শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:৫৩
Home / অনুসন্ধান / পঞ্চম মাজহাব এবং ভূতের মুখে রাম নাম!

পঞ্চম মাজহাব এবং ভূতের মুখে রাম নাম!

রশীদ জামীল ::

“আমরা শুধুই কুরআন-হাদিস মানব, অন্য কিছু না”।
ও পণ্ডিত! একবার একটু শূন্য থেকে শুরু কর বাবা। ছোটবেলায় মক্তবে গিয়ে, আলেম-উলামার লেখা বই-কিতাব পড়ে যা কিছু শিখেছিলি, কিছু সময়ের জন্য সব ভুলে যা। মেমোরি খালি করে নতুন করে উইন্ডোজ সেটাপ দে। এবার তুই আর তোর ইউটিউব মোল্লাদের পণ্ডিতি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে একটি মাত্র আমলের কথা বল। শুধু বল, নামায কীভাবে আদায় করতে হয়? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কখন কী করতে হবে, কোনটার পর কোন রুকনটা কীভাবে আদায় করতে হবে; কুরআন-হাদিস থেকে খুঁজে বের করে বল শুনি! খবরদার! অন্য কোনো বইয়ে হাত দিতে পারবি না। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারবি না…
… দেখা যাবে পন্ডিত তখন মিন মিন করছে। মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বেরুচ্ছে না!

তাকলিদ কাকে বলে? কারা করে?

যেসব ক্ষেত্রে নিজে যাচাই করার ক্ষমতা থাকবে না, সেসব ক্ষেত্রে অন্য কারো কথাকে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করা ও মেনে নেওয়া, এটাই তাকলিদ। ব্যক্তি পর্যায়ের এবং সমষ্টিগত, দু’পর্যায়েই তাকলিদ হয়। তাকলিদ মোটামুটি সবাই করেন। এই পৃথিবীতে এমন একজন লোকও নেই, যে কোনো না কোনো ব্যাপারে কারো না কারো তাকলিদ করে না। কথা হল, কেউ স্বীকার করে কেউ করে না। কেউ করে একজনের আবার কেউ অনেকের। কেউ করে ব্যক্তি পর্যায়ে আবার কেউ আমলের ক্ষেত্রে। উদাহরণ দিই। তাহলে বুঝতে সহজ হয়ে যাবে।

একটি মানব শিশুর জন্মের পর থেকেই তাকলিদ শুরু হয়ে যায়। সবাই বিষয়টি জানি, কিন্তু সেভাবে ভেবে দেখিনি বলে চোখে পড়ে না। একটু যখন বয়স হয়, দেড় কি দুই বছর, বাবাকে ‘বাবা’ বলে ডাকতে শুরু করি। তিনি যে বাবা, এটা আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে জানি। মা আমাদের বলেন; ‘এটা তোর বাবা’। আমরা মায়ের কথায় আস্থা রাখি। আমরা আমাদের মায়ের কথা মেনে নিই। এই মেনে নেয়াকেই আরবিতে বলে, তাকলিদ।

আমরা মসজিদে জামাতে নামায আদায় করি। ইমামের পেছনে দাঁড়াই। ইমাম যা করেন আমরা তাই করি। ইমাম রুকুতে গেলে আমরাও যাই। ইমাম যখন সিজদাতে যান, আমরাও সিজদাতে যাই। কোনো অবস্থাতেই ইমামকে ডিঙাই না। ইমাম রুকুতে গেলেন আর কারো মনে পড়ে গেল কুরআনের আয়াত ‘ফাসতাবিক্বুল খাইরাত’ (নেকির কাজে তোমরা একে অন্যের আগে থাকো)। আর তিনি ভাবলেন, সিজদা যেহেতু একটা নেকির কাজ, তাহলে আগে চলে যাই, ইমামের আগেই চলে গেলেন সিজদায়! তাহলে নামাযই হবে না। ইমামের পিছে পিছে সিজদায় যেতে হবে।

এবারে কোনো পাগল যদি মসজিদে জামাতে নামাজের দৃশ্য দেখে আর বলে, ‘অমুক মসজিদে দেখেছি অনেকে মিলে একজন ইমামকে সিজদা করছে’, তাহলে সেই পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। ভাবে, পাগল তো পাগলামী কথা বলবেই। কিন্তু কোনো সুস্থ মানুষ যদি বলে ‘মুকতাদিগণ ইমামকে সিজদা করে শিরক করছেন’, তাহলে অবশ্যই বিবেকবান মানুষজন তাকে ধরে পাগলের সাথে একই গাড়িতে চালান করে দেয়ার কথা ভাববে কারণ, মুকতাদিগণ মোটেও ইমামকে সিজদা করছেন না, ইমামের অনুসরণ করে ইমামের নেতৃত্বে আল্লাহকেই সিজদা করছেন।

এটা যারা বুঝে, মাজহাব তো না বোঝার কোনো কারণ ছিল না। আমরা একজন ইমামের অনুসরণের মাধ্যমে কুরআন-হাদিসে আমল করি। ইমাম কুরআন-হাদিসকে পাশ কাটিয়ে তাঁর পকেট থেকে কিছু বের করে মাজহাব বানাননি। মাজহাব মানে পথ, যে পথে হাঁটলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সহজে পাওয়া যায়, উদ্দিষ্টে পৌঁছা সহজ হয়।

এখন কেউ যদি এমন হন, তিনি নিজে-নিজেই কুরআন-হাদিস ঘাঁটাঘাটি করে শরীয়ত মত জীবন যাপনে সক্ষম, তাহলে তাঁর জন্য কোনো মাজহাব ফলো করার দরকার নাই কারণ, তিনি তখন মুজতাহিদ। আর মুজতাহিদকে কারো অনুসরণ করা লাগে না। এই শেষ কথাটি বুঝে ফেললে, যে বুরবাকগণ বলে, ‘মাজহাব মানা জরুরি হলে ইমাম আবু হানিফা কার মাজহাব মানতেন’-এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আর কারো বাড়িতে যাওয়া লাগবে না।

মাজহাব মানে কি অন্ধ বিশ্বাস?

“ইমাম বলেছেন বলেই চোখ-কান বন্ধ করে মেনে নিতে হবে? আল্লাহপাক আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেখা দরকার না ইমামের কথা ঠিক আছে কি না? কুরআন-হাদিস ভিত্তিক কি না? আর এটা তো খোদ আবু হানিফাই বলে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার কোনো কথা যদি হাদিসের খেলাফ পাওয়া যায়, তাহলে আমার মতামতকে ত্যাগ করে হাদিসেই আমল করো”… এটা হচ্ছে অতি পণ্ডিত লা-মাজহাবিদের (কু)যুক্তি।

কথাটি ইমাম আবু হানিফা কোন কিতাবে বলে গেছেন, এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েই বলি, চোখ-কান বন্ধ করার দরকার নাই। যাচাই করাই যায়। তবে আগে তো ঠিক করতে হবে যাচাই করবেটা কে? অজ্ঞ না বিজ্ঞ? বিজ্ঞতার মাপকাঠি কী?

করুণা হয় কিছু লোকের বুদ্ধি-প্রতিবন্ধিত্ব দেখে। তারা খুব সহজেই বুঝে ফেলে ডাক্তারি বই পড়ে পড়ে ডাক্তার হওয়া যায় না। ডাক্তার হতে হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের ছাত্রত্ব গ্রহণ করতে হয়, ডাক্তারের সাথে প্র্যাকটিক্যালে অংশ নিয়ে বছরের পর বছর ডাক্তারের পেছনে পেছনে ঘুরতে হয়। অথচ সেই তারাই এমন ভাব নেয় যে, নিজে নিজে অধ্যয়ন করে অথবা বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে কয়েক ডজন বই মুখস্ত করে কুরআন-হাদিসে পণ্ডিত হয়ে গেছে! তাদের আচরণে প্রমাণ হয় কুরআনে কারীম ডাক্তারি বই থেকেও সোজা একটি গ্রন্থ!

বাকি থাকল ইমামের কথা, ‘উনার মতামত হাদিসের সাথে মিলিয়ে দেখা। সহীহ হাদিসের বিপরীত হলে মতামতকে ছুঁড়ে ফেলে হাদিসে আমল করতে!

এক লোক গেছে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অষুধ লিখে দিলেন। নিজস্ব ফার্মেসী থেকে অষুধও দিলেন। প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য একশ টাকা। লোকটি বলল-
– বলেন কী স্যার! সামান্য একটি ট্যাবলেটের দাম একশ টাকা হবে কেনো?
– ডাক্তার বললেন, এটা অনেক ভাল অষুধ, উন্নত ব্র্যান্ড। এটার বাজার মূল্য একশ টাকাই।
– তবুও…
– আচ্ছা বাবা বাইরে গিয়ে যাচাই করে দেখিস। যদি আমার অষুধ দুই নম্বর হয়, তাহলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এসে পয়সা ফেরত নিয়ে যাস। লোকটি বেরিয়ে গিয়ে আবার কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এসে বলল-
– ডাক্তার সাব, আমার পয়সা ফেরত দিন।
– কেনো?
– আপনার অষুধ দুই নম্বর ছিল।
– কে বলেছে?
– আমি যাচাই করেছি। আপনিই তো বলেছিলেন যাচাই করতে।
– তুমি কার কাছে যাচাই করালে?
– অই তো! মোড়ের দোকানটার সামনে দেখছেন না একলোক বসে সবজি বিক্রি করে, তার কাছে। সে ভালোভাবে পরীক্ষা-টরিক্ষা করে আমাকে জানিয়েছে এটা অনেক জঘন্য অষুধ! এটা খাওয়া মোটেও ঠিক হবে না!

ডাক্তারের মেজাজ খারাপ না হয়ে উপায় ছিল না। বললেন, ও পণ্ডিত! অষুধের গুণগত মান যাচাই করবার জন্য তোমার উচিত ছিল ভাল আরেকজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া। সবজিওয়ালা অষুধের গুনাগুণ কী বুঝবে্রে?
– লোকটি তখন মিন মিন করে বলল, তাহলে তো আপনার আগেই বলে দেয়া উচিত ছিল কার কাছে যাচাই করতে হবে।
– ডাক্তার জবাব দিলেন, তোমারও আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল তোমার মাথার ঘিলুর যে এই দূরবস্থা।
——— ইমাম আবু হানীফা তার মাসআলাকে যাচাই করতে বলেছেন; শুনেই সবজি মার্কেটের দিকে দৌড়! আলু-পটল বিক্রেতারা মাসআলা যাচাই তো পরে, বাছাইটাই তো করতে পারবে না। কোনো কথা পেলেই বুঝে না বুঝে লাফালাফি শুরু করলেই তো আর হল না। আবু হানিফা যদি বলেও থাকেন, সেটা যে রজাক আলী, মতি মিয়া আর গজনফর শেখদের বলেননি, এই সামান্য আক্কেল-জ্ঞানটুকু তো থাকা দরকার ছিল। আবু হানিফার এই কথা তো ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈদের মত মুজতাহিদদের জন্য। যাচাই তো করবেন ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারিদের মত মুহাদ্দিস। ইমাম মুসলিম ইমাম তিরিমিযির মত শায়খগণ। না বুঝে ছাগলের মতো লাফালাফি শুরু করে দেওয়া তো বুদ্ধিমানের কাহ না।

পঞ্চম মাজহাব

এটা আবার কোন মাজহাবরে বাবা! এতোদিন শুনে আসলাম মাজহাব চারটি। পঞ্চম মাজহাব আবার কোত্থেকে বেরুলো?
— এই পাঁচ নম্বরী গ্রুপের কাহিনী বলবার আগে আরেকবার মনে করিয়ে দিই, মাজহাব অর্থ হল মত, পথ, বিশ্বাস, তরীকা, পন্থা, পদ্ধতি ইত্যাদি। আর আমাদের বোঝার ভাষায় মাযহাব মানে, কোন মুজতাহিদ ইমামের অনুসরণের মাধ্যমে কুরআন-হাদিস এবং আসারে সাহাবায় আমল করার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে রাসূলের অনুসরণ করা এবং নব আবিষ্কৃত বা সৃষ্ট বিষয়াদি, যেগুলোর ব্যাপারে সরাসরি কুরআন-হাদিসে ফায়সালা পাওয়া যাবে না, সেগুলোয় মুজতাহিদ ইমামের দেয়া সিদ্ধান্তের আলোকে আমল করা। তার মানে, কারো বাতলে দেয়া পথে কুরআন-হাদিসের উপর আমল করার নাম মাজহাব ফলো করা।

যাদের দাবি তারা কোনো মাজহাব ফলো করেন না, তারা কুরআন-হাদিসে আমল করেন কী করে?
হয়ত কারো না কারো কিতাব পড়ে উনার সিদ্ধান্তের আলোকে!
হয়ত কারো না কারো বয়ান শুনে সেই বয়ানের আলোকে!
হয়ত তারা মানছেন বিন বা’যকে
হয়ত ইবনে তাইমিয়াকে,
হয়তবা আলবানিকে
অথবা কোনো ইন্টারনেট শায়খকে।
অবশ্য মাঝে মধ্যে তারা ইমাম বোখারিকেও টেনে আনবার চেষ্টা করেন। তারা যখন ইমাম বোখারির উস্তাদের উস্তাদ ইমাম আবু হানিফাকে পাশ কাটিয়ে বোখারির কথা বলেন, তখন সেটা ভূতের মুখে রাম নামের মতোই শোনায়!

যাহোক, কারো কোনো ব্যাখ্যায় না গিয়ে নিজে নিজে আমল করতে পারার তো প্রশ্নই আসে না। তাহলে অবস্থা দাঁড়ালো এই, আমরা যারা হানাফি মাজহাবের অনুসারী, তারা একজন ইমামের, ইমামে আযম আবু হানিফার অনুসরণ করি আর যারা লা-মাজহাবিত্বের দাবিদার, তারা একসাথে অনেককে অনুসরণ করেন। সেই অনেকের মাঝে আবার, (বুঝে হোক আর না বুঝে, স্বীকার করে হোক আর না করে) ইমাম আবু হানিফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমদ সাহেবও আছেন কারণ, অনেক মাসআলাতেই তারা যে মতামত আমলে নিয়ে থাকেন, সেটা চার ইমামের কারো না কারো মাজহাব।

তার মানে তারা কারো মাজহাব অনুসরণ না করার দাবি করলেও মূলতঃ তারা একই সাথে অনেকের মাজহাব ফলো করছেন। এর অর্থ তারা নিজেরা নিজেদের মত করে আরেকটা মাজহাব তৈরি করে ফেলেছেন। শুধু ঠিক করতে পারছেন না তাদের নতুন মাজহাবের ইমাম পদে কাকে নিয়োগ দেবেন। নাসির উদ্দিন আলবানি সাহেবের প্রতি তাদের একটা ঝোঁক থাকলেও আরো অনেকেই হকদার থাকায় তারা পড়েছেন বিপাকে।

তারা যদি এই সত্যটুকু স্বীকার করতেন যে, তারা কোনো একজনের না, অনেকের অনুসরণ করেন, তাহলে অন্তত সত্যবাদি হিশেবে অভিনন্দিত হতে পারতেন। বাদবাকি তারা তাদের ইমামগণের নাম নেবেন কিনা, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু থাকতো না। আগেই বলেছি, আমরা আমাদের ইমাম, আমাদের বাবার নাম মুখে নিতে লজ্জা পাই না। ভাগিনা বউগণ যদি মামা শ্বশুরের নাম মুখে না নেন, না নিতেই পারেন। লজ্জা নারীর ভূষণ। থাকা ভাল!

আশাকরি পরিষ্কার করা গেল পঞ্চম মাজহাব কাকে বলে আর সেটা কোন মাজহাব? আর অল্প কিছু মুজাদ্দিদ মুহাদ্দিসিন ও ফুক্বাহা ছাড়া তামাম বিশ্বের উলামা-ফুক্বাহা-সুলাহায়ে কেরাম চার মাজহাবের ব্যাপারে ইজমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও যারা লা-মাজহাবের নামে পঞ্চম মাজহাবের আবিষ্কার করছেন, তাদেরকে মনে হয় বিশ্বনবীর সেই হাদিসটি স্মরণ করিয়ে দেয়াই যায়-
“কুন আ-লিমান, আও মুতাআল্লিমান আও মুয়ী-নান আও মুহিব্বান, ওয়ালা তাকুন খামিসা”। আলেম হও অথবা ইলম অর্জনকারী ছাত্র হও, অথবা আলেমদের সাহায্যকারী হও অথবা আলেমদের মহব্বতকারী, (কিন্তু খবরদার!) পঞ্চম দলভুক্ত হয়ো না।

নেকাবের পেছনের চেহারা

আগেই জেনেছি তাকলিদ মানে দ্বীনি মাসআলা-মাসাঈলের ক্ষেত্রে কাউকে অনুসরণ করা। এই অনুসরণ হতে পারে এককেন্দ্রিক, হতে পারে বহুদা-বিভক্ত। যাই হোক, তাকলিদ তো তাকলিদই। আমরা যারা ইমাম আবু হানিফার তাকলিদ করি, আমরা ছোটবেলাতে দেখতাম, সৌদি আরব থেকে ধরা খেয়ে দেশে চলে আসা কেউ কেউ বুকের উপর হাত বেঁধে নামাযে দাঁড়াচ্ছেন। আমরা বুঝে ফেলতাম উনি অন্য মাজহাবে চলে গেছেন। কারণ, বুকে হাত বাঁধার নিয়মও কোনো কোনো মাজহাবে আছে। (প্রশ্ন আসবে, তাহলে বুকে হাত বাঁধার বিরোধিতা কেনো? বিস্তারিত ‘তরকে রাফঈ ইয়াদাইন’ পর্বে আলোচিত হবে, ইনশাআল্লাহ।)

আরেকটু বড় হলাম যখন, তখন হঠাৎ-সটাত কোনো কোনো আলেমকে দেখতাম বুকের উপর হাত বাঁধছেন। কিছুটা খালাম্মা খালাম্মা লাগলেও উনাদের প্রতি আমাদের ভক্তি-শ্রদ্ধায় কখনো কমতি হত না। এর কারণ, উনারাও উনাদের ব্যক্তিগত পছন্দকে জনসমক্ষে এখনকার মতো প্রচার করে বেড়াতেন না। আবু হানিফা বা মাজহাব নিয়ে বকওয়াস করতেন না। সবাই যার যার জায়গায় ঠিকঠাক চলছিলাম। যার ক্ষেত, তার ধান, সমস্যা হচ্ছিলো না।

সাধারণ মুসলমান বিব্রত হবেন- ভেবে বিগত কয়েক বছর যাবত বিপথগামী বিবেক-বিকৃত আত্ম-বিক্রিত কিছু লোক ইমাম আবু হানীফা এবং মাজহাবের বিরুদ্ধে অত্যন্ত অরুচিকর ভাষায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত বানোয়াট এবং জাল-জালিয়াতি-মূলক অপপ্রচার করে বেড়ালেও উলামায়ে আহনাফ সেগুলোকে এড়িয়ে গেছেন। ভেবেছেন, থাক, বলছে বলুক। এদের জবাব দিয়ে আর জল ঘোলা করে লাভ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তাদের এই অপ-প্রচার এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এ নিয়ে কথা না বললে সাধারণ মুসলমানের ঈমান রক্ষা করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই উলামায়ে কেরাম বিকৃতভাবে উপস্থাপিত তাদের দলীল এবং ইচ্ছামত করে বেড়ানো অপব্যাখ্যারশ মাড়িভাঙা জবাব দিচ্ছেন। দালীলিকভাবে খুলে দিচ্ছেন তাদের মুখোশ। শুধু চেহারা ঘুরে রাখা নেকাবটা এখনো খোলা যায়নি। যে কারণে ধারণা করা গেলেও এখনো পরিষ্কার বলা যাচ্ছে না, এগুলো কোন কোম্পানির মাল! তবে খুব তাড়াতাড়ি সেটাও জানা যাবে, ইনশাআল্লাহ।

হালালযাদা, হারামযাদা

ভূমিকাতেই বলেছি, আমি বাংলা জগতের মানুষ। আমার মুখাতব বাংলা ভাষাভাষি সাধারণ মুসলমান। আর সাধারণ মুসলমানের জন্য দরকার রোগের অষুধ আর খাওয়ার নিয়মটা বলে দেওয়া। ওষুধের উৎপাদন, উপকরণ, সাইন্টিফিক গ্রহণযোগ্যতা এবং গুণগত মানের বিবরণ তাদের সামনে কচলা-কচলি করে কোনো লাভ নেই। তাই লিখছি পাবলিকের মত করে।

যারা বলেন তাক্বলিদ করেন না, তারাও যে মূলত একাধিক ব্যক্তিবর্গের তাক্বলিদ করেন, ইতোমধ্যেই সেটা পরিষ্কার করা হয়েছে । আমরা আমাদের ইমামকে আমাদের বাবার আসনে স্থান দিই। তাই কেউ যদি আমার বাবাকে নিয়ে নোংরা কথা বলে, আমরা বসে থাকতে পারি না। বাবাকে গালিগালাজ করলে কোনো হালালযাদাই নীরব থাকতে পারে না, হারামযাদাদের কথা ভিন্ন।

হাতি ঘুমিয়ে ছিল। বয়স হয়েছে। আগের মত দৌড়ঝাপ করে না। পেলে খায় না পেলে সবর করে শুয়ে থাকে।
একদিন শুয়ে ছিল গাছের ছায়ায়। পড়ে ছিল মরার মত। কোত্থেকে জানি একটি শিয়াল এসে দেখল হাতি মরে পড়ে আছে! শিউর হবার জন্য প্রথমে দূর থেকে ঢিল ছুঁড়লো।
হাতি নড়লো না। থাক, কিছু বলে লাভ নাই।
শিয়াল ভাবল তাহলে মরাই হবে। তবে আরেকটু নিশ্চিত হওয়া দরকার। রিস্কে যাওয়া ঠিক হবে না। বাঁশের একটি কঞ্চি যোগাড় করে জোরে একটা গুতা দিল এবার।
হাতি তবুও কিছু বলল না।
শিয়াল মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল হাতি মরেই গেছে। তখন কাছে গিয়ে নখ দিয়ে পীঠে আঁছড় দিতে লাগল। হাতি মহা বিরক্ত হচ্ছিল তবুও শুয়ে ছিল চুপ করে। থাক, কিছুক্ষণ ডিস্টার্ব করে চলে যাক। বিকেলের ঘুমটা নষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে লাভ নাই।

শিয়াল যখন অভার কনফিডেন্ট হয়ে গেল যে, হাতি মারাই গেছে। তখন ভাবল, জীবনে সাদা-কাল, হালাল-হারাম অনেক মুরগিই তো খেলাম, কিন্তু কখনো হাতির কলিজা খাওয়ার নসিব হয়নি। আজ যখন সুযোগটা পেয়েছি, কাজে লাগাই।

আস্তে আস্তে হাতির পশ্চাদ্দেশের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল কারণ, কলিজা পর্যন্ত পৌছার এটাই সহজ রাস্তা। কাছে গিয়ে শিয়াল যখন হাতির পশ্চাদ্দেশের ভেতর মাথাটা ঢুকালো, আর তো সহ্য করা যায় না। ধৈর্যেরও একটা সীমা থাকে। হাতিকে অবশ্য তেমন কিছু করতেও হল না। দরজার মুখটা দিল টাইট করে। শেয়াল পড়ল আটকা। মাথা এখন ভেতরেও যায় না বাইরও হয় না…

যামানার খ্যাক-শেয়ালগুলো দূরে বসে বসে ইউটিউবে মাথা বের করে মাজহাব তথা ইমাম আবু হানিফার নাম নিয়ে বকাঝকা করছিলো। কেউ পাত্তা দেননি। করুক, কিছুদিন চিল্লায়া এমনিতেই নীরব হয়ে যাবে। কিন্তু না। দিনকে দিন বাড়তে লাগলো তাদের বাটপারি। এখন অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, শেয়ালগুলো আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের ইজ্জতের হরম এলাকায় মাথা ঢুকিয়ে ফেলছে। এরপরে তো আর ছাড় দেয়া যায় না, নিয়ম নেই।

লেখক : কথা সহিত্যিক, আমেরিকা প্রবাসী, জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপ্রাপ্ত লেখক।

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...