শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:৫২
Home / অনুসন্ধান / তারাবীহ’র নামায ২০ রাকাত (১ম পর্ব)

তারাবীহ’র নামায ২০ রাকাত (১ম পর্ব)

মুফতী মাসুম বিন্নুরী::

(প্রথম পর্ব)

‘তারাবীহ’ শব্দটি আরবী শব্দ। এটা تَرْوِيْحَةٌ (তারবীহাতুন) এর বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম নেয়া। তারাবীহ’রনামায অতি দীর্ঘ হওয়ায় প্রতি চার রাকাত পরপর খানিকটাবিশ্রাম নিয়ে আবার চার রাকাত পড়া হয়। এ হিসেবে ২০রাকাত নামাযে পাঁচটি বিশ্রাম হয়। অনেকগুলো বিশ্রামেরসমন্বয় ঘটায় এ নামাযকে তারাবীহ’র নামায বলা হয়।

আর শরীআতের পরিভাষায় রমাযান মাসের রাতের অতিরিক্তনামাযকে তারাবীহ বলা হয়। এ কারণে তারাবীহ’র নামাযকেহাদীসের কিতাবে ‘কিয়ামু শাহরি রমাযান’ বা ‘রমাযানেররাতের নামায’ নামে শিরোনাম দেয়া হয়ে থাকে। আর যেনামায সারা বছর রাতে পড়া হয়ে থাকে সেটাকে তাহাজ্জুদ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৭৯) বা কিয়ামুল লাইল বলা হয়। (সূরামুযযাম্মিল: ২)

রসূলুল্লাহ স.-এর তারাবীহ’র রাকাত

রসূলুল্লাহ স. কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামায সারাবছর পড়তেন। আর কিয়ামু শাহরি রমাযান বা তারাবীহ’রনামায রমাযান মাসে পড়তেন। তবে সহীহ হাদীসের বর্ণনাঅনুযায়ী রসূলুল্লাহ স. মাত্র তিন দিন তারাবীহ’র নামাযজামাআতে পড়েছেন। (বুখারী: ১০৬২, তিরমিজী: ৮০৪) রসূলুল্লাহ স.-এর ব্যক্তিগত রাতের নামায অর্থাৎ, কিয়ামুললাইল-এর রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বিভিন্নবর্ণনা এসেছে। কিন্তু কিয়ামু শাহরি রমাযান অর্থাৎ, তারাবীহ’র নামায যে তিন দিন তিনি জামাআতে আদায়করেছেন ওই তিন দিনের রাকাত সংখ্যা কোন সহীহ হাদীসেবর্ণিত হয়নি। অনেকে রসূলুল্লাহ স.-এর সারা বছর রাতেআদায়কৃত নামায অর্থাৎ, কিয়ামুল লাইল- এর রাকাত সংখ্যাদিয়ে তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা নির্ণয়ে দলীল দেয়ার চেষ্টাকরেছে। অথচ ইনসাফের দাবী অনুযায়ী তা দ্বারা তারাবীহ’ররাকাত সংখ্যা নির্ণয়ে দলীল দেয়া চলে না। কারণ, রসূলুল্লাহস.-এর রাতের নামায অর্থাৎ কিয়ামুল লাইল-এর রাকাতেরপরিমাণের ব্যাপারে বিভিন্ন সংখ্যা বর্ণিত হয়েছে। সুনির্দিষ্টদলীল ব্যতীত এর মধ্য থেকে যে কোন একটিকে তারাবীহ’ররাকাত হিসেবে চিহ্নিত করা কোনক্রমে যথার্থ হবে না। এব্যাপারে একটি বিশ্লেষণ এ আলোচনার শেষে পেশ করা হবেইনশাআল্লাহ।

রসূলুল্লাহ স.-এর তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যার সুনির্দিষ্ট বিবরণকোন সহীহ হাদীসে পাওয়া না যাওয়ার কারণে প্রথমে এব্যাপারে একটি গ্রহণযোগ্য হাদীস পেশ করা হচ্ছে; যদিওসনদের বিবেচনায় হাদীসটি জঈফ।

حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، قَالَ: أَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُثْمَانَ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ مِقْسَمٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ

হাদীস নম্বর-৩০১ : হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. রমাযান মাসে ২০ রাকাত নামায পড়তেন এবংবিতির পড়তেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৭৭৭৪, তবারানীকাবীর: ১২১০২, তবারানী আওসাত: ৭৯৮, আততামহীদ লি-ইবনি আব্দিল বার: ৮/১১৫, আল ইসতিজকার: ২২২ নম্বরহাদীসের আলোচনায়)

হাদীসটির স্তর : জঈফ। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারীইবরাহীম বিন উসমান জঈফ হওয়ার কারণে হাদীসটি জঈফ।আর জঈফ হাদীস মুসলিম উম্মাহ’র বৃহত্তর জনগোষ্ঠিরআমলের অনুকুলে হলে তা দলীল হিসেবে গৃহীত বলেনীতিনির্ধারক ইমামগণ মত দিয়েছেন।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন :

مِنْ جُمْلَةِ صِفَاتِ الْقَبُوْلِ الَّتِي لَمْ يَتَعَرَّضْ لَهَا شَيْخُنَا أنْ يَتَّفِقَ الْعُلَمَاءُ عَلى الْعَمَلِ بِمَدْلُوْلِ حَدِيْثٍ فَإنَّه يُقْبَلُ وَيَجِبُ الْعَمَلُ بِه قَالَ وَقَدَ صَرَّحَ بِذَلِكَ جَمَاعَةٌ مِنْ أئمَةِ الأصُوْلِ

“হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার আরও একটি গুণÑ যা আমাদেরশায়খ বর্ণনা করেননি, তাহলো: উলামায়ে কিরামের উক্তহাদীসের চাহিদা মাফিক আমল করার প্রতি সম্মত হওয়া।তাহলে উক্ত হাদীস গ্রহণ করা হবে এবং সে অনুযায়ী আমলকরা আবশ্যক হবে। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. আরও বলেন: এ নীতির স্বীকৃতি দিয়েছেন হাদীসের নীতিনির্ধারক একদলইমাম। (আন নুকাত আলা ইবনে সালাহ: খন্ড:১, পৃষ্ঠা: ৪৯৪)

আল্লামা বদরুদ্দীন যারকাশী রহ. বলেন :

أن الحَدِيث الضَّعِيف إِذا تَلَقَّتْهُ الْأمة بِالْقبُولِ عمل بِهِ على الصَّحِيح حَتَّى انَّه ينزل منزلَة الْمُتَوَاتر فِي أَنه ينْسَخ الْمَقْطُوع

অনুবাদ : জঈফ হাদীস যদি উম্মাত গ্রহণ করে নেয় তাহলেবিশুদ্ধ মতানুসারে সেটা আমলযোগ্য বিবেচিত হবে। এমনকিসেটা মুতাওয়াতির তথা ব্যাপক প্রসিদ্ধ সংবাদের মান রাখেএবং তার দ্বারা দৃঢ় (সহীহ) হাদীসও রহিত হয়। (আন নুকাতআলা মুকাদ্দামাতি ইবনে সালাহ, খন্ড:১, পৃষ্ঠা: ৩৯০)

সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে রসূলুল্লাহ স. ২০রাকাত তারাবীহ’র নামায পড়েছেন বলে ইবরাহীম বিনউসমান রহ. এর বর্ণিত উক্ত হাদীসের সনদ জঈফ হলেওউম্মাতের ব্যাপকভাবে গ্রহণের কারণে তা রসূলুল্লাহ স.-এরসুন্নাত হিসেবে গ্রহণের উপযুক্ত।

২০ রাকাত তারাবীহ অস্বীকারকারীদের অনেকে এহাদীসটিকে জাল বলে অপপ্রচার করে থাকে। তাদেরঅভিযোগ: ইবরাহীম বিন উসমান মিথ্যাবাদী। অথচ এঅভিযোগ সঠিক নয়। তাঁর ব্যাপারে হাদীস বিশারদইমামগণের মন্তব্য নিম্নরূপ:

ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, আবু হাতেম, ইয়াহইয়া বিনমাঈন, ইবনে সা’দ এবং ইমাম দারাকুতনী রহ. তাঁকে জঈফবলেছেন। সালেহ বিন মুহাম্মাদ বলেন: ضعيف لا يكتب حديثه روى عن الحكم أحاديث مناكير “তিনি জঈফ; তাঁর হাদীস লেখাহবে না। তিনি হাকাম থেকে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেন”।ইমাম তিরমিজী এবং ভিন্ন বর্ণনায় ইমাম আহমাদ তাঁকেمنكرالحديث “হাদীস বর্ণনায় একাকী” বলেছেন। ইমাম নাসাঈএবং আবু বিশ্র দূলাবী বলেন: متروك الحديث “তাঁর হাদীসপরিত্যাক্ত”। ইমাম বুখারী বলেন: سكتوا عنه “মানুষ তারব্যাপারে নীরব রয়েছে”। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব বলেন: ساقط“তিনি পতিত বর্ণনাকারী”। অন্য বর্ণনায় ইয়াহইয়া বিন মাঈনবলেন: ليس بثقة “তিনি নির্ভরযোগ্য নন”। আবু আলী হুসাইনবিন আলী বলেন: ليس بالقوى “তিনি দৃঢ় নন”। আহওয়াছ বিনমুফাজ্জল বলেন: ممن حدث عنه شعبة من الضعفاء “ইমাম শু’বাযে সব জঈফ রাবীদের থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি সে সবজঈফদের একজন”।

এ পর্যন্ত ইমামগণের যে মন্তব্য তাঁর ব্যাপারে পাওয়া গেছে তাসহনীয় পর্যায়ের জঈফ রাবীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মন্তব্য।একজন মিথ্যাবাদীর যে মন্তব্য হয়ে থাকে তা তো দূরের কথা, একজন অতি দুর্বল বর্ণনাকারীর ব্যাপারে যে সব মন্তব্য করাহয়ে থাকে তা-ও এখানে নেই।

আবার অনেকে তাঁর বিষয়ে কিছু ভালো মন্তব্যও করেছেন।হযরত ইবনে আদী বলেন: له أحاديث صالحة و هو ضعيف على ما بينته ، و هو و إن نسبوه إلى الضعف خير من إبراهيم بن أبى حية . “আমি বলেছি যে, তিনি জঈফ তবে তাঁর কিছু ভালোহাদীসও রয়েছে। মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাঁকে জঈফ বললেওতিনি ইবরাহীম বিন আবী হাইয়াহ থেকে উত্তম”। আরইবরাহীম বিন আবী হাইয়ার ব্যাপারে হযরত ইয়াহইয়া বিনমাঈন বলেন: شيخ ثقة كبير “তিনি অভিজ্ঞ ও অত্যন্তনির্ভরযোগ্য”। (লিসানুল মীযান: রাবী নম্বর- ১১৬)

সাথে সাথে ইবরাহীম বিন উসমান রহ. কাযী অর্থাৎ, ইসলামীরাষ্ট্রের একজন বিচারপতি ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীহিসেবে কাজ করেছেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ইমাম, বুখারী-মুসলিমের রাবী হযরত ইয়াযীদ বিন হারুন। তিনি বলেন: ما قضى على الناس رجل يعنى فى زمانه أعدل فى قضاء منه “তাঁরসময়ে তাঁর চেয়ে বেশী ইনসাফের বিচার কেউ করেনি”।সুতরাং ইয়াযীদ বিন হারুন যিনি ইবরাহীম বিন উসমানরহ.কে খুব কাছে থেকে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত দেখেছেন; তাঁর মন্তব্যথেকে অন্তত এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, হাদীস বর্ণনায় জঈফহলেও দ্বীনদারীর বিষয়ে তাঁর ক্রটি ছিলো না। পাঠক! চিন্তাকরে দেখুন এমন একজন ব্যক্তিকে মিথ্যাবাদী বলা যায়?

এর পরেও ২০ রাকাত তারাবীহ অস্বীকারকারী কিছু কট্টরমানুষ সব ইমামদের কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ইমাম শু’বারএকটিমাত্র উক্তির ওপর ভিত্তি করেই তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যাদিয়ে তার বর্ণিত এ হাদীসটিকে জাল বলে থাকে। ইমামশু’বার যে উক্তির ওপর ভিত্তি করে তারা হযরত ইবরাহীম বিনউসমানকে মিথ্যাবাদী বলে থাকে তা নি¤œরূপ :

و قال أمية بن خالد : قلت لشعبة : إن أبا شيبة حدثنا عن الحكم عن عبد الرحمن بن أبى ليلى ، أنه قال : شهد صفين من أهل بدر سبعون رجلا . قال : كذب و الله لقد ذاكرت الحكم ذاك ، و ذكرناه فى بيته ، فما وجدنا شهد صفين أحد من أهل بدر غير خزيمة بن ثابت

অনুবাদ : উমাইয়া বিন খালিদ বলেন, আমি শু’বাকে বললাম: আবু শাইবা (ইবরাহীম বিন উসমান) আমাকে হাকাম সূত্রেআব্দুর রহমান বিন আবু লাইলা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সিফফীন যুদ্ধে ৭০ জন বদরী সাহাবা অংশগ্রহণ করেছিলেন।জবাবে হযরত শু’বা বললেন: আল্লাহর কসম, সে মিথ্যাবলেছে। আমি হাকামের সঙ্গে এ বিষয়টি তাঁর ঘরে আলোচনাকরেছি; কেবল খুযাইমা বিন সাবিত ব্যতীত কোন বদরীসাহাবা সিফফীন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলে পাইনি।

প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন, ইমাম শু’বা রহ.-এর এ উক্তিটিইবরং ভুল। কারণ, অন্যদের কথা বাদই দিলাম; সিফফীনযুদ্ধের সেনাপতি হযরত আলী রা. নিজেই তো বদরী সাহাবা।আবার ওই যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী হযরত আম্মার রা. আরেকজন বদরী সাহাবা। এ ছাড়া আরও বদরী সাহাবা ওইযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অথচ ইমাম শু’বা রহ.-এরবর্ণনায় তাঁদের নামও আসেনি। তাহলে এ খোড়া উক্তির ওপরভিত্তি করে কীভাবে একজন ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিম বিচারককেমিথ্যাবাদী বলা যেতে পারে?

ভাবতে অবাক লাগে, যারা ‘দলীলবিহীন কারও কথা মানি না’ বলে বুলি আওড়াতে থাকে, তারা কী করে একজনেরদিবালোকের মতো সুস্পষ্ট ভুলকে অন্যজনের বিরুদ্ধে দলীলহিসেবে প্রচার করতে পারে? না কি ‘দলীলবিহীন কারও কথামানি না’ কথাটা নিজের মতের বিপক্ষে হলে প্রযোজ্য? আরকারও কথা নিজের মতের পক্ষে হলে সে কথা যারই হোক, সত্য হোক আর অসত্য হোক; ওটাই দলীলযোগ্য। এহেনজঘন্য নীতি পরিহার করা অতীব জরুরী।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো: কোন তথ্য বর্ণনায় ভুল করা আরমিথ্যা বলা এক বিষয় নয়। ইমাম শু’বার উদ্দেশ্য সম্ভবত একথা বলা যে, তিনি তথ্য বর্ণনায় ভুল করেছেন; তাঁকে মিথ্যারদোষে দোষারোপ করা নয়। যেমন ইমাম শু’বা রহ. নিজেইহযরত খুযাইমা বিন সাবিত ব্যতীত আর কোন বদরী সাহাবাসিফফীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি বলে যে তথ্য দিয়েছেন তা ভুল। সাথে সাথে হযরত ইবরাহীম বিন উসমানের বর্ণিত ৭০জন বদরী সাহাবার সিফফীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার তথ্যটিওভুল, তবে কোনটিই মিথ্যা নয়। আরও প্রমাণ হিসেবে বুখারীশরীফের একটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন! হুদায়বিয়ার যুদ্ধেমুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা সম্পর্কে হযরত জাবির রা. বলেন: আমরা ছিলাম এক হাজার পাঁচশ। (বুখারী: ৩৮৪৮) হযরতজাবির রা. অপর বর্ণনায় বলেন: আমরা ছিলাম এক হাজারচারশ। (বুখারী: ৩৮৪৬) বুখারী শরীফে বর্ণিত এ হাদীস দু’টিসহীহ এবং বর্ণনাকারী সাহাবা একই ব্যক্তি। যার বর্ণিত দু’টিসংখ্যার মধ্যে অবশ্যই একটি সঠিক আর অপরটি ভুল।তাহলে এ বর্ণনা ও বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে কী বলবেন? তাঁদের বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের ব্যাপারেই বা কী বলবেন? নিশ্চয় তাঁরা মিথ্যা বলেছেন বলে অভিযোগ করতে পারবেননা।

বুখারীর অপর একটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন! খায়বারেরযুদ্ধে হযরত সালমা বিন আকওয়ার চাচা হযরত আমের বিনআকওয়া রা. নিজের তরবারীর আঘাতে শহীদ হন।সাহাবাদের কেউ কেউ মন্তব্য করলেন যে, তিনি আত্মহত্যাকরেছেন। হযরত সালমা বিন আকওয়া রা. রসূলুল্লাহ স.-এরনিকটে এ অভিযোগ পেশ করলে তিনি জানতে চাইলেন: কারাএ মন্তব্য করেছে? হযরত সালমা বিন আকওয়া রা. বললেন:قَالَهُ فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ وَفُلاَنٌ وَأُسَيْدُ بْنُ الحُضَيْرِالأَنْصَارِيُّ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَذَبَ مَنْ قَالَهُ، “অমুক, অমুক, অমুকএবং উসাইদ বিন হুযাইর আনসারী রা.। জবাবে রসূলুল্লাহ স. বললেন: যারা এটা বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে”। (বুখারী: ৩৮৮২) এখানে আমের বিন আকওয়া রা.-এর বিরুদ্ধেআত্মহত্যার অভিযোগকারী সবাইকে রসূলুল্লাহ স. মিথ্যাবাদীবলেছেন। তন্মধ্যে হযরত উসাইদ বিন হুযাইর রা. তোনির্দিষ্ট। অনির্দিষ্ট রয়েছেন আরও তিনজন সাহাবা। তাহলেযতক্ষণ পর্যন্ত সেই তিনজনকে চিহ্নিত করা না যাবে ততক্ষণপর্যন্ত হযরত সালমা বিন আকওয়া ব্যতীত খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোন সাহাবার হাদীস কি গ্রহণ করা যাবে না?

বস্তুতঃ হাদীসের এ সব পারিভাষিক শব্দ এবং পারিপার্শ্বিকঅবস্থা না বুঝে বা না বুঝার ভান করে নিজেদের মতেরবিপরীত হলেই কোন রাবী বা হাদীসের বিরুদ্ধে এহেনমন্তব্যকারীদের ব্যাপারে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে যে, অযোগ্য ও খিয়ানতকারীকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া ডাকাতেরহাতে তরবারী তুলে দেয়ার শামিল। এ সব বক্তব্য দ্বারা হযরতইবনে আব্বাস রা. সূত্রে রসূলুল্লাহ স. ২০ রাকাত তারাবীহ’রনামায পড়েছেন বলে ইবরাহীম বিন উসমান রহ. এর বর্ণিতউক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। আর এটাআমাদের মূল দলীলও নয়। এ আলোচনার উদ্দেশ্য কেবলওই সব মানুষের মুখোশ উন্মোচন করা যারা মুখে বলে সহীহহাদীসের কথা; আর আড়ালে কাজ করে কোন মিশনবাস্তবায়নের।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...