শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১২:০৮
Home / কওমি অঙ্গন / আহ! যদি আমার সামর্থ থাকতো…!

আহ! যদি আমার সামর্থ থাকতো…!

হৃদয়ে কওমি মাদরাসা গ্রন্থ আলোচনা

শমসুল আদনান

আমার যদি সামর্থ থাকতো ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ গ্রন্থখানি কওমি মাদরাসার সকল শিক্ষক-ছাত্রদের হাতে পৌঁছে দিতাম।

বুদ্ধিবৃত্তিক জবাবে মুসলমানদের যে জাগরণ প্রয়োজন, তারই এক সোচ্চার কণ্ঠ খতিব তাজুল ইসলাম। যিনি প্রকৃতার্থেই একজন কওমি মাদরাসাপ্রেমী।

কওমি মাদরাসায় অন্ধ প্রেমিকের অভাব নেই। তাদের অন্ধ প্রেমের কারণে কওমি অঙ্গন এতটাই কুঁজো হয় আছে যেকোনো সময় বিকলাঙ্গ হয়ে যাবে। তাদের অন্ধ প্রেমের কারণে কওমির জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ তিমির ভবিষ্যৎ। বামপন্থি-রামপন্থিরা সমস্ত পৃথিবীর মুসলমানকে বানিয়ে রেখেছে মানসিক গোলাম। মুসলমানরা এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। কওমি চেতনাধারীরা চৈতন্যের মালিশ নাকে সেবন করে অবচেতন হয়ে আছেন। কিয়ামত আসলেও তাদের নিদ্রায় কোনো ব্যাঘাত হবে বলে মনে হয়না।

খতিব তাজুল ইসলাম একাধারে একজন বিদগ্ধ আলেম, বিচক্ষণ শিক্ষাবিদ, একজন শক্তিমান লেখক, সংস্কারক, সংগঠক, সৃজনশীল মানুষ, গবেষক, সফল মানুষ ইত্যাদি আরো বহু অভিধায় যাকে অভিহিত করা যায়। তবে মুহতারাম তাজুল ইসলাম উস্তাদের দেয়া উপাধি ‘খতিব’ নিয়েই স্বচ্ছন্দে আছেন। যেখানে আল্লামারা নামের আগে-পিছে লম্বা লম্বা পদবী লাগাতে ব্যস্ত, সেখানে তাজুল ইসলাম (দাঃ বাঃ) ‘খতিব’ পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার শুভাকাঙ্খিরাও ‘খতিব’ হিসেবে তাকে আপন করে নিয়েছে।

পৃথিবীতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ জন্ম নেয়। কিন্তু খতিব তাজুল ইসলামরা প্রতিদিন জন্ম নেন না। খতিব তাজুল ইসলামদের জন্ম দিতে পৃথিবীকে কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হয়। বস্তুত খতিব তাজুল ইসলাম হলেন আকাশের সেইসব নক্ষত্রসমূহ, যে নক্ষত্রসমূহ পঞ্চাশ বছরে একবার এসে পৃথিবীকে আলোকিত ও মহিমান্বিত করে।

খতীব তাজুল হলেন আল্লামা শামসুল হক্ব ফরিদপুরী রহ. ও শায়খুল হাদীস আজিজুল হক্ব রহ. পথের এক মহাসাধক।

লক্ষ লক্ষ কওমি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবীকে কমাশিসা সংগঠনের মাধ্যমে যিনি পৌঁছে দিয়েছেন জাতীয় কণ্ঠে। কমাশিসার নিরন্তর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কওমি মাদরাসা আজ স্বীকৃতির শেষপ্রান্তে। তবে কমাশিসার উদ্দেশ্য কেবল স্বীকৃতি নয়। কমাশিসার মিনিং হলো কওমি মাদরাসা শিক্ষা সহযোগিতা আন্দোলন। কওমি অঙ্গনের সবচেয়ে আলোড়িত অনলাইন পোর্টাল কমাশিসা ডটকম। কমাশিসার পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন খতিব তাজুল ইসলাম। লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের পকেট থেকে ব্যয় করে খতিব সাহেব চালিয়ে নিচ্ছেন কমাশিসা। শুধু অর্থ নয়; শ্রম এবং সময় দিয়ে কমাশিসাকে খতিব সাহেব নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, নিরহঙ্কার এই মানুষটা পেয়েছেন মূর্খ, অজ্ঞ, জ্ঞানপাপী, নির্লজ্জ্ব, বেয়াদব, অপরিপক্ব, অপদার্থ, অযোগ্য ও একগুয়েদের গালি, তিরস্কার, ব্যঙ্গাত্মক হাসি-ঠাট্টা, হুমকি-দামকি, ফেইক আইডি দ্বারা লাঞ্ছিত-অপদস্থ হওয়া ইত্যাদি। খতিব সাহেব এসব হুমকি-ধমকি, গালিগালাজ কেয়ার করেননি। তিনি শক্তভাবে চালিয়ে গেছেন আপন সংগ্রাম। সহস্র ঝড়-প্রভঞ্জন, চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে কমাশিসা আওয়াজ সরব থেকেছে হরদম। সময়ের বিবর্তনে যারা হাসি-ঠাট্টা করেছিল, আজ তারা নিজেরাই হাসির পাত্র। তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া কিছুই করার নাই।

কমাশিসা ইন্টারনেটের বায়বীয় পাতায় ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কওম ও কওমিকে সঠিক দিগন্তের পথ দেখিয়েছে। কমাশিসার এই অবদান ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে। চরম শত্রুরও কমাশিসার এই অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সংগঠক, সিলেটের প্রেস জগতের শক্তিমান নাম, ছাপার দুনিয়ায় শৈল্পিক ছোঁয়া বোখারা মিডিয়ার সত্ত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ সাহেবের মাধ্যমে কমাশিসার সাথে আমার পরিচয় হয়। কমাশিসা সিরিজের কয়েকটি স্মারক তার সৌজন্যেই পাই।

আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সাথে পরিচয় হয় ২০১০ সালে। স্বর্ণকুঁড়ি সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত আমার লিখিত সর্বপ্রথম “শায়খুল মাশায়েখ, খলিফায়ে মামরখানী আল্লামা জমশেদ আলী চেয়ারম্যান হুযুর রাহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী” বোখারা কম্পিউটারে মুদ্রিত হয়। তখন বোখারা কম্পিউটার আলবেলা মার্কেটে ছিল, এখন সিটি বাণিজ্যিক ভবনে। সেই ২০১০ সাল থেকে আবুল কালাম আজাদ সাহেব আমাকে অকৃত্রিম স্নেহ-ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছেন।

‘নব আলো’ নামে আমাদের একটা ম্যাগাজিন আছে। যার প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা সম্পাদক আমি অধম। ২০১০ থেকে প্রতি বছরে কম হলেও একবার বোখারা মিডিয়ায় নবআলো ম্যাগাজিনের কাজে যেতে হয়। সেই সুবাদে কমাশিসার কাজ একেবারে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। আবুল কালাম আজাদ একজন নিঃস্বার্থবাদী সাদা মনের মানুষ। কমাশিসার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। নীরবে, নিভৃতে কওম ও কওমির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

কওমি মাদরাসায় অধ্যয়নকালে কওম ও কওমির একঘেয়ে ও একগুয়ে পথচলা এবং বিকলাঙ্গ ভবিষ্যতের যে কথাগুলো হৃদয়ে বিদ্ধ হয়ে হাহাকার করত, বেয়াদবির ভয়ে শিক্ষকদের বলতে পারতাম না, সহপাঠিদের বললে নাস্তিক-মুর্তাদ, মুনাফিক-বেঈমান, নিমকহারাম ফতওয়া দিত, কমাশিসায় আমার সেই কথা ও চিন্তার মিল দেখে অভিভূত হই। কমাশিসার মাধ্যমে কওম ও কওমির আরও বহু অসঙ্গতি সম্পর্কে অবগত হই। খতিব সাহেব সেই অসঙ্গতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন এবং এথেকে উত্থরনের পথও বাতলে দেন।

বিগত ফেব্রুয়ারিতে খতিব সাহেবের ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ ও ‘জৈবিক শিক্ষা’ নামে দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। খতিব সাহেবের কাছ থেকে গ্রন্থ দুটির পিডিএফ ফাইল সংগ্রহ করি ফেব্রুয়ারিতে। তবে পড়তে ভুলে যাই। আমার হাতের স্মার্ট ফোনে শ’খানেক বইয়ের পিডিএফ আছে। বলা যায় ছোটখাটো একটা পাঠাগার আমার হাতে নিয়ে চক্কর দেই। বিগত ৩ এপ্রিল ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ ও ‘জৈবিক শিক্ষা’ গ্রন্থ দুটি হঠাৎ আমার দৃষ্টিতে আসে। তারপর এই কয়দিনে গ্রন্থদ্বয় পড়ে শেষ করি। খতিব সাহেবের ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ ও ‘জৈবিক শিক্ষা’ গ্রন্থ দুটি পড়ে দারুন অভিভূত ও উদ্বেলিত হই। নির্দ্বিধায় বলা যায়, বহুদিন পর গবেষণামূলক উচ্চমানের কোনো গ্রন্থ অধ্যায়ন করেছি। একান্ত মনের কথাগুলো খতিব সাহেব প্রাণচঞ্চল ও প্রাণবন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অসীম সাহসিকতায় প্রকাশ করেছেন গ্রন্থদুটিতে। ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ গ্রন্থে খতিব সাহেব কওম এবং কওমির অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অভূতপূর্ণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। এবং সমস্যা সমাধানের চমৎকার সাজেশন তুলে ধরেছেন।

‘হৃদয়ে ক্বওমি মাদরাসা’ আট ফর্মার একটি গ্রন্থ। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে খতিব সাহেব কওম এবং কওমির বিবিধ অনুষঙ্গ অত্যন্ত দক্ষতায় আলোচনা করেছেন। খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন আমাদের অসঙ্গতি। বাংলার বুকে এতটা সোচ্চার কণ্ঠে আর কাউকে আওয়াজ করতে দেখিনি আমি। ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ চেতনার প্রাচীর ভেঙ্গে মহাসত্য ও কঠিন বাস্তবতাকে প্রকাশ করেছে।

আমার যদি সামর্থ্য থাকত ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ গ্রন্থখানি কওমি মাদরাসার সকল শিক্ষক-ছাত্রদের হাতে পৌছে দিতাম।

খতিব তাজুল ইসলাম দাঃবাঃ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটেনে বসবাস করেন। আলিশান জীবনে থেকেও কওম এবং কওমিকে নিয়ে ফিকির করেন। কেন করেন? ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকেই করেন। দ্বীনের দরদ থেকেই করেন। আলিশান জীবনকে উপেক্ষা করে খতিব সাহেব বিশ্ব ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে যুগোপযোগী, সঠিক, বাস্তবিক চিন্তা-পরিকল্পনা করেন। ত্যাগের বিরল এক দৃষ্টান্ত খতিব তাজুল ইসলাম।

ক্ষুদ্র পরিসরে ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ গ্রন্থের আলোচনা সম্ভব নয়। ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ নিয়ে আলোচনা করলে আরেকটি গ্রন্থ লেখা হয়ে যাবে। মোবাইলে বসে বৃহৎ আঙ্গিকে লেখার ফুরসতইবা কই। এখানে একজন নগন্য পাঠক হিসেবে ‘হৃদয়ে কওমি মাদরাসা’ পাঠ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছি মাত্র।

লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে। তবুও মনে হয় কিছুই লেখিনি। খতিব সাহেবের ‘জৈবিক শিক্ষা’ গ্রন্থ নিয়ে কিছু লেখার প্রয়াস ছিল, কিন্ত আজ নয়। মাওলার যদি মর্জি হয় অন্যদিন এ নিয়ে লিখবো।

খতিব তাজুল ইসলামের সাথে কখনো আমার দেখা হয়নি। খতিব সাহেবের সৃজনশীলতা থেকেই আমার আত্মিক সম্পর্ক। তবে খতীব সাহেবকে দেখার নিস্পাপ আগ্রহ আমার ভিতরে প্রবলভাবে কাজ করছে। পরম করুণাময় প্রভু! কখন এই মহান মানুষটার সাথে দেখা করাবেন তিনিই জানেন। তবে সেই দেখানোটা যেন দ্রুত হয়।

পরিশেষে খতিব সাহেবের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহ যেন খতীব তাজুল ইসলামকে আমাদের মাঝে আলোকবর্তীকা হিসেবে শত-সহস্র বছর উজ্জ্বল রাখেন এই প্রার্থনা করি।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা সম্পাদক, নবআলো

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...