শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:৩৯
Home / খিলাফাহ / খলীফার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অপবাদ।

খলীফার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অপবাদ।

খিলাফাহদেশের প্রতিটি এলাকা থেকে যখন মদীনা মুনাওয়ারাতে অনবরত অভিযোগ পত্র আসতে থাকে এবং সেখানেও কানাঘুষা শুরু হয় তখন মদীনা শরীফের কিছু সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তি হযরত উসমান গনী (রা)এর সাথে দেখা করে অনুরোধ করেন তিনি যেন তাঁর নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পর্কে তদন্ত চালান এবং জনসাধারণের অভিযোগসমূহ বিদূরিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। হযরত উসমান গনী (রা) কয়েকজন নির্ভরযোগ্য সাহাবীকে বাছাই করে তাদের এক একজনকে এক এক প্রদেশে প্রেরণ করেন। নিষ্ঠাবান সাহাবা (রা) এর এই জামাত সংশ্লিষ্ট এলাকায় তদন্ত সম্পন্ন করে খলীফার নিকট রিপোর্ট প্রদান করেন যে, তাদের কেউ কোন এলাকায় কোন গভর্নর বা কর্মচারীকে আপত্তিকর কিছু করতে দেখেন নি; বরং তারা সংশ্লিষ্ট আপন আপন এলাকায় সুষ্ঠভাবে ও ন্যায়পরায়নতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ করতে দেখা যায়নি। এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও গভর্নরদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেশ করে নি।

কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার ঐ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এসব কথা শুনে মদীনাবাসী সাময়িক কিছুটা স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন হজ্জের মওসুম আসন্ন ছিল। হযরত উসমান গনী (রা) সাধারণ জনগণের নামে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। যার বিষয়বস্তু ছিল নিম্নরূপ:

আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ এসেছে যে, আমার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনসাধারণকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তাদের উপর জুলুম অত্যাচার চালাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে আমি সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যার যে অভিযোগ আছে সে যেন হজ্জের সময় তা আমার সামনে উত্থাপন করে- এ মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করছি। এবং আপন প্রাপ্য যদি তা প্রমাণিত হয় তাহলে আমার কাছে থেকে যেন সে আদায় করে নেয়।

এ সময় খলীফাতুল মুমিনিন সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে হজ্জে আগমনের নির্দেশ করেন। সে মতে সব প্রদেশের গভর্নররা মক্কায় সমবেত হন হজ্জব্রত পালন করার উদ্দেশ্যে। এদিকে ইবনে সাবার অনুসারীরা তার কূটচক্রান্তে প্রত্যেক প্রদেশ থেকে মক্কায় যাওয়ার পরিবর্তে মদীনায় এসে জড়ো হয়। হজ্জের সময় খলীফার নির্দেশে সকল গভর্নর মক্কায় একত্রিত হলেও কোন অভিযোগকারীকে অভিযোগ করতে দেখা যায় নি। এ সময় খলীফার নিকট মজলিস বসল ফিতনা সম্পর্কে শলাপরামর্শ করার জন্য। এ মজলিসে হযরত উসমান গনী (রা) সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি জানি যে, এ ফিতনা ও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু আমি চাই না যে, ফিতনার দরজা উন্মুক্ত করার দায় আমার কাঁধে চাপুক। আল্লাহ তা‘আলা ভালো করেই জানেন যে, জীবনে মানুষের উপকার ছাড়া কখনো কোন ক্ষতি করিনি আমি। আমি কখনো কারো জন্য অমঙ্গল কামনা করিনি। খলীফাতুল মুসলিমিনের আবেগপূর্ণ বক্তব্যে শ্রোতারা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

এদিকে হজ্জ শেষে মদীনাতে ফিরে খলীফা মদীনায় আগত সবাইকে নিয়ে একটি মজলিস কায়েম করেন। ঐ মজলিসে মদীনায় অবস্থানকারী মহাত্মা সাহাবী হযরত আলী (রা), হযরত যুবাইর (রা) ও তালহা (রা)কে ও আহ্বান করেন। হযরত মুআবিয়া (রা) ও মক্কা থেকে মদীনায় আসার কারণে উক্ত মজলিসে উপস্থিত ছিলেন।

এই মজলিসে হযরত উসমান গনী (রা) দাঁড়িয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেন তা নিম্নরূপ-

‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা) খলীফা হওয়ার পর থেকে সীমাহীন সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। মহান আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার দেয়ার ভয়ে আত্মীয় স্বজনের প্রতি বেশি লক্ষ্য করার সুযোগ পাননি। অথচ রাসূলে কারিম (সা) নিজ আত্মীয়-স্বজনের প্রতি অত্যন্ত খেয়াল রাখতেন ও যথাসাধ্য তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। আমার আত্মীয় স্বজন যেহেতু গরিব তাই আমি তাদের প্রতি লক্ষ রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। তাদের সাথে সর্বদা সদয় ব্যবহার করি। আপনারা যদি তা অবৈধ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমি তা পরিত্যাগ করবো।’

তখন এক এক করে ইবনে সাবার প্ররোচনায় আগত ফিতনাকারীরা একটির পর একটি প্রশ্ন করতে থাকে খলীফাকে। এভাবে তারা প্রায় বিশটার মতো অভিযোগ উত্থাপন করে খলীফার বিরুদ্ধে। যার প্রত্যেকটির অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও মজবুত উত্তর প্রদান করেন খলীফা। আমরা এই নিবন্ধে শুধু বিশটি অভিযোগ উল্লেখ করছি। সবগুলোর উত্তর লিখতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। সুতরাং কয়েকটির আপত্তির উত্তর লেখা হবে, যাতে পাঠক বুঝতে পারেন যে, খলীফাতুল মুসলিমিন হযরত উসমান (রা)এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল সবছিল অযৌক্তিক ও ভ্রান্তিপূর্ণ। আসলে এই অভিযোগগুলোকে শুধু অভিযোগ বললে কম বলা হয়। আসলে এসব ছিল আমীরুল মুমিনিন উসমান (রা)এর ব্যাপারে তুহমাত তথা অপবাদ ও অপপ্রচার। যার সবগুলোই জন্মলাভ করেছিল ইবনে সাবার বিষাক্ত গর্ভে।

অপবাদগুলো ছিল নিম্নরূপ-

১/ উসমান (রা) ইবনে মাসউদ (রা)কে মেরে হাড়হাড্ডি ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। এবং বাইতুল মাল থেকে তাঁর প্রাপ্য প্রদান করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

২/ হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা)কে আপনি এমনভাবে আঘাত করেছেন যে, তাঁর অন্ত্র ক্ষতবিক্ষত করেছেন।

৩/ কুরআনের মাছহাফ তৈরী করে বড়ো একটি বিদআত করেছেন আর পূর্বের সকল আয়াত সম্বলিত চামড়া-পাতা-পাথর ইত্যাদি ধ্বংস করে চরম অন্যায় করেছেন।

৪/ আপনি চারণভূমিকে নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছেন। সেখানে শুধু আপনার উটই চরে বেড়ায়। এটা চরম অবিচার।

৫/ আপনি হযরত আবু যর গিফারী (রা) এর মতো জালিলুল কদর সাহাবীকে নির্বাসন দিয়েছেন।

৬/ আবুদ্দারদা (রা)কে শাম থেকে বের করে দিয়েছেন।

৭/ হাকাম বিন আসকে আল্লাহর রাসূল (সা) নির্বাসন দেয়ার পরও আপনি তাকে ফিরিয়ে এনেছেন।

৮/ আপনি সফরের হালতে কছরের বিধানকে বাতিল করে দিয়েছেন। হজ্জের সফরে মিনায় কছর নামাজ না পড়ে পুরো নামাজ আদায় করলেন কোন দলীলের ভিত্তিতে?

৯, ১০, ১১, ১২/ আপনি শুধুমাত্র আত্মীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে ম্আুবিয়া বিন আবু সুফিয়ান, আব্দুল্লাহ ইবনে আমের, মারওয়ান বিন হাকাম ও ওলীদ বিন ওকবাকে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর পদ দান করেছেন।

১৩/ আপনি আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে মারওয়ান বিন হাকামকে আফ্রীকার গনীমতের এক পঞ্চমাংশ দান করে বড় জুলুম করেছেন।

১৪/ ওমর (রা) দোররা মারার সময় হালকা ও ছোট লাঠি ব্যবহার করতেন। আর আপনি মোটা ও বড় লাঠি ব্যবহার করে সীমালঙ্ঘন করেন।

১৫/ আপনি রাসূলের দরজা ও স্তরে আরোহন করেছেন। অথচ পূর্ববর্তী দুই খলীফা সে স্তর থেকে নেমে বসতেন।

১৬/ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে পালিয়ে ছিলেন।

১৭/ বাইয়াতে রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন না।

১৮/ ওহুদ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন নি।

১৯/ আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজনকে বেশি বেশি দান করেন অথচ সাধারণ মুসলমানদেরকে কিছুই দেন না।

এসব অভিযোগ-অপবাদ আজো শীয়াদের গ্রন্থাদীতে বিদ্যমান রয়েছে। যখন তারা হযরত উসমান (রা)কে গালমন্দ করতে চায় এবং তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে চায় তখন তারা এসব বলে বেড়ায়। তাদের নিকট এসব অপবাদ-অভিযোগ নিরেট সত্য। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভ্রান্তির গহ্বরে নিপতিত হয়েছেন কিছু বুদ্ধিজীবী নামক বুদ্ধিহীন প্রাণীও। তারা এসব বেশ রাগ ও ক্ষোভের সাথে তাদের বই পুস্তকে লিখেছেনও। এরা হলো শীয়াদের দোসর। এরা হলো খেলাফতে ইসলামিয়্যার বিরোধী শক্তি।

যা হোক সে সময় সবগুলো শহরে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ-আপত্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। যার কারণে সবগুলো অভিযোগের যথাযথ উত্তর প্রদান করা খলীফাতুল মুসলিমিনের জরুরি কর্তব্য হয়ে পড়েছিল।

আল ইসলামি বিডির সৌজন্যে

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...