শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৪৭
Home / অনুসন্ধান / জুমআর খুতবা নিয়ন্ত্রণ কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

জুমআর খুতবা নিয়ন্ত্রণ কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

imagesমাওলানা বাহা উদ্দীন যাকারিয়া ::
গত কয়েকদিন থেকে জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় জুমার খুতবা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনাহচ্ছে৷ ধর্মপ্রাণ মুসলমান একে অশনিসংকেত মনে করছেন৷ কয়েক মাস পুর্বে পুলিশের আইজি এধরনের একটি বক্তব্য দেয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়৷ ইসলামী দলগুলো এবং অরাজনৈতিক হেফাজতও আইজির বক্তব্যের নিন্দা জানায়৷ ফলে আইজি তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন৷ তার ব্যাখ্যার পর জনমূখে এনিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম বিষয়টির প্রতি সতর্কতার দৃষ্টি রেখেছেন৷ সম্প্রতি ইফা ডিজি সামীম মোঃ আফজল পুলিশের আইজির বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করায় বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসে৷ তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, বাংলা বক্তৃতাকালে অনেক সময় রাজনৈতিক প্রসংগ টানা হয়৷ খতিবরা বাংলায় যে ওয়াজ করেন সেখানে যেন তারা আরবী খুতবার সারমর্মটি বলেন৷ মসজিদ আল্লাহর ঘর৷ সেখানে কুরআন-হাদীস পরিপন্থী অথবা কোন রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা যেন মসজিদে না বলেন৷ ইফা কর্মকর্তাদের মতে, কোন কোন মসজিদে জুমার নামাযের খুতবার সময় বাংলা বক্তব্যে এমন অনেক রাজনৈতিক বিষয়ের অবতারণা করা হয় যা পরোক্ষভাবে জঙ্গি কার্যক্রমকে উস্কে দিতে পারে৷ইফার ডিজির এ ধরনের বক্তব্য বা পদক্ষেপ এটাই প্রথম নয়৷ তিনি এর পুর্বেও এধরনের বিতর্কিত বক্তব্য,পদক্ষেপ গ্রহণের কারনে ধিক্কৃত হয়েছেন৷ ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ধিক্কৃত হলেও পুরস্কৃত হয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কাছে৷খুতবা নিয়ন্ত্রণ দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন? এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম যে শংকা বোধ করে আসছেন, দেশ কি অবশেষে সে দিকেই ধাবিত হচ্ছে? অনেকের মতে হয়ত সে দিন বেশী দুরে নয় যে দিন তুরস্কের মত আরবীতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ হবে৷ মুসলমানের ইসলামী নাম রাখা যাবে না৷ হেজাব, বোরকা পরা নিষিদ্ধ হবে৷ সুন্নতি পোষাক আইনত দন্ডনীয় ঘোষিত হবে৷ দাড়ি নিষিদ্ধ হবে৷ বিয়ে, তালাকের শরয়ী বিধান পরিত্যাজ্য হবে৷ সম্পত্তি বন্টনে কুরআনী বিধানে পরিবর্তন আনা হবে৷ মাদরাসা থাকবে তবে সেকুলার দ্বীন শিক্ষা দেয়া হবে৷ মসজিদ থাকবে তবে নামাযে রাসূলের তরিকা পরিহার হবে৷ মনে হয় দেশ সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে৷জুমার নামাযের পুর্বে মুসল্লীরা মসজিদে আগমন করেন কুরআন-হাদীসের আলোচনা শুনার জন্য৷ ইসলাম ধর্মের স্বচ্ছ জ্ঞান লাভের জন্য৷ খতিব সাহেবরাও সে অনুযায়ী আলোচনা করেন৷ যুগ চাহিদায় ইসলামের আহ্বান সুন্দরভাবে মার্জিত ভাষায় মুসল্লীদের সম্মুখে তুলে ধরেন৷ কোন খতিব কুরআন-হাদীস পরিপন্থী বক্তব্য মসজিদের মিম্বর থেকে দিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না৷ কুরআন-হাদীসের ভিতরে থেকেই তারা যুগচাহিদা পুরনে বক্তব্য দেন৷ যিনি কুরআন-হাদীস পরিপন্থী বক্তব্য দিবেন, তিনি মসজিদের মিম্বর কেন ইসলাম থেকেই খারিজ হয়ে যাবেন৷মসজিদ থেকে জঙ্গিবাদ উস্কে দেয়ার মত বক্তব্য খতিবরা দেন না৷ বরং তারা এর বিরুদ্ধে জোড়ালো আলোচনা করে থাকেন৷ যে সময় জেএমবি দেশব্যাপী সিরিজ বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছিল, সে সময় খতিবরা মসজিদের মিম্বর থেকেই বলিষ্ঠ ভাষায় এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন৷ ইসলাম কোন ভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কে প্রশ্রয় দেয় না৷

কুরআন হল আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান৷ মানবজীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে ব্যাক্ত করেছেন৷ মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রিয় কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালাও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে৷শাসননীতি মানবজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ৷ শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালাই হল রাজনীতি বা রাজ্যপরিচালনা নীতি৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনী নীতিমালার আলোকেই পৃথিবীর বিশাল অংশের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন৷ হযরত ওমর রাযিঃ তো অর্ধ জাহানের শাসক ছিলেন৷ শাসনকার্য পরিচালনা বা রাজনীতি যদি গর্হিত কাজ হত তাহলে অবশ্যই তারা এ থেকে দুরে থাকতেন৷ কুরআন হাদীসে এবিষয়টির আলোচনা হত না৷ সুলাইমান নবী ও মনীষী জুলকারনাইনও গোটা দুনিয়া শাসন করতেন না৷ মসজিদের মিম্বরে বসেই তো আল্লাহর রাসূল রাজ্য শাসনকার্য পরিচালনা করতেন৷ শাহী ফরমান জারি করতেন৷ মসজিদের মিম্বর থেকেই তিনি জিহাদি কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন৷ খোলাফায়ে রাশেদিনও মসজিদের মিম্বরে বসেই তাদের রাজকার্যাবলী আঞ্জাম দিতেন৷শাসননীতি, রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে৷ জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ এবং জিহাদের নীতিমালা সম্পর্কিত অসংখ্য আয়াত ও হাদীস আছে৷ খতিব সাহেবরা তো এ বিষয়ে কুরআন, হাদীসের নীতিমালা আলোচনা করেন৷ এ বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা, আদর্শ সাধারণ মুসলমানের জানার অধিকার রয়েছে৷ তাই অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ভাষায় খতিব সাহেবরা আলোচনা করে থাকেন৷

দেশ, জাতীর কল্যাণে এজাতীয় আয়াত ও হাদীসের আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে৷ রাজনৈতিক জীবনে অনিয়ম, দুর্নীতি, পাপাচার, নিয়ে ইমাম খতিবগণ কথা বলতে পারবে না তা হতে পারেনা৷ খুতবা পূর্ব বয়ানে দুর্নীতি দুঃশাসন,অন্যায়,অবিচার, ব্যাভিচার, মাদক, ইভটিজিং, নারীনির্যাতন, সূদ, ঘুস, টেন্ডারবাজি, সামাজিক অনাচার সম্পর্কে কুরআন, হাদীসের নির্দেশাবলী শুনার সর্বত্তোম স্থান হল মসজিদ৷ খতিবদের বাধা দেয়া কেমন যেন সেই মক্কার অবিশ্বাসীদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করা৷ তারা তো আইন করে কুরআন শ্রবণ থেকে সাধারণ জনতাকে বিরত রাখতে চেয়েছিল৷ যেহেতু কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা রয়েছে৷

শাসকদের গুণাবলী, শাসননীতি কেমন হবে তারও দিকনির্দেশনা কুরআন হাদীসে রয়েছ৷ এ সম্পর্কে বক্তব্য নিষিদ্ধ মানেই হল কুরআনের বিরাট একটা অংশের নিষিদ্ধের আওতায় নিয়ে আসা৷ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো কুরআন হাদীসের শাশ্বত শিক্ষা, ইসলামের অমীয় বাণী প্রচারের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ এখন তো দেখি ইসলামকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ইফা৷ মসজিদের মিম্বর থেকে ইসলামের সঠিক বিষয়ের আলোচনা করা খতিবদের দ্বীনি দায়িত্ব৷ নবীর ওয়ারিস হিসেবে স্রষ্টা প্রদত্ত কর্মসূচী৷ কোন খতিব সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে পারেনা৷ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিতে চায় না৷ কুরআন, হাদীসের কোন বিষয় নিষিদ্ধ করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার পরিণতি খুবই ভয়াবহ৷ মসজিদের মিম্বর থেকে খতিব সাহেবরা দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে কুরআন, হাদীসের আলোকে বক্তব্য দিয়ে থাকেন৷ নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ নয়; বরং জীবনাচার বদলাতে হবে৷ নতুবা খোদায়ী বিধানের আলোচনা প্রচার নিয়ন্ত্রণ, নিষিদ্ধের পরিনতি দুনিয়া আখেরাতে ভোগ করতে হবে৷

লেখক : ভাইস প্রিন্সিপ্যাল জামেয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, ঢাকা-১২১৬

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...