শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:০৯
Home / অনুসন্ধান / ইতিহাসে আমেরিকার প্রথম মসজিদ

ইতিহাসে আমেরিকার প্রথম মসজিদ

মাওলানা কাসেম শরীফ ::

01245915-3-1

কলম্বাস নাকি মুসলমানরা আমেরিকা আবিষ্কার করেছে—এ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। মুসলমানদের দাবি হলো, তাদের পূর্বসূরিরাই আমেরিকা আবিষ্কার করেছে। এ বিষয়ে অনেক ঐতিহাসিক দলিলও পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ‘কলম্বাস নয়, মুসলমানরাই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল।’ কলম্বাসের তিন শ বছর আগেই মুসলমানরা আমেরিকা আবিষ্কার করে বলে জানান তিনি। কলম্বাসের একটি ডায়েরির উদ্ধৃতি দিয়ে এরদোয়ান বলেন, ‘ইসলাম ও লাতিন আমেরিকার পরিচয় হয়েছে বারো শতাব্দী থেকে। ১১৭৮ সালে মুসলমানরা আমেরিকা আবিষ্কার করেছে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস নন।’ (বিবিসির বরাতে দৈনিক যুগান্তর : ১৭-১১-২০১৪)

ঐতিহাসিকদের দাবি হলো, আমেরিকায় মুসলমানদের বসবাস প্রায় চার শ বছর ধরে। আফ্রিকা থেকে দাস আগমনের মধ্য দিয়ে ১৭ শতকে আমেরিকায় মুসলমানদের আগমন ঘটেছে। গবেষকরা অনুমান করেন, এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আনা দাস ছিল মুসলমান। তবে সেখানে ক্রীতদাসদের ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেকে নির‌্যাতনের ভয়ে গোপনে তাদের বিশ্বাসের চর্চা করেছে। এমনকি কেউ কেউ তাদের সন্তানের কাছেও নিজের ইমান ও বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেনি। এই তথ্য দিয়েছে TEACHING TOLERANCE নামে আমেরিকার একটি ওয়েবসাইট। (http://www.tolerance.org/ publication/american-muslims-united-states)

15-3-2
নর্থ ডাকোটা মসজিদ, আমেরিকার প্রথম মসজিদ, সস্থাপিত : ১৯২৯ সাল

উনিশ শতকের প্রথমদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন বা অভিবাসীবিষয়ক কোনো আইন ছিল না। যেকোনো ব্যক্তি মাত্র ৫০ সেন্ট পরিশোধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারত। ১৮৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সে দেশের নির্দিষ্ট এলাকায় অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বসবাস করার অনুমতি দেয়। তখন থেকেই মুসলমানরা নিজেদের বিভিন্ন কমিউনিটি গড়ে তোলে। মুসলিম অভিবাসীরা আমেরিকায় আসা শুরু করলে তারা এমন একটি জায়গা খোঁজ করে, যাকে তারা ‘আপন ঘর’ বলতে পারে। তারা সে জায়গাটি খুঁজে পায় নর্থ ডাকোটায়। ১৮৯৯ সালে হাসান জুমআ সিরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে (North Dakota) আগত প্রায় বিশ-ত্রিশটি মুসলিম পরিবারের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিউনিটির নেতৃত্ব দেন। পরে সেখানে প্রায় তিন শ মুসলিম পরিবার বসবাস করে। ১৯২৯ সালে নর্থ ডাকোটায় তারা একটি মসজিদ নির্মাণ করে। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মসজিদ বলে ধারণা করা হয়। পরে অর্থকষ্টে মুসলমানরা ওই অঞ্চল ছেড়ে চলে যায়। স্থায়ী কোনো ইমাম ছাড়াই পরিচালিত হওয়া মসজিদটি ১৯৩০ সালের দিকে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তারপর অনেকেই ধরে নিয়েছিল আদি এই মসজিদটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ৮০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মুসলিমদের আনাগোনায় এ জায়গাটি আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। ২০০৫ সালে মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। প্রথম মসজিদটি চারদিক থেকে ১১১ মিটার প্রশস্ত থাকলেও পরে তা ২৪ মিটারে ছোট পরিসরে নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১৯০০ মসজিদ রয়েছে। (http://iipdigital.usembassy. gov/st/english/inbrief/2011 /07/2011029165008su0. 1452557. html#axzz43LKXTGnr)

মসজিদ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মূলত সেখানে ইসলামী দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনার পথ প্রশস্ত হয়। ১৯২৮ সালে শেখ আলহাজ দাউদ আহমেদ ফয়সাল নিউ ইয়র্কে ‘দ্য ইসলামিক প্রোপাগেশান সেন্টার অব আমেরিকা’ (The Islamic Propagation Center of America) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘ইসলামিক মিশন সোসাইটি’ (Islamic Mision Society) নামেও আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায়, আমেরিকায় ইসলাম প্রচারের জন্য জর্দানের শায়খ খালিদ ও সৌদি আরবের বাদশাহ সৌদ শেখ ফয়সালকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৩০ সালে প্রফেসর এজেলদিনের (Professor Ezeldeen) নেতৃত্বে ‘দ্য আদ্দিনু আল্লাহ ইউনিভার্সাল আরব অ্যাসোসিয়েশন’ (The Addeynu Allah Universal Arab Association) সংগঠনের সূচনা হয়।

এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়া, সিডার র‌্যাপিডস (Cedar Rapids) শহরে আরেকটি মসজিদ নির্মিত হয়। আমেরিকার ইতিহাসে এই মসজিদকেই ‘মাদার মস্ক’ বা প্রাচীনতম মসজিদ বলা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলামবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার প্রেক্ষাপটে ওই মসজিদের ইমাম সাহেব ট্রাম্পকে মসজিদে এসে মুসলমানদের কার্যক্রম দেখার আহ্বান জানান। টাইম ম্যাগাজিন তাদের অনলাইনে খবরটি এভাবে দিয়েছে : Oldest Mosque in America Invites Donald Trump to Visit. (যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন মসজিদ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মসজিদে আসার আহ্বান জানিয়েছে)। সেই খবরের মধ্যেও এই মসজিদকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মসজিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাদার মস্কের আগে আরো মসজিদ নির্মাণ হওয়া সত্ত্বেও এটাকে কেন ‘প্রথম মসজিদ’ বলা হয়? এর কারণ প্রথমত, মসজিদটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকে আজও চলমান আছে, মধ্যখানে কখনো বন্ধ হয়নি। নর্থ ডাকোটার মসজিদটি এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, সরকারের স্বীকৃতি ও অনুমোদন নিয়ে নির্মিত মসজিদগুলোর মধ্যে মাদার মস্কই আমেরিকার প্রথম মসজিদ। এ তথ্য রয়েছে মসজিদটির ওয়েবসাইটে। (http://www.mother mosque.org/page.php?2)

২০০৮ সালে সিডার র‌্যাপিডস শহর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। তখন মসজিদটির প্রায় ১০ ফুট ওপরে পানি ওঠে যায়। এর পরও মসজিদ ও এর মধ্যে থাকা কোরআন শরিফ, ওসমানি খেলাফতের সময় আনা বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীর কোনো ক্ষতি হয়নি। খবরটি আল জাজিরার সাংবাদিকের চোখ এড়িয়ে যায়নি। এ বিষয়ে তাদের নিউজের শিরোনাম হলো : In Iowa, a lasting symbol of American Islam. (আওয়ায় আমেরিকান ইসলামের স্থায়ী নিদর্শন)। খবরটির সাব হেডিংয়ে তারা লিখেছে : ‘Miracles do happen’ (অলৌকিক বটে!)। (http://america. aljazeera.com/features/2014/2/in-iowa- alastingsymbolofamerican islam.html)

আমেরিকায় মুসলমানদের বসবাস চার শ বছরের পুরনো হলেও মসজিদ নির্মিত হয়েছে এখনো এক শ বছরও হয়নি! ব্যাপারটি কী আশ্চর্যজনক! আমরা মনে করি, এর আগে ঘর-দরজা দিয়ে নির্মিত মসজিদ না থাকলেও আমেরিকায় এমন অখ্যাত অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে মুসলমানরা আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হয়েছে। সংগোপনে নিজেদের সঁপে দিয়েছে আপন প্রভুর দরবারে। সূত্র. কালের কণ্ঠ।

লেখক : সাংবাদিক

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...