শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:১৭
Home / অনুসন্ধান / বিবাহ প্রথা উঠে যাচ্ছে যে দেশে!

বিবাহ প্রথা উঠে যাচ্ছে যে দেশে!

Preaching+Authentic+Islam+in+Bangla.jpgঅনলাইন ডেস্ক :: ধরে নিন ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আপনি এক অচেনা সমাজে আবিষ্কার করলেন। এমন এক সমাজে নিজেকে দেখতে পেলেন যেখানে নেই কোনো সংস্কার, কুসংস্কারতো দূরের কথা। আসলে স্বপ্ন বা ধরে নেয়ার দরকার নেই। আপনি যদি শুনতে পান যে, এমন এক সমাজ রয়েছে যেখানে বিবাহ প্রথা ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, নিশ্চিতভাবেই এই তথ্য আপনার জন্য একটা ধাক্কা হিসেবে দেখা দেবে। আর সেটা সহজে মেনে নেয়া কষ্ট হবে স্বাভাবিক নিয়মেই। কারণ মানুষ প্রথাগত অভ্যাসের ভেতর দিয়েই বেঁচে থাকে, আর এই অভ্যাসের কিছু ব্যাতিক্রম হলেই শুরু হয়ে যায় অভ্যাসকে বাঁচিয়ে রাখবার নানান পন্থা। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে আজ পৃথিবীতে এমন অনেক দেশই আছে যেখানে বিবাহ বর্হিভূত সন্তানের সংখ্যা উল্লেখজনক। অর্থাৎ, নর-নারীর সামাজিক বিবাহবন্ধন ছাড়াই ওই সন্তানদের জন্ম হয়েছে।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র পরিবেশিত সংবাদ মতে, বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ শিশুই বিবাহিত জীবন ছাড়াই জন্মেছে। এমনকি রক্ষণশীল তুরস্কেও এই সন্তানদের হার ৩ শতাংশ। তবে বলুনতো, এক্ষেত্রে কোন দেশটি সবার শীর্ষে অবস্থান করছে, যেখানে সিঙ্গেল(বিবাহ করেননি এমন) মায়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি? হয়তো তথ্যটি আপনার জানা নেই, তাই জানাতেই হচ্ছে। বিবাহ প্রথা অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে আইসল্যান্ড নামক দেশটি থেকে। আর তাই এই দেশটিতে সিঙ্গেল মায়ের সংখ্যাও বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আইসল্যান্ডের ৬৭ শতাংশ শিশুরই পিতা-মাতার মধ্যে বিবাহ হয়নি। নর-নারীর স্বাভাবিক সম্পর্কের ভেতর দিয়েই তাদের জন্ম হয়েছে এবং তাদের জন্মদানকারীরা তাদের প্রতি সর্বোচ্চ যত্নশীল এবং পৃথিবীর আর দশজন পিতা-মাতার মতোই তারা সন্তানকে লালন পালন করে।

2016_03_29_13_53_23_VEqXDm0tXqultcRU6iBhVTEoBayvjE_originalপৃথিবীর অধিকাংশ স্থানেই বিবাহ বহির্ভুত সন্তান জন্মদান বিষয়টি লজ্জা বা পাপকর্ম হিসেবে দেখা হলেও, ভাইকিংদের দেশ আইসল্যান্ডে একে বলা হয় গর্বের চিহ্ন বা স্মারক। পৃথিবীতে সর্বাধিক ফেমিনিস্ট সংগঠন আজ আইসল্যান্ডে। গোটা আইসল্যান্ডে জনগণের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার। তুলসা, ওকলাহোমা বা অন্যান্য বরফাকীর্ণ দেশগুলোর চেয়ে এই দেশের জনসংখ্যা কম। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে কিন্তু আইসল্যান্ডই এগিয়ে। হলিউডি চলচ্চিত্র ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ এবং ‘গেম অব থ্রনস’এ আইসল্যান্ডের বিশাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যবহার করা হয়েছে, যা দেখে নিশ্চিতভাবেই চলচ্চিত্রপ্রেমীরা অভিভূত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ করতেই হবে, ওই দুটি চলচ্চিত্রে আইসল্যান্ডের ল্যান্ডস্কেপ ব্যবহার করার পর থেকে দেশটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে গেছে বহুগুন।

বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় অধিবাসী ব্রান্ডিস আমুনদোতির বলেন, ‘সোজা কথা যেটা দাড়ায় তা হলো, আপনার যদি বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপার ঘটে, তবে সেটা এক কথায় কিছু ভেঙ্গে যাবার মতো অবস্থা। কিন্তু এসব আইসল্যান্ডে একদম চলে না। আমরা খুবই ছোটো এবং নিরাপদ এক পরিবেশে বাস করি। আমাদের নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা রয়েছে। আর এখানে চাইলে আপনি নিজের জীবন নিজের মতো যাপন করতে পারেন সহজেই।’ আমাদের ব্রান্ডিসের তিনটি সন্তান আছে, যদিও এই সন্তানেরা দুইজন পিতার। আর এনিয়ে তাদের মধ্যে নেই কোনো লজ্জাবোধ।

ব্রান্ডিসের কাছে আরও জানা যায় যে, আইসল্যান্ডে খুব মানুষই আছেন যারা প্রচলিত ধর্ম পালন করেন। এই দেশে সন্তান নষ্ট করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শুধু তাই নয়, সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য রয়েছে এই দেশের সরকারি বিশেষ ব্যবস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে সন্তান সম্ভবা নারীকে নয় মাসের বৈতনিক ছুটি দেয়া হয়। এরমধ্যে তিনমাস নারীর, তিনমাস পুরুষের এবং বাকী তিনমাস দুইজন চাইলে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। আর এই কারণে সন্তানের জৈব পিতারা যদি অন্যত্র চলেও যায়, তবু ওই সন্তানকে স্বাচ্ছ্যন্দে মানুষ করতে পারেন মা। তারপরেও যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, আইসল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী তারা বিয়ের আগেই একসঙ্গে কয়েক বছর থাকে এবং সন্তান পালনে সক্ষম হলেই তবে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আমেরিকান সংস্কৃতির উপর আইসল্যান্ডের সংস্কৃতির অনেক প্রভাব রয়েছে। মূলত আজ আমেরিকার সংস্কৃতিতে বরের পক্ষ থেকে কনেকে আঙটি পড়ানোর যে রীতি তা আইসল্যান্ড থেকে আসা। আইসল্যান্ডে নর-নারী একসঙ্গে থাকার সূত্র হিসেবে একে অপরকে একটি আঙটি দিয়ে থাকে। ওই আঙটি হাতে থাকা মানেই তাদের সম্পর্কাবস্থার ভেতর থাকা। এখানে স্রেফ মানবিক বিশ্বাসটিই আসল কথা, সামাজিক বা সংস্কারগত কোনো প্রথা মানবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য নয়। উল্লেখ্য যে, আইসল্যান্ডে কোনো ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ এবং দুর্ণীতি নেই বললেই চলে।

পরিবেশ বিপর্যয় এবং অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার কারণে গত কয়েক বছর ধরে আইসল্যান্ডের অবস্থা অতটা ভালো নয়। পর্যটকরা আগে দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলতে শুরু করলে এর প্রভাব পরে পর্যটন খাতের উপর। কিন্তু তারপরেও যদি আপনি আইল্যান্ডের মানুষকে বিবাগ প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে দেখতে পাবেন সব আইসল্যান্ডারই একজোট হয়ে শর্তহীন ভালোবাসার পক্ষেই রায় দেবে। তাদের কাছে সবকিছুই বাইরে ভালোবাসাটাই মুখ্য বিষয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসাই একমাত্র দরকার। সূত্র. বাংলামেইল।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...