শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৩:০৫
Home / কওমি অঙ্গন / ইসলামী সংগঠনঃ গুরুত্ব ও রূপরেখা

ইসলামী সংগঠনঃ গুরুত্ব ও রূপরেখা

এহতেশামুল হক ক্বাসিমী :

সংগঠন শব্দটির ইংরেজী প্রতিশব্দ Organisation যার শাব্দিক অর্থ বিভিন্ন Organ কে একত্রিকরণ বা গ্রন্থায়ন । মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও এক একটি Organ বলা হয়। মানবদেহের এই ভিন্ন ভিন্ন Organ গুলোর গ্রন্থায়ন ও একীভূতকরণের রূপটাই সংঘটন বা Organisation এর একটা জীবন্ত রূপ। মানবদেহের প্রতিটি সেল, প্রতিটি অনু পরমাণু একটা নিয়মের অধীনে সুশৃঙ্খলভাবে যার যার কাজ করে থাকে। মানুষের দৈহিক অঙ্গগুলোর রকমারি কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখানে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আছে। আবার কাজের সুষম বন্টনের ব্যবস্থা আছে, পরস্পরের সাথে অদ্ভুত রকমের সহযোগিতা আছে। দিল দেমাগের চিন্তা-ভাবনা, কল্পনা ও পরিকল্পনা, ফয়সালা ও সিদ্ধান্তের প্রতি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ  দ্রুত সমর্থন জানায়। তড়িৎ সহযোগিতা করে।
মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের এই একীভূত রূপের অনুকরণে কিছু সংখ্যক মানুষের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে এক দেহ এক প্রাণ রূপে কাজ করার সামষ্টিক কাঠামোকেই বলা হয় Organisation বা সংগঠন।

দুই.
মুসলিম মিল্লাত মূলতঃ একটি Organisation, সংগঠন বা জামাআত। এ জন্যেই রাসূল কারীম সা.এর হাদীসে মিল্লাতে ইসলামিয়াকে একটি দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে মুমিনরা একটি দেহের ন্যায়। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হয় তখন শরীরের বাকি অঙ্গগুলো রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। (বোখারী ও মুসলিম)
এখানে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক, সম্বন্ধ ও সম্প্রীতি অনুভুতির বাঞ্চিত রূপটা কী হওয়া উচিত।
এটা বোঝানোর জন্যেই মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পারস্পরিক সম্পর্কের সংযোগের এবং সহানুভূতির ও সহযোগিতার বাস্তব রূপটি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং সংগঠন মানুষের জন্যে, মানুষের ব্যক্তি ও সামষ্টিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে একটা একান্ত স্বাভাবিক ও অনিবার্য বিষয়।
ইসলামের সঠিক আক্বীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির উদ্দেশ্যে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্টার লক্ষ্যে পরিচালিত কিছু সংখ্যক লোকের সম্মিলিত ও সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার নাম ইসলামী আন্দোলন, আর এর সামষ্টিক রূপ ও কাঠামোর প্রক্রিয়ার নাম ইসলামী সংগঠন।

তিন.
সংগঠন ছাড়া বা জামাআতবদ্ধ জীবন ব্যতিরেকে ইসলামের অস্থিত্ব কল্পনাই করা সম্ভব নয়। ইসলামী আদর্শের প্রথম ও প্রধান উৎস মহাগ্রন্হ আল-কুরআন এবং দ্বিতীয় উৎস সুন্নাতে রাসূল। এতদুভয়ের শিক্ষা ও দর্শন আলোচনা করলে কোথাও ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী জীবন যাপনের সুযোগ দেখা যায় না। কুরআন-সুন্নাহর আহ্বান হয় গোটা মানবজাতিরর জন্যে, আর না হয় মানুষের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে তাদের সকলের জন্যে। কেবলমাত্র আখেরাতের হিসাব নিকাস ও জবাবদিহিতা হবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কিন্তু সেই জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে হলেও এই দুনিয়াতে সামষ্টিকভাবে দ্বীন মেনে চলার ও দ্বীন প্রতিষ্টা করার প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া শিরক ও বিদআত থেকে সমাজ দেশ ও রাষ্ট্রকে বাঁচাবার জন্য ইসলামী সংগঠনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এর থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতে হবে যারা মানবজাতিকে কল্যাণের পথে আহ্বান করবে। সৎকাজের আদেশ দেবে। অসৎকাজে বাধা দেবে। তারাই হবে সফলকাম। সূরা-আল ইমরান, আয়াতঃ১০৪
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, প্রত্যেক মানুষকে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে।
এবং ভালো কাজের আদেশ দিতে হবে ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ করতে হবে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,” ঈমানদার নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী ও পৃষ্টপোষক। তাদের সম্মিলিত দায়িত্ব হলো সৎ কাজে আদেশ দান এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান। তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। তাদের প্রতি সত্বর আল্লাহপাক অনুগ্রহ করবেন। মহান আল্লাহ পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত। সূরা তাওবা, আয়াতঃ ৭১
এ আয়াতের মাধ্যমেও স্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, মানবমণ্ডলির দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ কাজের প্রতিরোধ করা। এর থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর এ কাজ করতে গেলেই সংগঠনের প্রয়োজন। কাজেই ইসলামী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।

চার.
সাংগঠনিক জীবন যাপন করার গুরুত্বের ব্যাপারে আল্লাহপাক বলেন, তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রুজ্জু আঁকড়ে ধরো। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। সূরা আল- ইমরান, আয়াতঃ ১০৩
পবিত্র কোরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরতে হবে। জীবনের সকল কাজে কুরআন-সুন্নাহর আদেশ মেনে চলতে হবে। জামাআতবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে।
জামাআতী যিন্দেগীর ব্যাপারে রাসুলে কারীম সা. বলেন, আমি পাঁচটি জিনেসের ব্যাপারে তোমাদের আদেশ করছিঃ (১) দলবদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) নেতার আদেশ মেনে চলবে (৪) মহান আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
উক্ত হাদীসে একই সাথে ইসলামী আন্দোলন, সংগঠনের কাঠামো ও কার্যক্রমের মৌলিক উপাদানগুলো অতি সংক্ষেপে সুন্দরভাবে  বলা হয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহর বাস্তবায়নে স্বার্থক ও সফল রূপকার হযরত উমর ফারুক রা. পবিত্র কুরআন ও হাদীসের স্প্রিটকে সামনে রেখে ইসলামের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তাতেও ইসলামের সংজ্ঞার পাশাপাশি ইসলামী জামাআত বা সংগঠনের উপাদান এবং কাঠামো এসে গেছে। তিনি বলেছেন, জামাআত ছাড়া ইসলামের কোনো অস্থিত্ব নেই। আর নেতৃত্ব ছাড়া জামাআতের কোনো ধারণা করা যায় না। তেমনিভাবে আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্বও অর্থহীন।
অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, জামাতের প্রতি আল্লাহর রহমতের হাত প্রসারিত থাকে। যে জামাআত ছাড়া একা একা চলে সে তো একাকী দোযখের পথেই ধাবিত হয়। তিরমিযী
আরেকটি হাদীসে রাসূলে কারীম সা. বলেন, যে ব্যক্তি আনুগত্য পরিত্যাগ করে এবং দলছুট হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। (মুসলিম)
সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের ইজমার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ধর্মে জামাআত বিহীন জীবনের কোনো ধারণা নেই। জামাআত বিহীন মৃত্যুকে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
অতএব, জামাআতবদ্ধ হওয়া এবং জামাআতবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্টার প্রচেষ্টা চালানো একান্ত অপরিহার্য। কাজেই সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত হওয়া অনিবার্য।

পাঁচ.
মানবকল্যাণে সমাজে যে সব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে মোটামুটি এর কিছু উপাদান থাকে। যেমন-(১) আদর্শ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি (২) নেতৃত্ব (৩) কর্মী (৪) কর্মক্ষেত্র।
ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা সংগঠনেও উল্লেখিত উপাদানগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে বিদ্যমান থাকে। ইসলামী সংগঠন যেহেতু সঠিক ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তাই কুরআন-সুন্নাহর আদর্শকেই সে লক্ষ্য-উদ্দশ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সুতরাং ইসলামী সংগঠনের উপাদানসমূহকে আমরা এভাবে সাজাতে পারিঃ
১. পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক আদর্শ উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, কর্মসূচি এবং কর্মপদ্ধতি।
২. কুরআন-সুন্নাহর অনুসারে নেতৃত্ব।
৩. কুরআন-সুন্নহর বাঞ্চিত মানের আনুগত্য।
৪. এর সাধারণ এবং বৃহত্তর কর্মক্ষেত্র সারা দুনিয়া, সমগ্র দু্নিয়ার মানুষ। কিন্তু প্রাথমিক কর্মক্ষেত্র,  যারা যে দেশে জন্মেছে, যে দেশে বসবাস করছে সেই দেশ ও সেই দেশের জনগণ।
উল্লেখিত উপাদানগুলোর সাথে আরো দু’টি উপাদান ইসলামী সংগঠনের প্রাণশক্তির ভূমিকা পালন করে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলে। তার একটি হলো পরামর্শের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা আর দ্বিতীয়টি হলো- সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনার ব্যবস্থা চালু থাকা।

ছয়.
নবীসূর্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রতিষ্টিত রাজনৈতিক দর্শন হলো ইসলামী সংগঠনের প্রকৃত ও প্রধান রোল মডেল। তাঁর নেতৃত্বই ইসলামী নেতৃত্বের কষ্টিপাথর। মহানবী সাঃ এর পরবর্তী সময়ে ইসলামী রাজনীতি ও সংগঠনের মডেল হলেন খুলাফায়ে রাশিদীন পরিচালিত সাহাবায়ে কেরামের জামাত। এরপরে আর কোনো স্বয়ংসম্পন্ন মডেল নেই। রাসূল কারীম সাঃ এরশাদ করেন
عليكم بسنتى وسنة الخلفاءالراشدين المهديين.
“তোমাদেরকে আমার ও খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত অবশ্য অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে”।
রাসূলে কারীম সাঃ প্রতিষ্টিত এবং খোলাফায়ে রাশিদীন পরিচালিত ইসলামী জামাআতের আদলে গড়ে ওঠা জামাতই হলো ইসলামী সংগঠন। এর প্রকৃত লক্ষ্য হলো কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ব্যক্তিগঠন ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ। এরূপ সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমেই প্রকৃত জামাআতী বা সংঘবদ্ধ যিন্দেগীর চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব। বিগত কয়েক শতাব্দী থেকে আমরা এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। অবশ্য চেষ্টা অব্যাহত ছিলো আছে থাকবে সবযুগে সবস্থানে। সাময়িক সফলতাও এসেছিল আফগানে। কিন্তু আমরা সেই অর্জন ধরে রাখতে পারি নি। স্বজন যখন দুশমন হয় তখন প্রকৃত দুশমনের বিজয় ঘটে। গাদ্দারদের আস্ফালনই  আফগানের পতন ডেকে আনে। ইহুদী-খ্রিস্টানদের আগ্রাসনে আফগানের সুশাসন বেশিদিন টিকে থাকতে পারে নি। তাদের পাশবিকতা ও অরাজকতার কাছে হার মানে মানবতা। বাল্যবস্থায় ঝরে পড়ে আফগানের খেলাফত ব্যবস্থা।
বিশ্বজুড়ে চলছে আজ অপশাসন। কোথাও শান্তি বা নিরাপত্তার গ্যারান্টি নেই। মুসলমানরা আজ ছন্নছাড়া। বিচ্ছিন্নতা আমাদের পিছু ছাড়ছে না আদৌ। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। আমাদের চিরদুশমনেরা এগিয়ে যাচ্ছে জীবনপ্রবাহের সম্মুখপানে। আর আমরা নিজেদের স্বর্ণালী ইতিহাস ভূলে গিয়ে শত্রুর হাতে আত্মসমর্পণ করছি।

সাত.
বর্তমানে ইসলামী রাজনীতির ময়দানে যে বা যারা অংশগ্রহণ করছেন তারা একদিকে নবী মুহাম্মদ সাঃকে ইসলামী রাজনীতির মডেল বা আইডল বলে বুলি আওড়ান, অপরদিকে আব্রাহাম লিংকনের কুফরী মতবাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে অংশ নেন।  ফলে একদিকে ইসলামী রাজনীতির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এই সফলতার অধরা আর বারংবারের ব্যর্থতার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের অভাবটাই সবচে’ ববেশি দায়ী।

পবিত্র কুরআন-সুন্নাহের ধারাভাষ্যে বুঝা যায়, ইসলামী রাজনীতির ময়দানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের আনুগত্য গ্রহণ ছাড়া কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার মৃত্যু হবে জাহেলী যুগের মৃত্যুর নামান্তর। এমতাবস্থায়  আমাদের করণীয় ও গ্রহণীয় কী? জাহেলিয়াতের মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় কী?
তার জবাব একটাই, এঅবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো- পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্টায় এমন কিছু লোকের সমন্বয়ে একটি জামাআত তৈরী করা যারা জানমাল কোরবান করে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করতে সদা তৎপর থাকবে। যাদের সিয়াসত, কিয়াদত ও সিয়াদত তথা নেতৃত্ব হবে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের বিকল্প বা প্রতিবিম্ব। এভাবে একটি অন্তর্বতীকালীন ব্যবস্থা চালু করে সংঘবদ্ধ যিন্দেগীর চাহিদা পূরণ করতে হবে। তা করতে পারলে আশাকরি জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু থেকে আমাদের বাঁচা সম্ভব হবে।

আট.
ইসলামী সংগঠনের অনেক কার্যক্রম রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সালাহ ও ইসলাহ, দাওয়াত ও তাবলীগ এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ব্যক্তিগঠনের জন্য সালাহ ও ইসলাহের প্রয়োজন। সালাহ অর্থ নিজে সংশোধন হওয়া আর ইসলাহ অর্থ অপরকে সংশোধন করা।
নিজের সংশোধনের উপায় হলো ইলিম ও আখলাক অর্জনের পথে সাধনা ও পরিশ্রম করা এবং অপরকে সংশোধনের মাধ্যম হলো দাওয়াত, তাবলীগ ও উপদেশ প্রদান করা। অতএব, ইসলামী সংগঠনের অন্যতম কার্যক্রম হলো নিজে আলেমে বাআমল হয়ে অন্যদেরকেও দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে আলেমে বাআমল বানানো। সুতরাং মানুষ বা সংগঠন আত্মসংশোধনের যত শীর্ষস্থানের অধিকারী হোক না কেনো যতক্ষণ পর্যন্ত সাধ্যানুপাতে সে অন্যের নিকট এই হেদায়াত ও সালাহ পৌঁছে দেয়ার প্রতি যত্নবান না হবে, ততক্ষণ সে তার দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। এ কারণেই ইসলামী শরীয়ত এক দিকে যেমন তার অনুসারীদেরকে ব্যক্তি সংশোধন ও ব্যক্তি সৌন্দর্য সাধনের নিমিত্তে ইলম আমল ও এ’তেকাদ সম্বলিত এক সুবিস্তৃত প্রোগ্রাম অনুযায়ী চলার নির্দেশ দিয়েছে,  তেমনি ভাবে এই কর্মসূচী অন্যকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে দাওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপারেও জোর হুকুম প্রদান করেছে; যাতে করে একের দ্বারা অন্যরাও গড়ে উঠতে পারে।

নয়.
সালাহ ও ইসলাহ, দাওয়াত ও তাবলীগ এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ । এ কার্যক্রমগুলো ইসলামী সংগঠনকে অতি সুপরিকল্পিতভাবে আঞ্জাম দিতে হবে। আমর বিল মারুফ ও নহী আনিল মুনকার’র দায়িত্বকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কর্মীদেরকে এব্যাপারে যোগ্য ও  সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। বিরোধী শক্তির যথার্থ মূল্যায়ন করে তার যুঁথসই মোকাবেলার উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষে এভাবে ধাপে ধাপে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে হবে। বিজয়ী হলেতো গোটা মানবজাতিকে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা দিতে হবে। তবে বিজয়ের আগে সংগঠনের সকল সদস্যের মাঝে সালাহ ও ইসলাহের গুণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো হয়ে গেলে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হবে সুনিশ্চিত। চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহপাক বলেন,
وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّالحًِاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الأَرْضِ.
আল্লাহ পাক ঈমানদার নেককার মানুষদেরকে ওয়াদা দিয়েছন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ার আধিপত্য দান করবেন। আল্লাহ পাক তার ওয়াদা অতীতে পূরণ করেছেন, ভবিষ্যতেও পূরণ করবেন। বর্তমানেও এই দুটি শর্ত পাওয়া গেলে জমিনের কর্তৃত্ব কুই মুশকিল নেহি রহেগা। লেকিন না নোমন তেল হোগা আওর না রাধা নাচেগা!

লেখক : তরুণ মুহাদ্দিস ও কলামিস্ট
ahteshamQasimesyl@gmail.com

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

পুলিশি নির্যাতনে হত্যার বিচার চাইবেন কার কাছে?

ডক্টর তুহিন মালিক: (১) মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে যুবককে রাতভর নির্যাতন ...