বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৫৪
Home / প্রতিদিন / আহলে হাদিস: আশির্বাদ না অভিশাপ

আহলে হাদিস: আশির্বাদ না অভিশাপ

salafi salatফাহিম বদরুল হাসান ::

“চার মাযহাবের অনুসারী পৃথিবীতে কত পার্সেন্ট’’ এর উত্তরে কেউই ৯৫% এর কম বলবে না। বাকি কেউ সালাফী, লা মাযহাবি আবার কেউ মাযহাব না মেনে শুধুই ‘“মুসলিম” বলতে পছন্দ করেন। যাইহোক, সংখ্যা যেমন সত্য মিথ্যার একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না, ঠিক তেমনি বিশাল জনগোষ্ঠীর বিপরীতে গুটিকয়েক অবস্থান সঠিক হওয়া অতি নগন্য। ইসলামের ইতিহাসে এরকম দলকে “ফিরকা” আখ্যায়িত করেছে।

পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে তেমন চোখে না পড়লেও ভারত উপমহাদেশে বর্তমান সময়ে চার মাযহাবকে অতি নিকৃষ্ট এবং ভ্রান্ত মতবাদ ঘোষণা করে, দীর্ঘ তের শ’ বছর ধরে মুসলমানদের আমলকে “অগ্রহণযোগ্য” সিদ্ধান্ত দিয়ে সরাসরি হাদিসের উপর আমলের চেষ্টা করা হচ্ছে। হাদিসের উপর আমল করা নাজায়েয তো নয়ই বরং উচিত। কিন্তু তারা একটি হাদিস অনুযায়ী আমল করতে গিয়ে অন্যের আমলকে হারাম এমনকি শিরক পর্যন্ত বলে ফেলা হচ্ছে।  যারা নিজেদেরকে আসলুস সুন্নাহ বলেন এবং দাওয়াতী কাজ করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই স্হানে কাল পাত্র সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা আবশ্যক।

●লা-মাযহাবিদের মধ্যে মূলতঃ তিনটি স্তর বা দল রয়েছে।
(১) প্রচারক দলঃ গায়ের মুক্বাল্লিদের প্রথম দল হচ্ছেন, আলেম। যাঁরা কোনো ইমামের তাক্বলিদ না করে, কারো মাযহাব না মেনে সরাসরি কোর’আন-হাদিস থেকে শরীয়ত পালনের দাওয়াতী মিশনে কাজ করেন। অনলাইনে-অফলাইনে বিভিন্ন লেকচার, বই প্রচার করেন।এসব উলামা-এ-কেরাম কারো কাছে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, কারো কাছে ইসলাম বিদ্বেষীদের পেইড এজেন্ট, কারো কাছে গোমরাহ আলেম। কিন্তু এরকম কোনো ধরণের খেতাব না দিয়ে বলা উচিত, তারাও ইসলামের খেদমত করতে চান, ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে চান সর্বত্র। তাঁদের জন্য শুধু এটুকুই প্রার্থনা, আল্লাহ যেন তাঁদেরকে এবং তাঁদের মাধ্যমে পুরো উম্মাহকে সিরাতুল মুস্তাকীমে প্রদর্শন করুন।

(২) আলেম-বিদ্বেষী দলঃ এই গ্রুপের আদি-অন্ত খুঁজলে পাওয়া যায়, সবসময়ই আলেম-উলামাদের অপছন্দ করে। এরা আলেমদেরকে ডিঙিয়ে কোর’আন-হাদিস এবং ইসলাম নিয়ে আসতে চায়। ইসলাম চায় কিন্তু আলেম চায় না। আলেমদেরকে সর্বদা ইসলাম বিক্রেতা বলে আসছে। ইতিহাস বলে, এরকম নবীর ওয়ারিসদের নর্দমায় ফেলে নবীকে ধরতে একটা দল আবু বকর (রাঃ)’র যুগ থেকেই চলে আসছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খলিফাকে অমান্য করা দিয়ে শুরু করে আজ অবধি নবীদের উত্তরাধিকারীদেরকে অস্বীকার করে চলেছে। মাযহাব অমান্যের এই সুযোগে তাদের মধ্যে নতুন সজীবতা এসেছে। তাদের জন্যও শুধু একটা কথা ‘’আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী”। সুতরাং আলেমদেরকে ঘৃণা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার দাবী কিংবা ইলমে নববী অর্জন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। শুধু মরীচিকার পিছনেই দৌড়াবে। আল্লাহ পথ না দেখালে কখনোই সিরাতুল মুস্তাকীম পাবে না।

(৩) সত্যান্বেষী দলঃ সহীহ আক্বিদা’র অন্বেষায় মাযহাব-বিমুখ সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে এটি। এদের অধিকাংশই আধুনিক শিক্ষিত। দেখা যায়, তারা ইসলামিক কিছু চটি বই পড়ে কিংবা কয়েকটি লেকচার শুনে সবকিছুকে বিদ’আত সাব্যস্ত করছেন। খুঁজ নিলে দেখা যায়, আসলেই তারা বিদ’আত কিংবা অত্যন্ত কুসংস্কারাচ্ছান্ন পরিবেশে বড় হয়েছে। যখন তারা অনুধাবন করেছে যে, তারা যা পড়ছে/আমল করছে, এগুলো সঠিক নয়, ঠিক তখনই সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক জায়গায় আটকে যাচ্ছে।

তাদের এই অবস্থাকে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসালামের নবুওত পূর্ববর্তী সময়ের সাথে তুলনা করা যায়। ইব্রাহীম আলাইহিসালাম যেমন, এচবার চন্দ্রের সৌন্দর্য দেখে রব বলতেন, আবার তারকার ঔজ্জ্বল্য দেখে সেটাকে রব বলতেন। অতঃপর দিনের বেলায় সূর্যের জ্বলজ্বলানী দেখে এটাকে রব বলতেন। এভাবেই খুঁজতে খুঁজতে একসময় আল্লাহ হিদায়াত দিয়েছেন। ঠিক সেভাবেই এই ভাইয়েরা আলো খুঁজছে। যারা আসলুস সুন্নাহর দায়ীঈ তাদের উচিত, সে সমস্ত  ভাইদেরকে ভ্রান্ত, ভ্রষ্ট ইত্যাদি গালাগালি না করে বরং হিকমাতের সাথে দ্বীনের সঠিক আলোটা তাদের নিকটা পৌঁছে দেয়া। আল্লাহ যদি কপালে হিদায়াত রাখেন, ফিরে আসবেই। এরকম অনেকে ফিরে আসছেনও।

যারা সঠিক আক্বিদা’র দাওয়াত দিচ্ছেন, তাদেরকে জাতীয় কবির দুটো লাইন মনে রাখা উচিত-
“বিদ্বেষ লয়ে ডাকিলে কি কভূ পথভ্রান্ত ফিরে,
ভালবাসা দিয়ে তাহারে ডাকিতে হয় বক্ষের নীড়ে।”

লেখক : অনুসন্ধানী আলেম ও চিন্তক

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...