বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:০১
Home / জীবন জিজ্ঞাসা / যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামি শিক্ষা যেভাবে সাহায্য করে

যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামি শিক্ষা যেভাবে সাহায্য করে

কাসিম রশিদ: মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টাইনের যৌন নির্যাতনের গোপন তথ্যসমূহ যদি আপনাকে বিস্মিত করে, তাহলে আপনি সত্যিকার অর্থে ভয়াবহরূপে অজ্ঞ।

গবেষণা সংস্থা ‘রেইন’ এর তথ্যানুয়ায়ী, প্রতি ৪৮ সেকেন্ডে একজন আমেরিকান লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকে। প্রতি ছয়জন নারীর মধ্যে একজন নারীকে তার জীবদ্দশায় ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় এবং ৯০ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয় নারীরা।

আমি একজন মুসলিম এবং নাগরিক অধিকার আইনজীবী। একই সঙ্গে নারীর অধিকারের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে থাকি। যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আমার ওকালতি কেবল আইন দ্বারা নয়, বরং ইসলামি শিক্ষার বিস্তারিত কৌশল এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উদাহরণের মাধ্যমে জ্ঞাত করানো হয়।

হ্যাঁ, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকাতে আমরা নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের যে ক্যান্সার দেখি, তা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও রাষ্ট্রীয় নাস্তিক্যবাদী দেশ চীনেও একই রকমভাবে প্রচলিত।

এটা প্রমাণ করে যে যৌন নির্যাতন এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে বিশ্বব্যাপী পুরুষরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।

আসুন দুটি ঘটনা বোঝার মাধ্যমে শুরু করা যাক। প্রথমত, একজন মহিলার বেশভূষা, মদ্যপান, বৈবাহিক অবস্থা এবং শিক্ষার স্তর যৌন নির্যাতনের পিছনে ভূমিকা রাখে না। দ্বিতীয়ত, ভ্যাকুয়ামে বা শূন্যমাধ্যমে যৌন নির্যাতন ঘটবে না। সমাজের প্রতিটি স্তরে – সামাজিক নিয়ম, গণমাধ্যম এবং সরকার-প্রত্যেকেই ধর্ষণ সংস্কৃতির প্রচারে জড়িত।

সামাজিক প্রথা একজন নারীর কথা বলাকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করছে। যৌন নির্যাতনের জন্য শিকারী নারীর পোশাককে অভিযুক্ত করছে; সেখানে নারী শিকারিকে যৌন আবেদনের ইঙ্গিত দিক বা না দিক।

নারীদের ও তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে মিডিয়াও ধর্ষণের সংস্কৃতি প্রসারে ভূমিকা পালন করছে। অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগভান গত কয়েক বছর ধরে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে চিৎকার করলেও কেন উইনস্টাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আমলে নেয়া হয়নি?

হার্ভে উইনস্টাইন, রজার এ্যাসলস, বিল কোসবি, বিল ও’রেইলি এবং এমনকি আমাদের রাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন নারীকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ভূরি ভূরি সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন সমাজ তাদের দিকেই অগ্রসর হয়েছে?

৯৭ শতাংশ ধর্ষক যখন একদিনের জন্য কারাগারের মুখ দেখেননি, সংজ্ঞাহীন কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে বিচারক যখন ধর্ষককে কেবল তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়, ধর্ষকদের পুরস্কৃত করেন, তখন কিভাবে আমরা সরকারে উপর নির্ভর করতে পারি?

আসল সত্য হচ্ছে রাষ্ট্রগুলো তার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। যখন কোনো মানুষ খারাপ আচরণ করে এবং এই আচরণে কখনো কোনো বাধার সমম্মুখীন না হয়, তবে তা সামাজিক অরাজকতায় রূপ নেয়। প্রকৃতপক্ষে, আইনের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন বন্ধ করার প্রত্যাশা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

ফ্রান্সে যৌন হয়রানিকে কঠোর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সেখানে যৌন হয়রানি রুখতে বিভিন্ন আইন থাকা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশ ফরাসি নারীই পাবলিক পরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে।

ইভ টিজিং নিষিদ্ধ করতে ফ্রান্স আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে। এ ধরনের আইন পাস করা হলেও তা ব্যর্থ হবে কারণ রাষ্ট্রীয় আইনসমূহ কেবল একবারের জন্যই অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারে, কিন্তু এটি প্রথম থেকেই অপরাধকে প্রতিরোধ করতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা বা যৌন হয়রানির বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা সত্ত্বেও সারা বিশ্বেই এখন এই দৃশ্য বারবার দেখা যাচ্ছে।

ইসলামিক শিক্ষা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উদাহরণ এমন এক সমাধান প্রদান করে; যা সত্যিকার অর্থে কোনো রাষ্ট্র পারে না। উচ্চ ক্ষমতার দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতাই হচ্ছে সমাধান। যদিও কিছু বামপন্থী ও যারা যৌন নির্যাতনকে সমস্যা মনে করে না, তারা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন না।

কংগ্রেসম্যান টিম মারফি গর্ভপাত এবং নাস্তিকতাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করলেও তিনি এখনো তার পত্নীকে গর্ভপাত করাতে উৎসাহিত করেন। ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ‘জিওপি’ সভাপতি রিক হালভর্সেনকে অজাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তথাকথিত এসব ধর্মীয় ব্যক্তিদের ভণ্ডামির কারণে এটি আংশিকভাবে যুক্তিসঙ্গত যুক্তি।

হ্যাঁ, ইসলাম স্রষ্টাকর্তার প্রতি দায়বদ্ধতার আহ্বান জানায়। অসার মতবাদ তত্ত্ব প্রচারের পরিবর্তে ইসলাম প্রমাণিত ধর্মনিরপেক্ষ মডেলকে নির্ধারণ করে।

পবিত্র কুরআনের চতুর্থ অধ্যায়ের দু’টি আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, নারীদের শরীর পুরুষ বা তাদের পাঁজর থেকে তৈরি করা হয়নি। বরং কুরআন সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে নারী ও পুরুষ উভয়কে একক আত্মা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তারা একই ধরনের ও একই প্রজাতির।

একইভাবে, কুরআনের চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বিতীয় আয়াতের শুরুতেই নারী-পুরুষকে সমান মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ের ২০তম আয়াতে নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে বাধ্য করতে পুরুষকে নিষেধ করা হয়েছে। এটি নারীর কর্তৃত্ব ও আত্মমর্যাদাকে নিশ্চিত করে।

এই আয়াতে নারী সঙ্গীর সঙ্গে সহানুভূতির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পুরুষদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তাদের স্ত্রীদের প্রতি খারাপ আচরণ বা খারাপ চিন্তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও চতুর্থ অধ্যায়ের ৩৫ নং আয়াতে পুরুষদের নিয়ন্ত্রণ আরোপের নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যা নারীদের প্রতি সহিংসতাকে প্রতিরোধ করে এবং একই সঙ্গে নারী সঙ্গীকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআন নারীর প্রতিটি আর্থিক চাহিদা মেটাতে পুরুষকে বাধ্য করেছে। আর্থিক অপব্যবহার রোধে একজন নারীর উপার্জনকে তার নিজের বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

কিছু ধর্মীয় বিষয়ে নির্দেশিকা চাইতে একদা এক অদ্ভূতরকম সুন্দরী মহিলা নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নিকটে আসেন। এসময় আল ফাদল নামে এক সাহাবি ওই নারীর সৌন্দর্যের কারণে তার দিকে তাকালেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) ওই নারীকে তার বেশভূষার জন্য ভৎসনা করেননি, বরং তার পরিবর্তে তিনি তার হাত পিছনের দিকে নিয়ে আল ফাদলের থুতনিতে ধরেন এবং তার মুখকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন যাতে সে তার দিকে না তাকায়।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উদাহরণ এটা প্রদর্শন করে যে নারীর প্রতি সহানুভূতি, শ্রদ্ধা এবং অপব্যবহার বিরোধিতার বোঝা পুরুষের উপর নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, এধরনের যৌন নির্যাতন থামাতে পুরুষের নেতৃত্ব গ্রহণ করা আবশ্যক। সর্বোপরি, কুরআনে নারীদের বিনয়ী পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও ইসলাম নারীদের অন্য যে কোনো পোশাক পরিধান করার জন্য কোন শাস্তিকে সমর্থণ করে না।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট অবলম্বনে, আরটিএনএন থেকে

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

শবে বরাত মানে লাইলাতুন নিস্ফি মিন শা‘বান!

শবে বরাত সম্পর্কে কোনো সহিহ হাদিস নেই? Mohiuddin Kashemi সাহেবের ওয়াল থেকে: অজ্ঞ, নির্বোধ কিংবা ...