শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৩০
Home / খোলা জানালা / ‘সৌদির নতুন জাগরণ প্রয়োজন ছিল- যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সেটা করেছেন’ : উবায়দুর রহমান নদভী

‘সৌদির নতুন জাগরণ প্রয়োজন ছিল- যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সেটা করেছেন’ : উবায়দুর রহমান নদভী

সৌদি আরবের যুবরাজ ও আগামীর বাদশা মুহাম্মদ বিন সালমান দেশ পরিচালনায় উদারনীতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, স্টেডিয়ামে খেলা দেখাসহ অাধুনিক অনেক বিষয় বাস্তাবায়নে কাজ চলছে।

এ লক্ষে যুবরাজ মুহাম্মদ ভিশন ৩০ নামের প্রকল্পও হাতে নিয়েছেন। গণমাধ্যমে এসব প্রকাশের পর আলোচনা চলছে সর্বত্র। কেউ সহনীয় মনোভাব কেউ বা তীর্যক ভাষায় সমালোচনা করছেন এসব পদক্ষেপের।

বাংলাদেশের আলেমগণ কিভাবে দেখছেন তার ভিশন ২০৩০ কে। এসব- এ বিষয়ে কওমিভিত্তিক একটি  অনলাইন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিল বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, শিক্ষাবিদ আলেম ও সাংবাদিক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর। যেখানে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন সবগুলো বিষয়ের।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।

আওয়ার ইসলাম: সৌদি আরব ভৌগলিকভাবে একটি রাষ্ট্র হলেও ২০০’শ কোটি মুসলমানের কাছে এটা শুধু একটি রাষ্ট্র নয় বরং ভালবাসা ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি যুবরাজ রাষ্ট্র পরিচলানায় যে উদারনীতি গ্রহণ করেছেন তা আপনি কিভাবে দেখছেন?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: এটা সাধারণ একটা জিজ্ঞাসা, প্রতিটি মুসলমানের মনেই; আমরাও অনুভব করেছি বিষয়টা।

আসলে সৌদি আরব যে অবস্থানে আছে, আবেগের দৃষ্টি থেকে এটার একটা পরিচয় আছে, মুসলিম উম্মাহ তাদের যা মনে করেন বা তারা যেই অবস্থানে সে হিসেবে কি তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করছিলেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন।

সৌদি আরবের শাসনের যে ধর্মীয় দিক, বিচার, শরিয়া পরিপালন ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের মনে কোন প্রশ্ন নাই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা শরিয়ার সীমালঙ্ঘন করতেন, এর আগে বহু আগেও এরকম দেখা গেছে।

বিশেষ করে ২০০ কোটি উম্মাহ যেটা আপনি বললেন, তাদের সবাইকে একসাথে রেখে, সবার ভালমন্দ বিবেচনা করে একসূত্রে গাঁথা, সমানভাবে দেখা, এক্ষেত্রে সৌদি কট্টর মোল্লাতন্ত্রের কিছু ত্রুটি ছিল।

এজন্য আমরা উপমহাদেশের আলেমগণ সৌদি আরবের ধর্মতত্বের সাথে একমত পোষণ করতাম না। সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

আর রাষ্ট্র সৌদি আরব তাদের রাষ্ট্রকে সংরক্ষিত রাখা, শাসকদের নিরাপত্তা, তাদের রাজনৈতিক কৌশল, মধ্যপ্রাচ্য নীতি ইত্যাদির আলোকে এসব কিছু করে যাচ্ছে।

বর্তমানে যুবরাজ যেটা করছেন সেটাকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ সৌদির ১ কোটি নাগরিকদের মধ্যে ৭০ ভাগ যুবক যাদের বয়স ৩০ বছর এই বিশাল যুবশক্তি তাদের মধ্যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা নেই বললেই চলে।

তাদের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের সমাজ নিয়ে, দারিদ্র নিয়ে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, নারী অধিকার নিয়ে গবেষণাটা কোথায়? আমি তো লক্ষ করেছি, সৌদি আরবের কিছু সংখ্যক মানুষ সামাজিক কারণেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে, নিজের বাবাকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি।

আইএস, আল-কায়েদার সাথে জড়িয়ে পড়েছে যেগুলো ইসলামের মুলধারা নয়। তরুণ সমাজের বিশাল একটা অংশ অপসংস্কৃতির চেয়েও মারাত্মক নৈতিক এবং চারিত্রিক অপকর্মে যুক্ত। যা আমি আমাদের বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষিতদের মধ্যে দেখি না।

এই যে দৈন্যতা তাদের মাঝে কাজ করছে। এজন্য সৌদির নতুন জাগরণ প্রয়োজন ছিল- যুবরাজ সেটা করেছে।

আওয়ার ইসলাম: তার মানে আপনি সৌদি যুবরাজের ভিশন থার্টি প্রকল্পকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন?

উবায়দুর রহমান খান নদভী:  শুধু ইতিবাচক না বরং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলেও মনে করি। কারণ, সৌদি আরব শুধুমাত্র তেল নির্ভর দেশ। তেল না থাকলে দু’বেলা খাবারও জুটবে না তাদের। তেল ফুরালে মরুভূমিতে যাও, খেজুর খাও আর বকরি চরাও।

এইভাবে তো কোন দেশ চলে না, বর্তমান যুগের চাহিদাও এটা না। তাদের যে ভিশন থার্টি এটার মূল কথাই হলো তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে বাণিজ্যি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা। বিকল্প অর্থনীতির দাঁড় করানো।

মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদি যুবকদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে এবং পৃথিবী নিয়ে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির দিকে এগিয়ে আসার যে চিন্তাটুকু করেছেন এটা খুব জরুরি এ সময়ে। কিন্তু মিডিয়া এগুলোকে এড়িয়ে শুধুমাত্র ভিশনটুকুকে উদারনীতি বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি প্রদান, গান-বাজনা শেখানো ইত্যাদি বিষয়গুলোকে হাইলাইট করছে। আসলেও কি উদার নীতি বলতে সৌদি সরকার নারীদের ঘর থেকে বের করে পশ্চিমা সংস্কৃতি আমদানি করার পথ খুলে দিচ্ছে?

আমার যতদুর জানা, আমি মুসলিম অন্যান্য দেশগুলোর মত সৌদিকেও খুব কাছে থেকে জানি। আমার মনে হয় সৌদির এই জাগরণ, পাশ্চত্য নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার যে পরিকল্পনা, অর্থনীতিকে মজবুত করার যে প্রতিজ্ঞা যুবরাজ করছেন, পশ্চিমাদের এসব ভালো লাগছে না।

এজন্য তারা ওই বিষয়গুলোকে টেনে আনছে যেগুলো অনুসঙ্গ মাত্র, মূল বিষয় না। সম্প্রতি সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে এখানেও তো খারাবি কিছু দেখেছি না।

ইসলামে তো গাড়ি চালানো, ঘোড়া চালানো কোনদিনই নিষেধ করে না। সৌদিতে বিভিন্ন কারণে নারীদের গাড়ি চালানো নিষেধ ছিল, এখন মাত্র অনুমতি দিয়েছে, আহামরি কিছু হয়নি।

আর পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে নারীদের গাড়ি চালানো বৈধ হলে, সৌদি নারীরা পারবে না কেন? আর বিনোদন তো পৃথিবীর সব দেশে আছে।

অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সামাজিক অবক্ষয় সৌদি নাগরিকদের নৈতিক অধ:পতন অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি, অনেকাংশে তাদের ক্ষত আরো গভীর। এসব কিছু চিন্তা করে আমি এই জাগরণ এবং পদক্ষেপ সময়োপযোগী বলে মনে করি।

আওয়ার ইসলাম: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পশ্চিমা সংস্কৃতি আমদানির যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভুয়া বরং তাদের মধ্যে ইসলামি সংস্কৃতি যা কঠোরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল, সেখান থেকে তারা মূল ইসলামে ফিরে আসছে?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: তারা তাদের মনগড়া কিছু মৌলবাদ জাহির করছিল, ইসলামে অবকাশ আছে এমন বিষয়কেও তারা অস্বীকার করছিলো সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামের সহজ ও সাবলীল ধারায় ফিরে এসেছে যেটাকে মধ্যপন্থা বলা হয়। ইসলাম এটারই প্রবক্তা।

আওয়ার ইসলাম: তাহলে, যেখানে কুরআন নাজিল হয়েছে, আল্লাহর রাসুল জন্ম গ্রহণ করেছেন সেখানে কঠোরতা এল কিভাবে? 

উবায়দুর রহমান খান নদভী: আমি এটাকে একটা প্রতিক্রিয়া বলব, কারণ একসময় ইসলামের নামে কুসংস্কার বাড়তে লাগল, মুর্তিপূজা, শিরক, বিদআত শুরু হয়ে গেল তখন তারাও কঠোর পন্থা অবলম্বন করা শুরু করল।

বিশেষ করে সৌদি আরবের বিশাল ভূমি ইসলামের কোন অংশ না। ইসলামের পবিত্রভূমি হলো মক্কা-মদিনা, আল্লাহর রাসুলের সাথে সম্পর্কিত জায়গা সেগুলোর মর্যাদা, হরামাইনের সম্মান, হজের আধ্যাত্মিকতা এটা বজায় রাখুক তারা।

বাকি তাদের সারাদেশে তারা তেল বিক্রি করে অলসতায় ডুবে যাবে, মধ্যযুগের রাজা বাদশাহদের মত আয়েশী জীবন যাপন করবে, তারা নিজেরা একটু চলাচলও করতে পারবে না, খাদেম গোলামদের মত থাকবে। নতুন যুবরাজের কাছে এটা ঠিক মনে হচ্ছে না।

আমি মুহাম্মদ বিন সালমানের কথা শুনেছি, তার লেখা পড়েছি। আমি এসব চিন্তাই পেয়েছি তার কথাবার্তা ও লেখায়। সুতরাং, প্রাথমিক দৃষ্টিতে পশ্চিমাদের উত্থাপিত বিষয়ে হাহাকার করার প্রয়োজন নেই, যে পরিবর্তন হচ্ছে তা ইসলামের মধ্য থেকেই হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন সৌদি আরব অনেকটা প্রতিক্রিয়াশীল জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে মূল ইসলামের দিকে ফিরছে?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: হ্যাঁ, এটাতে অস্থিরতার কিছু নেই। ইসলামকে নিয়ে সারা পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান যে যাত্রা, সভ্যতার যে যাত্রা, তারুণ্যের যে যাত্রা এটার সঙ্গে ইসলাম পিছিয়ে নয়। এটা বোঝার জন্য এই পরিবর্তন খুবই জরুরি ছিল।

এই রুদ্ধদ্বার খোলায় আমি নতুন যুবরাজকে স্বাগত জানাই। তবে, আমি বলবো দেখে শুনে, চিন্তা করে এগোতে হবে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি হয়তো জেনেছেন, সৌদি আরবে সাম্প্রতিক আরবের বেশকিছু প্রতিনিধিত্বশীল আলেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা সৌদিসহ মুসলিম বিশ্বের জন্য কতটা সুখকর?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: সৌদি আরবের যে প্রায় ৯০ বছরের ইতিহাস, এখানে অধিকাংশ সময় বিরোধী মতের লোকদের দমন করার বিষয়টা লক্ষ করা যায়, এটা রাজতন্ত্রের দোষ।

এক্ষেত্রে তাদের নীতির বিরোধী, রাজনৈতিক কৈাশলের বিরোধী, কোন ভুল চুক্তির বিরোধী এসব বিষয় নিয়ে যারা কথা বলেছে তাদের আটকে রাখা, গুম করে ফেলা এটা তাদের ট্রাডিশন।

অনেক ক্ষেত্রে শরিয়া অনুযায়ী এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আমরা এখানে নিশ্চুপ। তবে, অনেকক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির ছিল। যেসব ইমাম আলেমদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এটা অনেকাংশে তাদের রাজনৈতিক বিষয়, ইসলামের কোন অংশ না।

তারা যদি ভুল করে থাকে তবে তারা জবাব দেবে। এভাবে চললে তারা অর্থনৈতিকভাবে এগোনোর যে পরিকল্পনা করেছে সেটা সফল হবে না। জনগণকে উদারভাবে, স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে। যেটা ইসলমের রীতি।

ইসলামের মহান খলিফার ব্যাপারে যদি প্রশ্ন তুলতে পারে, তাহলে বাদশাহর বিরুদ্ধে কেন কথা বলতে পারবে না। তাহলে তিনি ইসলামি শাসক নন, রাজতন্ত্রের বাদশাহ, একজন সৈরশাসক। এটা আমাদের বলতেই হবে।

আমরা সৌদি আরব নিয়ে বুক ফুলিয়ে কিছু বলতে পারি না। জবাবদিহি করতে করতে আমাদের দিন শেষ হয়ে যায়, আমার গর্ব করবো কোন সময়।

আওয়ার ইসলাম: সামান্য বিষয় নিয়ে আলেমদের যে নির্যাতন করা হচ্ছে, বাকস্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠছে এ বিষয়ে কি আপনি কিছুই বলবেন না?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: এটাই তো আমি বলতে চাই, যে সংস্কার শুরু হয়েছে ইসলামের বাকস্বাধীনতা ফিরে আসুক। অর্থনীতির সংস্কার হোক, তারুণ্যের উজ্জীবন হোক, রাজতন্ত্রের দমন-পীড়ন কমে যাক, ইসলাম প্রদত্ত নারীদের অধিকার তারা ফিরে পাক।

সৌদি আরবে আপনি দেখবেন, নারীদের বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে বংশ, সৌদি নাগরিক, মোটা অংকের দেনমোহরের বিবেচনা করা হয়। যে কারণে, লক্ষ লক্ষ মেয়ে স্বামীর সংসার না করেই জীবন পার করে দিচ্ছে। এটা তো ইসলাম না।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ইসলামি স্কলারদের নিয়ে বসা উচিৎ, শরিয়া কি বলে তা অনুসরণ করা উচিৎ।

আমরা বলতে চাই, সৌদি আরবের এই বিশাল ভূমিতে মাত্র এক কোটি মানুষ কেন? তাদের সঙ্গে আরো এক কোটি মানুষ আছেন প্রবাসী। সৌদি আরবে তো নির্দ্বিধায় দশ কোটি মানুষের জায়গা হয়।

তাহলে তারা ব্রিলিয়ান্টদের এই সুযোগ করে দেয় না কেন, বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা সেখানে যাক ল্যাবরেটরি করে গবেষণা করুক।

মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহর সময়ে আমি রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি একটা বড় ইউনিভার্সিটি উদ্বোধন করেছিলেন, সেখানে মুসলিম বিশ্বের সরকার প্রধাননাও উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটা ছিল একটা অসাধারণ চিন্তার।

তিনি বলেছিলেন, আমি চাই না মানুষকে ধবংস করার অস্ত্র পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হোক, আমি চাই খাদ্য, চিকিৎসা, প্রযুক্তির উৎকর্ষ এই তিনটা জিনিস আমাদের দেশে এমন হোক যে মানুষের তাক লেগে যাক।

কৃষি বিপ্লব তিনি শুরু করেছেন। বিজ্ঞান গবেষণা শুরু করেছেন। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নামকরা এক বিজ্ঞানীকে এ কাজে নিযুক্ত করছেন তিনি। জেদ্দার কিছু শহরে বিদেশীদের আসা যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবের যে কঠোর নীতি এর থেকে কিছু অঞ্চলকে মুক্ত করা হয়েছে।একটা মুসলিম রাজ্যেও তো সমস্ত ধর্মের লোক তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে থাকার অধিকার রাখে।

আমাদের জন্য অনেক কিছু নিষেধ হতে পারে তাই বলে তাদের জন্য তো আর নিষেধ না। সৌদিতে কোন দেশের নারী দূত এলে বোরকা পরিয়ে দেওয়া হয়, কোন দেশের রাণী এলেও তাকে বোরকা পরিয়ে দেওয়া হয়। এই যে গোড়ামি এসব থেকে বেরিয়ে না এলে বর্তমান যুগ হিসেবে সৌদি পিছিয়ে থাকবে।

এ জন্য, ইসলামের যে বৈধ নীতিমালা তা সবাইকে দিতে হবে। নতুন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের দর্শন আমার খুব ভাল লাগে। তবে, ইসরাইলের সাথে তার সম্পর্ক, তার নীতিমালা এসব আমাদের কাছে স্পষ্ট না।

কিন্তু বিশ্বের পরাশক্তির সাথে তার কুটনৈতিক সম্পর্ক আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্সে যাওয়া এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার আমি দেখেছি।

উনি বলেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যে কোম্পানিগুলো- আমাজন, আলিবাবা, এ্যাপল, মাইক্রোসফট, এই ৪ কোম্পানিকে কেনার মত বা এমন কোম্পানি তৈরির সাহস এবং পরিকল্পনা নিয়ে আমি এগুচ্ছি। আগামী ৩০ সালের পরে তেল যদি নাও থাকে সৌদি আরব কোমর খাড়া করে যেন দাঁড়িয়ে থাকে।

সিনেমা হলের কথা যে বলা হয়, পৃথিবীর কোন দেশে সিনেমা হল নেই? আর বিনোদন তো মানুষের অন্য পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মতই একটি অধিকার। মানবতা সামাজিক কিছু শেখা এগুলো তো নিষেধ নয়, তাদের নেতৃত্বে সিনেমা হলে, নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে বিশ্বের মানুষের জন্য আশা করার মত কি কিছু থাকবে।

আওয়ার ইসলাম: আমরা আপনার বক্তব্য থেকে যা বুঝতে পেরেছি, যুবরাজের নতুন ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং তারুণ্যের অগ্রযাত্রার মাইলফলক ভাবছেন। আপনার কি মনে হয় না এতে নৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: এতে যদি সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে যদি মোটিভেশনাল স্প্রিট থাকে তবে আমার ধারণা সঠিক। এতে করে নৈতিকতার বিপর্যয় ঘটবে না।

বরং মানুষ যদি অলস হয়, কর্মমুখী না হয়, গবেষণা না থাকে, শ্রম বা অভাববোধ না থাকে তবে মানুষ অধিক সম্পদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়, পথ হারায়। যা কিনা ধর্ম দিয়েও রক্ষা করা যায় না।

আওয়ার ইসলাম: উপমহাদেশের আলেমদের সাথে সৌদি আলেমদের সম্পর্ক খুব কম। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সম্পর্ক না থাকলে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া কী হতে পারে বলে মনে করেন?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: সম্পর্ক রাখার জন্য আমাদের আলেমরা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু তারা হাত বাড়াননি। তাদের যতটুকু সম্পর্ক আছে তা বিভিন্ন বিতর্কিত দল সংগঠনের সাথে। যার মাধ্যমে লাভের তুলনায় ক্ষতিই হয়েছে বেশি।

আমি আশা করছি, আবেদন জানাচ্ছি, নতুন এই সংস্কারের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানদের সাথে তারা সুম্পর্ক গড়ে তুলবে। আমাদের যদি কোন ভুলত্রুটি থাকে তারা আমাদের সাথে বসুক আলোচনা হোক এতে করে সমস্যার সমাধান হবে।

এটা তাদের দয়িত্ব, তাদেরই পথ খুলতে হবে। তারা যদি বলে থাকেন, আমরা যা বলবো তাই হবে, তাহলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। আর আলেম সমাজ মেনেও নেবে না।

কারণ, ইসলাম মক্কা মদিনায় জন্মগ্রহণ করেছে ঠিকই, কিন্তু মুমিনদের জন্য মক্কা মদিনার মাটি শর্ত না। আমরা সবসময় আন্তরিক।

আওয়ার ইসলাম: এই সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আপনার কোন পরামর্শ আছে কি?

উবায়দুর রহমান খান নদভী: উনারা তো মক্কা মদিনার খাদেম সে পবিত্রভূমির অংশিদার আমরাও। তাদের কষ্ট দুঃখেরও আমরা ভাগি। সম্পদেরও কিছু হক আমাদের আছে।

আপনি চিন্তা করে দেখেন, বিগদ ১০০ বছরের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের প্রতি তাদের সহায়তার পরিমাণ আর খ্রিস্টান-ইহুদিদের সহায়তার পরিমাণ দেখেন। আমাদের মুসলিম বিশ্বকে দেওয়ার পরিমাণ দেখেন, আর ওদেরে ব্যক্তিগত উপহার দেওয়ার পরিমাণটা মেলান।

আমাদের দেশের মসজিদ-মাদরাসা, এনজিও, নারী উন্নয়ন এসব খাতে বিনিয়োগ দেখেন আর তাদের অস্ত্র কেনার পরিমাণ দেখেন। এজন্য আমি সৌদি সরকারকে বলি, তাদের অবস্থান অনুযায়ী নিজের দেশের উন্নয়ন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার পাশাপাশি উম্মাহর জন্য আরো বেশি দরদি হতে হবে।

আমি তো ধর্মপ্রচারটাও দেখি, তারা মসজিদ মাদরাসা অনেক করেছেন। কিন্তু এইগুলোই তো আর একজন মুসলিমের জন্য প্রয়োজনীয় না এর সাথে আরো অনেক কিছুই আছে। আমরা বলি না যে, আমাদের দান করে দেন, অংশ দিয়ে দেন।

তারা পশ্চিমাদের দেশের বিনিয়োগ খাতটা মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে করুক। বিনিয়োগের দ্বারা অবকাঠামো তৈরি করা, দারিদ্রমুক্ত করা। আমাদের গার্মেন্টসখাতে সৌদি আরবের কোন বিনিয়োগ নেই, না আছে চামড়া খাতে।

বাংলাদেশ হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এদেশের সমস্ত বিনিয়োগে তাদের হক ছিল কিন্তু তারা করেনি। আমি আশা করি, নতুন যুবরাজ এসব নিয়ে ভাববে।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদেরও ধন্যবাদ।

-আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...