বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৪৭
Home / অনুসন্ধান / খিলাফাত পরবর্তী তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাস
ওসমানী খেলাফতের মানচিত্র

খিলাফাত পরবর্তী তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাস

তুরস্কের জাতীয় পতাকা
তুরস্কের জাতীয় পতাকা

বুরহান উদ্দিন ::

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তুরস্কের গুরুত্ব অপরিসীম। জ্বালানির মূল কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য হওয়ায় এবং ইয়াহুদিদের পুণ্যভূমি ফিলিস্তিনে হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্যর গুরুত্ব অপরিসীম। এক কথায় বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্য যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেই হবে বিশ্বমোড়ল। উসমানী খিলাফাতের পতনের পূর্বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ছিল খিলাফাতের অধীনে। আর ইসলামের ইতিহাসে তিনটি খিলাফাত ছিল সবচেয়ে বড়। উমাইয়্যা খিলাফাত; আব্বাসী খিলাফাত এবং উসমানী খিলাফাত। এর মধ্যে উসমানী খিলাফাতের ইতিহাস ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ তাদের সময়েই ইউরোপের বিশাল একটি অংশ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে এবং সমগ্র দুনিয়াতে ইসলাম একটি অপরাজেয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মুসলিম শাসকদের ইসলাম বিমুখতা এবং ইয়াহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই উসমানী খিলাফাতের পতন ঘটে।

ওসমানী খেলাফতের পতাকা
ওসমানী খেলাফতের পতাকা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লিথুনিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত ৩০ টি পয়েন্টে সমগ্র দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উসমানী সেনাবাহিনী অসম বীরত্ব প্রদর্শনের পরেও হেরে যায়। এবং পরবর্তীতে মাত্র ৩ বছরের বাবধানে তুরস্কের আলেমদের নেতৃত্বে বর্তমান তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। এর পর ইউরোপিয়ান দেশগুলো খিলাফাতের ব্যাপারে আপত্ত্বি করতে থাকে এবং তাদের দাবির মুখে ১লা নভেম্বর ১৯২২ সালে তৎকালীন সুলতান; সুলতান ওয়াহদেদ্দিনকে তুরস্ক থেকে নির্বাসিত করা হয়। অবশেষে লোজান চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয়ান দেশগুলোর আপত্তির মুখে ২৯ শে অক্টোবর প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে এবং ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মুসলিমগণ নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়ে।

এর অব্যবহিত পরেই মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এবং তার অধীনস্থগণ তুরস্ক থেকে ইসলাম ও ইসলামের নিশানা মুছে দেওয়ার লক্ষে মুসলমানদের উপর চরম জুলুম নির্যাতন শুরু করে। আযানকে তুরকিশ ভাষায় দেওয়াতে বাধ্য করে; ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করে; টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই তাদেরকে ফাসি দেওয়া হত। সেই সময়ে হাজার হাজার আলেমকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে এবং অতীত ইতিহাসকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার জন্য আরবী হরফকে তুলে দিয়ে তদস্থলে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করে এক রাতেই গোটা জাতিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে ঠেলে দেয়। বিজাতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিকে আমাদনী করা হয়; মেয়েদেরকে মিনি খোলামেলা পোশাক পরিধান করতে বাধ্য করে এবং হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে ইউরোপিয়ান পারিবারিক আইন প্রবর্তন করা হয়। এককথায় বলতে গেলে ইউরোপের আদলে দেশকে গড়ে তুলার জন্য ইউরোপের নগ্ন সংস্কৃতিকে আমদানী করা হয়।

কামাল আতাতুর্ক
কামাল আতাতুর্ক

১৯৩৮ সালে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক মৃত্যুবরণ করে। তার সঙ্গী-সাথীগণ ছিল তার যোগ্য উত্তরসুরী তারা তাঁকে কোন প্রকার জানাযা ছাড়াই দাফন করে। কিন্তু তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জুলুম নির্যাতনের অবসান হয় নি; তার সতীর্থ ইসমেত ইননু কামাল আতাতুর্কের সময়ের সেই একই জুলুম নির্যাতনকে অব্যাহত রাখে। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরা Republican People’s Party নামে একটি দল গঠন করে পুনরায় সরকার গঠন করে এবং ১২ বছর পর্যন্ত একই জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রাখে। তাদের এই জুলুম নির্যাতন যখন চরম পর্যায়ে তখন মুসলিমগণ আস্তে আস্তে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পরামর্শে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে।

১৯৫০ সালের নির্বাচনে আদনান মেন্দ্রেসের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিজয় লাভ করে। তারা ক্ষমতায় এসে ইসলামের উপর সকল নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাহার করে; মসজিদগুলোকে নামাযের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়; আরবিতে আযান দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। আরবিতে আযান শুনে কোটি কোটি মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ঐতিহাসিকদের বর্ণনামতে, তুরস্কের মুসলিমগণ সেদিন এতটাই আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে, এর আগে বা পরে তারা আর কোন দ্বীন এতটা আনন্দিত হতে পারেন নি।
ইসলামের উপর সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তিনি মুসলমানদেরকে স্বস্তি দেন এবং আমেরিকার সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তিনি মোট ১০ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। ১৯৬০ সালে বামপন্থী ও ইসলামবিদ্ধেষী সেনাবাহিনী এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

ওসমানী খেলাফতের মানচিত্র
ওসমানী খেলাফতের মানচিত্র

এই সামরিক সরকার ৫ বছর তুরস্ককে শাসন করে। ১৯৬৪ সালে Democrat Party র অন্যতম সদস্য সোলেয়মান দেমিরেল আদালেত পার্টি প্রতিষ্ঠা করে। তাঁকে তুরস্কের জনগণ আদনান মেন্দ্রেসের উত্তরসূরি হিসেবে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে এবং তার নেতৃত্বে আদালেত পার্টি অনেকবার সরকার গঠন করে। কিন্তু ৯০-এর দশকে সে নিজেকে একজন ম্যাসন (ইয়াহুদিদের দালাল) বলে স্বীকার করে নেয়। তিনি তুরস্কে এখন ম্যাসন দেমিরেল নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে দেমিরেল ক্ষমতা গ্রহণ করে। তুরস্ক নতুন একটি যুগে প্রবেশ করে। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডানপন্থী-বামপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা জারী থাকে।

নাজিম উদ্দিন আরবাকান
নাজিমুদ্দিন আরবাকান

১৯৬৯ সালে তুরস্কের রাজনীতিতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান আলেম উলামাদের পরামর্শে এবং ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত একদল মুসলমানদেরকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি মিল্লি নিজাম নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপদজ্জনক এই অভিযোগে ১ বছর পরেই এই দল কে নিষিদ্ধ করা হয়। এই দল নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই নাজমুদ্দিন এরবাকান মিল্লি সালামেত নামে নতুন একটি দল গঠন করে ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ৪৮ আসনে বিজয় লাভ করে নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে এই ৪৮ আসন ছাড়া কোন দলই সরকার গঠন করতে পারছিল না। সুলেয়মান দেমিরেল তখন ডানপন্থী দল হিসেবে তুরস্কে পরিচিত হওয়ায় নাজমুদ্দিন এরবাকান তার সাথে সুস্পষ্ট শর্তের ভিত্তিতে কোয়ালিশন সরকার গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে সরকার গঠন করতে অস্বীকার করেন; কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামপন্থী দলের নেতা বুলেন্ত এজেবিদ তার সকল শর্ত মেনে নিয়ে তার সাথে সরকার গঠন করেন। তার এই কোয়ালিশন সরকারের সময় ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেয়া। সাইপ্রাসকে গ্রীস থেকে মুক্ত করে তুরকিশ সাইপ্রাস গঠন করা ও মুসলিমদেরকে যুলুম মুক্ত করা। নতুন করে মাদ্রসা শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা; হাজার হাজার কুরআন কোর্স চালু করা; মাদ্রাসার ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া; সাইদ বদিউযযমান নুরসির রিসালায়ই নুরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রতাহার করা; সেনানিবাসসহ সকল সরকারি অফিস আদালতে মাসজিদ প্রতিষ্ঠা করা; ইসলামী বইপুস্তক প্রকাশের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া; অশ্লীলতা-বেহায়াপনা দূর করার লক্ষে আইন করাসহ অনেক কাজ করেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ এই সময়ের মধ্যে তিনি ২৭০টি ভারিশিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন- যার মধ্যে বিমান তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে সকল কিছুই ছিল। তার এই উদ্দম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দলকে তার সাথে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে।

১৯৭৮ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ফলে মিল্লি সালামেত পার্টির আসন ২৮ এ নেমে আসে। কিন্তু এবারও তারা নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয়; কিন্তু এবার তারা নিঃস্বার্থভাবে Adalet Party কে সমর্থন করে। এই সময়ে ইসলামী আন্দোলন তুরস্কের রাজনীতিতে এক নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৮৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পক্ষে সংসদ এবং সংসদের বাহিরে মজবুত ভূমিকা পালন করে এবং আমেরিকা ইরাককে দিয়ে ইরানের উপর হামলার বিপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে জনমত গঠনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এইভাবে মুসলিম বিশ্বের উপর ইঙ্গমার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তুরস্ক যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এটাকে সাম্রাজ্যবাদীরা ভাল চোখে দেখে নি। তারা ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল দলকে নিষিদ্ধ করারা পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ নাজমুদ্দিন এরবাকানসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদেরকে জেলে প্রেরন করে। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে জেলে পুরে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করে। সেনাবাহিনী ডানপন্থী ও বামপন্থী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রভাব এতটাই প্রকোপ ছিল যে, অনেক ঐতিহাসিক এই জন্য বলে থাকেন যে- আধুনিক তুরস্কের ২ টি ইতিহাস রয়েছে- ১ টি হল ১৯৮০ র আগে আরেকটি ১৯৮০ সালের পরের ইতিহাস।

সামরিক শাসন ৩ বছর পর্যন্ত জারি থাকে। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এরবাকানের দল মিল্লি সালামেত পার্টির সংসদ সদস্য তুরগুত অজাল Motherland party নামে একটি দল গঠন করে ক্ষমতায় আরোহণ করে। এই সময়ে রেফাহ পার্টি; Right way Party, Nationalist Movement party নামে আরও কয়েকটি দলের জন্ম হয়। ১৯৮৯ সালের এক রেফারেন্দামের মাধ্যমে নাজমুদ্দিন এরবাকান; বুলেন্ত এজেবিত পুনরায় রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়। এরবাকান রেফাহ পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন।

তুরস্কে জনসভা
তুরস্কে জনসভা

এইভাবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তুরগুত অজালের নেতৃত্বে Motherland Party তুরস্ককে শাসন করে। তুরগুত অজাল ১৯৯৩ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রেসিডেন্ট হন এবং ১৯৯৪ সালে তাঁকে বিষপানে হত্যা করা হয়। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তুরস্কের জাতীয় সংসদ সুলেয়মান দেমিরেলকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই সময়ে ১৯৯৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিপুল বিজয় অর্জন করে। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তার দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরায় এবং এরবাকান জাতির সামনে এক ভিশন নিয়ে আসায় রাজনীতির দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিজয় লাভ করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের দালালগণ তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এরবাকনের নেতৃত্বে রেফাহ পার্টি Right Way Party ‘র নেত্রী তানসু চিল্লারের সাথে সরকার গঠন করে। এরবাকান ক্ষমতা গ্রহণ করেই জনগণের ক্ষমতায়ন শুরু করেন। সকল দরিদ্রকে সরকারিভাবে ভাতা দেওয়া শুরু করেন। হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য ইসলামি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার ঘটান ও আলেম ওলামাদেরকে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রধান করেন। D-8 প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুদের হারকে কমিয়ে নিয়ে আসেন।

মাত্র ১১ মাসের শাসনামলে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। সকলের বেতন তিনি ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন । কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। শিল্পায়নে গতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের মধ্যে তুরস্ককে জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন।

তার এই সকল উত্তোরত্তর সফলতায় ইয়াহুদীরা রেফাহ পার্টিকে বন্ধ করার লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রপাগান্ডা চালায়। ও তার পার্টি শরিয়ত কায়েম করবে এই অভিযোগে তাকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এই অবস্থায় এরবাকান এই শর্তে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ইস্তফা দেন যে তার কোয়ালিশন পাটির নেত্রী তানসু’কে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কিন্তু মাসন ও ইয়াহুদিদের ধারক সোলাইমান দেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী করে। এইভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এরদোগান
এরদোগান

এরপর ৩ মাস পর ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ইসলামপন্থীগণ রেফাহ পার্টির অন্যতম নেতা রেজায় কুতানের নেতৃত্বে ফাজিলেত পার্টি গঠন করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১১৪ টি আসন লাভ করে। কিন্তু কিছুদিন পর এই দলটিকেও নিষিদ্ধ করে। এরপর গঠিত হয় সাদেত পার্টি। এবং শুধুমাত্র ফাজিলেত পার্টি ছাড়া অন্য সকল দল মিলে সরকার গঠন করে কিন্তু তাদের দুর্নীতিতে জনগনের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে। অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামে এবং মুদ্রাস্ফীতি সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ব্যাংকগুলো দেওলিয়া হয়ে পড়ে।

অবশেষে ২০০২ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে রজব তায়্যিপ এরদয়ানের নেতৃত্বে একে পার্টি ৩৪.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং এর পর ২০০৭ সালে ৩৮.৬ এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ৪৯. ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনা করছে।

সূত্র : আইএমবিডিব্লগ

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...