শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:৩৯
Home / আমল / বিপর্যস্ত উম্মাহ : মুক্তি কোন পথে?

বিপর্যস্ত উম্মাহ : মুক্তি কোন পথে?

কাজী মুহাম্মাদ হানিফ :

তালিম, তাযকিয়া, দাওয়াত ও জিহাদের সমন্বয় হোক। খণ্ডিত নয়, পূর্ণাঙ্গ ইসলামের চর্চা আবশ্যক। দলাদলি নয়, ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য চাই। অপরের সমালোচনা নয়, আত্মসমালোচনা জরুরি। নিজ কাজে আত্মপ্রসাদ নয়, আত্মকষ্টে ভোগা উচিত।

সৌদি আরব, তুরস্ক ও পাকিস্তান কেবল এ তিনটি ‘মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র’ যদি ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে একতাবদ্ধ হতো তাহলে আমাদের দিফা্ঈ জিহাদ করার প্রয়োজনই হতো না। তাগুত ও কুফরি শক্তি মুসলমানদের দিকে চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পেতো না। কিন্তু হায় মুসলমানদের ৫০ এর ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র (দারুল মুসলিমীন) আছে কিন্তু ইসলামের কোনো রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম) নেই। খাতায় কলমে আমাদের দেড়শ কোটি সদস্য আছে। কিন্তু দেড় কোটি প্রকৃত মুহাজির ও আনসার নেই।

আমাদের বর্তমান অবস্থাকে অতীতের কোন্ অবস্থার সাথে তুলনা করবেন? রাসুলের (স) মক্কীজীবনের সাথে? না, তা করতে পারবেন না। তখন তো নির্যাতিত মুসলমানদেরকে আশ্রয় দেওয়ার মতো হাবশা (ইথিওপিয়া) ছিল, নাজাশি ছিল। এখন কে আছে বলুন? তখন তো মদীনার সীমান্ত খোলা ছিল। এখন কোন সীমান্ত খোলা আছে? (রোহিঙ্গার নিপীড়িত শরণার্থী মুসলমানদের জন্য কোনো মুসলিম রাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে?) তখন তো দাওয়াত, তালিম, জিহাদ ও তাযকিয়ার চমৎকার সমন্বয় ছিল। কিন্তু আমরা এখন সেসব বিভক্ত ও স্বতন্ত্র করে ফেলেছি। একেকজন নিজ নিজ খেয়ালখুশি মতো এক চতুর্থাংশকে পূর্ণাঙ্গ দীন বিশ্বাস করে বসে আছি। হায় আমাদের অজ্ঞতা! হায় আমাদের দুর্ভাগ্য।
দাঈ বিশ্বাস করে বর্তমানে দাওয়াতই একমাত্র দীনি কাজ; অন্যসব অনর্থক। সবাই দাওয়াতে বেরিয়ে পড়ুন। মুয়াল্লিম মনে করে ধর্মীয় ইলম ও জ্ঞান অর্জনই সব সমস্যার সমাধান। অন্য কোনোকিছুর প্রয়োজন নেই। মুজাহিদরা মনে করে জিহাদ ছাড়া অন্য কিছুতে মুক্তি নেই। এখনি সবাইকে জিহাদে নামতে হবে। আর খানকার মুযাক্কি হজরাত ও পীর সাহেবরা মনে করেন আত্মার পরিশুদ্ধি ছাড়া সবই বেকার। সবাই খানকায় কাছে চলে আসুন।

এই যে প্রান্তিকতা, এই যে চিন্তার দৈন্য, এই যে কুল (كل ) ছেড়ে (جزء) নিয়ে পরিতৃপ্তি এটাই এখন আমাদের বিপর্যয় ও বিভক্তির বড় কারণ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হতে পারবো না। পারবো না সফলতার শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করতে।
আমরা তো একেকজন একেক অংশ নিয়ে পরিতৃপ্ত আছি কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষের দিকে তাকিয়ে দেখুন তারা কী করছে? ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম ও প্রস্তুতি কত সমন্বিত ও সুশৃঙ্খল।
তাদের একদল মিশনারী (দাওয়াত) ও সেবার আড়ালে খ্রিস্টবাদ প্রচারে ব্যস্ত।
কিন্ত এটাকেই একমাত্র কাজ মনে করে না কিংবা অন্য দলের সমালোচনা করে না।
তাদের একদল জ্ঞান ও বিজ্ঞান (তালিম) গবেষণায় মগ্ন । নিত্যনতুন আবিষ্কারে মশগুল।
কিন্ত এটাকেই একমাত্র কাজ মনে করে না কিংবা অন্য দলের সমালোচনা করে না।
তাদের একদল সামরিক প্রশিক্ষণ ও সামরিক অভিযান (জিহাদ) নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্ত এটাকেই একমাত্র কাজ মনে করে না কিংবা অন্য দলের সমালোচনা করে না।
তাদের একদল শিক্ষা ও মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামবিরোধী প্রচার প্রোপাগান্ডা ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্ত এটাকেই একমাত্র কাজ মনে করে না কিংবা অন্য দলের সমালোচনা করে না।

পক্ষান্তরে :
আমরা যারা দাওয়াতের কাজ করি তারা এটাকেই একমাত্র দীনি কাজ মনে করি।আর অন্যদের কাজকে অনর্থক মনে করি ও তাদের সমালোচনা করি।
আমরা যারা তালিম নিয়ে আছি তারা এটাকেই একমাত্র দীনি কাজ মনে করি। আর অন্যদের কাজকে অপ্রয়োজনীয় মনে করি ও তাদের সমালোচনা করি।
আমরা যারা জিহাদের ময়দানে আছি তারা এটাকেই একমাত্র দীনি কাজ মনে করি। আর অন্যদের কাজকে বেকার মনে করি ও তাদের সমালোচনা করি।
আমরা যারা তাযকিয়ার লাইনে আছি তারা এটাকেই একমাত্র দীনি কাজ মনে করি।আর অন্যদের কাজকে নিষ্ফল মনে করি ও তাদের সমালোচনা করি।
এখন বলুন আমরা যদি এভাবেই বিভক্ত হয়ে চলতে থাকি তাহলে তাদের মোকাবিলায় আমরা কিভাবে বিজয় লাভ করবো? আসুন আমরা একটু ভাবি।
প্রিয় বন্ধুরা, ইসলাম ও মুসলমানদেরকে বিজয়ী করতে হলে প্রথমে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।কর্মবন্টন প্রক্রিয়ায় একেক দলকে একেক কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং সে কাজটিকেই একমাত্র কাজ মনে করা যাবে না। বরং সম্মিলিত কাজের একটি অংশ মনে করতে হবে।পারস্পরিক সমালোচনার পথ বন্ধ করতে হবে।

অতএব –
১. খ্রিস্টান মিশনারীদের মোকাবিলায় আমাদের দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতকে আরো বেগবান করতে হবে এবং এ কাজের সাথে যারা জড়িত থাকবেন তারা একেই দীনের একমাত্র কাজ মনে করবেন না। তারা মনে করবেন যে, আমরা দীনের চার মৌলিক কাজের একটি পালন করছি। আর অন্য তিনটি কাজ আমার অন্য ভাইয়েরা করছে।

২. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জ্ঞানবিজ্ঞান গবেষণার মোকাবিলায় আমাদেরকে আরো কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করলে চলবে না। প্রতিপক্ষের মতো আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানেও পারদর্শী হতে হবে। নতুন নতুন সমরাস্ত্র আবিষ্কার করতে হবে। এ কাজের সাথে যারা জড়িত থাকবেন তারা একেই দীনের একমাত্র কাজ মনে করবেন না। তারা মনে করবেন যে, আমরা দীনের চার মৌলিক কাজের একটি পালন করছি। আর অন্য তিনটি কাজ আমার অন্য ভাইয়েরা করছে।

৩. কুফরি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের মোকাবিলায় আমাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকতে হবে। যেসব এলাকায় মুসলিম মুক্তিযোদ্ধারা কাজ করছেন তাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। তাদেরকে ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে যে, তারা সি আই এ বা মোসাদের তৈরি কোনো গ্রুপের হয়ে কাজ করছে না তো? এবং এ কাজের সাথে যারা জড়িত থাকবেন তারা একেই দীনের একমাত্র কাজ মনে করবেন না। তারা মনে করবেন যে, আমরা দীনের চার মৌলিক কাজের একটি পালন করছি। আর অন্য তিনটি কাজ আমার অন্য ভাইয়েরা করছে।

৪. প্রাচ্যবিদ, খ্রিস্টান শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও কুফরি মিডিয়ার মোকাবিলায় আমাদের বাস্তব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ কাজের সাথে যারা জড়িত থাকবেন তারা একে দীনের কাজ মনে করে করবেন । তারা মনে করবেন যে, আমরা দীনের চার মৌলিক কাজের একটি পালন করছি। আর অন্য তিনটি কাজ আমার অন্য ভাইয়েরা করছে।

উপর্যুক্ত চারটি কাজ যারা করবেন তাদের সবাইকে তাযকিয়ার সবক নিতে হবে। আর অন্যদের তাযকিয়ার কাজ যারা করবেন তারা মনে করবেন যে, আমরা দীনের চার মৌলিক কাজের একটি পালন করছি। আর অন্য তিনটি কাজ আমার অন্য ভাইয়েরা করছে।
আমাদের মধ্যে যদি এ মানসিকতা গড়ে ওঠে তাহলে ইনশাআল্লাহ ইসলামের বিজয় খুব বেশি দূরে নয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সঠিক বোধ ও উপলব্ধি দান করুন।

লেখক : কাজী মুহাম্মদ হানিফ
পরিশীলক : মুহিউদ্দীন কাসেমী

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে জরুরী কিছু কথা!

কমাশিসা ডেস্ক: শুক্রবার ২৫সেপ্টেম্বার ২০২০. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি যখন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ...