মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:০৪
Home / অনুসন্ধান / নওকরদের বাদরামী ইউরোপীয়দের দেশপ্রেম !

নওকরদের বাদরামী ইউরোপীয়দের দেশপ্রেম !

1931196_785533141590664_1363622568627713196_n
বিদেশীদের কেবল আমরা গালিই দেই কিন্তু তাদের ভাল কাজ গুলো আমাদের চোখে পড়েনা !

আরিফ মাহমুদ, আমেরিকা থেকে::

আমেরিকায় আমার প্রথম চাকুরির ইন্টারভিয়্যু দেয়ার দিনটির কথা আজো মনে পড়ে। গাড়ী পার্ক করে সবেমাত্র মাটিতে পা রেখেছি। দেখি, আমার গাড়ী থেকে অল্পদূরে আরেকজন সাদা ভদ্রলোক পেছন খোলা ট্রাক থেকে বেশ বড় একটা চারাগাছ নামিয়ে কাঁধের ওপর নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- কোনো সাহায্য করতে পারি কিনা? উনি মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন- না।বলেই- নিজের কাঁধের উপর গাছটি নিয়ে মূল ভবনের দিকে রওয়ানা দিলেন।

কিছুক্ষণ পরে আমি ভাইবা বোর্ডের সামনে হাজির হয়ে দেখি- কাঁধের ওপর গাছওয়ালা ভদ্রলোকই ভাইবা বোর্ডের প্রধানব্যক্তি। আমার বস ইউ এস ন্যাভির রিটায়ার্ড ভাইস এডমিরাল।
আমার এক বন্ধু একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। ও একবার গল্প করেছিলো। শনিবার ও কাজ করছে। দেখে নতুন একটা অল্প বয়সী ছেলে পুরো বিল্ডিংএর দরজা-জানালার কাঁচ খুব মনোযোগের সাথে পরিষ্কার করছে। কৌতুহলি হয়ে জানতে চাইলো ছেলেটা কে?
ওর সহকর্মী বললো- প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের ছেলে। ছুটির দিনে বাড়তি কিছু আয়ের জন্য কাজ করতে এসেছে।

আমাদের অফিসে সবার রুমে ছোট ছোট কিছু গাছের টব আছে। একজন লোক সপ্তাহে একদিন এসে পুরো অফিসের সবগাছ গুলোর পরিচর্যা করেন।মরে যাওয়া পাতা গুলো তোলে নেন। ঠিক পরিমাণমতো পানি দেন। আমরা যাকে মালি বলি। একদিন আমি আমার বসের রুমে গিয়ে দেখি, বস টেবিলের ওপর বসা আর এই মালি ভদ্রলোক উনার চেয়ারে বসে ছুটিয়ে আড্ডা করছেন। মানুষে মানুষে কী অপূর্ব সমতা।

গত কয়েকবছর আগে সোনালী ব্যাংকে গিয়েছিলাম একটা ফরেনকারেন্সী একাউন্ট করার জন্য। ম্যানেজার স্যারের রুমে দাঁড়ানো। দেখি, উনি উনার চেয়ে বয়সে অনেক বড় একজন লোককে বকাবকি করছেন- চেয়ারের ওপর কেন টাওয়ালটা ঠিকমতো রাখা হয়নাই? কেন টেবিলটা ভালো করে পরিষ্কার করা হয়নাই? অফিসের কাজ যা হবার হোক না কেন? চেয়ারে কিন্তু একটা সুন্দর টাওয়াল রাখা চাই।

কিছুদিন আগে টেলিভিশানে দেখা একটা ভিডিও। নেতা যখনই চেয়ার থেকে কিছু বলতে ওঠেন সাথে সাথে একজন চেয়ারখানা পরিষ্কার করে দেন। বুঝলাম না- এক চেয়ার কতবার পরিষ্কার করে রাখতে হয়। আসল উদ্দেশ্য হলো- চামচার নেতার সুনজরে আসা।

এই চিত্র শুধু বাংলাদেশের না। তৃতীয় বিশ্বের বৃটিশ শাসিত সবগুলো দেশেরই এমন হাল। আমেরিকায় এসে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশী লাভ হয়েছে তা হলো- এখানে পৃথিবীর নানা দেশের মানুষকে দেখার এবং ওদের সংস্কৃতি জানার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশে যেমন- সময় টিভি আছে। ঠিক তেমনি পাকিস্তান, ভারত সহ আফ্রিকার নানা দেশে এই নামে টিভি চ্যানেল আছে। আমাদের দেশে যেমন – টকশো গুলোতে রাতের বেলা – দেশপ্রেম আর উন্নয়ন নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় ঠিক তেমনি একেবারে অবিকল এই জিনিসগুলো ওদেরও হয়।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বড় বড় বসদের সাথে মাঝে মাঝে বৈঠক হয়। উনারা আসেন। কোনো পোস্টার নাই, কেম্পেইন নাই।গাড়ীর বহর নাই, রাস্তাঘাট বন্ধ নাই। পন্চাশ পদের খাবারের আয়োজন নাই। এসেই ঠিক সময় টু দ্যপয়েন্ট আলোচনা করেন। টমেটো আর লেটুস পাতার সালাদ খেয়ে চলে যান।

উপরের ছবিটি এবার দেখেন-
নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রোট নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে কাজে রওয়ানা দিয়েছেন। আর পাশের ছবিটি দেখেন- কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরুর শখ হয়েছে সেলুনে গিয়ে চুল কাটবেন।সেইজন্য রাস্টাঘাট বন্ধ করে গাড়ীর বহর নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন।
আমাদের কাজ কম, প্রদর্শণ বেশী। ওদের কাজ বেশী প্রদর্শণ কম। সেইজন্য গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টারনেট, ফেসবুক সব ওদের। ওদের সন্তানেরা মঙ্গলে পাথ ফাইণ্ডারের গতিপথ দেখে নাসায় বসে। আর আমাদের সন্তানেরা ম্যানহোলে আটকা পড়ে নর্দমার জলে ভাসে।

লিখেছেন- আরিফ মাহমুদ

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...