বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:৫৫
Home / পরামর্শ / প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সার্বিক পরিকল্পনা

প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সার্বিক পরিকল্পনা

মাদরাসাতুন নূর আল-ইসলামিয়া

লন্ডন এ প্রদত্ত পরিকল্পনা। আংশিক পরিমার্জিত সংযোজিত।
তারিখঃ ২২ অক্টোবর ২০১৭ রোববার, সকাল ১০টা।

 

 

 

 

শিক্ষা ও ছাত্রঃ
শিক্ষার উদ্দেশ্য ছাত্রদের যোগ্য করে গড়ে তুলা। আর যোগ্য হওয়ার রূপ তিনটি।
ক- ব্যবহারিক যোগ্যতা, যেমন পড়তে পারা লিখতে পারা আর বলতে পারা।
খ- যোগ্যতাকে কাজে লাগানো। যেমন নিজে আমল করা, অন্যের কাছে সঠিক উপস্থাপন করার যোগ্যতা অর্জন। আর সঠিক উপস্থাপনের বিভিন্ন চরিত্র আছে। বুদ্ধিবৃত্তিক বক্তৃতা, শিল্প ও আর্ট, নাটক ড্রামা ইত্যাদির মাধ্যমে।
গ- ডিজিটাল রিসোর্সের মাধ্যমে উপস্থাপনা।
উপকরন ও আয়োজনঃ
– উন্নত ও এফেক্টিভ যোগোপযোগী সিলেবাস।
– একাডেমিক কেলেন্ডার।
– শিক্ষা উপকরন।
– পাঠদানের টার্গেট।
– নিয়মিত মনিটরিং।
মনিটরিং সাধারণত তিন ভাবে হয়ঃ
– শিক্ষক গণের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে।
– প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষাসচিবের পর্যবেক্ষণ।
– অভিভাবকগণের মতামাত যাচাইর মাধ্যমে।
ক্লাস ও নিয়ম শৃংখলাঃ
– একটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ।
– ছাত্র/ছাত্রীদের ইউনিফর্ম সহ ইসলামী আখলাক্ব তাহজিব ও তামাদ্দুনে আগ্রহী করে গড়ে তুলা।
– ব্যবহারিক জীবনে ইসলামিক মেনারের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালানো।
– ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের নির্ধারীত নীতিমালা অবহিত করা ও পালনে সহযোগিতা অব্যাবহত রাখা।
– সময় মত ক্লাসে উপস্থিত, পাঠদানে মনোযোগী সহ সকল প্রগ্রেস রিপোর্ট রেকর্ড রাখতে হবে।
– প্রয়োজনে শিক্ষকগণ প্রধান শিক্ষক ও কর্তপক্ষের সহযোগিতা গ্রহন করবেন।
পরীক্ষা গ্রহনঃ
পরীক্ষা গ্রহনই একমাত্র মেধা যাচাইয়ের উপায় এই ধারণা বিলুপ্ত হওয়া প্রয়োজন। তুতা পাখির শিক্ষা দিয়ে সুসভ্য জাতি মেধাবী মানস গড়া দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই অনুকরণীয় পাঠদানই সমস্যার সমাধান।
– ক্লাসের পড়া ক্লাসে শিখাতে হবে।
– কোন নোটের সহযোগিতা নেয়া যাবেনা।
– যে ভাষায় যে পাঠদান হবে সে ভাষায়ই পাঠ শিখা ও শিখানো।
– ৫ম শ্রেণীতেই কেবল পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। উপরের শ্রেণীতে পর্যায় ক্রমে। শিশু শ্রেণী থেকে ৪র্থ ক্লাস পর্যন্ত সাধারণ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
– তবে যা হবে তা হলো এসেসমেন্ট ভিত্তিতে যাচাই বাচাই। যারা দুর্বল তাদের অতিরিক্ত সময় ও সাপোর্ট দেয়া।
– গতানোগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিত্যনতুন পন্থা অনুসরণ করুন।
পুরস্কৃত করণঃ
আমরা ভাবি যারা শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে কেবল তাদেরই পুরস্কৃত করণ। না, এই ধারার পরিবর্তন করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহে তাদের সাফল্যকে ধরে রাখতে এবং উৎসাহ প্রদান করতে শিক্ষার্থীদের পুস্কৃত করা প্রয়োজন।
– ভাল আচরণের জন্য গুড বিহেবিয়ার সার্টিফিকেট।
– লেসন বা সবক পুরা করলে উৎসাহ মূলক স্টিকার প্রদান।
– স্টার অফদা উইক সপ্তাহের সেরা এমন পদবী দেয়া।
– শিক্ষা উপকরণ সহ বিভিন্ন সাফল্যের জন্য বিভিন্ন প্রকারের সনদ পত্র দিবেন।
শিক্ষক মন্ডলীঃ
শিক্ষক হলেন প্রতিষ্ঠানের মূল প্রাণ। একজন শিক্ষক একটা ন্যাশনকে পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। তাই শিক্ষক কে সব সময় পাঠদান ও প্রডাকশনের ব্যাপারে পুর্ণ অভিজ্ঞতা ও সজাগ থাকতে হবে।
শিক্ষক সচেতনতা:
– প্রতিষ্ঠানের নির্ধারীত নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত ও ফলো করে চলতে হবে।
– ক্লাস শুরুর ১০ মিনিট আগে এসে বইয়ে স্বাক্ষর করে পাঠদানের পূর্ণ প্রস্তুতি থাকতে হবে।
– ক্লাসের শৃংখলা সৌন্দর্য্যরে জন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। ছাত্রদের এলোমেলো চলাফেরা বা জোরে শব্দ করা থেকে বিরত রাখা। ক্লাস বিরতির সময়ও যেন তাদের চলাফেরায় ভদ্রতা বজায় থাকে সে কথা শিখিয়ে দিতে হবে।
– ছুটির সময় ছোটদের আগে বড়দের পরে এভাবে ধারাবাহিক শান্তভাবে উঠানামা করা ও বাহিরে যাওয়ার কথা বুঝিয়ে দিতে হবে।
– সপ্তাহিক কন্ফারেন্স বা এসেম্বলির সময় ছাত্র/ছাত্রীদের আলাদা করে দুই সাইটে বসাতে হবে। মিক্স করে নয়। ছোটরা আগে তারপর বড়দের লাইন সোজা করে বাসানো উচিত।
– ক্লাস শুরু করতে হবে তাউজ তাসমিয়া ও মাসনুন দোয়ার মাধ্যমে।
– বছরে কমপক্ষে দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন থাকা আবশ্যক।
প্রজেক্ট ও টপিক পরিকল্পনাঃ
ছাত্র/ছাত্রীদের মেধা বিকাশে তা খুব জরুরি। বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সাবজেক্ট চয়ন করে সেই বিষয়ের উপর প্রজেক্ট তৈরী করা।
প্রজেক্টের ৩টি স্তর:
– বিগিনার/ প্রাথমিক।
– ইন্টারমিডিয়েট/মাধ্যমিক।
– এডভান্স/অগ্রগামী।
প্রজেক্ট প্রয়োগ:
– প্রতিটি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
– প্রতিটি প্রজেক্টের লিখিত ডকুমেন্ট আগে তৈরি করে অফিসে জমা দিতে হবে।
– যে কোন প্রজেক্ট পরিবেশনের আগে পুর্ব প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ রিহার্সেল থাকতে হবে।
– প্রজেক্টের টার্গেট থাকবে। ওভার বছর কতটি হবে? প্রয়োজনে ভিডিও রেকর্ড করে পরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন।
– ছাত্র/ছাত্রীদের মেধা বিকাশে ক্লাস কেপ্টেন প্রতিনিধি নির্ধারীত করতে হবে।
– প্রতি সপ্তাহে নিউজ লেটার প্রকাশের পরিকল্পনা নিতে হবে। ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ হতে লেখা সংগ্রহ করে তা প্রিন্ট করে বন্টনের আয়োজন।
– পুরো বছরের লিখিত পরিকল্পনা প্রজেক্ট দায়ীত্বশীলকে জমা দিতে হবে। তার আগে কতটি টপিক বা প্রজেক্ট হবে তার সংখ্যা? কে কে কোন কোন বিষয়ে তৈরি করবেন তা লিখিত ভাবে তাদের জানিয়ে দিতে হবে।
লাইব্রেরিঃ
লাইব্রেরি হলো একটি প্রতিষ্ঠানে দর্পন। সিলেবাস বই সংরক্ষণের পাশাপাশি নিজস্ব বইয়ের সংগ্রহশালা থাকতে হবে। যাতে প্রতি সপ্তাহে ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষামূলক বই ঘরে নিয়ে পড়ার জন্য অভ্যাস গড়ে তুলা। তাই পর্যাপ্ত কাহিনী ও শিক্ষালমূলক বই সংগ্রহে থাকতে হবে। লাইব্রেরি দায়িত্বশীল শিক্ষক থাকবেন। বইর তালিকা ও আদান প্রদানের রেকর্ড রাখবেন।
অভিভাবকঃ
অভিভাবকগণ হলেন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপুর্ণ একটি অংগ। অভিভাবক সচেতনতা সৃষ্টি একটি জরুরি কাজ।
– বছরে কমপক্ষে তিনটি অভিভাবক সভা চাই।
– অভিভাবক সভায় কি কি আলোচনা হবে তা আগে থেকে প্রস্তুতি থাকতে হবে।
– লেখাপড়ায় শিশুদের কিভাবে সাহায্য করবেন তার কিছু রূপরেখা দিতে হবে।
– বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করা।
– অভিভাবক প্রশিক্ষণের আয়োজন।
– তাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– প্রজেক্টারের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।
প্রধান শিক্ষক, শিক্ষাসচিবঃ
– উপরে বর্ণিত সকল বিষয়ে প্রধানশিক্ষক বা নাজিমে তালিমাত বা শিক্ষাসচিবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা থাকতে হবে।
– উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করতে হবে।
– যে কোন প্লান প্রগ্রাম বাস্তবায়নের আগে কর্তৃপক্ষের যথাযত লিখিত অনুমোদন জরুরি।
– শিক্ষার মান উন্নয়নে সব সময় আলোচনা পর্যালোচনা জারি রাখতে হবে। নিয়মিত সিলেবাসের পুর্ণমুল্যায়ন করতে হবে।
– প্রতিটি কাজ সময় মত সম্পন্ন করা, ডকুমেন্ট তৈরি, রিপোর্ট পেশ সহ প্রয়োজনীয় বিষয়ের জিম্মাদার থাকবেন।
– বছর শেষে বাৎসিরক শিক্ষা রিপোর্ট লিখিত ভাবে পেশ করতে হবে।
– বাৎসরিক প্রগ্রামের আগাম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
– শিক্ষার্থীর একটা স্তর শেষ হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সনদপত্র প্রদান করতে হবে।
আর্থিক বিষয়ঃ
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সাধারণত অভিভাবকগণের আর্থিক যোগান থাকে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে দান খয়রাত গ্রহন করা হয়। অতএব আর্থিক ব্যাপারটা যেভাবেই চলুক সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজন:
– স্বচ্ছতা প্রদর্শন। স্টাফ সহ পরিচালনা পরিষদের সকলের জানান থাকতে হবে। কোন প্রকার অস্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠানের ধংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
– ছোট প্রতিষ্ঠান হলে একজন শিক্ষকের দায়িত্বে দেয়া যেতে পারে। বড় হলে আলাদা হিসাব রক্ষক থাকবেন।
– কেশ লেনদেন কোন ক্রমেই নিরাপদ নয়। স্বচ্ছতা ও থাকেনা। তাই ব্যাংক একাউন্ট খোলে তাবৎ আয় একাউন্টে জমা রাখতে হবে। প্রয়োজন মোতাবিক ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তলন হবে।
– ব্যাংকে একাউন্ট খোলা সম্ভব না হলে কিংবা কেশ অপশন একমাত্র থাকলে রেগুলার হিসাব নিকাষে স্বচ্ছতা রাখলে সমস্যা থাকবে না আশাকরি।
– কোন ক্রমেই লেনদেনে প্রধান শিক্ষক কিংবা নাজিমে তালিমাত শিক্ষাসচিব এমন কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবেনা।
– পরিচালক বা কর্তৃপক্ষ নিজের পকেট কে একাউন্ট মনে করে অর্থ জমা রাখবেন না। বরং সোজ অর্থ বিভাগে জমা দিবেন।
– প্রতি মাসের হিসাব বা আয় ব্যায়ের চিত্র তুলে ধরে প্রিন্ট কপি হেড অফিসে জমা দিতে হবে।
– মাসিক বেতনসিট তৈরি করে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করবেন।
– দান খয়রাতে পীর ফকীর এভাবে বিবেচনা না করে প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা দিবেন। অথবা প্রপার রিসিট গ্রহন করবেন।
– ইসরাফ খরচ থেকে বাঁচতে হবে।
– যে কোন নির্মাণ কাজ বা ক্রয় বিক্রয়ে মশওয়ারা অত্যাবশকীয়।
প্রধান পরিচালক/পরিচালক/মুহতামিমঃ
– এডুকেশনাল অবজারভেশন/ শিক্ষা বিভাগের সার্বিক খোঁজ খবর নেয়া।
– ফুলফিল ফাইনেন্সিয়াল ডিমান্ড/ আর্থিক বিভাগের দাবী পুরণ।
– ইন্সটিটিওশনাল মেন্টেনেন্স। গোটা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক তাদারকি।
– প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ক্যাম্পাস রুম টয়লেট এগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও যতœ নিবেন।
– আইনের উর্ধে কেউ নন। সকলকে নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। তাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কখনো আইন ভঙ্গ করতে পারবেন না।

পরিচালনা ও পরিকল্পনায়:

খতিব তাজুল ইসলাম

প্রিন্সিপ্যাল: মাদরাসতুন নূর আল-ইসলামিয়া, লন্ডন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...