শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:৫১
Home / খোলা জানালা / প্রবাসীদের কি রোহিঙ্গাদের জন্য কিছুই করার নেই!
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অপেক্ষারত রোহিঙ্গাদের এই ছবি গত শুক্রবার রাতে তোলা l প্রথম আলো

প্রবাসীদের কি রোহিঙ্গাদের জন্য কিছুই করার নেই!

ফাহিম বদরুল হাসান, প্যারিস থেকেঃ মায়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের খবর আর গোপন জেনোসাইড নয়। ছবি, ভিডিও সহ অনেক ডকুমেন্টারি এখন ভাইরাল হয়ে আছে। যেগুলো দেখে কোনো মানুষ বুক ধরাতে পারবে বলে মনে না। সরকারি বাহিনীর সাথে স্হানীয় বৌদ্ধরা মুসলিম জাতিকে মায়ানমার থেকে সমূলে ধ্বংস করে দিতেই রোহিঙ্গাদের শিশুদের কুপিয়ে, নারীদের ধর্ষণ করে এবং পুরুষদের জ্বালিয়ে/গুলি করে হত্যা করছে।

রোহিঙ্গাদের ইতিহাসে এমন হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি বারবার হলেও এবারের নির্যাতনের নির্মমতা যেন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। ভৌগলিক এবং ধর্মীয় কারণে এটা যেমন বাংলাদেশে থাকা মানুষকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিবেকের পিঠে চাবুক মেরে যাচ্ছে। তবে প্রবাসে এসব কথার সমাপ্তি হয় এই বলে যে- ‘ভাই, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে দোয়া ছাড়া কী ই করতে পারি?’

প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি দোয়া ছাড়া কিছু করার নেই? মানবতার দেয়ালে প্রশ্নটি ছুঁড়লে অবশ্যই উত্তর আসবে- ‘আছে’। যাদেরকে মায়ানমারে হত্যা করা হয়েছে, তাদের জন্য আসলেই দোয়া করা ছাড়া কিছু নেই, কিন্তু যারা এখনো জানে বেঁচে আছে তাদের জন্য অবশ্যই দোয়া ছাড়া আরো অনেক কিছু করার আছে। না, আপাততঃ আপনাকে মায়ানমার যেতে হচ্ছে। শুধু মানবতার হাতটি খানিকটা প্রসারিত করুন।

যেই মানুষগুলো নির্যাতনের নির্মমতা সইতে না পেরে আর কোনো উপায় না দেখে গত ক’দিনে বাংলাদেশে ঢুকেছে। শুধু প্রাণ বাঁচাতে, সীমান্তে বিজিবির সতর্ক প্রহরার মুখেই তারা ঢুকছে বাংলাদেশে। তবে বিজিবির সামনে পড়লে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। সে কারণে অনেকেই রাতের আধারে অনুপ্রবেশ করছেন।

নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাফ নদী হয়ে সীমান্তের হোয়াইক্যংয়ের খারাইংগা ঘোনা, তম্রু, মিনা বাজার, খারাংখালী, কান্জরপাড়া, লম্বাবিল, জাদিমুরা, নোয়াপাড়া, লেদা, মোচনী, নাইট্যংপাড়া, কাউকখালী খাল দিয়ে প্রবেশ করছে। তারা আশ্রয় নিচ্ছে সীমান্তবর্তী উখিয়া থানার বিভিন্ন অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে। কারণ, নিবন্ধিত শিবিরে তাদের স্হান নেই। কেউ তাদেরকে অবস্থানের সুযোগ দিলে তাকেও বের করে দেয়া হবে- এমন আইন করে রেখেছে স্হানীয় নেতারা।

স্হানীয়দের ভাষ্যমতে প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকেছে বিগত কয়েক দিনে। স্রেফ প্রাণ বাঁচাতে আসা মানুষগুলো এখানে এসেও মরছে অনাহারে অর্ধাহারে। খুপরির মতো ছোট ছোট ঘরে কোনোমতে থাকলেও নেই কোনো আহার-পানি। সামান্য কিছু ত্রাণ সহায়তা আসলে সেটাও ঠিকমতো পৌঁছোয় না। অবশ্য অত্যন্ত বিশ্বস্ত কিছু মাধ্যম আছেন, যারা খুবই সযতনে এবং নিজ উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের অন্ন, বস্ত্র সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসছেন।

আমরা যারা প্রবাসে আছি, সবাই যে খুব ভাল আছি কিংবা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছি তা না- কিন্তু আমাদের গায়ে না লাগা সামান্য প্রয়াস (আল্লাহ চাইলে) রোহিঙ্গাদের জীবন হয়ে যেতে পারে। যারা ইউরোপে থাকেন, তারা যদি একমাস দিনে মাত্র একটি কফি কম পান করেন, কিংবা একমাস দু/তিনটা সিগারেট কম খান, তাহলে হিসেব করে দেখুন- হয়তো রোহিঙ্গাদের একটি ফ্যামিলির একমাসের খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যাচ্ছে!

এটা একদিকে যেমন নিরেট এবং অশেষ পূণ্যের সুযোগ, অন্যদিকে আমাদের উপর বর্তানো মানবিক দ্বায়িত্ব পালন।

লেখকঃ ফ্রান্স প্রবাসী গবেষক। 

লেখকের সমর্থিত ইভেন্ট এ যোগ দিতে ক্লিক করুন এখানে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও পাবেন ৫% সুদের গৃহঋণ

কমাশিসা: সরকারি চাকরীজীবিদের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও গৃহ নির্মাণে ৫ শতাংশ ...