বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:০৫
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / এপ্রিলফুল মুসলমানের উৎসব নয়

এপ্রিলফুল মুসলমানের উৎসব নয়

মোস্তফা কামাল গাজী
এপ্রিলের ১ম দিনটিকে অনেকেই বেশ আয়োজন করে পালন করে। আগে থেকেই ঠিক করা হয় কাকে, কীভাবে বোকা বানানো যায়! দিনটিকে ‘এপ্রিলফুল’ নাম দিয়ে তারা নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে, অন্যের ক্ষতি করে বসে। অপরপক্ষ ক্ষুব্ধ হলে বলে, ‘সরি, এপ্রিলফুল’! এদিন এমন চিত্রই নজরে পড়ে অহরহ।
দিবসটির প্রেক্ষাপট না জেনেই এর চর্চা করা হচ্ছে। নিজেরা যেমন এ অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি তেমনি আমাদের সন্তানরাও অজ্ঞতাবশত এ দিবসকে পালন করছে। অথচ মুসলমানের পক্ষে এটি লজ্জা ও অপমানের দিন। এর প্রেক্ষাপট জানার পর কোনো মুসলমানই এপ্রিলফুল পালন করতে পারে না।
‘ফুল’ ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ ‘বোকা’। সুতরাং ‘এপ্রিলফুল’ অর্থ ‘এপ্রিলের বোকা’। দিবসটি হওয়ার পেছনে রয়েছে রক্তাক্ত এক ইতিহাস। ৭১১ থেকে নিয়ে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আটশত বছর মুসলমারা স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে শাসন করে। এটা ছিলো তাদের স্বর্ণযুগ। কিন্তু শেষের দিকে তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। কুরআন, সুন্নাহ বাদ দিয়ে আমোদপ্রমোদে লিপ্ত হয়। সে সুযোগ লুফে নেয় খ্রিস্টানরা।
১৪৯৩ সালে খ্রিস্টান রাজা ফার্দিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ আক্রমণে হাতছাড়া হয়ে যায় মুসলমানদের সর্বশেষ রাজধানী গ্রানাডা। সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চিকিৎসা, রাজনীতি, স্থাপত্য সব ধুলোয় মিশে যায়। ইউরোপ থেকে ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে মুছে দিতে ফন্দি আঁটে খ্রিস্টানরা। ঘোষণা দেয়, ‘যারা মসজিদে আশ্রয় নিবে তারা নিরাপদ।’ মুসলমানরা তাদের দুরভিসন্ধি বুঝতে না পেরে মসজিদে আশ্রয় নেয়। খ্রিস্টানরা মসজিদের দরজা-জানালা বন্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তিনদিন চলে হত্যার এ উৎসব। একসাথে চল্লিশ হাজার মুসলমান শহিদ হয়। পরবর্তীতে ঐতিহাসিক সে মসজিদকে গির্জায় পরিণত করা হয়। এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মুসলমানদের সোনালি ইতিহাস, ঐতিহ্য।
রাজা ফার্দিন্যান্ড সেদিন  উপহাস করে বলেছিলো, ‘মুসলমানরা এপ্রিলফুল’। সেই থেকে খ্রিস্টানরা এটি পালন করে। মুসলমানের সঙ্গে এ দিবসের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। অথচ বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, চরিত্র, ধর্ম ও সংস্কৃতি সবকিছুই ভুলে গেছি। অনুকরণ করছি বিজাতিদের। পালন করছি এপ্রিলফুল। কুরআনে বিধর্মীদের অনুসরণ থেকে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের ওপর। আপনি এর অনুসরণ করুন, মূর্খদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না। (সুরা জাসিয়াঃ১৮)
মহানবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিজাতির অনুকরণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। হজরত ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যকোনো সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আব দাউদঃ ৪০৩১)
হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শরিয়তে সঙ্গত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ কেউ ঘটালে, তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। (বোখারি:২৫৫০,মুসলিম:৪৫৮৯) তাছাড়া এপ্রিলফুল পালনে একপক্ষের আনন্দ হলেও, অন্যপক্ষ কষ্ট পায়, হয় বিরক্ত। অথচ ইসলাম কাউকে কষ্ট দেয়া পছন্দ করে না। হাদিসে আছে, হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই, যার মুখ ও হাত থেকে অন্যজন নিরাপদ থাকে।’ (বোখারি:৯)
তাই আসুন ইসলামের বিধান মেনে চলি এবং বিজাতীয় অনুসরণ নিজেরা বর্জন করি, সন্তানদেরও বিরত রাখি।
শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...