শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:০০
Home / আকাবির-আসলাফ / আজ সুলায়মানরাই সর্বেসর্বা

আজ সুলায়মানরাই সর্বেসর্বা

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ ::

%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a6%97%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a7%80৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মাদ্রাজে মুসলিম লীগের পক্ষে উলামাদের বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হল। এক মাওলানা বক্তৃতায় উঠেই বলতে শুরু করলেন, “মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীকে প্রত্যাখ্যান করুন, মাদ্রাজ থেকে কংগেসের এই পা চাটা গোলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক, মহাত্মা গান্ধির দরবারি আলেমের ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠর বিরুদ্ধে দৌড়ঝাঁপ আর সহ্য করা হবে না, প্রথম থেকেই মাদানী পাকিস্তানে আলাদা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন”।

বক্তা এতটুকো বলার পরেই সভার সভাপতি থানভী রহ-এর অন্যতম খলিফা মাওলানা নূরুল হক মাদ্রাজি দাঁড়িয়ে তার মাইক কেড়ে নিলেন এবং কড়া ভাষায় এর তীব্র প্রতিবাদ করলেন। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উম্মাদ তরুণ আলেমরা তখন দালাল দালাল বলে নূরুল হক মাদ্রাজির উপর ক্ষেপে ওঠলেন।
তারপর নূরুল হক মাদ্রাজি মাইকে ঘোষণা দিলেন “যে রাজনীতিতে হুসাইন আহমদ মাদানীর বিরোদ্ধে কথা বলতে হয় আমি সেই রাজনীতি থেকে ইস্তেফা দিলাম।”

তিনি মনের দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে থানভী ছাহেবের দরবারে রওয়ানা হলেন। গভীর রাত। থানভীর খানকার বারান্দায় বসে পড়লেন। এসময় বাইরে বেরিয়ে এলেন হযরত থানভী রহ-এর খাছ খাদেম সুলায়মান। সুলায়মান নূরুল হক মাদ্রাজির হাল-পুরসি নিলেন। নিজের রুমে নিয়ে গেলেন। মাওলানা নূরুল হক তাঁকে মাদ্রাজের সভায় মাদানীকে গালাগালি ও কটুক্তির কথা বললেন। শুনে খাদেম সুলেমান বললতে লাগল, “ওহ তো বিহি মোনাফেক হু, মাদানীতো কংগেসি কা দালাল হু। সে হিন্দুদের পা চাটা গোলাম” ইত্যাদি ইত্যাদি।

মাওলানা নূরুল হক মাদ্রাজি যে কষ্টের আগুন বুকে নিয়ে এসেছিলেন, খাদেম সুলায়মানের মাদানীকে গালি দেয়াতে তা আরো বেড়ে গেল। তিনি বললেন, ভাই মাদানী কী অনেক বড় আলেম নন?
সুলায়মান উত্তর দিল, এলেম তো শয়তানেরও ছিল?
মাদ্রাজি বললেন, তিনি কি দেওবন্দের শায়খুল হাদীস নন? তিনি কি শায়খুল হিন্দের খলিফা নন? তিনি কি একজন বুর্যুগ নন?
সুলায়মান উত্তর দিল, এক যামানাতে শয়তানও বহুত বড় বুর্যুগ ছিল?

রাগে গোস্বাতে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। সারা রাত মানসিক যন্ত্রণায় কাটানোর পর মসজিদে ফজর পড়লেন। ফজরের পর হযরত থানভী রহ. মসজিদে বয়ান রাখলেন। বয়ানে তিনি মুরিদানদের একটি ঘটনা শুনালেন, “এক লোক আমার কাছে চিঠি লিখেছে খানকায়ে মাদানীতে বড় বড় দোষ ক্রুটিও মার্জনীয়। কিন্তু আপনার খানকাতে সামন্য দোষ ক্রুটি হলেই ধরে ফেলেন কেন? আমি উত্তরে বলেছি, মাদানীর খানকা সাগরের মতো, আর আমার খানকা কুপের (কোয়া) মতো। সাগরে হাতি পড়ে মারা গেলেও পানি নাপাক হয় না, কিন্তু কুপে বিল্লি পরে মারা গেলেও পানি নাপাক হয়ে যায়”।

থানভীর এই কথা শুনেই মাওলানা নূরুল হক মাদ্রাজি দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, এসব আপনার মনের কথা না মুখের কথা? থানবী রহ. তার কথা শুনার পর বয়ান শেষ করে সবাইকে বিদায় দিলেন আর মাদ্রাজিকে মসজিদে বসালেন।
থানভী বললেন, তুমি কি থানভীকে কখনো মুনাফেকিতে পেয়েছ? মাদ্রাজি সব ঘটনা খুলে বললেন। মাদ্রাজের সভায় মাদানীকে গালিগালাজ, তার প্রতিবাদ, ইস্তেফার ঘোষণা এবং রাতে খানকাতে খাদেম সুলায়মান এর সব কথা খুলে বললেন।

থানবী রহ. খাদেম সুলায়মানকে ডেকে আনলেন। নূরুল হক মাদ্রাজিকে সুলায়মান কী বলেছে তা পূণরায় তার সামনে বলতে বললেন। তিনি বললেন। থানভী জিজ্ঞাসা করলেন, ঘটনা কি সত্য?তুমি কি মাদানী সম্পর্কে এসব বলেছে? সুলেমান বললেন, হ্যা, বলেছি।

থানভী রহ দু’জন লোককে ডেকে এনে বললেন, “তাকে (সুলায়মান) কানে ধরে পুরো থানাভবনে চক্কর দেওয়াবে। তারপর সোজা গাড়িতে তুলে দিবে। আর তাকে ৩টি নসিহত করলেন,
(১) কখনো আমাকে সালাম করবে না।
(২) কখনো মাফ চাইতে সামনে আসবে না।
(৩) কাউকে দিয়ে কোন সুপারিশ করাবে না।

আর শাগরেদদেরকে থানভী রহ. বলে দিলেন, তোমরা মুসলিম লীগের সমর্থক সবাইকে জানিয়ে দাও, যে রাজনীতিতে মাওলানা মাদানীকে গালিগালাজ করা হবে, আক্রমণ করে কথা হবে আমি সে রাজনীতিতে নেই। এসব বন্ধ হলে তারা আমাকে পাশে পাবে। থানভী রহ এর এই ঘোষণায় আলেমদের মধ্য মুখোমুখি সমস্ত বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত হয়ে এল।

পুনশ্চ: আজ একজন মাওলানা নুরুল হক মাদ্রাজির বড় প্রযোজন। যিনি বুকে সাহস নিয়ে বলবেন, “বেফাকের সমাবেশে প্রকাশ্যে ফেদায়ে মিল্লাত সৈয়দ আসআদ মাদানীর অন্যতম খলিফা মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ (দামাত বারাকাতুহুম) কে যারা “জারজ” বলে গালি দেয় আমি সেই বেফাকিয় রাজনীতিতে নেই, ইস্তিফা দিলাম “।

আজ একজন থানভীর বড় প্রযোজন যিনি, মাওলানা আজহার আলী আনোয়ার শাহকে যারা দালাল বলে গালি দিয়ে প্রকাশ্যে আলেমদের মজলিসে অপমান করেছে, তাদেরকে কান ধরিয়ে ঢাকা শহরে বেয়াদব হিসাবে প্রদক্ষিণ করাবেন।

কিন্তু….
আজ খাদেম সুলায়মানরাই সর্বেসর্বা।

 লেখক : তরুণ গবেষক ও গ্রন্থকার

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...