শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:২৭
Home / খোলা জানালা / রিট খারিজ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম : বিজয় হয়েছে তাওহিদী জনতার

রিট খারিজ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম : বিজয় হয়েছে তাওহিদী জনতার

12376622_1692707080977429_9009937157848970522_n
ইলিয়াস মশহুদ :: সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হিসেবে ইসলামের অন্তর্ভুক্তির বিধানের বৈধতা নিয়ে ২৮ বছর আগে দায়ের হওয়া রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাঈমা হায়দার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ শুনানি করেন আজ সোমবার এই আদেশ দেন। তিন সদস্যের এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল।
আদেশে আদালত বলেন, আবেদনকারীদের আবেদনের লোকাস স্ট্যান্ডি (যোগ্যতা) নেই। তাই রিট আবেদনটি খারিজ করা হলো। রুলও খারিজ করা হলো। সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে শুরু হয় বৃহত্তর বেঞ্চের কার্যক্রম। শুরুতেই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজার। প্রস্তুতির জন্য সময় চান তিনি। আদালত তাকে বসার পরামর্শ দেন। পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন নিয়ে যাওয়া কয়েক আইনজীবী চেষ্টা করেন কথা বলার। আদালত বলেন, এখনওতো রুলের শুনানি শুরু হয়নি। আপনারা বসেন। এরপরই আদালত রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আদালত বলেন, আমরা আপনাকে আগের দিন বলেছিলাম- ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র এই রিট আবেদন দায়েরের লোকাস স্ট্যান্ডি (যোগ্যতা) আছে কি-না, তা দেখে আসতে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, শুধু সংগঠন নয়, প্রত্যেকেই আলাদাভাবে পিটিশনার হয়েছিলেন। আদালত বলেন, না। আমরা দেখছি সংগঠনের পক্ষেই এই রিট দায়ের করা হয়েছিলো। ওই সংগঠনের লোকাস স্ট্যান্ডি ছিলো না। রিট আবেদনটি খারিজ করা হলো। রুলও খারিজ করা হলো।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বহাল থাকার পাশাপাশি অন্য ধর্মের অধিকারও বহাল থাকলো। এটা সংবিধানেও রয়েছে।

songbidhan_121753অন্যদিকে রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় দেখবো। এরপর আপিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো। তবে সুব্রত চৌধুরী এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট স্থানান্তর সংক্রান্ত অষ্টম সংশোধনীর অংশ যখন চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিলো, তখন হাইকোর্ট ওই রিট খারিজ করে দেন। পরে আপিল বিভাগ ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রধর্মের ইস্যুও শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগে সুরাহা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত রিট শুনানিকে ঘিরে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছিলো। শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলো। সোমবার  সকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর লেখা স্মারকলিপি জমা দেয় সংগঠনটি। এর আগেই হরতালের ডাক দিয়েছিলো জামায়াত। দুপুরে রিট খারিজের খবর আসার পর জামায়াত তাদের হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়। রিট খারিজের খবর পেয়ে আদালতপাড়ায় উল্লাস প্রকাশ করেন অল্পসংখ্যক আলেম-উলামা।
২৮ বছর আগে এই রিট মামলাটি দায়ের করা হয়। ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক এতে বাদি হন। রিট আবেদনের ২৩ বছর পর ২০১১ সালে এ বিষয়ে রুল জারি করা হয়। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই রুল জারি করেন।
সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসন চলাকালে ১৯৮৮ সালের ৯ জুন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়, তার অন্যতম ছিলো রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে স্থান দেয়া। তবে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালেই হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। এরপর থেকেই আবেদনটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিলো।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ব্যাপক সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি বহাল থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ রিটটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে ২০১১ সালের জুন মাসে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই বছরের ১১ জুন রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অন্তর্ভুক্তির বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সাথে সিনিয়র ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

12003230_950468495060604_8257325367948080632_nঅষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত হয়। ২(ক)-তে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ৯ জুন এতে অনুমোদন দেন।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের আগস্ট মাসে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সাবেক বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত, বদরুদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নানা ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটি সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয় চরিত্রের প্রতি ধ্বংসাত্মক। রিটকারীদের মধ্যে ইতিমধ্যে অনেকেই ইন্তেকাল করেছেন।
এদিকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনে সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার সুপারিশ করে। তবে এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বহাল রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেই মূলত হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদনটি দাখিল করেন সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ।
ওই আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম (আংশিক) ও ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে অনুমোদিত (পাস) হলেও সুপ্রিম কোর্ট এসব সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতির বিধান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ের আলোকে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র সংবিধানে ফিরে এসেছে। আদি সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। এর সাথে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম অব্যাহত রাখা হলে তা হবে সাংঘর্ষিক ও পঞ্চম সংশোধনীর মামলার রায়ের পরিপন্থি।
রিট আবেদনের ওপর জারিকৃত রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছর রিটকারী পক্ষ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য আবেদন জানানো হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটের রুলের চূড়ান্ত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।
বৃহত্তর বেঞ্চ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে বিষয়টি শুনানির জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওইদিনের কার্যতালিকায় বিষয়টি ছিলো না। পরে ২৮ মার্চের কার্যতালিকায় বিষয়টি রাখা হয় এবং গতকাল এর উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ হওয়ায় হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তাৎক্ষনিকভাবে বিবৃতি, আনন্দ মিছিল, শোকরানা নামায-দোয়া এবং সরক্রা ও আদালতকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
ডিুরায়ে ইসলামের বিজয় হয়েছে : হেফাজত
রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ হওয়াকে ইসলাম ধর্মের বিজয় বলে আখ্যা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রিটটি রুলসহ খারিজ করে দেন। আদালতের এই রায়ের পর এক সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে এক প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল করিম কাশেমী। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে রিটের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের মে মাসে সমাবেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কার্যত ঝিমিয়ে পড়া অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কাশেমী বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এমন দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম না রাখা অবাঞ্চনীয়। কোনো অপশক্তি পারবে না ইসলামকে প্রতিহত করতে।’ ‘আদালত ন্যায়বিচার করেছেন। আদালত মুসলমানদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রিট খারিজের যে রায় দিয়েছেন, এতে আমাদের বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মের বিজয় হয়েছে।’ কাশেমী বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সম্মান দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে মিডিয়া এবং সকল মুসলিমকে ধন্যবাদ যারা এই আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন।’ তবে এই রায়ের পর সব ধর্মের লোক মিলেমিশে থাকবে এমন প্রত্যাশাও করেছেন ফজলুল করিম কাশেমী। তিনি বলেন, ‘আজকের রায়ের পর পূর্বের মতো সকল অহিংস পথ পরিহার করে আমরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সব ধর্মের লোক মিলেমিশে বসবাস করবো বলে প্রত্যাশা করছি।’ এদিকে সর্বস্থরের ওলামায়েকেরাম ও তোহিদী জনতার আন্দোলনের ফসল রাষ্টধর্ম ইসলাম বহাল থাকায়,শুকরিয়া ও বিজয় মিছিল বের করেছে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী,চট্রগ্রাম।

0061দেশবাসীকে খেলাফত মজলিসের অভিনন্দন
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে ২৮ বছর আগের একটি রিট আজ হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ায় এবং সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় শুকরিয়া আদায় করে এক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে দেশের জনগণ তথা ধর্মপ্রাণ জনতার বিজয় হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবীর যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে, সকলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। এদেশে ঐহিত্য অনুযায়ী সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ স্বস্ব অধিকার নিয়ে শান্তিতে অবস্থান করছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
তারা আরো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও তওহিদী জনতার যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সাফল্যের জন্যে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ জনগণ তথা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। একইসাথে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেশ, ধর্ম তথা ইসলামবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ ও সচেতন থাকার জন্যে দেশবাসীকে প্রতি আহ্বান জানান।

indexরাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখায় খেলাফত আন্দোলনের বিজয় মিছিল
রিট খারিজ করে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখায় বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ।
তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিজয় এবং নাস্তিকদের পরাজয় হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে গেলে নাস্তিকরা এদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাবে না।
সোমবার হাইকোর্টে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মামলার রিট খারিজ হওয়ার পর খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এক বিজয় মিছিলে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা ইলিয়াস মাদারীপুরী, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, মাওলানা সানাউল্লাহ, ছাত্রনেতা আশিক জোবায়ের প্রমুখ।
মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ও মাওলানা মুহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, কাজী রেজাউল হক, আশরাফুল কামালসহ এ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সকল তওহীদি জনতা, বিভিন্ন ইসলামী ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ৃৃৃুঙযএ বিজয় তওহিদী জনতার : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
২৮ বছর পূর্বে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের রিট খারিজ করার জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম ও মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান।
সোমবার এক বিবৃতিতে তওহিদী জনতার স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে তারা এই ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মানতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান জমিয়ত নেতৃবৃন্দ।
নেতারা বলেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে, তারা ইসলাম ও দেশের শত্রু। দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির দুরভিসন্ধিতেই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। শতকরা নব্বইভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া অন্যায়, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং চরিত্র বিনাশী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় ইসলাম ছাড়া অন্যকোনো বিধান কাজে আসবে না।
যারা রিটের নামে ইসলাম খারিজের চক্রান্ত করছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান জমিয়ত নেতৃবৃন্দ।

066ভবিষ্যতে যেন ইসলামের ওপর কেউ আঘাত করতে না পারে : চরমেসানাই পীর
ভবিষ্যতে যেন কেউ ইসলামের বিরুদ্ধে এবং ইসলামী সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে আঘাত করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম।
বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের চক্রান্তের প্রতিবাদে সারাদেশে যারা আন্দোলন করেছেন বিশেষ করে ওলামায়েকেরাম, ইসলামী নেতৃবৃন্দ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক সর্বোপরি ঈমানদার জনতাকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হলে এভাবেই সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করে দিতে হবে। বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের সেন্টিমেন্টকে বুঝে যে ঐতিহাসিক রায় দেয়া হয়েছে তাতে দেশ এক ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা পেল।

কমাশিসা লগোদেশের ধর্মপ্রাণ তওিহিদী জনতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কমাশিসার স্বপ্নদ্রষ্টা খতিব তাজুল ইসলাম
২৮ বছর আগের একটি রিট আজ হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ায় এবং সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় শুকরিয়া আদায় করে এক বিবৃতিতে কমাশিসার স্বপ্নদ্রষ্টা, বিশিষ্ঠ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খতিব মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঐতিহাসিক এই রায়ের মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ জনতার বিজয় হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবীর যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে, প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। সংবিধান অনুযায়ি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। এদেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ স্বস্ব অধিকার নিয়ে শান্তিতে অবস্থান করছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

jamat-e-islami-bangladeshরায় ঘোষণার পরই জামায়াতের হরতাল প্রত্যাহার
রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজ হওয়ায় দেশব্যাপী চলমান সোমবারের সকাল-সন্ধ্যার হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে ডা. শফিক বলেন, “সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দেয়ার যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আহুত আজ ২৮ মার্চ-এর হরতাল চলাকালীন হাইকোর্ট শুনানি শেষে আবেদনকারীদের আবেদন খারিজ করে দেয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আজকের দিনের পরবর্তী সময়ের জন্য চলমান হরতাল প্রত্যাহার করার ঘোষণা প্রদান করছি। আজকের এই ঐতিহাসিক বিজয় নির্দিষ্ট কোন দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিজয় নয়। এদেশের ১৬ কোটি মানুষেরই বিজয়।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজকের হরতাল সফল করার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে আমরা আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিভিন্ন ইসলামী দল, সংস্থা, সংগঠন, আইনজীবী ও বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতেও জনগণের স্বার্থ ও ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলমতের উর্ধ্বে উঠে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে নাগরিক দায়িত্ব পালন করার জন্য আমরা আপামর দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ঈমান ও ইসলাম রক্ষা এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। দেশ এবং জাতির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপোষহীন ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সর্বাত্মক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। সর্বপরি জনগণের প্রাণের দাবি বাস্তবায়িত হয় আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি।”

9cdf58c0561ffa3cc763305b9d393505-56f7e97ce5131রাষ্ট্রধর্ম মামলার আবেদনকারী থেকে পিছু হটলেন বদরুদ্দীন উমর : পাল্টাচ্ছেন সুর
এদিকে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে করা রিটের সঙ্গে নিজের কোনও সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ও কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমর। রবিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে এ বিবৃত পাঠানো হয়। টেলিফোনেও বদরুদ্দীন উমর বাংলা ট্রিবিউনকে বিবৃতির দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইন করার সময় যে প্রতিরোধ কমিটি হয়েছিল, আমি তার প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলাম। কমিটির পক্ষ থেকে একটি মামলা তার বিরুদ্ধে করা হয়েছিল, কিন্তু কিছুই হয়নি। এখন সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। আমার নামও তার সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি, রাজনৈতিকভাবেই আমরা সে সময় আন্দোলন করেছিলাম এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যে পরিস্থতিতে মামলা করা হয়েছিল সে পরিস্থিতি এখন আর নেই।
বিবৃতি বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, সে সময় এরশাদের প্রস্তাবিত আইনটির বিরোধিতা তারাও করেছিলেন। ইচ্ছা থাকলে তারা ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এই আইন বাতিল করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেনি। উপরন্তু তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম আইন বহাল রেখেছেন। তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা এই আইনের পক্ষপাতী। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেই পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করা অর্থহীন। এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করার আগে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এই মামলার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় ছাত্রসমাজের সন্তোষ

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় ছাত্রসমাজের সন্তোষ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসউদ খান ও মহাসচিব মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান বলেছেন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় আমরা সন্তুষ্ট তবে ভবিষ্যতের ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।

সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল সাংবিধানিক বিষয়াবলী ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত করতে হবে। সংবিধানে ইসলামের আনুষঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ সংযোজন করতে হবে। ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দেয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে সংগ্রামে যারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নেতৃদ্বয়।

তথ্যসূত্র. বিভিন্ন অনলাইন দৈনিক।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...