মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:২২
Home / অনুসন্ধান / প্রশ্নপত্র ফাঁস সমাচার, বেফাক ও হাইয়ার দ্বায়!

প্রশ্নপত্র ফাঁস সমাচার, বেফাক ও হাইয়ার দ্বায়!

খতিব তাজুল ইসলাম:
কলামের শুরু এবং শেষ নিয়ে বেশ বিব্রতে আছি। পুরাটাই আগুছালো অবস্থা। স্বকীয়তার নামে ব্যক্তিগত স্বার্থের সুরক্ষাই দেখছি এখানে মুখ্য। নাড়া যাবেনা বদলানো যাবেনা কমানো যাবেনা বাড়ানো যাবেনা এইযে মুর্খতার জয়গান আমাদের। এসব আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাহলে? প্রথম ছিলো স্বীকৃতি চাইনা। যখন শিক্ষার্থীরা চাইলো তখন অভিভবকগণ দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানার আদলে চাইলেন। বস্তুত উসুলে হাশতেগানার কোথাও লেখা নেই যে সরকারি স্বীকৃতি নেয়া যাবে। যারা দেওবন্দের উসুলে হাশতেগানার ভিত্তিতে স্বীকৃতি চাইছেন বা নিয়েছেন তারা উসুলে হাশতেগানার কবর রচনা করেই নিয়েছেন। এই অনুভুতিটুকুও তাদের নেই। ’নিজে যে জানেনা, এই না জানাটাও সে বুঝেনা’ এমনসব আনক্বা মেধা নিয়ে আমাদের পথচলা। যেভাবেই হোক হাইয়াতুল উলইয়া নামে একটি নবজাতকের জন্ম হয়েছে। অনেক জুড়াতালি দিয়ে দাঁড় কারানো এই বোর্ড নিয়ে প্রথম থেকেই আমাদের সংশয় ছিলো। কারণ যারা এখনো প্রাইমারি বিভাগের উপযোগি একটা ঐক্যবদ্ধ সমন্বিত সিলেবাস করতে ব্যর্থ সেখানে দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্স সমমানের একটা বিভাগকে নিয়ে সফলতার মুখ দেখাবেন তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না।
১৯৮৯ এর কথা। মিশকাত শরিফের পরীক্ষা চলছে। তখন খবর পেলাম সিলেট শহরতলির এক মাদরাসার মুহতামিম সাহেব স্বপ্নে যা দেখেন তা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হুবহু চলে আসে। প্রতি ফজরে দাওরার ছাত্রদের ডেকে সালাম ও দোয়া শেষে স্বপ্নে দেখা মাকাম গুলো বলে দিতেন। পরের দিন থেকে আগুনের মতো তার স্বপ্নগুলো চাউর হতে লাগলো। স্বপ্নগুলো চুপে চুপে বিক্রি হচ্ছিল বেশ চড়া মূল্যে। আমারা যেহেতু মিশকাতের পরীক্ষার্থী তাই স্বপ্ন গুলো কাজে লাগছেনা। পরের বছর স্বপ্নগুলো ঠিকই আবার চাউর হলো কিন্তু নগদ অর্থের বিনিময়ে ক্রয় ক্ষমতা আমার ছিলনা। চোখের সামনে এমন অরাজকতা আর স্বপ্ন বুজুর্গীর নামে ভন্ডামি সহ্য করে যাচ্ছিলাম। আজ তিনদশক পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর যখন চাউর হতে লাগলো তখন অনেকে স্বীকৃতির উপর রাগ ঝাড়ছেন। বলছেন এই স্বীকৃতির কারণেই আজ কওমির কপালে কলংক লেপন করা হয়েছে বিষয়টা শুধু ভুল নয় একটা ঢাহা মিথ্যা ও হাস্যকর বিষয়। প্রতিবছরই আমাদের কানে এসব বাজে। কিন্তু ঘরের বদনাম বলে চেপে গেছি। কিন্তু আজকে বেফাক ও হাইয়া বৈঠক ডেকে পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে, কেন? কারণ বেফাক ও হাইয়া ভুলেগেছে যে তারা তাদের সতীন তৈরি করে রেখেছে সে কথা। সা’দ পন্থীদের পরীক্ষা আটকিয়ে বেফাক ও হাইয়া যেমন বাজে উদাহরণ পেশ করেছে তেমনি ওরাও ভাল একটা প্রতিশোধ নিল।
যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসকে স্বীকৃতির সাথে মিলিয়ে দেখছেন তারা হয় অন্ধ না হয় বোকা। স্বীকৃতির সাথে ওসবের সম্পর্ক নেই। মুলকথা হলো বেফাক মানেই হাইয়া, হাইয়া মানেই বেফাক। টাকার বিনিময়ে বেফাক পরীক্ষার রিজাল্ট পরিবর্তন করে দেয়। যাইয়িদকে মুমতাজ বানানোর জন্য হাজার বিশেক গুনলেই হয়। অদক্ষতা মুর্খতা হিংসা ব্যক্তিস্বার্থ রাজনীতি কুটিলতা সবমিলিয়ে বেফাক হাইয়া এখন মানবিক সাকরাতে আছে। বেফাকের অফিসিয়াল কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। তাদের অসাধুতার বিষয়ে ধরা পড়ার পরও নীরব। বেফাক কিছু নেগরান পাঠায় যাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। যুগ বদলেছে সিস্টেম আপডেট করতে হয়। তারা গাধার পিঠে সওয়ার হওয়ার জামানার মত কাজ করছেন।
হাইয়া হলো অথচ তাদের অফিসারদের নিয়ে কোন কর্মশালা করতে দেখিনি। সবকিছুর একটা মানদন্ড থাকে। প্রশ্নপত্র যারা উঠাবেন তারা কারা কারা হবেন? প্রশ্নের ধরন কেমন হবে? আগের স্টাইল বা ধারা পরিবর্তন করে এসাইনমেন্ট ভিত্তিক হলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুকি থাকেনা। ফাঁস হলেও মার্ক নিতে হবে উপস্থিত লিখে। সিহাহ সিত্তার পাঠদান পদ্ধতিতেও আনা দরকার পরিবর্তন। গতবাধা নিয়মের বোঝা টেনে গাধার পিঠে বইর বস্তা রাখার সংস্কৃতি আর কত?
আমাদের পরিচিত অনেকে হায় হায় বলে আফসোস জাহির করছেন। বলছেন কওমির আর কিছু থাকলনা। বস্তুত তারা তাদের ভালবাসা থেকেই বলছেন। তবে আসল কথা হলো এই কলংক লজ্জা অনৈতিকতা বহু আগের কামাই। আগে মিডিয়ায় আসতোনা এখন এসেছে পার্থক্য এখানেই।
সা’দ পন্থীরা মামলা টুকে এটা একটা ভাল কাজ করেছে। বেফাক আর হাইয়া ভাবছিল তারা সকল আইনের উর্ধে। মামলা খাওয়ার পর নাকে খত দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের তাগিদ দিচ্ছিল। অথচ আগথেকে আমরা বলে আসছিলাম যে শিক্ষাবোর্ড নিয়ে পলিটিক্স করবেন না। কে কোন পন্থী তা দেখার বিষয় নয়। একজন হিন্দু বা খৃষ্টান শিক্ষার্থী যদি হাইয়া বা বেফাকের বোর্ডে পরীক্ষা দিতে চায় কর্তৃপক্ষ কি তাকে আটকাতে পারবে? এই সাধারণ মানবিক জ্ঞান যাদের নেই তারা উম্মাহর কি কল্যান করবেন প্রশ্ন থেকেই যায়। এই মামলার কার্যকারিতা দেখে আমিও একটি মামলার কথা ভাবছি। ভাবছি বহু আগ থেকে। এখন সাহস পেয়েছি। বারিস্টার সুমনের সাথে মুলাকাত করে আরো বিস্তারিত জেনে নিব। পৃথিবীর সকল দেশে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি শিক্ষা হয় একমুখী ও সমন্বয়সাধিত। রাষ্ট্রীয় শিক্ষার সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য থাকে বাধ্যবাদকতা। বাধ্যতামুলক সকল প্রজন্মকে একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়, আর তা হলো প্রবেশিকা বা মেট্রিক। যাকে আমরা জিসিএসি বা এসএসসি বলি। আমাদের স্কুল ও আলিয়ার সিলেবাসে প্রাইমারি ও ১০মের একটা সমমান আছে। অথচ হাজার হাজার কওমি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মাদরাসার সাথে এই দুয়ের কোন মিল নেই। যে কারণে হাজার হজার শিক্ষার্থী অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত একটি ভুলের কারণে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় আর যেতে পারেনা। প্রশ্ন হলো কেন তাকে এখানে আটকিয়ে রাখা হবে? বিলেতে ইউরোপ আমেরিকায় বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় নিজস্ব আয়োজনে জিসিএসি বাধ্যতা মূলক। জিসিএসির বিভিন্ন ধরন আছে। ১২টি সাবজেক্ট থেকে নুন্যতম ৬টি। আমরা না হয় নুন্যতম ৬টিই ফলো করলাম। কিন্তু তা না করে শিক্ষার্থীদের জীবনকে এভাবে আটকে রাখা অমানবিক ও অদূরদর্শিতার নামান্তর বলে মনেকরি। তাই এই আটকিয়ে রাখাকে কেন অবৈধা ঘোষণা করা হবেনা? এবং কেন সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে একশনে যাবেনা? এবং কওমি মাদরাসায় প্রাইমারি ও সেকেন্ডারিকে এসএসসির সমমানের জন্য কেন বাধ্যকরা হবেনা? এসব জানতে একটি রিট হাই কোর্টে অচিরেই করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ কিভাবে সম্ভব এবং অফিসিয়াল ইন্তেজামিয়া নিয়ে আরেকদিন লিখবো বলে আজকে এখানেই রাখছি।
তাজুল ইসলাম
১৩ এপ্রিল ২০১৯ লন্ডন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...