শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:৪৮
Home / আমল / জুমার দিন বেশি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়া
মুফতি রেজাউল কারীম আবরার

জুমার দিন বেশি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়া

মুফতি রেজাউল কারীম আবরার :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম শুনে তার উপর দুরুদ পড়া একটি স্বতন্ত্র আমল। রয়েছে বেশ কিছু ফযীলত। রাসূল সাল্লাল্লামের উপর দুরুদ পড়া এবং তার ফযীলত সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি কিতাবও সংকলিত হয়েছে। এবিষয়ে ইমাম সাখাবী রহ. এর “ আল কাওলুল বাদী”  ইবনুল কায়্যিম এর “জিলাউল আফহাম” এবং ইবনে হাজার হাইতামী রহ. এর “আদ দুররুল মানযুদ” উল্লেখযোগ্য। যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম শুনে দুরুদ পড়লোনা, একাধিক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য বদদোয়া করেছেন। হুসাইন বিন আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

عن حسين بن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم البخيل الذي من ذكرت عنده فلم يصل علي

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কৃপণ হল সে ব্যক্তি, যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হল, কিন্তু সে আমার উপর দুরুদ পড়লনা। (মুসনাদে আহমদ, ১৭৩৬. শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীকককৃত। তিরমিযী, ৩৫৪৬. শায়খ আহমদ শাকের রহঃ তাহকীককৃত। সহীহ ইবনে হিব্বান, ৯০৯ )

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে  বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

رغم أنف رجل ذكرت عنده فلم يصل علي

ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধুসরিত হোক, যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হল, কিন্তু সে আমার উপর দুরুদ পড়লোনা। (মুসনাদে আহমদ, ৭৪৫১. শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।  তিরমিযী, ৩৪৪৫. শায়খ আহমদ শাকের তাহকীককৃত।  সহীহ ইবনে হিব্বান, ৯০৮. মুসনাদে বাযযার, ৮৪৬৫. মাকতাবাতুশ শামেলা।)

আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة أن النبي صلى الله عليه و سلم صعد المنبر فقال ( آمين آمين آمين ) قيل : يا رسول الله إنك حين صعدت المنبر قلت : آمين آمين آمين قال : ( إن جبريل أتاني فقال : من أدرك شهر رمضان ولم يغفر له فدخل النار فأبعده الله قل : آمين فقلت : آمين ومن أدرك أبوية أو أحدهما فلم يبرهما فمات فدخل النار فأبعده الله قل : آمين فقلت : آمين ومن ذكرت عنده فلم يصل عليك فمات فدخل النار فأبعده الله قل : آمين فقلت : آمين

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মিম্বারে আরোহন করছিলেন, তখন তিনবার আমীন বললেন। তাকে প্রশ্ন করা হল, আপনি মিম্বরে আরাহনের সময় কেন তিনবার আমীন বললেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: জীব্রীল আমার নিকট এসে তিনটি দোয়া করেছেন । (তন্মধ্যে একটি হল, যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হল, কিন্তু সে আমার দুরুদ পড়লোনা, সে যেন জাহান্নামে যায়। জিব্রীল বললেন: আপনি বলুন: আমীন। আমি আমীন বলে তার দোয়াকে সমর্থন করলাম। (সহীহ ইবনে হিব্বান, ৯০৭. শায়খ  শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত।)

এ সমস্ত হাদীসে যেমনভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম শুনে  দুরুদ না পড়লে বদদোয়া করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে অনেক হাদীসে দুরুদ পড়ার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। যেগুলো সাধারণ মানুষ প্রায়শই শুনে থাকে। এজন্য বিপরতি হাদীসগুলো উল্লেখ করলাম।

.

দুরুদ শরীফ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিনে বেশে করে দুরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।  আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

্র أَكْثِرُوا عَلَىَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِى كُلِّ يَوْمِ جُمُعَةٍ فَإِنَّ صَلاَةَ أُمَّتِى تُعْرَضُ عَلَىَّ فِى كُلِّ يَوْمِ جُمُعَةٍ ، فَمَنْ كَانَ أَكْثَرَهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً كَانَ أَقْرَبَهُمْ مِنِّى مَنْزِلَةً গ্ধ

অর্থাৎ জুমাবারে তোমরা আমার উপর বেশি করে দুরুদ পড়। কেননা আমার উম্মতের দুরুদ আমার কাছে প্রতি শুক্রবারে পেশ করা হয়। যে আমার উপর বেশি করে দুরুদ পড়বে, সে কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। ( আস সুনানুল কুবরা, বায়হাকী, ৬২০৮ মাজলিসু দায়িরাতিল মাআরিফ, হায়দারাবাদ।)

 

হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুনযিরী রহ.  বলেন:

رواه البيهقي بإسناد حسن إلا أن مكحولا  قيل لم يسمع من أبي أمامة

অর্থাৎ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী রহ. ‘হাসান’ সুত্রে উল্লেখ করেছেন। তবে বলা হয় যে, মাকহুল আবু উমামা রা. থেকে হাদীস শুনেননি। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং, ২৫৮৩ দারুল কুতুবলি ইলমিয়্যৗাহ, বায়রুত, প্রথম সংস্করণ।)

আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

أكثروا علي من الصلاة كل يوم الجمعة فإنه مشهود تشهده الملائكة وإن أحدا لن يصلي علي إلا عرضت علي صلاته حتى يفرغ منها قال قلت وبعد الموت قال إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء عليهم الصلاة والسلام

প্রত্যেক জুমাবারে তোমরা বেশি করে আমার উপর দুরুদ পেশ কর। কেননা তোমাদের দুরুদ ফিরিশতারা আমার উপর পেশ করেন। তোমরা যে কেউ আমার উপর দুরুদ পড়লে তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আমি বললাম: আপনার ইন্তেকালের পরও? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আল্লাহ তায়ালা মাটির জন্য নবীদের শরীর ভক্ষণ হারাম করে দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং, ১৬৩৭ শায়খ ফুয়াদ আবদুল বাকী তাহকীককৃত)

হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুনযিরী বলেন:

رواه ابن ماجه بإسناد جيد

অর্থাৎ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং, ২৫৮২ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়রুত)

আওস বিন বিন আওস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

قال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : إن أفضل أيامكم يوم الجمعة فيه خلق آدم و فيه قبض و فيه النفخة و فيه الصعقة فأكثروا علي من الصلاة فيه فإن صلاتكم معروضة علي قالوا : و كيف تعرض صلاتنا عليك و قد أرمت ؟ فقال : إن الله عز و جل حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء

আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: সপ্তাহের শ্রেষ্টতম দিন হল জুমার দিন। শুক্রবারে সৃষ্টি করা হয়েছে আদমকে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন শুক্রবারে। শুক্রবারে সংগঠিত হবে কিয়ামত। সুতরাং তোমরা বেশি করে আমার উপর দুরুদ পেশ কর। কেননা তোমাদের দুরুদ আমার উপর পেশ করা হয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন: আপনার উপর দরুদ কিভাবে পেশ করা হয়? অথচ আপনার শরীর মাটির সাথে মিশে যাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আল্লাহ মাটির জন্য নবীদের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, ১৬১৬২ শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকীককৃত। নাসায়ী, ১৩৭৩ শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ তাহকীককৃত।  সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১৭৩৩ শায়খ মুসতাফা আযমী  দা.বা. তাহকীককৃত)

হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুনযিরী বলেন:

رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه وابن حبان في صحيحه والحاكم وصححه

হাদীসটি ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান  এবং হাকিম নিশাপুরি ‘আল মুসতাদরক’ এ তাখরীজ করেছেন এবং হাদীসকে সহীহ বলেছেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ২৫৮৪ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বায়তুত, প্রথম সংস্করণ)

আনাছ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

اكثروا الصلاة علي يوم الجمعة فإن صلاتكم تعرض علي

অর্থাৎ জুমার দিন তোমরা বেশি করে আমার উপর দুরুদ পেশ কর। কেননা তোমাদের দুরুদ আমার উপর পেশ করা হয়।

হাদীসটির ব্যাপারে ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন:

وهذا وان كان اسناده ضعيفا فهو محفوظ في الجملة ولا يضر ذكره في الشواهد

অর্থাৎ হাদীসের সনদ যদিও যয়ীফ, কিন্তু মর্ম সঠিক হওয়ার কারণে অন্য হাদীসের প্রামাণিকতা শক্তিশালি করার জন্য এ হাদীস পেশ করতে কোন সমস্যা নাই। (জিলাউল আফহাম, পৃষ্টা নং, ২২৭ দারুল হাদীস কাহেরা।)

উপরেল্লিখিত হাদীস থেকে জুমারদি বেশি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়ার গুরুত্ব বুঝে এসেছে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে বেশি করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়ার তাওফিক দান করেন। আমীন

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

সাহাবা রা.দের যুগে ২০ রাকাত তারাবীহ’র নামায (২য় পর্ব)

মুফতী মাসুম বিন্নুরী:: (দ্বিতীয় পর্ব) খলীফায়ে রাশেদ আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার রা. কর্তৃক কায়েমকৃত সাহাবা ...