বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৫২
Home / কুরআন / প্রান্তিকতার দুটি উদাহরণ

প্রান্তিকতার দুটি উদাহরণ

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন কাসেমী :

০১. কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ – قَالَ قُتَيْبَةُ عَنْ أَبِى الزَّاهِرِيَّةِ عَنْ أَبِى شَجَرَةَ لَمْ يَذْكُرِ ابْنَ عُمَرَ – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « أَقِيمُوا الصُّفُوفَ وَحَاذُوا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِينُوا بِأَيْدِى إِخْوَانِكُمْ ». لَمْ يَقُلْ عِيسَى « بِأَيْدِى إِخْوَانِكُمْ ». « وَلاَ تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللَّهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ اللَّهُ ». قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَبُو شَجَرَةَ كَثِيرُ بْنُ مُرَّةَ.
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নামাযের কাতারকে সোজা করো। কাঁধের সঙ্গে কাঁধ লাগিয়ে দাঁড়াও এবং তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও (নরম হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাতার সোজা করায় অন্য ভাইকে সহযোগিতা করা। যেমন কেউ বাঁকা কাতারকে মুসুল্লিদের গায়ে হাত দিয়ে কিংবা মুখে বলে বলে সোজা করছে, তখন তার কথামতো কাতার সোজা করা) এবং মাঝখানে শয়তানের জন্য জায়গা ফাঁকা রেখো না। যে কাতারের ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে আল্লাহ তাআলা তাকে নেকি দান করেন। আর যে লোক কাতারে জায়গা ফাঁকা রেখে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। আবু দাউদ, হা. ৬৬৬; ১/৯৭।

এমন স্পষ্ট হাদিস থাকার পরও অনেক মসজিদে দেখা যায়, দুজন মুসুল্লির মাঝখানে আরেকজন দাঁড়ানোর জায়গা রয়ে গেছে। আহলে হাদিসের বিরোধিতা করতে গিয়ে হাদিসেরই বিরোধী হয়ে গেল। ধিক্কার এমন হানাফিদের। ধিক্কার এমন মাযহাবিদের। দুজন মুসুল্লির পা একসঙ্গে না লাগালেও ফাঁকা বন্ধ করে অর্থাৎ এক/দুই/তিন ইঞ্চি ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো উচিত। দুঃখ লাগে অনেক আলেমকে যখন ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়াতে বলি, তখন ভাবে আমি কি আহলে হাদিস হয়ে গেলাম।
হানাফিদের কোন কিতাবে এমন ফাঁকা রেখে দাঁড়াতে বলা হয়েছে? হানাফি মাযহাবের নামে অনেক আমল আমাদের সমাজে বিস্তার লাভ করেছে; কিন্তু বাস্তবে সেগুলো হানাফি মাযহাবের নয়।

০২. মাগরিবের পূর্বে নামায পড়া
কিছু ভাইকে দেখি, মাগরিবের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করে। খুব খেয়াল করলাম, সুন্নতে মুয়াক্কাদা গুরুত্বসহ আদায় না করলেও মাগরিবের আগের দুই রাকাত মিস হয় না। আহলে হাদিসের কিছু মসজিদে গেলে দেখা যায়, মাগরিবের আযানের পর রীতিমতো অনেক মানুষ সুন্নতে দাঁড়িয়ে যায়। অনেক মানুষ ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব না দিলেও মাগরিবের দুই রাকাত খুব গুরুত্বসহ আদায় করে। ভাবখানা এমন, যেন হাানফিদের বিরোধিতাই মূল লক্ষ্য। শরিয়তের মেজাজ ও চাহিদার প্রতি কোনো খেয়াল নেই। ধিক্কার এমন আহলে হাদিসদের।
সাহাবিদের চেয়ে বেশি দীনদার এ জমানায় প্রকাশ পেয়েছে!
সাহাবিদের বক্তব্য সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তাঁদের মন্তব্য হল :
عَنْ طَاوُسٍ قَالَ سُئِلَ ابْنُ عُمَرَ عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ فَقَالَ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُصَلِّيهِمَا.
প্রসিদ্ধ তাবেয়ি হযরত তাউস রহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. -কে মাগরিবের পূর্বের দুই রাকাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কাউকে এই দুই রাকাত পড়তে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১২৮৬; জামেউল উসুল ফী আহাদিসির রাসুল, হাদিস নং- ৪০৭০)
حَدَّثَنِى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِنَّ عِنْدَ كُلِّ أَذَانَيْنِ رَكْعَتَيْنِ مَا خَلاَ الْمَغْرِبَ ».
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরায়দা রা. স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাগরিব ব্যতীত প্রত্যেক নামাযের আযান ও ইকামতের মাঝে (সুন্নত/নফল) নামায রয়েছে। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং- ৪৬৬৯)

মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামাযের ব্যাপারে যে হাদিসটি রয়েছে তার দ্বারা সর্বোচ্চ জায়েয হওয়া প্রমাণিত হতে পারে; সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। কারণ অধিকাংশ সাহাবিগণ তা পড়তেন না। বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে :
عبد الله المزني عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( صلوا قبل صلاة المغرب ) . قال في الثالثة ( لمن شاء ) . كراهية أن يتخذها الناس سنة
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ মুযানি রা. বর্ণনা করেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মাগরিবের নামাযের পূর্বে (দুই রাকাত) নামায পড়। তৃতীয়বার রাসুল সা. বলেছেন ‘যার ইচ্ছা সে পড়বে’। ইমাম বুখারি এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, মানুষ যেন এটাকে সুন্নত মনে না করে বসে তাই রাসুল সা. ‘যার ইচ্ছা সে পড়বে’ এ কথা জুড়ে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১১২৮); বিস্তারিত দেখুন : উমদাতুল কারী শরহে বুখারি : ১১/৪৩৭।

প্রান্তিকতামুক্ত দীনের সহিহ বিষয়ের ওপর আমল করা দরকার। বিশেষত ইজতেহাদি ও ইখতেলাফি মাসআলার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও মুজতাহিদ ইমামদের অনুসরণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...