শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:০৫
Home / সাহাবা / মুহাম্মদ সা.’র মুচকি হাসি ও আবুবকর রা.’র কান্না

মুহাম্মদ সা.’র মুচকি হাসি ও আবুবকর রা.’র কান্না

hadisমাওলানা ক্বামার উদ্দীন ::
একদিন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিবি আয়েশা (রাঃ) কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! আজকে আমি অনেক খুশি, তুমি আমার কাছে যা চাইবে তাই দেব। বল তুমি কি চাও?
হযরত আয়েশা (রাঃ) চিন্তায় পড়ে গেলেন। হঠাৎ করে তিনি এমন কি চাইবেন। আর যা মন চায় তা তো চাইতে পারেন না! যদি কোন ভুল কিছু চেয়ে বসেন, নবীজী যদি কষ্ট পেয়ে যান? এমন অনেক প্রশ্নই মনে জাগতে লাগলো!
আয়েশা (রাঃ) নবীজী কে বললেন, আমি কি আব্বুর কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিতে পারি? নবীজী বললেন, ঠিক আছে, তুমি পরামর্শ নিয়েই আমার কাছে চাও।
আয়েশা (রাঃ) তাঁর আব্বু হযরত আবুবকর (রাঃ)-এর কাছে পরামর্শ চাইলেন। আবুবকর (রাঃ) বললেন, যখন কিছু চাইবেই, তাহলে তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে মিরাজের রাতে আল্লাহপাক রাব্বুল আ’লামীনের সাথে হয়েছে এমন কোনো সিক্রেট কথা জানতে চাও। আর কথা দাও, নবীজী যা বলবেন তা সর্বপ্রথম আমাকে জানাবে।
আয়েশা (রাঃ) নবীজী (সাঃ)-এর কাছে গিয়ে মিরাজের রাতের কোনো এক গোপন কথা জানতে চাইলেন; যা এখনও কাউকে বলেন নি।
মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হেসে দিলেন। বললেন, বলে দিলে আর গোপন থাকে কি করে! একমাত্র আবুবকর-ই পারেন এমন বিচক্ষণ প্রশ্ন করতে। মুহাম্মাদ (সাঃ) বলতে লাগলেন, হে আয়েশা! আল্লাহ আমাকে মিরাজের রাতে বলেছেন, “হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! তোমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ কারো ভেঙ্গে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়ে দেয় তাহলে আমি তাকে বিনা হিসেবে জান্নাতে পৌঁছে দেব। সুবাহানাল্লাহ!
প্রতুশ্রুতি মত আয়েশা (রাঃ) তাঁর বাবা হযরত আবুবকর (রাঃ)-এর কাছে এসে নবীজীর বলে দেওয়া এই কথাগুলো বললেন। শুনে আবুবকর (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। আয়েশা (রাঃ) আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বু! আপনি তো কত ভেঙ্গে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়েছেন, আপনার তো সোজা জান্নাতে যাওয়ার কথা। কাঁদছেন কেন? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আয়েশা! এই কথাটার উল্টা চিন্তা করে দেখো, কারো ভেঙ্গে যাওয়া মন জোড়া লাগালে যেমন আল্লাহ সোজা জান্নাতে দিবেন, কারো মন ভাঙলেও আল্লাহ যদি সোজা জাহান্নামে দিয়ে দেন! আমি না জানি নিজের অজান্তে কতজনের মন ভেঙ্গেছি। আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন, সেই চিন্তায় আমি কাদছি। সুবাহানাল্লাহ।
এই হলো আমাদের ইসলাম। দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার পরেও এইভাবে চিন্তা করেন। এইভাবে ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, কাউকে কষ্ট না দিতে। মানুষের কষ্টে পাশে দাড়াতে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) আরো বলেছেন, যদি তোমি গোস্ত রান্না করতে চাও, তাহলে এক গ্লাস পানি বেশি দিয়ে দাও, যাতে তোমার গরীব প্রতিবেশীকে একটু শেয়ার দিতে পারো। আর যদি না দিতে চাও, তাহলে এমন সময় রান্না করবে, যখন প্রতিবেশীর বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকে। গোস্তের ঘ্রাণ পেয়ে বাবা-মাকে গোস্ত খাওয়ার কথা না বলে। গরীব বাবা-মা, গোস্ত কিনে খাওয়াতে পারবে না; মনে অনেক কষ্ট পাবে।
এভাবে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মানুষের মন না ভাঙতে, মানুষকে কষ্ট না দিতে। আল্লাহপাক রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে মানুষের কষ্টে পাশে দাড়ানোর, মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে, মানুষের ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগাতে, অন্যের কষ্ট শেয়ার করতে তাওফিক দান করুন। আমীন। (হাদিসে বুখারি শরিফ)
লেখক:  মুহাদ্দিস, ইমাম ও খতিব, ওল্ডহাম মাদানী একাডেমী ইউকে।

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

মহানবী সা.’র অজানা শিক্ষা

কমাশিসা : মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বর্ণিত জীবনাদর্শ কখনোই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) খ্রিস্টান নিপীড়নের নীতিকে ...