Monday 29th April 2024
Komashisha familyAdvertisementContact । Time: দুপুর ১:৫৩
Home / পরামর্শ / শিক্ষার্থীর পাথেয়-১

শিক্ষার্থীর পাথেয়-১

শিক্ষার্থীর পাথেয়এহতেশামুল হক ক্বাসিমী ::

জীবন যাদের হিরন্ময়
মানুষের জীবনে স্বপ্ন বাঁধে বাসা। বর্ণিলস্বপ্নে জীবন থাকে ঠাসা। লালন করে সবাই ছোট বড় অনেক আশা। অনেকে দেখে বড়ো বড়ো কত যে স্বপ্ন। কিন্তু এগুলোর অনেকটাই হয়ে যায় ম্লাান বা গৌণ। জীবনে সবাই ফুটাতে চায় আশার আলো। হোক সে সুন্দর সাদা বা কুশ্রী কালো। কিংবা ধনী বা দরিদ্র।
যার জীবনে স্বপ্ন নেই সুন্দর, তার হৃদয় যেনো এক মৃত অন্তর। তার জীবন ঐ মৃত বৃক্ষের মতো। যে নিজের সর্বাঙ্গের সজীবতা হারিয়ে হয়ে যায় কুৎসিত।
যার নেই কোনো সুন্দর স্বপ্ন, নেই উন্নত জীবনের আশা, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি নেই যার প্রেম-ভালবাসা, শুধু জীবিকানির্বাহ ছাড়া যার জীবনে নেই কোনো উদ্যমতা, সে হলো নরাধম। এমন প্রকৃতির মানুষকে বলা হয় পৃথিবীর আবর্জনাসম।
আর যার স্বপ্ন আছে, আছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সদিচ্ছা, তার উপর অত্যাবশ্যক হলো, স্বপ্নকে সময়ের খাচায় বন্দী করা এবং পরিকল্পিত ভাবে লক্ষ্য বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে চলা।
জীবনের লক্ষ্য নির্ণয় মানুষের জীবনকে অর্থবহ ও উদ্যেমী করে তোলে এবং সময়কে যথাযথ কাজে লাগানোর পথ সুগম করে দেয়।
যারা সময়কে কাজে লাগাতে পারে, মানযিলে মাকসাদ তাদের তরেই এগিয়ে আসে। হিরন্ময় জীবন তাদেরকেই হাতছানি দিয়ে ডাকে। তারা কখনোই লক্ষচ্যুত হয় না, পৌঁছে যায় একদিন আপন লক্ষ্যপানে।

সফল জীবনের প্রথম শর্ত
জীবনে সফল হতে হলে সর্বপ্রথম যা দরকার তা হলো, নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া এবং শুভধারণা পোষণ করা। ‘আমি পারবো’ যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস পোষণ করে, সে পারে। ‘আমি পারবো’ এই বিশ্বাস প্রত্যেক সফল ব্যক্তির সফলতার প্রথম পদক্ষেপ।
যে কোনো কাজই হোক না কেনো, সেকাজের জন্য আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি না থাকলে তাতে ভালোভাবে সফল হওয়া যায় না। লেখাপড়াকে ভয় করলে লেখাপড়ায় ভাল করা যায় না। তুমি যদি মনে করো, পরীক্ষায় পাশ করা বা ভাল ফলাফল করা সম্ভব নয়, তাহলে সত্যিই তোমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না।
আত্মববিশ্বাসের জোরে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। তোমার সহপাঠীরা কিংবা অন্যরা যা পারে, তা তোমার না পারার কী কারণ থাকতে পারে? সঠিকভাবে পড়ালেখা করলে নিশ্চয়ই তুমি পারবে।
সবসময় মনে আত্মববিশ্বাস থাকতে হবে যে, অন্যরা যদি পারে তাহলে আমি পারবো না কেনো? মনে ভয় থাকলে সহজ জিনিসও কঠিন হয়ে যায়। মাথায় ঢুকতে চায় না। কাজেই মনটাকে শক্তভাবে বাধো এবং ভয়ভীতি তনুমন থেকে মুছে ফেলো।
জেনে রাখো, সভ্যতার সবকিছুই মানুষের তৈরী। সুতরাং মানুষ যা করতে পেরেছে তুমিও তা করতে পারবে। যারা পারবে বলে বিশ্বাস করে তারাই পারে। আত্মবিশ্বাসই যুগে যুগে ইতিহাস নির্মাণ করেছে। পাল্টে দিয়েছে ইতিহাসের মূঢ়। যে মনে করতে পারে, পৃথিবীতে বড় কিছু করার জন্যই আমি জন্মেছি, সে বড় কাজ করতে পারবেই। যারা মনে মনেও পারে না, তারা বাস্তবে কী করে পারবে!

হীনম্মন্যতা আত্মবিকাশের অন্তরায়
নিজের প্রতি আস্তার দুর্বলতা মনের আশা ও প্রত্যাশাকে খুন করে ফেলে। জীবনকে একদম বরবাদ করে দেয়। কারণ, হীনম্মন্যতা মানুষের আত্মবিকাশের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। মানুষের অসীম সম্ভাবনার পথে সবচে’ বড় বাধা। অতএব সাফল্য ও প্রাচুর্য অর্জন করতে হলে হীনম্মন্যতার এই মনোদৈহিক শৃঙ্খল ছিন্ন করতে হবে।
আমরা যদি বিশ্বাস করতে পারি – রাসূল সা. এর আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য এবং সকলকে সেই আদর্শে দীক্ষিত করার জন্য আমরা আল্ল¬াহর তরফ থেকে মনোনীত। যদি বাস্তবেই এমন বিশ্বাস লালন করতে পারি তাহলে সফল আমরা হবোই। কোনো বাধা-ই আমাদের সফলতাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। মেধার স্বল্পতা , শারীরিক অসুস্থতা, আর্থিক অসচ্ছলতা এবং পারিবারিক প্রতিকূলতাসহ কোনো কিছুই আমাদেরকে উদ্দেশ্য সাধনে ব্যাহত করতে পারবে না।
আর বাস্তব কথা হলো। যারা জীবনে কোনো বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয় না, তারা সফলতার রাজপথে উঠতে পারে না।

ক্রিয়াশীল বা সচেতন তালিবে ইলমের কয়েকটি গুণ
যেসকল তালিবে ইলেম ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে, যাদের দ্বারা অন্যরা প্রভাবিত হয়, তাদের মধ্যে যে সকল গুণ থাকে সে গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- তাদের ব্যবহার হয় অমায়িক। তারা হয় মিশুক প্রকৃতির। তারা নিজেদের কাজকর্মে দায়িত্ববান থাকে। তারা হয় সৎচরিত্রের অধিকারী। চলনে বলনে ও আচার আচরণে তারা হয় বিনয়াবনত। তাদের চেহারায় ফুটে উঠে কোমলতার ছাপ। তারা দারসের কিতাবাদি গভীরভাবে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি খারিজী মুতালাআও নিয়মিত করে থাকে। দিন দিন তারা উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় আপন কর্মে ও সাধনায়।

তালিবে ইলমের দৈনন্দিন করণীয়
এখনো আমরা একটি নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুভাগেই রয়েছি। একজন সত্যিকার অর্থের তালিবে ইলিমের কাজ হলো- সালানা ইমতেহানের পরেই আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেয়া। হিজরী শাওয়াল মাসে মাদরাসা খোলার পর নতুন শ্রেণিতে যেসব বিষয় ও যেসব কিতাবের সবক শুরু হবে, সেসব বিষয় ও কিতাবের প্রাথমিক ও প্রস্তুতিমূলক আলোচনা নির্ভরযোগ্য উৎসসমূহ থেকে অধ্যয়ন আরম্ভ করা।
সবক শুরু হয়ে গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আগামী সবক অন্তত একবার মুতালাআ করে রাখা। নিয়মিত দারসে হাজির থাকা। দারস সমাপ্ত হওয়ার পর তাকরার করা এবং উস্তাযে মুহতারামের দেওয়া কাজগুলো সযতেœ আঞ্জাম দেওয়া। এগুলো একজন তালিবে ইলমের অপরিহার্য কর্তব্য। এসব ছাড়াও একজন সচেতন তালিবে ইলমকে আরো কিছু কাজ করতে হয়। যথা-
(১) নির্বাচিত শরাহ ও হাশিয়া মুতালাআা করা।
(২) নেসাবী কিতাবসমূহের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়িল ও মাবাহিসের উপর স্বতন্ত্র ও মানসম্পন্ন রচনাবলির সন্ধান নিয়ে অধ্যয়ন করা।
(৩) গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি নোট করা।
(৪) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি তাকরার ও পারস্পরিক মুযাকারার মাধ্যমে আত্মস্থ করা।
(৫) প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং হস্তলিপি স্পষ্ট ও সুন্দর করার চেষ্টা করা।
(৬) দ্বীনের সঠিক ধারণা ও আত্মশুদ্ধির জন্য আকাবির ও আসলাফের রচনাবলি পাঠ করা।
(৭) নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত এবং পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে নফল ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলা।
(৮) আদাবে মুআাশারা বা সামাজিক জীবনের শারয়ী রীতিনীতি ভালোভাবে রপ্ত করে বাস্তব ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোরভাবে তার অনুশীলন করা।
(৯) লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও হীনচরিত্রের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
(১০) লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহ ও কৌতুহল নিয়ে পড়া।
(১১) শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দরসগাহের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা লালন করা।
(১২) উস্তায ও কিতাবের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা।
(১৩) ডায়রী বা রোজনামা লেখা
(১৪) আত্মপর্যালোচনা করা।
(১৫) রোটিনমাফিক মেহনত করা।

ভালো ছাত্রের পরিচয়
ভাল ছাত্র তাকেই বলা যায়, যার কোনো কিতাবের পাঠ সম্পন্ন হওয়ার পর বা কোনো শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর উক্ত কিতাব বা শ্রেণির কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জিত হয়। এ হলো ‘ভাল ছাত্র’ হওয়ার সর্বপ্রথম স্তর। এর পরে রয়েছে আরো অনেক স্তর।
বিষয়টি বুঝার স্বার্থে ‘নাহবেমীর’ কিতাবটির আলোচনা করা যাক। মুসান্নিফের কথা অনুযায়ী এ কিতাব থেকে তালিবে ইলমের তিনটি যোগ্যতা অর্জিত হবে।
(১) আরবী ভাষার তারকীব বুঝা।
(২) মু’রাব-মুবনী চিনতে পারা।
(৩) আরবী ইবারত শুদ্ধকরে পড়তে শেখা।
এ কিতাবটি বা এ পর্যায়ের যে কোনো কিতাব যথাযথভাবে পড়া হলে উপরুক্ত তিনটি যোগ্যতা অবশ্যই অর্জিত হবে। অতএব, নাহবেমীর জামাতের ‘ভালছাত্র’ সে, যে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। সে মু’রাব-মাবনী চেনে, আরবী বাক্যের তারকীব করতে পারে এবং ইবারত সহীহভাবে পড়তে পারে। যার এই যোগ্যতা অর্জিত হয় নি, তাকে আরো মেহনত করতে হবে।
পরীক্ষায় কেউ ভাল রেজাল্ট করলেই বা সবার কাছে ‘‘ভালছাত্র’’ হিসেবে পরিচিতি পেলেই তাকে বাস্তবে ভালছাত্র বলা যাবে না। দেখতে হবে তার ইস্তেদাদ কতটুকু হয়েছে।
ভালছাত্র হতে হলে প্রত্যেক তালিবে ইলমের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হলো- নিজে চিন্তা-ভাবনা করে বা নিজের তালিমী মুরব্বীর পরামর্শ অনুসারে শিক্ষাবষের্র শুরুতেই নিজের ক্লাস ও পাঠ্যসিলেবাসের কাঙ্খিত যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং এব্যাপারে অধ্যাবসায়ের সাথে প্রয়োজনীয় মেহনত শুরু করা।

নেসাবী কিতাবসমূহের উদ্দেশ্য
মুফতী আব্দুল মালিক দাঃ বাঃ রচিত ‘পথ ও পাথেয়’ নামক গ্রন্থে ইলমের তিনটি পর্যায়ের কথা উল্লে¬খ করেছেনঃ
(১) কিতাবী যোগ্যতা।
(২) বিষয়ের পা-িত্য।
(৩) তাফাক্কুহ ফিদ্দীন তথা শরীয়তের গভীর ও পরিপক্ক জ্ঞান এবং মুফাক্কির ও দাঈ পর্যায়ের যোগ্যতা।
একজন তালিবে ইলমকে প্রথম পর্যায় বা স্তর অতিক্রম করে অবশ্যই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরে উন্নীত হতে হবে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবেছি, শেষোক্ত দুই স্তরে পৌছার জন্য কী কী প্রস্তুতির প্রয়োজন? বলাবাহুল্য এই দুই স্তরের যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় মেহনতও আমাদেরকে ছাত্র যামানায়ই শুরু করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো- এই মেহনত কীভাবে হতে পারে?
এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করার জন্য মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. কর্তৃক রচিত ‘পাঁজা সুরাগে যিন্দেগী’ এবং মাওলানা মনযূর নুমানী রাহঃ এর বক্তৃতা- ‘আপ কওন হেঁ আওর কিয়া হেঁ’? আপকি মানযিল কিয়া হ্যায়? অবশ্যই মুতালাআ করা উচিৎ এবং অত্যন্ত বুঝে-শুনে আমলের নিয়তে বারবার মুতালাআ করা উচিৎ। আল্ল¬াহ আমাদের সবাইকে তাফাক্কুহ ফিদ্দীন অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

উস্তাদ- শাগরিদ সম্পর্ক
আমাদের পূর্বসূরী আকাবির ও আসলাফ যেসব বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ ছিলেন তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো-ছাত্রের প্রতি উস্তাদের উলফাত ও মুহাব্বাত এবং উস্তাদের সঙ্গে ছাত্রের দৃঢ় ও স্থায়ী সম্পর্ক। সালাফের যুগে অনেক আলেম এমন ছিলেন, যারা শিক্ষা সমাপনের পরও ১০, ২০,৩০ ও ৪০ বছর পর্যন্ত নিজের বিশেষ আহলে ফন শায়খের সাহচর্য গ্রহণ করেছেন।
আজকাল মাদরাসাসমূহে ইলমী দৈন্যতা ও অধঃপতনের একটি বড় কারণ হলো, উস্তাদ ও ছাত্রের সম্পর্ক ক্রমেই সাময়িক ও নিয়মসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। সময়ের প্রয়োজনে ও যুগের চাহিদায় শিক্ষা-দীক্ষা যখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, তখন থেকেই ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক উস্তাদগণের সাথে হওয়ার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হতে শুরু করেছে। এখন ছাত্ররা আসাতেযায়ে কেরামের সান্নিধ্য গ্রহণ করে না, গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের। ফলে উস্তাদবৃন্দের সাথে তাদের সম্পর্ক এখন নিয়মরক্ষার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। আর এর ফলাফলও আজ চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। এখন দাওরায়ে হাদীস বা নেসাবসমানপকারী ছাত্রদের মধ্যে ‘কিতাবী ইস্তে’দাদ’ অর্জন করেছে এমন ছাত্র শতকরা একজনও পাওয়া যায় না। আর ফন্নী ইস্তে’দাদ বা শাস্ত্রীয় বুৎপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা তো আরো নগণ্য। এরপর ‘রুসূখ ফিল ইলম’ ও ‘তাফাক্কুহ ফিদ্দীন’ এর যোগ্যতার অধিকারী অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ তো ‘আনকা’ পাখির ন্যায় আজ দুষ্প্রাপ্য!
বলাবাহুল্য, কোনো তালিবে ইলম ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণীয় আলেম হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আহলে ফন তথা শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির দীর্ঘ সাহচর্য গ্রহণ না করবে।
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, সমাজে উল্লেখযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য অবদান তারাই রাখতে পারেন, যারা নিজেদেরকে আসাতিযায়ে কেরামের সাথে যুক্ত রাখেন।

তা’লিমী মুরাব্বীর নেহায়েত প্রয়োজন
প্রত্যেক তালিবে ইলমের সম্পর্ক সকল উস্তাযের সাথে সমানহারে থাকার পাশাপাশি একজন নিবেদিতপ্রাণ সচেতন উস্তাযকে নিজের তালিমী মুরাব্বী হিসেবে নির্দিষ্ট করতে হবে। উনার পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। এতে জ্ঞানার্জনের পথে গতিময়তা আসবে এবং তারাক্কীর পথ দ্রুত সুগম হবে।

শয়তান যাদের প্রধান রাহবার!
ইলমে বাতিনী বা আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য যেভাবে একজন রাহবার বা মুরশিদের প্রয়োজন হয় তদ্রুপ ইলমে যাহেরী সঠিকভাবে অর্জনের জন্য একজন তালিমী মুরাব্বীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমান যুগের তালিবে ইলমদের ইলমী ও আখলাকী ময়দানে ধ্বস নামার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- তালিমী মুরাব্বী বা খাস তত্ত্বাবধায়ক না থাকা। এক্ষেত্রে শুধু তালিবে ইলমরাই দায়ী নয়। এখানে মাদরাসার সম্মানিত উস্তাযবৃন্দেরও খানিকটা কুতাহী রয়েছে। ছাত্রদের সামনে তালিমী মুরাব্বীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা তাদের উচিৎ ছিলো। কিন্তু বেশিরভাগ হুজুর এতে থাকেন চরম উদাসীন। ফলে ছাত্ররা যে যেমনে পারে আত্মপূজারী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে অনাবাসিক ছাত্ররা লাওয়ারিস হয়ে যায়। তারা চলতে থাকে স্বাধীনভাবে। তখন শয়তান হয়ে যায় তাদের প্রধান রাহবার।
কেনো প্রয়োজন তালিমী মুরাব্বী?
‘সব হুজুরের’ কাছে সব কিছু খুলে বলা যায় না। কারণ, ছাত্রের মেধা ও মননে, চিন্তা ও চেতনায় অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন কল্পনা-জল্পনা ও সুবিধা-অসুবিধার উদ্রেক হয়। এগুলো শেয়ার করে এর সুষ্টু সমাধান বের করার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একজন তালিমী মুরাব্বীর।
ছাত্ররা প্রায়ই হীনম্মন্যতার শিকার হয় এবং যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, এ সময় যদি তালিমী মুরাব্বী থাকেন তাহলে তাঁর সুপরামর্শে সব মুশকিল আসান হয়ে ওঠে।
শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ছাত্ররা যখন কিতাব কিনতে বাজারে যায় তখন দেখে প্রত্যেক কিতাবের একাধিক ব্যাখ্যাগ্রন্থ বা এর রকমারি নোট-গাইডে বাজার সয়লাব! তখন কোনটা কিনবে আর কোনটা কিনবে না, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অন্যদের কাছে পরামর্শ চাইলে একেকজন একেক ধরনের ফর্মূলা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে একজন সচেতন তালিমী মুরাব্বী থাকলে বিষয়টা একদম সহজ হয়ে ওঠে।

তালিমী মুরাব্বীর যোগ্যতা
তাকলীদ যেমন নির্দিষ্টভাবে একজন ইমামের করতে হয়, তালিবে ইলম নিজের তালিমী মুরাব্বী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তদ্রƒপ সুনির্দিষ্টভাবে একজন উস্তাদকে গ্রহণ করতে হবে। তবে অন্যান্য শিক্ষকের প্রতি স্বাভাবিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রাখতে হবে। একাধিক ইমামের তাকলীদে যে সকল সমস্যা আছে, তদ্রƒপ একাধিক মুরাব্বীর পরামর্শ গ্রহণ করলেও একই সমস্যা হবে।
নিজের তত্ত্বাবধায়করূপে এমন একজন শিক্ষককে নির্বাচন করতে হবে, যিনি তোমার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জীবন্ত রূপ হতে পারেন। যার মাঝে অনুপ্রেরণা ও তাড়নার চেতনা থাকে। থাকে ব্যক্তি গঠনের তামান্না। যিনি দরদ নিয়ে তালিবে ইলমের পেছনে মেহনত করে থাকেন। যিনি নিজেও থাকেন সর্বদা সচেতন। সকল বিষয়ে যার থাকে অগাধ ধারণা। ছাত্রের ক্যারিয়ার গঠনে হন নিবেদিত প্রাণ।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীর পাথেয় – ০১

শিক্ষার্থীর পাথেয় – ০২

শিক্ষার্থীর পাথেয়- ০৩

লেখক : মুহাদ্দিস ও তরুণ গবেষক

Check Also

মুহিব খান

কওমী মাদরাসা।

মুহিব খান :: দেশ ও মানুষের নিরাপদ আশ্রয়। গোটা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দুর্গ। ইলমে নববীর সুরক্ষিত ...