলতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে খলীফাকর্তৃক মনোনীত কুফাস্ত রাজস্বআদায়কারীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই সাধারণ মানুষের প্রচুর অভিযোগ ছিল। তাই ইবনে সাবার জন্য পরিবেশটা ছিল গনীমতস্বরূপ। সে ঐ গোলযোগসৃষ্টিকারীদের হোতা মালিক আশতার নাখয়ী গংদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে নেয়। কুফায় পৌছেই সে নিজেকে দুনিয়াত্যাগী একজন দরবেশের মতো পরিচিত করে তুলতে সচেষ্ট হয়। আর মুহাব্বাতে আলী, ও মুহাব্বাতে আহলে বায়তের ট্রাম্পকার্ডটা তো সাথে ছিলই। সুতরাং খলীফার রাজস্বআদায়কারীর বিরোধী লোকেরা দলে দলে তার ফাঁদে আটকা পড়তে থাকে।
কুফায় যখন এভাবে বিদ্রোহমূলক এবং বিভ্রান্তকর ধর্মবিশ্বাসের প্রচারণা চালাচ্ছিল তখন সেখানকার গভর্নর একদিন তাকে পাকড়াও করলেন। কুফার বুযুর্গ লোকজন ইতোপূর্বেই তাকে একটা দু’মুখী কেউটে শুমার করে আসছিলেন। সুতরাং সে বুঝতে পারলো কুফায়ও তার দিন ঘনিয়ে এসেছে তাই একদিন সে ওখান থেকে দামেস্কের দিকে পা বাড়ায়। তবে বসরা থেকে বিদায়ের পূর্বে যেমন একটি দল রেখে এসেছিল তেমনি বিদায়ের প্রাক্কালে এখানেও মালিক আশতার নাখয়ীর নেতৃত্বে অধিকতর ভারী একটা দল রেখে যায়।
ইবনে সাবা দামেশকে
ইবনে সাবার জন্য দামেশকের পরিবেশ মোটেও অনুকুল ছিল না। কারণ সেখানকার গভর্ণর ছিলেন দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রাযি.। তিনি ছিলেন অন্যায় আর নৈরাজ্যের মোকাবেলায় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো মজবুত।
ইবনে সাবা দামেশকের অবস্থা আঁচ করার জন্য একদিন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সাহাবী হযরত আবুদ্দারদা রাযি. এর কাছে তার বিভ্রান্ত আকিদাগুলো তুলে ধরছিল। আবুদ্দারদা রাযি. কিছুটা শুনেই বলে দেন তোকে তো ইহুদির ঔরষজাত বলে মনে হচ্ছে। তুই তো ইসলামের মুখোশ পরে ইসলামকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছিস।
সাবাপুত্রের জন্য সাহাবায়ে কেরামের অন্তদৃষ্টিকে ভয় পাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু ভয় পেয়ে বসে থাকলে কি তার চলবে? তাই আরেকদিন সে কথাগুলো উবাদা বিন সামিত রাযি. কে বলতে গিয়েছিল। হযরত উবাদা রাযি. কিছু কথা শুনেই তাকে পাকড়াও করত সোজা হযরত মুয়াবিয়া রাযি. এর কাছে নিয়ে যান। তাঁকে লক্ষ করে বলেন: আমার মনে হচ্ছে এই পাপিষ্টই হযরত আবু যার গিফারী রাযি. এর মতো সহজ সরল সাহাবীকে খলীফার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। দূরদর্শী মুয়াবিয়া রাযি. তখনই তাকে দামেশক থেকে তাড়িয়ে দেন।
পরবর্তী পর্বে সমাপ্য
লেখক : মুহাদ্দিস ও অনুসন্ধানী গকেষক