শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:১৮
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / সমুদ্র ঈগল ৮-৯

সমুদ্র ঈগল ৮-৯

কুতায়বা আহসান :

– মা‘আয তার ভাই মুগীরা ছাড়াও নুবায়রা, নাবিল, আর বাসিতকে নিয়ে প্রতিদিন বুযুর্গ জাবির বিন মুগীছের ওখানে আসা যাওয়া করত। এভাবে দিন খুব তাড়াতাড়ি সপ্তাহ ও মাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল।

– ওদিকে একদিন কাকাদ আর খাজা সারা হাসান আগা সুলতান সেলিম কর্তৃক প্রেরিত সাহায্যবাহী জাহাজ নিয়ে আফ্রিকার উপকুলে এসে পৌঁছালেন। তাদেরকে দেখামাত্রই খাইরুদ্দীন বারবারুসা, হাসান ক্রুসু এবং সানআন সহ খাইরুদ্দীনের অন্যান্য সাথীরা উপকুলে চলে আসলেন। খাইরুদ্দীন খুব উৎফুল্ল হৃদয়ে কাকাদ এবং তুর্ক লশকরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।

– খাইরুদ্দীন সর্বপ্রথম তাঁর সাথীদের সাথে আগত চার হাজার তুর্ক বাহিনীকে কেবল স্বাগতমই জানাননি, বরং তাঁদের থাকা খাওয়ারও উত্তম ব্যবস্থা করে দেন। এ কাজ থেকে ফারিগ হবার পরপরই তিনি তাঁর সকল নেতৃস্থানীয় সাথীদেরকে তাঁর খিমায় তলব করে পাঠালেন। এরপর সেই জমায়েতকে লক্ষ করে বলতে শুরু করলেন:
– আমার আযীয ও মুহতারাম সাথী ভাইয়েরা! আমি সুলতানে মুহতারামের কাছে যে সাহায্যের, যে সহযোগিতার আশা করেছিলাম খোদাওন্দে কুদ্দুসের অপার মেহেরবানীতে সুলতান আমাকে আমার আশাতীত সাহায্য সহায়তা দিয়েছেন। চার হাজার তুর্ক সেনাদের আগমন এ কথার ইঙ্গিত করছে আল্লাহ চাহেতো আগামী দিনগুলোতে আমরা আমাদের সকল শত্র“দের পদানত করে এগিয়ে যেতে পারবো। আমি আগত এই মহান মুজাহিদদের একদিনও বেকার বসে থাকতে দেব না। অতি শীঘ্রই তাদেরকে কাজে লাগিয়ে দেব। দ্রুতই আমি অভিযান শুরু করে দেব। এর জন্য আমি আগে থেকেই একটা পরিকল্পনা স্থির করে রেখেছি। এ মুহূর্তে আমি সে পরিকল্পনাটা বিস্তারিতভাবে খুলে বলবো না। কেবল এ টুকুই বলবোÑ বর্তমানে আমাদের কাছে মোটামোটি বড় একটা নৌবহর প্রস্তুত আছে। আগামী কালই এই নৌবহর নিয়ে আমাদের অভিযানে বেরিয়ে পড়বো।

– হাসান আগা! তুমি এখানেই শিবির পেতে অবস্থান করবে। তোমার সাথে এ জায়গাটা নিরাপদ রাখার মতো সাথী থাকবে। বাকি সবাইকে নিয়ে আমি চলে যাব। আমি যা বললাম তার সাথে আপনারা কি একমত? যদি একমত না হয়ে থাকেন তাহলে নির্দ্বিধায় আপনাদের পরামর্শ খুলে বলতে পারেন। আমি আবারো বলছিÑ কী পরিকল্পনা আমি এঁটেছি তা এখনই খোলাসা করবো না, অভিযান শুরু করার পূর্বমুহূর্তে আমি আপনাদেরকে সে ব্যাপারে অবহিত করবো।

– বারবারুসার একজন সাথীও তাঁর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন নি। এর পরদিনই খাইরুদ্দীন বারবারুসা সাগরে নতুন তুফান শুরু তুলেছিলেন। তিনি তাঁর নৌবহর নিয়ে পশ্চিম দিকে গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যেতে লাগলেন।

সমুদ্র ঈগল ৯

রাত গভীর হয়ে যাচ্ছিল। সাগরের অশান্ত মৌজগুলো যেন তাদের হারানো প্রিয়তম কোনো বস্তুর খুঁজে অস্থির হৈহল্লা শুরু করে দিয়েছিল। এ যেন ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে লু হাওয়া প্রবেশ করে হাঠাৎ করে এক ইনকিলাবের জন্ম দেয়ার মতোই ব্যাপার ছিল। উম্মত্ত হিংস্র সেই মৌজগুলোর নর্তন কুর্দন আর চিক চিৎকার ছাড়া পুরো সমুদ্র ছিল সম্পূর্ণ নীরব। চারিদিকে ছিল নীরবতার চাদর বিছানো। যেন কেউ হঠাৎ করে একজন কাহিনীকারকে থামিয়ে দিয়েছে। অথবা যেন কোনো জীবনের ধমনী ক্রমশ ধীর শান্ত হয়ে আসছিল।

– খাইরুদ্দীন বারবারুসা তাঁর নৌবহরকে মরুমাঠে অশ্বের মতো দ্রুত হাঁকিয়ে হিস্পানীয়দের অধীন পানুন দ্বীপের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। এখানে হিস্পানীয়দের কমান্ডার ডনমার্টন একটা বড় বাহিনী নিয়ে অবস্থান করতো। এ ছাড়া দ্বীপটা ছিল আফ্রিকা অঞ্চলের অস্ত্রের গোদাম হিসেবে পরিচিত। খাইরুদ্দীন বারবারুসা মূলত হিস্পানীয় সৈন্য এবং তাদের অস্ত্রপাতিকেই টার্গেট করেছিলেন।

– তিনি সাপের ন্যায় নিঃশব্দ মৃত্যুর বার্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। একসময় ইন্তেজারের ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেল। তাঁদের নৌবহর পানুন দ্বীপের উপকুলে গিয়ে নোঙর করলো। উপকুলে পৌঁছার পর মুহূর্তেই খাইরুদ্দীন বারবারুসার মাল্লারা তাঁর কমান্ডে বিদ্যুৎগতিতে কাজ শুরু করে দেয়। খাইরুদ্দীন এবং তাঁর ঈগলক্ষিপ্র কমান্ডাররা হিস্পানীয়দের অন্ধকারে রাখার জন্য ছোট ছোট নীল আলোর মশাল ব্যবহার করছিলেন।

– এরপর মুসলধারের বৃষ্টি যেভাবে মাটির ঢেলাকে কাদায় পরিণত করে দেয়, সাইমুম যেভাবে বালির ডিবিকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তেমনি এক ভয়ঙ্কর তুফানগতিতে হিস্পানীয়দের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে হিস্পানীয়রা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা স্রোতের টানে শ্যাওলারা ভেসে যাবার মতোই ভেসে যেতে থাকে। হঠাৎ করে কুদরতি আজাবে পড়ে যেন তারা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছিল।

– পানুন দ্বীপের সে রাতটা ছিল হিস্পানীয় সৈন্যদের জন্য একটা দুঃস্বপ্নের রাত। তারা কল্পনা করতে পারেনি এমনভাবে তারা খাইরুদ্দীন কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারে। তারা মনে করছিল তারা খাইরুদ্দীনকে আফ্রিকা থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। খাইরুদ্দীনকে সেই ভাঙা মেরুদণ্ড মেরামত করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে অনেকদিন সময় লাগবে। অতএব অদূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত তারা তাঁর দিক থেকে নিরাপদ। কিন্তু তারা জানতো না খাইরুদ্দীন ছিলেন এমন এক দুর্ধর্ষ মাল্লা, যিন যিন উত্তাল সাগরে নতুন তুফান জাগিয়ে তুলতে জানেন।

– খাইরুদ্দীন অত্যন্ত সুচিন্তিত ও জোরালোভাবে আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি উপকুলে নেমেই তাঁর বাহিনীকে দুভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন। হিস্পানীয় সৈন্যদের উপর আক্রমণের দায়িত্ব নিজ কমান্ডে রেখেছিলেন, এতে তাকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্ষিপ্রগতির হাসান ক্রুসু এবং সালেহ। আর কাকাদ এবং সানআনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা যেন এই আক্রমণের ফাঁকে দ্বীপে যে পরিমাণ খোরাকী এবং অস্ত্র রয়েছে দ্রুত সে গুলো তাদের জাহাজে উঠিয়ে নিয়ে আসেন।

– গভীর রাতে হিস্পানীয়দের উপর এ অতর্কিত আক্রমণ প্রাণসংহারী প্রমাণিত হয়। খাইরুদ্দীন বারবারুসা দ্বীপের পুরো বাহিনীকে তার সাথে ব্যস্ত রাখেন আর এই সুযোগে কাকাদ আর সানআনের বাহিনী দ্রুত অস্ত্র এবং খাদ্যসামগ্রী তাদের জাহাজে পৌঁছানো শুরু করে দেন। খাইরুদ্দীন ওদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার মধ্যেই কাকাদরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাঁদের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ফেলেন। এরপর তারাও এসে খাইরুদ্দীনের সাথে আক্রমণে যোগ দেন।

– এবার খাইরুদ্দীন হিস্পানীয়দের উপর চূড়ান্ত আক্রমণ করে তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করত: দ্রুত উপকুলে চলে আসেন। ওখানে এসেই বড় আকারের আলো জ্বালিয়ে খাইরুদ্দীন হিস্পানীয়দের লক্ষ করে উচ্চসূরে বলতে লাগলেন:
– “তৃত্ববাদের ফরযন্দরা শুনো! সময় এসে গেছে আকাশ থেকে বর্ষিত আজাবের আকারে তোমাদের না-পাক আত্মাগুলো ধুয়ে ফেলার। তোমাদের সুখের খিমাগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার”। এ কথাগুলো বলার পরপরই তিনি তাদের জাহাজে চড়ে গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যান।

– পানুন দ্বীপ ছিল আফ্রিকার উপকুলের নিকটেই। সুতরাং রাতের আঁধারেই পানুন দ্বীপের হিস্পানীয় কমান্ডার আফ্রিকার শাসনকর্তা মুনকিড বরাবরে সাহায্য চেয়ে পাঠান। মূনকিড আল জাযায়েরের বিশাল এলাকার শাসনকর্তা ছিলেন। খবর পাওয়ার সাথে সাথে রাতের আঁধারেই তিনি পানুন অভিমুখে সাহায্য নিয়ে যাত্রা করেছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল দ্রুত পানুন পৌঁছে ইচ্ছে মত খাইরুদ্দীনকে শায়েস্তা করবেন।

– কিন্তু খাইরুদ্দীন ছিলেন সাগরের এক দুর্বোধ্য আতঙ্কের নাম। তাঁর গোয়েন্দারাও সাগরে ছোট ছোট নৌকার সাহায্যে পারপারকারী ও জেলেদের বেশে হরদম সংবাদ সংগ্রহ করতো। তারা সব সময় শত্র“র প্রতিটি নকল ও হরকতের খেয়াল রাখতো। মূনকিড আলজাযায়ের থেকে পানুন অভিমুখে রওয়ানা হবার সাথে সাথেই খাইরুদ্দীন সে সংবাদটা পেয়ে যান এবং তাৎক্ষণিকভাবেই এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। তিনি তাঁর নৌবহরের যাত্রার মোড় ঘুরিয়ে আফ্রিকার উপকুলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে যেতে থাকেন।

– মুনকিড তার বাহিনীর বড় অংশ নিয়েই ডনমার্টনকে সহায়তা দিতে চলে গিয়েছিল। এই সুযোগে খাইরুদ্দীন ফুঁসে ওঠা গর্কির বেগে মুনকিডের এলাকায় গিয়ে চড়াও হন। মুনকিডের রেখে যাওয়া অপ্রস্তুত সৈন্যরা সে গর্কির মোকাবেলা করতে না পেরে একেবারে তছনছ হয়ে যায়। আর এভাবেই খাইরুদ্দীন বারবারুসা তাঁর ভাই উরুজের অধীনে থাকা আফ্রিকার এলাকাগুলোর উপর পুনঃকর্তত্ব প্রতিষ্টা করে নিতে সমর্থ হন।

– মুনকিড পানুনে এসে দেখতে পেলেন এ তো তাদের সেই পানুন নয়, এ যেন এক ভূতুড়ে নগরী। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কেবল ধ্বংসের স্বাক্ষর।

– তখন পূর্বাকাশ কিছুটা পরিষ্কার হয়ে আসছিল। পানুনের কমান্ডার ডনমার্টন মুনকিডকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসলেন। মুনকিড অত্যন্ত জোশের সাথেই তার সাথে করমর্দন করলেন। এরপর বিস্ময়কর এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তাকে লক্ষ করে বলতে লাগলেন:
– ডনমার্টন! তুমি সংবাদ পাঠিয়েছিলে তোমাদের উপকুলে খাইরুদ্দীন বারবারুসা হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু তুমি তো ধোঁকায় পড়নি? বারবার বা তুর্কদের কোনো নৌবহর তো তোমার উপর আক্রমণ চালায়নি? বারবারুসার পক্ষে এতো বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালানো কীভাবে সম্ভব? সে শক্তি তার কোথায়? আমরা তো তাঁর শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলেছিলাম। তাকে আমাদের উপকুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এতো তাড়াতাড়ি এতো বিশাল ধ্বংস সাধনের সামর্থ সে কোত্থেকে অর্জন করবে?

– ডন মার্টন কম্পিত কন্ঠে বলল: না স্যার! সে খাইরুদ্দীন বারবারুসাই ছিল। সে তার অভিযান শেষে সাহিলে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল সে এখন থেকে অব্যাহতভাবে আমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে যাবে।

– আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে— পানুনে আমাদের যে বিশাল খাদ্যভাণ্ডার ছিল আর আমরা তিলে তিলে ওখানে যে অস্ত্র ডিপো গড়ে তুলে তুলেছিলাম তার সবকিছু খাইরুদ্দীন লুটে নিয়েছে।

– ডনমার্টন তথ্যটা উপস্থাপন করলে মুনকিড ও তার সালাররা গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল:
– তুমি এই মুহূর্তে স্পেনে সম্রাট চার্লসের কাছে সাহায্য চেয়ে একজন দূত পাঠিয়ে দাও। কাসিদ মাধ্যমে বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতির ব্যাপারে তাঁকে সম্যক অবহিত কর। তাঁকে বলে পাঠাও! আফ্রিকায় আমাদের আধিপত্য ধরে রাখতে হলে পানুনে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েন করতে হবে। পানুনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়লে আফ্রিকায় আমাদের অবস্থান ঝুকির মাঝে পড়ে যাবে। উপকুলে যাবার পর আমিও তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে কাসেদ প্রেরণ করবো যেন তিনি ওখানেও কিছু সাহায্য দান করেন।

– ডনমার্টন মনে রেখা বারবারুসা তোমার ওখানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা আমাদের বদবখতির শুরু মাত্র। সে যদি অনুরূপ আরো ক’টা সফল হামলা চালাতে সক্ষম হয়ে যায় তাহলে সাগরে তার শক্তি সীমাহীন বেড়ে যাবে। তখন সে সাগরে এমন এক তুফান জাগিয়ে তুলবে যার মোকাবেলা করা আমাদের পক্ষে হয়ত সম্ভব না-ও হতে পারে। সে তখন আমাদেরকে বিপর্যস্ত করে তুলবে। ডনমার্টন সে যদি সাগরে তার শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে তাহলে আফ্রিকার অভ্যন্তরেও আমাদের অবস্থান বিপন্ন করে তুলবে। সে যদি জাজিল দ্বীপকে তাঁর শক্তির আস্তানা রূপে গড়ে তুলে তাহলে জেনে রেখো আলজাযায়েরে আমাদের অবস্থান হুমকির মুখে পড়ে যাবে। আর যদি তিউনিশকে সে তাঁর শক্তির উৎস বানিয়ে তুলে তাহলে আমাদের সিসিলি ভীষণ খতরার মুখে পড়ে যাবে।

– ডনমার্টন কথাগুলো শুনে আরো হতাশ হয়ে পড়ল। সে বিষন্ন কন্ঠে বলতে লাগলো:
– “স্যার সে বিরাট এক শক্তি নিয়ে ঝড়ের তাণ্ডবে আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। উপকুলে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর নৌবহরে জাহাজের সংখ্যাও ছিল যথেষ্ট। সে আমাদের সবকিছু লুটে নিয়ে ঐ জাহাজগুলো ভরে উদাও হয়ে গেছে।

– মুনকিড এই দুর্ভাগ্যের উপর আফসুস করে নীরব হয়ে যায়। অতঃপর সে ডনমার্টনকে সাথে নিয়ে খাইরুদ্দীন কর্তৃক চালানো ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শনে এগিয়ে যেতে থাকে।

– পানুন দ্বীপে স্পেনীয়রা বেশ কতকগুলো স্থাপনা গড়ে তুলেছিল। এগুলোর ভেতর তারা অস্ত্র ও খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছিল। মুনকিড হতবাক হয়ে দেখতে পেল— সবগুলো স্থাপনা সম্পূর্ণ শূন্য। যেন কোনো দিন ওখানে কোনো অস্ত্রপাতি কিংবা খাদ্যজাত দ্রব্য রাখা হয়নি।

– পুরো এলাকা পরিদর্শন শেষে মুনকিড ডনমার্টনকে সাথে নিয়ে আবার ফিরে আসেন। তিনি দুপুর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনি যে বাহিনী নিয়ে গিয়েছিলেন ডনমার্টন তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন।

– আহার শেষে মুনকিড তার আবাসস্থলে ফিরে যাবার যখন উপকুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন অবাক হয়ে দেখতে পেলেন উপকুলে একটা নৌকা এসে ভিড়েছে এবং সেখান থেকে তিন জন অশ্বারোহী পাগলের মতো দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ওরা কিছুটা কাছে আসতেই মুনকিড তাদেরকে চিনে ফেললেন। এরা তার গোয়েন্দা দলের সদস্য। মুনকিড এ সময় এখানে তাদের উপস্থিতি দেখে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন।

– ওরা কাছে আসতেই তিনি তাদেরকে কিছু বলতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন: আমার পিছনে পিছনে তোমাদের চলে আসাটা নিশ্চয় কারণবিহীন নয়।

– তাদের একজন কিছুটা এগিয়ে এসে বলল: জ্বি স্যার! উপকুল থেকে আপনার চলে আসার পরপরই খাইরুদ্দীন বারবারুসা ঝড়ের তাণ্ডব নিয়ে সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে তাঁর ভাই উরুজের হাতে যেসব এলাকা ছিল সে সব এলাকা থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিয়ে তাঁর দখল মজবুত করে নিয়েছেন।

– আমাদের সৈন্যরা তাঁর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে তারা টিকে থাকতে না পেরে পালিয়ে এসেছে।

– এ সংবাদ শুনে মুনকিড আর ডনমার্টন একেবারে নির্বাক হয়ে পড়ল। এরপর মুনকিড ডনমার্টনকে উদ্দেশ্য করে বলল: মনে হচ্ছে খাইরুদ্দীন বারবারুসা এবার সত্যিকারের ঝড়ের রূপেই আবির্ভুত হতে যাচ্ছে। সে একই রাতে দু দুটি সফল আক্রমণ চালিয়েছে। তোমার এখানে আক্রমণ করে সে আমাদের শক্তির উৎস গুঁড়িয়ে দিয়েছে আর আমার এখানে আক্রমণ চালিয়ে সে তার ভাইয়ের অধীনে থাকা এলাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়েছে।

– মুনকিড কিছুটা ভেবে নিয়ে শংকিতকন্ঠে বলতে লাগলেন: ডনমার্টন তুমি সম্রাটের কাছে যে কাসেদ দল প্রেরণ করবে তাদেরকে ভালো করে বলে দেবে তারা যেন সম্রাটকে খাইরুদ্দীন কর্তৃক আফ্রিকার এলাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়ার ব্যাপারে অবহিত না করে। তারা যেন কেবল পানুন দ্বীপের অবস্থাটাই তাঁর কাছে তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন করে।

– আমি কিছুক্ষণের ভেতরেই সেখানে রওয়ানা হয়ে যাচ্ছি। আমি ওখানে গিয়ে জরুরী ভিত্তিতে আমাদের আফ্রিকান সহযোগীদের তলব করে তাদের সহায়তায় বারবারুসার উপর চূড়ান্ত আক্রমণ চালাবো। আমি যে কোনো মূল্যে ছিনিয়ে নেয়া পুনর্দখলে নিয়ে আসবো। খবরদার! শাহানশাহ যেন কিছুতেই জানতে না পারেন যে, মাত্র একটি রাতের ভেতরে সে আমাদেরকে দুটি ফ্রন্টে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে। বিষয়টা জানতে পারলে নিশ্চয় তিনি আমার ও তোমার উপর ক্ষেপে যাবেন। তখন হয়ত আমাদেরকে চূড়ান্ত অপমানের সাথে এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।

– ডনমার্টন মুনকিডের প্রস্তাবের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে সে একদল কাসেদকে হিস্পানিয়া অভিমুখে পাঠিয়ে দেয়। আর এদিকে মুনকিডও তার অবস্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে যায়।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...