মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:১৪
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / ধর্ম ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতীক জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া

ধর্ম ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতীক জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

‘কুর্রাতুল আইন হায়দার’ ফটকে রিকশা থামলো। ভাড়া মিটিয়ে এগোতে লাগলাম পায়ে হেঁটে। চোখে পড়লো সুবিশাল এলাকা। স্টেডিয়াম হল পেরিয়ে মোড় নিলাম ধীরে ধীরে। সামনে আরেকটি ফটক। ‘মাওলানা আবুল কালাম আজাদ’ নাম। গেটটি ধরে ঢুকলাম ভেতরে। প্রথমেই দেখলাম কবি মির্জা গালিবের প্রতিকৃতি। পাশেই নামফলকে লেখা ‘গুলিস্তান-ই গালিব’। এর সামনেই কবি মির্জা গালিব পলিটিক্যাল সাইন্স বিভাগের বড়সড় একটি চারতলা ভবন। এগোলাম ডানে। পাশঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছিলো ছাত্রছাত্রীরা। বেঞ্চিতে বসে হাতে হাত রেখে গল্প-আড্ডায় মজতে দেখা গেলো অনেককে। আইসক্রিম, লাচ্ছিতে গড়াচ্ছিলো বিকেলটা। চলতে চলতে থমকে দাঁড়ালাম ‘ইবনে সিনা ব্লক’-এ। তিনতলাবিশিষ্ট ইমারতটিতে রয়েছে উন্নত কারিকুলামের কম্পিউটার সেকশন। পাশেই একটি পাথরখচিত নামলিপি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ‘রিপোর্ট’ শিরোনামে তাতে লেখা জামিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিকথা। ভারতবর্ষের মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষার উন্নতির কথা ভেবেছেন উলামায়ে দেওবন্দই। সবার আগে তারাই এগিয়ে এসেছেন মুসলমানদের তহজিব-তমদ্দুন টিকিয়ে রাখতে। কওমিশিক্ষাধারার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মানের সাধারণ শিক্ষায়ও যেনো দীন-ইমান ঠিক রেখে এগোনো যায়, ভেবেছেন। একঝাঁক কর্মবীর আধুনিক ময়দানে নেমেছেন সে লক্ষ্যেই। গড়েছেন ‘জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া’। ‘জাতীয় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়’ যার বাংলা। ১৯২০ সালের ২৯ অক্টোবর জামিয়াটি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরা। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে ছিলো প্রথমে। ফের দিল্লি থেকে সাতমাইল দূরে ওখলা নামক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ‘জামিয়া’ বা ‘জামিয়া নগর’ হিসেবে খ্যাত এই স্থানটি। আড়াইশো একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সুবিশাল জামিয়াটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন বিশজন মুসলিম মনীষী। শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি, শাইখুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানি, মাওলানা সুলাইমান নদবি, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও কবি ডক্টর আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল তাদের অন্যতম। ১৯২০ খৃস্টাব্দের ২২ নভেম্বর হাকিম আজমল খান প্রতিষ্ঠানটির প্রথম চ্যালেন্সর হিসেবে নিযুক্ত হন। ইসলামি সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও মুসলিম ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। দিল্লিতে এখনও মুসলমানদের বিপক্ষে কেউ কথা বললে এরাই প্রথম আওয়াজ তোলে।

উর্দু হরফে লেখা নেমপ্লেটটি পড়া শেষ করতেই জ্বলে ওঠলো সন্ধ্যের আলেয়া। নজরে পড়লো ভবনের পর ভবন। কোনোটি ক্যামেস্ট্রি, কোনোটি ম্যাথমেটিক্স, কোনোটি বা অন্য কোনো বিষয়ের ওপর উচ্চতর বিভাগ। গলিপথ ধরে হাঁটতেই গোলচত্বর স্টাইলে দেখলাম আরেকটি ভবন। বইপত্তরে ঠাসা যার ভেতরটা। ওপরের সিলভার প্লেটে ‘ড. জাকির হুসাইন লাইব্রেরি’ লেখা রয়েছে উর্দু-ইংরেজি বর্ণে। কিছুটা ভেতরপথে দেখলাম কক্ষ আর কক্ষ। গভীর পাঠে মগ্ন তাতে আগ্রহী পাঠকপাঠিকার সমাবেশ। হাঁটতে হাঁটতে পা এসে পড়লো আরেকটি গেটে। পাশেই দেখলাম সাদারঙের সুবিশাল একটি মসজিদ। মিনারগুলো বেশ উঁচু উঁচু। চারপাশ গাছগাছালিতে বেশ পরিপাটি। দৃষ্টি যতোদূর যায় ভবন আর ভবন; সুশৃঙ্খল আবাসিক ছাত্রাবাস। ছাত্ররা কেউ ঢুকছে, কেউ বা বেরোচ্ছে। কেউ বা আবার বসে বসে পড়ছে। চলতে চলতে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম একদম শেষ ফটক ‘শাইখুল হিন্দ’-এ। সালাম দিলাম দারোয়ান বাবুকে। দেওবন্দ থেকে এসেছি জানালাম। জবাবসহ কুশল বিনিময়ের পরে বললো, ‘দাখেলা লেনে আয়ে হো কিয়া?’ ঘুরে দেখবার কথাটি বললাম তাকে। এখানকার উচ্চতর বিভাগে দারুল উলুম দেওবন্দের সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। বরং তাদের জন্য রয়েছে আলাদা বিশেষ কোটারও সুব্যবস্থা। নিজ আগ্রহেই বিষয়টি জানালো সে। কথায় কথায় জামিয়ার বর্তমান হালচাল জানতে চাইলাম তার কাছে। বললো, ‘মুঝে তো ওতনা নেহি পাতা। কেসি এক লাড়কা সে পুছিয়ে। ’ বাইরে বেরোবার জন্য তখনই তিনটে ছেলে এলো গেটে। দারোয়ানবাবু তাদের একজনকে অনুরোধ করলো কিছু একটা বলতে। ছেলেটি জানালো, ‘গান্ধীজির নেতৃত্বে উলামায়ে কেরামের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই চাপ আসছে সেজন্য। পুরোপুরি সরকারের দখলে নিয়ে মুসলমানদের নামনিশানা মুছে ফেলার একরকম পাঁয়তারা চলছে।’

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কে সেই আনাস মাদানি? কি তার পরিচয়?

কমাশিসা ডেস্ক: ১৬ সেপ্টেম্বের ২০২০ইং ঘটনার সুত্রপাত। বাংলাদেশের প্রাচিনতম ও বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম ...