বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:৪৮
Home / অনুসন্ধান / দারুল উলুম দেওবন্দের একটি ফতোয়া : বিভ্রান্তি ও বাস্তবতা

দারুল উলুম দেওবন্দের একটি ফতোয়া : বিভ্রান্তি ও বাস্তবতা

মুনশি মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ :

ক’দিন হলো বিশ্বতাবলিগের আমির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রকাশ করে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে চারপাতার একটি ফতোয়া বেরিয়েছে৷ এ নিয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের প্রায় অনেক জায়গাতেই ধর্মীয় অঙ্গনে বেশ প্রভাব পড়েছে৷ দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নরত বেশ ক’জন বাঙালিবন্ধু ফতোয়াটি বাংলায় অনুবাদ করে বেশ কয়েকটি বাংলা অনলাইনে ছড়িয়েছেন৷ কেউ কেউ বা ফতোয়াটির ফটোকপিসহ মূল বক্তব্যটি পোস্ট করেছেন নিজ নিজ ফেসবুকপাতায়৷

উল্লেখ্য, তারা তাদের পোস্টে তাবলিগজামাত আমাদের, এটা রক্ষা করবার দায়িত্বও আমাদের; এসব বলে বলে তাবলিগজামাতের পক্ষ নিয়ে তাবলিগজামাতের স্বচ্ছনির্ভর কাজ করবার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তাবলিগকর্মী ভাইদের৷ ফতোয়াটির চারপাতার মাঝে প্রথমপাতাটিতেও ‘অযাহাত’ শিরোনামে সে বিষয়টি স্পষ্ট বিদ্যমান৷ কিন্তু হীতে দেখা দিলো বিপরীত!

বাংলাদেশের কিছু তাবলিগিভাই বিষয়টিকে ভুল বুঝে যাচ্ছেতাই মন্তব্য করে বসেছেন৷ অথচ ফতোয়াটিতে তাবলিগজামাতের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কিছুই বলা হয়নি বা হচ্ছে না৷ বরং একজন ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্ত মতাদর্শকে স্পষ্ট করে সাধারণ তাবলিগিভাইদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে মাত্র৷ উপরন্তু সব কথার শেষে চতুর্থপাতায় জোর তাগিদ দিয়ে ঘুরেফিরে সেই তাবলিগজামাতের কাজের প্রতিই উৎসাহিত করা হচ্ছে বারবার৷ সু্ষ্ঠুভাবে দীনের এই শোবার কাজ যেভাবে ভ্রান্তি-ভ্রষ্টতা বৈ আঞ্জাম দেয়া যায়, তারই প্রতি ইঙ্গিতমূলক আলোচনা করা হয়েছে৷

অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন ফতোয়াটি প্রচার করবার বিষয়ে৷ দেওবন্দিদের গালমন্দ করে পঁচাচ্ছেন অনলাইন-অফলাইনের কান৷ বলছেন, ‘আপনাদের কী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রচারের জন্য? যদি দারুল উলুম দেওবন্দ এটি প্রচার করতেই চাইতো, তাহলে ফেসবুক/অনলাইন কেনো, তাদের কাছে আরও বড় অনেক মাধ্যম রয়েছে৷ তারা সেসবের আশ্রয় নিতেন৷ সুতরাং আপনারা এসব বন্ধ করুন৷’ কেউ বা বলছেন, ‘ভাই! বিযয়টি আলেম-উলামার৷ তাই আলেমদের মাঝেই থাকতে দিন৷ লিখে লিখে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না৷’ এমনকি বাংলাদেশের একজন বড় নামিদামি দায়ি ফতোয়াটি প্রচারের বিরুদ্ধে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যারা তাবলিগের বিরোধিতা করছেন, তারা দীনের কতো বড় ক্ষতি করছেন, তা একটু ভেবে দেখুন৷’

প্রথমে আসি দায়িত্ব দেয়া, না দেয়ার বিষয়টি নিয়ে৷ দারুল উলুম দেওবন্দ ফতোয়াটি প্রকাশ করেছেই তো প্রচার করে করে হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের ভ্রান্তিগুলি সাধারণকে অবহিত করবার জন্য৷ কারণ হজরতকে তো বারবার অনুরোধ করে বোঝানো হচ্ছিলো তার ওসব ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য৷ কিন্তু তিনি আমলেই নেননি বিষয়টি৷ এদিকে নিজামুদ্দিনে মার্কাজের ভেতরে তাবলিগেরও বহু আবেগপ্রবণ এবং তার বয়ানে মুগ্ধ শ্রোতা তার সব কথা-কাজের সঙ্গ দিয়েই যাচ্ছেন৷ তাই তার সম্বন্ধে এসব জেনে যেনো তারা তাদের তাবলিগি কাজ আঞ্জাম দেয় হক ও হক্কানিয়্যাতের চিন্তাধারায়, সেজন্য ফতোয়াটি প্রকাশিত হয়েছে৷

কেবল তা-ই নয়, দারুল উলুম দেওবন্দের শোবায়ে তাবলিগের তরফ থেকেই ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে তাবলিগের বেশ কয়েকটি বড় বড় মার্কাজে ফতোয়াটির আরবি, উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি, ফার্সি ভার্সন করে পত্র-মেইল মারফত প্রেরণ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তানের উর্দু, হিন্দি, তামিল, মারাঠি, বাংলা, গুজরাতি, মাড়ওয়ারি, ভৌজপুরি ভাষার জাতীয় দৈনিকসহ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সামনেও মুখ খুলেছে দারুল উলুম দেওবন্দ৷

এ বিষয়ে তাবলিগের মার্কাজ নিউ দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন এলাকায় অবস্থিত বাংলাঅলি মসজিদের কেউ মুখ খুলতেও রাজি নন কখনও৷ এ নিয়ে কথা বলা নাকি তাকওয়া, পরহেজগারির খেলাফ৷ কেনো? যদি বলা হয়, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে এসেছি, তবে কেনো তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব প্রদান করা হয় না?

এবার আসি হজরত মাওলানা সাদ কান্ধলবি সাহেবের বিষয়টি আলেমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবার ব্যাপারে৷ ভাইয়া! যদি তার চিন্তাচেতনা বা মতাদর্শ কেবল তার নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে দারুল উলুম দেওবন্দ কেনো, হক্কানি কারোরই তেমন কোনো মাথাব্যথা হতো না৷ যেহেতু তিনি বিশ্বতাবলিগের মূূলকেন্দ্র হজরত নিজামুদ্দিনের মার্কাজ বাংলাঅলি মসজিদের আমির, তার কথা-বয়ান শুনে শুনে মানুষ দিশা খুঁজে পায়, এককথায় তার কথা-বয়ানমাফিক অনেকটাই পরিচালিত হয় এই তাবলিগজামাত, তাই ফতোয়াটি প্রকাশ করা৷ যদি ফতোয়াটি প্রকাশ করা না হতো কিংবা তার ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা সম্বন্ধে সাধারণকে অবহিত না করা হতো, তাহলে আকাবিরে দেওবন্দের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়,(খোদা নাখাস্তা) তাবলিগজামাতও গায়রে মুকাল্লিদিনের আরেকটি দল হিসেবে রূপ নেবার পথে এগোতো৷ ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই বেশি বৈ কম হতো না৷

এবার বলছি ফতোয়াটি প্রচার করে কে কার ক্ষতি করছে, সে বিষয়ে৷ হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব কেবল বাংলাদেশের বিশ্বইজতেমা, ভুপালের ইসলাহি জোড়, হজরত নিজামুদ্দিনে তাবলিগের মার্কাজ বাংলাঅলি মসজিদে নয়, বিশ্বের বহু জায়গায় বিভিন্ন বয়ানে কয়েক বছর ধরে তাবলিগিবয়ানে নিজের বিতর্কিত কিছু মতাদর্শ প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দ কেবল নয়, ভারত-পাকিস্তানের আকাবির উলামায়ে কেরামসহ আরও বড় বড় দীনি প্রতিষ্ঠানগুলিও তাকে বারবার ইসলাহ হবার জন্য জোর আহ্বান করেছেন৷ কিন্তু তিনি কোনোদিনই বিষয়টি আমলে নেননি৷ (তার বয়ান-কথায় বাড়াবাড়ির রেকর্ডগুলিও সম্পূর্ণ বিদ্যমান রয়েছে দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগ ও তাবলিগ বিভাগে)৷

এ বিষয়ে তাবলিগের মার্কাজ নিউ দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন এলাকায় অবস্থিত বাংলাঅলি মসজিদের কেউ মুখ খুলতেও রাজি নন কখনও৷ এ নিয়ে কথা বলা নাকি তাকওয়া, পরহেজগারির খেলাফ৷ কেনো? যদি বলা হয়, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে এসেছি, তবে কেনো তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব প্রদান করা হয় না?

তাহলে কী সবাই ধরে নেবে দারুল উলুম দেওবন্দ তাবলিগের পিছু নিয়েছে? উলামায়ে দেওবন্দ তাবলিগবিরোধী? একটি স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপারে আমরা কমবেশি সবাইই অবগত রয়েছি, ছেলে যতোটাই অবাধ্য হোক না কেনো, রাগ-অভিমান শেষে বাবা আবার তাকে ঘরে তুলে নেয়৷ খুব করে বোঝায়৷ সহজেই ত্যাজ্য পুত্র করে না৷

দারুল উলুম দেওবন্দের এই যুগোপযোগী ফতোয়ার কারণে যারা দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিই খারাপ মন্তব্য করছেন কিংবা কুদৃষ্টিতে দেখছেন, তাদের ভালোভাবে জেনে রাখা উচিৎ, দাওয়াত ও তাবলিগ দারুল উলুম দেওবন্দেরই একটি উপহার; যা দারুল উলুমের সূর্যসন্তান হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করে৷ তাই দারুল উলুম দেওবন্দ অবশ্যই তার সন্তানের রেখে যাওয়া আমানত রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকার রাখে৷
আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতি আজ অবধি এতোটুকু আস্থা সবারই রয়েছে, অতি সহজেই কোনো ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ কারোর পক্ষে-বিপক্ষে মুখ খোলে না৷ বহু যাচাইবাছাইয়ের পরেই ফতোয়া দিয়ে থাকে৷ কারণ দারুল উলুম দেওবন্দ কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়, বরং বিশ্বখ্যাত সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান; যা উম্মুল মাদারিস নামে সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধ।
সুতরাং যারা দারুল উলুম দেওবন্দের চেয়েও দাওয়াত ও তাবলিগ তথা এই বিশ্বআমির সাহেবের প্রতি বড় দরদ দেখাচ্ছেন, তারা মায়ের চেয়ে মাসির দরদটাই বেশির মতোন খানিকটা করছেন না তো!?
আবার এই ফতোয়ার কারণে তাবলিগবিরোধীদেরও খুশি হবার কোনো কারণ নেই৷ কেননা আল্লাহতায়ালা অবশ্যই অযোগ্যদের হটিয়ে যোগ্য ও মুখলিস ব্যক্তির মাধ্যমেই এই কাজ পরিচালনা করবেন, ইনশাআল্লাহ৷

অতি সহজেই কোনো ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ কারোর পক্ষে-বিপক্ষে মুখ খোলে না৷ বহু যাচাইবাছাইয়ের পরেই ফতোয়া দিয়ে থাকে৷ কারণ দারুল উলুম দেওবন্দ কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়, বরং বিশ্বখ্যাত সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান

আরেকটি ভুল সংবাদ প্রচার করছেন অনেকেই, হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব রুজু করেছেন ফতোয়াটি প্রকাশ পাবার পরে৷ আসলে কী তাই?শুনুন তাহলে গল্পটি৷ আপনার কাছে বিদ্যমান পত্রটি হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের সেই রুজু বা স্বীকারোক্তিপত্র, যেটা দ্বারা দারুল উলুম দেওবন্দ মুতমাইন (আশ্বস্থ) হয়নি৷ আর এটা চারপাতাবিশিষ্ট এই বিশেষ ফতোয়া প্রকাশের আগের করা তার নামমাত্র রুজু ও একধরনের স্বীকারোক্তি৷
যারা ভালো উর্দু জানেন, তারা পড়ে দেখুন পত্রটি৷ বুঝে আসবে পুরো ব্যাপারটি৷ দিবালোকের মতো স্পষ্ট হবে আশা করি৷
তাছাড়া চারপাতার এই ফতোয়ায়ও উল্লেখ রয়েছে, দারুল উলুম দেওবন্দ তার কাছে রুজু ও স্বীকারোক্তি কামনা করেছে৷ কিন্তু তিনি এমন একটি জবাবপত্র পাঠান, যেটি আসলে কোনো রুজু ও স্বীকারোক্তি নয়৷
এরপর দারুল উলুম দেওবন্দ চারপাতার এই ফতোয়াটি সর্বসাধারণ তাবলিগিভাইদেরকে তার ওসব ভ্রান্তি থেকে সতর্ক করবার জন্য প্রকাশ করে৷
দারুল উলুম দেওবন্দ প্রকাশিত চারপাতার ফতোয়াটি আগাগোড়া পড়লে আর এসব প্রশ্ন থাকবার কথা নয়৷ আসলে আমাদের হাতে সময় কোথায়? না পড়ে, না বুঝেই হেইয়ো বলে ঠেসে-গুঁতিয়ে মন্তব্য করে ফেলি৷ আর ঠেলে দিই নিজেদের আকাবিরের শুদ্ধ চেতনাকেও দূর-বহুদূরে৷

সারকথা হলো, হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব এই চারপাতাবিশিষ্ট ফতোয়া প্রকাশের পর এখন অবধি কোনো ধরনের জবাব দেননি৷ যারা রুজু বা স্বীকারোক্তি করেছেন বলে ফেসবুকে হৈচৈ করে হাতে লেখা তিনপাতাবিশিষ্ট একটি পত্রের ফটোকপিসহ পোস্ট করছেন, তারা ভুলের শিকার হচ্ছেন ভাইয়া!
এটি ফতোয়া প্রকাশের পূর্বেকার সেই পত্র, যেটি দারুল উলুম দেওবন্দ হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব বরাবর তলব করেছিলো এবং তার সেই জবাবপত্র দ্বারা মুতমাইন (আশ্বস্থ) না হয়ে বিশেষ ফতোয়া প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে৷
সম্প্রতি আমাদের হাতে একটি অডিও ফোনালাপ পৌঁছেছে৷ যেটি বিশ্বতাবলিগের আমির হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা সম্বন্ধে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রকাশিত চারপাতাবিশিষ্ট বিশেষ ফতোয়ার ওপর করা এক ছাত্রের প্রশ্ন এবং দেওবন্দের হজরত মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানি বানারসির জবাব৷

ফোনটি ছিলো ভারতের শাহি মুরাদাবাদের একটি মাদরাসার ইফতাবিভাগের ছাত্রের৷ ভাইয়াটি হজরত মুহতামিম সাহেবকে সালাম দিয়ে জিগ্গেস করলেন, ‘হজরত! মাওলানা সাদ কান্ধলবি সম্বন্ধে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে যে ফতোয়াটি দারুল উলুম দেওবন্দেরই প্যাডে বেরিয়েছে, তার ওপরে তো কোনো তারিখ উল্লেখ নেই৷ তো কী করে আমরা ধরে নেবো, এটি দারুল উলুম বর্তমানে প্রকাশ করেছে?’ জবাবে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম হজরত মুফতি আবুল কাসেম নোমানি বানারসি বললেন, ‘আসলে ফতোয়াটি দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের মুফতিয়ানে কেরাম দলিল-প্রমাণ এক করে লেখবার পরে দারুল উলুমের আকাবির আসাতিযায়ে কেরাম বরাবর এক এক কপি পৌঁছোন৷ এরপর সবাই যার যার ব্যস্ততার ফাঁকে সময় বের করে যেদিন যিনি সময় পেয়েছেন, সেদিন পূর্ণ দলিলাদি পড়ে, শুনে, জেনে নিজের সীলমোহরসহ তারিখ ও দস্তখত করেছেন৷ আপনি প্রতিটা দস্তখতের শেষে তারিখ বিদ্যমান পাবেন৷ সেজন্য একদিন-দু’দিনের ভিন্নতায় তারিখ রয়েছে দস্তখতের নিচে৷ আর তারিখের এই ভিন্নতার ফলেই প্যাডের প্রথমপাতার ওপরে তারিখের ঘরে কোনোকিছু বসানো হয়নি৷’

ছেলেটি হজরত মুহতামিম সাহেব বরাবর আরও জানতে চাইলো, ‘ফতোয়া প্রকাশের পর হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে কোনো রুজুনামা বা স্বীকারোক্তিপত্র মিলেছে কিনা?’ মুহতামিম সাহেব জানালেন, ‘আমরা হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে রুজুনামার স্টাইলে একটি পত্র পেয়েছিলাম ফতোয়া প্রকাশের আগে৷ কিন্তু তাতে দারুল উলুম দেওবন্দ মুতমাইন না হয়ে এই ফতোয়া প্রকাশ করতে বাধ্য হয়৷ আর ফতোয়া প্রকাশের পর এখন অবধি তিনি নিজের ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে রুজু করেননি এবং নিজের ভুলের স্বীকারও করেননি৷ আর এটা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়; আমরা তো তার রুজুনামা না পেয়েই সাধারণকে তার চিন্তাচেতনা সম্বন্ধে অবহিত করবার উদ্দেশ্যেই কেবল ফতোয়া প্রকাশ করেছি৷’

এদিকে গত বুধবার ভারতের উত্তরপ্রদেশের উর্দু দৈনিক ইনকিলাব ও সাহাফাতে রুজুনামা বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আসে৷ ওদিন আমাদের দ্বিতীয় ঘণ্টায় হজরত মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি সাহেব বিষয়টি খোলাসা করে বললেন উলামা-তলাবা এবং মিডিয়াকে৷

সারকথা, ফতোয়াটি তাবলিগজামাতের পক্ষে, বিপক্ষে নয়৷ ফতোয়াটি প্রকাশের পর এখন অবধি হজরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের তরফ থেকে কোনো রুজুনামা বা নিজের ভুলের স্বীকারোক্তিপত্র দারুল উলুম দেওবন্দে মেলেনি৷ ফতোয়াটি গভীরভাবে পাঠ করুন৷ কোথাও বুঝতে অসুবিধে হলে যিনি বোঝাতে সক্ষম, তার দারস্থ হোন৷

আয় আল্লাহ, আমাদের সবাইকে সবধরনের গোমরাহি থেকে হেফাজত করো৷

লেখক : মুনশি মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ
শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...