শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৫২
Home / আকাবির-আসলাফ / কুরআনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার এক কারিগর

কুরআনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার এক কারিগর

গাজী ইয়াকুব ::

belaywt-500x265মাওলানা ক্বারী বেলায়েত হোসাইন; একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সংঘঠন, গত কয়েক দশক ধরে আল্লাহর এই মাকবুল বান্দা হাজার হাজার কোরআনী মক্তব নির্মানে নিরলসভাবে যে কাজ করে যাচ্ছেন, তা সমগ্র দুনিয়াতে সত্যিই বিরল! উম্মুল মাদারিস বড় কাটারা মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়ে প্রথমে কিছুদিন হযরত সদর সাহেব হুজুর (রাহ্) এর প্রতিষ্ঠিত এতিহ্যবাহী গওহারডাংগা মাদরাসায় অতঃপর চাঁদপুর জেলায় হযরত হাজী আব্দুল কাদের খান (রাহ্) এর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কাসেমুল উলুম মাদরাসায় দির্ঘদিন খিদমত করে ১৯৮২ সালে হযরতের পীর, “মুজাদ্দিদে যামান” হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রাহ্) এর নির্দেশ ও আন্তরিক দোয়াকে সম্বল করে ঢাকার মুহাম্মাদপুরে নিজস্ব জায়গাতে গড়ে তুলেন নুরানী মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র! হযরত হাফেজ্জী হুজুর একদিন তাঁর এই স্নেহাস্পদ ছাত্রকে কাছে ডেকে মাথার মাঝে হাত রেখে বলতে লাগলেন, “বেলায়েত” আমার মনের মাঝে অনেক বড় একটি স্বপ্ন এই দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার কোরআনী মক্তব প্রতিষ্ঠা করি, যাতে করে তৃনমূল জনসাধারণের মাঝে দ্বীনদারী পরিবেশ কায়েম হয়! নতুবা এদেশীয় মানুষ গুলোকে কখনোই পূর্ণ দ্বীনদার বানানো সম্ভব হবে না! আশাকরি আমার এই স্বপ্ন পূরনে তুমিই এগিয়ে আসবে, ইনশা আল্লাহ!

ছোটবেলায় পিতামাতা হারিয়ে লজিং বাড়িতে থেকে পড়াশুনা সম্পন্ন করে, সংসার জীবনের সকল কষ্ট ক্লেশকে পিছনে ফেলে তিলে তিলে গড়ে তুলেন ঐতিহ্যবাহী নুরানী তা,লিমুল কোরআন শিক্ষা বোর্ড!! এই বোর্ডের মাধ্যমে দির্ঘ তিন যুগ ধরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হোন লক্ষ লক্ষ নুরানি মুয়াল্লিম শিক্ষক, এরাই ছড়িয়ে পড়েন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া, দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারত পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাজ্য, অষ্টেলিয়ার সিডনি থেকে কানাডার টরেন্টো এককথায় দুনিয়ার সর্বত্রই হযরতের কোরআন শিক্ষার মিশন রাব্বে কারীমের বরকতে পৌঁছে গিয়েছে!

হযরত নিজেই কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকের আদলে বোর্ড গঠন করে সারা দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ ও পরিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করেন। হযরতের কাছেই শিক্ষা প্রাপ্ত অনেক ওলামাও গড়ে তুলেন নানা নামে আরো কয়েকটি নুরানি বোর্ড। শুধু এখানেই শেষ নয়! সমগ্র বাংলাদেশে এমন একটি মসজিদ মাদরাসা নেই যেখানে আজ হযরতের আদলে নুরানি মক্তব চালু নেই! যেই মানুষটির ওসিলায় এদেশের কোটি কোটি মানুষ কোরআনমজিদ শিখেছেন এবং শিখছেন, আজ সেই মানুষটি বয়সের ভারে নানাবিধ রোগে জর্জরিত হয়ে কখনো বাসার বিছানায় কখনোবা হাসপাতালের বিছানাতে শুয়ে শুয়েই জীবনের শেষসময় গুলো পার করছেন! নিজ পরিবার, আর গুটিকতক ভক্তবৃন্দ, ছাত্র তোলাবা ছাড়া আজ কাউকেই তাঁর শয্যাপাশে দেখা যাচ্ছে না!

সম্পর্কে আমার নানাজান ক্বারী বেলায়েত সাহেব যদি মুসলিম ধর্মের কোরআন মজিদ প্রচারের কারিগর না হয়ে মাদার তেরেসার মতো খ্রিষ্টীয় বাইবেল প্রচারের কারিগর হতেন, তাহলে আজ যুক্তরাষ্ট্রের বারাক ওবামা থেকে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথও তাঁকে দেখতে হাসপাতালের শয্যাপাশে সিরিয়াল ধরতেন। আফসোস! এইদেশের কোনো সরকার, কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো সংস্থার প্রধান কিংবা প্রতিনিধি আজ পর্যন্ত হাসপাতালে দেখতে আসা তো দুরের কথা, পরিবারের কারো কাছে ফোন দিয়ে সামান্য খোঁজখবর নেওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত কেউ পাননি! আজ যদি তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজির মতো হতেন কিংবা বৌদ্বদের কোনো ভিক্ষু সর্দার হতেন! আমার মনে হয় তাঁর লাইফের উপরে পিএইচডি করার জন্যে লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের লাইন শুরু হয়ে যেতো। নোবেলের পর নোবেল এনে শিয়রে হাজির করতো।

এদেশের কতো আবুল, মফিজ, অখ্যাত কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদেরকে স্বাধীনতা, একুশে, ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত করা হয়! কিন্তু রাব্বে কারীমের মহাগ্রন্থ কোরআন মজিদকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার এই কারিগরের কপালে কি একটি পুরস্কারও বরাদ্দ করা যায় না? কিংবা রাষ্ট্রীয় খরচে দেশবিদেশে উন্নত কোনো চিকিৎসার আয়োজনও সম্ভব হয় না? হে হযরত দুনিয়ার কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা আপনার ভাগ্যে না জুটলেও দুনিয়ার মালিক মহান আল্লাহ পাক আপনাকে যেনো পরকালে সর্বোত্তম পুরস্কারটিই দান করেন আমরা সেই দোয়াই করি।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

বেফাকের দ্বিতীয় সভাপতি আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ.-এর বর্ণিল জীবন

কমাশিসা ডেস্ক:: আল্লামা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী রহ.। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ- এর দ্বিতীয় সভাপতি। বাংলাদেশে ...