বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১২:২৯
Home / কবিতা-গল্প / গরিবের হক

গরিবের হক

Elias Moshud_komashisha-02

ইলিয়াস মশহুদ ::

সে অনেক আগের কাহিনী। আরবের একজন মহৎ ও দানশীল ব্যক্তির একটি বাগান ছিল। বাগানটি ফলে ফুলে ভরপুর থাকতো। ফল পাড়ার দিন বাগানের মালিক গরিব-দু:খিদের দাওয়াত করতেন। তাদেরকে উৎফুল্ল মনে ফল বিলিয়ে দিতেন। দানশীল আল্লাহওয়ালা এই মানুষটি উদারচিত্তে দান করতেন- এই যে তিনি গরিব-দুঃখিদের মাঝে বাগানের তরতাজা ফল বিলাচ্ছেন; এ তো তাদেরই প্রাপ্য। কেননা, ধনীর সম্পদে গরিবের হক আছে। গরিবদেরকে ফলের অংশ দেয়াকে তিনি দায়িত্ব মনে করতেন। তাঁর দেয়া ফল পেয়ে গরিবরা খুব খুশি হতো। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতো। বাগানের মালিকের জন্য দোয়া করতো।
ভদ্রলোক একদিন না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আপন মাওলার ডাকে সাড়া দিলেন। লোকটির ছেলে সন্তান একাধিক ছিল। ছেলেরা বাগানের উত্তরাধিকারী হলো। পৈত্রিকসূত্রে সম্পদের মালিক যখন তারা হলো, তখন সবাই মিলে একদিন বৈঠক আহ্বান করল। পরস্পরে আলোচনা করে ছেলেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছলো যে, বাবার জ্ঞান-বুদ্ধি বেশ ভালো ছিল না। তিনি দুনিয়ার হাব-ভাব তেমন একটা বুঝতেন না। কীভাবে সম্পদ ব্যবহার করতে হয় জানতেন না। যে কারণে গরিবদের মাঝে নিজের চাষ করা বাগানের ফল বণ্টন করে দিতেন। আমরা সমুঝদার, বাবা থেকে ভালো বুঝি। সুতরাং আমাদের বাগানের ফল এখন থেকে আর গরিবদের দেবো না। আমরাই ভোগ করব। তাদের এক ভাই তখন বললো, আমার মনে হয় তোমাদের এ সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এমনটা করা উচিৎ হবে না। কিছু অংশ গরিবদের দেয়াই ভালো হবে। কিন্তু অন্য ভাইয়েরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলো।
বাগানের ফল পেঁকে লাল হয়েছে। পেড়ে আনতে হবে। সবাই মিলে পরামর্শ করলো বাগানে যেয়ে ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার আগেই আমাদেরকে ফল বণ্টনের কাজ সমাধা করতে হবে, যাতে গরিবরা টের না পায়। পরামর্শ অনুসারে সবাই প্রত্যুষে বাগানের দিকে রওয়ানা দিলো। সূর্য উঠার আগেই তারা পৌঁছে গেলো বাগানে। কিন্তু এ কি সর্বনাশ! বাগানে একটিও ফল নেই!! সব জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হয়ে গেছে।

বাগানভদ্রলোকের ছেলেরা চেয়েছিলো দরিদ্রদেরকে বঞ্চিত রাখবে। সব ফল নিজেরাই ভোগ করবে। যা ছিলো অন্যায়। তাদের এমন সিদ্ধান্ত আল্লাহ মেনে নিতে পারেন নি; শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করলেন। রাতে আল্লাহর হুকুমে একজন ফেরেশতা বাগানটি ভষ্ম করে দেন। ফলে সব ফল নষ্ট হয়ে যায়। এর দ্বারা আল্লাহ বুঝাতে চাইলেন, তাদের পিতার কর্ম সঠিক ছিলো। সম্পদ একা একা ভোগ করতে নেই। এতে অন্যদের; গরিবদেরও হক্ব আছে। বাগানের এমন অবস্থায় ছেলেরা বুঝতে পারলো তাদের পিতার পথ অনুস্মরণ করতে হবে।
এবার তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারলো। সবাই আল্লাহ কাছে তাওবা করল। কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না মর্মে প্রতিজ্ঞা করলো। আল্লাহর কাছে কাঁন্নাকাটি করতে লাগলো। তাদের এমন কাকুতি ও তাওবার ফলে আল্লাহ তাআলা ঐ ছেলেদের প্রতি রহম হলেন। ভাইদের সম্মিলিত তাওবাহ কবুল করে নিলেন। পরের বছর থেকে পূর্বের ন্যায় আবারো ফল-ফসলে ভরে উঠলো বাগান। বাগান ভরা ফল; আহ কী সুন্দর দৃশ্য।
পবিত্র কুরআনের সূরায়ে ক্বলমে বর্ণিত একটি ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে গল্পটি থেকে আমরা কী শিখলাম?

লেখক: সম্পাদক দূরবীন।

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি

মুয়াজ বিন এনাম কালেমা না জানলে কেহ মুমিন হতে পারবেনা মানলে তবে কূ-মন্ত্রনার সমনে কভূ ...