শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:০২
Home / আমল / মক্কা শরিফের জুমার খুতবা : ঈমানের সমুজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য

মক্কা শরিফের জুমার খুতবা : ঈমানের সমুজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য

Dr.-Faysal - Copyশায়খ ড. ফয়সাল বিন জামিল গাজ্জাবি : ঈমানের নেয়ামত বান্দার শ্রেষ্ঠতম পাওয়া। কেউ যখন তা অর্জন করে, এর মধ্য দিয়ে সে পরিমাপ অযোগ্য ও তুলনারহিত বহু নেয়ামত লাভ করে। যার মাধ্যমে ইহ-পরকালের সৌভাগ্য বাস্তবায়িত হয়। ভেবে দেখুন আল্লাহর বাণী, ‘বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।’ (সূরা হুজুরাত : ১৭)। বান্দার অস্তিত্ব এবং জীবিকা, সুস্থতা, জীবন ও সম্পদের যেসব উপকরণ আল্লাহ দান করেছেন তার চেয়েও বড় নেয়ামত ঈমান। এ এমন এক দান, যা মানব অস্তিত্বকে বিশেষ তাৎপর্যম-িত করেছে। যা তার জীবনে কার্যকর প্রভাব রাখে। এ নেয়ামতের মূল্য বুঝতে পারি আমরা নিচের আয়াত অনুধাবনের মাধ্যমে। ‘আর যে মৃত ছিল অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে। সে কি ওই ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে, যে অন্ধকারে রয়েছে- সেখান থেকে বের হতে পারছে না? এমনিভাবে কাফেরদের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্মকে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।’ (সূরা আনআম : ১২২)।

যে মৃত ছিল, বেপথু হয়ে ধ্বংস ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জ ছিল। অতঃপর আল্লাহ তার অন্তর সজাগ করেছেন ঈমান দিয়ে, তাকে দেখিয়েছেন নিজের পথ। তাকে তৌফিক দিয়েছেন তাঁর রাসুলদের অনুসরণের। তার সমান কি ওই ব্যক্তি হতে পারে, যে বিবিধ অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতায় জীবন কাটাচ্ছে আর কোনো উদ্ধারকারী বা ত্রাতার সন্ধান পাচ্ছে না? যে ঈমান হারিয়ে ফেলে, তার স্রষ্টা রব এবং সত্যসহ প্রেরিত নবীকে না চেনে; সে উ™£ান্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত। বস্তুত আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা সর্বনাশা বিষতুল্য। পক্ষান্তরে ঈমান এমন লাভ, গনিমত ও দান, মূল্য ঠাওরকারীরাই শুধু এর মূল্যায়ন করতে পারে। মুসলিম বান্দার জীবনে ঈমানের বিরাট প্রভাব রয়েছে। ঈমান বান্দার গঠন ও মননকে আমূল বদলে দেয়, যা তাকে ভালো কাজে প্রেরণা দেয় এবং কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতায় উদ্দীপনা জোগায়। তাই তো মহাসত্যবাদী এবং মহাসত্যায়িত নবী রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি প্রকৃত মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের (অপর মুসলিমদের) জন্য ঠিক তাই পছন্দ করে, যেরূপ সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। ইমাম আহমাদ সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেন এভাবে, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ করে বলছি, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না সে নিজের কোনো মুসলমান ভাইয়ের জন্য সেই জিনিস পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’

সেহেতু মোমিনমাত্রই উপলব্ধি করে, তার কিছু দ্বীনি ভাই রয়েছে, যাদের সে ভালোবাসে ও ভক্তি করে। কামনা করে তারাও তেমনি কল্যাণপাপ্ত হোক, যেমন সে নিজের বেলায় প্রত্যাশা করে। তার যেসব মর্যাদা রয়েছে তাদের জন্যও তাই বাস্তবায়িত হোক। মোমিনের ঈমান তাকে উদ্বুদ্ধ করে সৃজনশীল ও কার্যকর হতে। সে কতই না সৌভাগ্য অনুভব করে, যখন আল্লাহর জন্য ব্যয় করে এবং পরের সহযোগিতা ও তার সেবায় আত্মনিয়োজিত হয়। সে আনন্দবোধ করে, যখন তারই হাতে তার ভাইয়ের সমস্যা দূর হয়। তার আগ্রহ থাকে যেন নানাবিধ কল্যাণ খাতে তারও অংশ থাকে। সেও যেন লাভ করে পূর্ণ প্রতিদান ও বিরাট মর্যাদা।

বিষয়টি স্পষ্ট প্রতিভাত হয় শ্রেষ্ঠতম মহামানব এবং বিশুদ্ধতম মানুষ মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও জীবনীতে। তিনি মানুষকে কল্যাণ শেখাতেন। তাদের আহ্বান করতেন সব শুভ কাজে। বারণ করতেন পাপ, অশ্লীলতা ও সব ধরনের মন্দাচার থেকে। যে কেউ তাঁর সান্নিধ্যে যেত বা তাঁর সঙ্গে মিলিত হতো তাঁর বরকত সে লাভ করত। তাঁর সান্নিধ্যে সৌভাগ্যবান হতো। মোমিনের জীবনও তেমনি। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘মানুষের বরকত হলো সবখানেই তার কল্যাণ শিক্ষাদান এবং সব সঙ্গীর জন্যই হিত কামনা। ঈসা (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন।’ (সূরা মরিয়ম : ৩১)। অর্থাৎ কল্যাণ শিক্ষাদানকারী বানিয়েছেন। আমি আল্লাহর পথে আহ্বান করি, তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিই এবং তাঁর ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করি। এসবই ব্যক্তির বরকতের দিক। যে ব্যক্তি এসব থেকে মুক্ত, সে বরকত থেকে মুক্ত। তার সাক্ষাৎ ও মিলনের বরকত মিটিয়ে দেয়া হয়েছে।’
আমাদের মহান আদর্শ তথা রাসুল (সা.) কল্যাণকর্ম, সৎকাজ ও পরোপকারে ছিলেন ক্লান্তিহীন। এটা শেখাচ্ছেন, এতে ডাকছেন, এর উপদেশ দিচ্ছেন, এর জন্য ভর্ৎসনা করছেন, এ কাজে মত দিচ্ছেন, এ কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করছেন, এ অকল্যাণ থেকে সতর্ক করছেন, এর প্রয়োজন পূরণে চেষ্টা করছেন, এর জন্য সুপারিশ করছেন, একে উপহার দিচ্ছেন, একে দান করছেন, এর সঙ্গে কৌতুক করছেন, একে দেখতে যাচ্ছেন, একে অতিথি বানাচ্ছেন, এদের মাঝে মধ্যস্থতা করছেন এবং এর থেকে হক আদায় করছেন। এভাবেই তিনি

কল্যাণকর্মে বিরতিহীন লেগে থাকতেন। তিনি শুধু এতেই সীমিত ছিলেন না। বরং এ মূল্যবোধের ওপর একটি প্রজন্মই গড়ে তুলেছেন। সাহাবায়ে কেরামের সেই প্রজন্ম ছিল কল্যাণ সাধনে একে অপরের প্রতিযোগী। তারাও ছিলেন মহামানব। তারা প্রত্যেকেই হয়েছেন মানবতার কল্যাণে প্রদীপ্ত উপমা।

১৭ শাওয়াল ১৪৩৭ হি. মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন আলী হাসান তৈয়ব

সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...