বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:২০
Home / মাহফিল / দাওয়াতুল হকের ব্যানারে বৃহত্তর ময়মসিংহ আলেমদের মিলনমেলা

দাওয়াতুল হকের ব্যানারে বৃহত্তর ময়মসিংহ আলেমদের মিলনমেলা

রিদওয়ান হাসান: ৩ মার্চ শুক্রবারে ঘটে গেল মজলিসে দাওয়াতুল হকের ময়মনসিংহ বিভাগের তরবিয়তি ইজতেমা ১৭, জামিয়া মাহমূদিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া চরখরিচা প্রাঙ্গনে মনোরম দৃশ্যসম্বলিত ও বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গম্বুজবিশিষ্ট মদীনা মসজিদের শুভ উদ্বোধন ও প্রধান ফটক উন্মুক্ত করার মাধ্যমে এই ইজতেমা হয়ে ওঠে এক বিশাল জনসমদ্র।

৬৪ হাজার গ্রামবাংলা থেকেই লোকের সমাগম ঘটে এই ইজতেমায়। ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার হলেও বৃহস্পতিবার থেকেই ভিড়তে থাকে মানুষ। পরে থেকে থেকে মানুষের গুঞ্জরণে একপর্যায়ে মাঠে তিল ধারণের ঠাইটুকু থাকে না। সেখানকার স্থানীয় লোকদের থেকে শোনা, ইতিপূর্বে এত মানুষের জনস্রোত তারা কখনো দেখেনি।

চরখরিচা মাদরাসার এক শিক্ষক বলেন, আমি সত্যিকারার্থে ভাবতে পারিনি, এত বড় একটা বিস্ফোরণ ঘটে যাবে। ইতিহাসে হয়ত এটাই প্রথম যে, বৃহত্তর ময়মসিংহ বিভাগের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মিলনমেলা ছিল এটি।

শুক্রবার বাদ ফজর মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান ছাত্রদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখলেও ইজতেমার মূল পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে।

এরপর হারদুয়ীর হযরতের খলিফা মুফতি মনসূরুল হক তুলে ধরেন মজলিসে দাওয়াতুল হকের আগাগোড়া ইতিহাস। তার আলোচনায় প্রাঞ্জলভাবে ফুটে ওঠে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. সূচিত এই দাওয়াতুল হক কালপরিক্রমায় কিভাবে বাংলাদেশের আমীরুল উমারার হাতে ন্যস্ত হয় এর গুরুদায়িত্ব। এরপর বয়ান করেন কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মাওলানা ইমদাদুল্লাহ। তিনি হারদুয়ী হযরতের বিভিন্ন ত্যাগ-তীতীক্ষার হৃদয়গ্রাহ্য ইতিহাস তুলে ধরেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আলোচনা করেন,চরমোনাই পীরের খলিফা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ, হারদুয়ী হযরতের অন্যতম খলিফা মাওলানা আনওয়ারুল হক এবং বাংলাদেশ সরকারের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রমুখ।

এরপর সূর্য যখন মধ্যগগণে। ঘড়ির কাটা ১২টা পেড়িয়ে ১টার পথে। তখন যেন ময়মনসিংহ ভেঙে আসতে লাগল মানুষের ঢল। তাদের প্রাণের বৈদ্যুতিক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের কিছুক্ষণের মধ্যে প্রধান ফটক উন্মুক্ত করা হবে, তারপর বিশাল এক জুমার জামাতে তারা শরিক হবে, তাই মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে ধরার মতো। আর নিজ গ্রামেরই কৃতিসন্তানের পেছনে জুমার নামায আদায় করবেন, ব্যাপারটা আসলেই আবেগের।

এদিকে মসজিদের শুভ উদ্বোধন করেন দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমীর, ময়মনসিংহ জেলার চরখরিচার সন্তান আল্লামা মাহমূদুল হাসান। তিনি জুমাপূর্ব বয়ানে খুবই আবেগঘন কথা বলেন। সে সময়ে ছিল পুরো সামিয়ানাজুড়ে পিনপতন নিরবতা। হয়ত অনেকের হৃদয় তখন নিজের গাঁয়ের ছেলের বক্তব্য শুনে হু হু করে কেঁদে উঠেছিল, সে খবর আমাদের অজানা।

madina_mosjid3

আলোচনায় আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন,সমাজের অধঃপতনের কারণে মানুষের ঈমান আমলে ঘুণে ধরেছে। এই ঘুণে ধরা সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে মহব্বতের সাথে কাজ করতে হবে। শুধু মানুষের সমালোচনা করলে হবে না। আল্লাহর রাসুল সা. মানুষকে মহব্বতের সাথে দাওয়াত দিয়েছেন। যারা তার বিরোধিতা করেছেন তাদেরও মহব্বতের সাথে দাওয়াত দিয়েছেন বলে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং সমাজের পতন ঠেকাতে মহব্বতের সাথে কাজ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পূর্ণাঙ্গ কাজ একমাত্র নবী রাসুলদের মাধ্যমেই সম্ভব ছিল। তাছাড়া ইসলামের সব কাজ একজন মানুষের দ্বারা হবে না। ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে মিলে মিশে কাজ করতে পারলেই দাওয়াতুল হকের মতো আর যেসব প্রতিষ্ঠান হক্কানি উলামা দ্বারা পরিচালিত তাদের মাধ্যমে ইসলামি সমাজ গড়া সম্ভব। কারণ, সমাজের যে সদস্যটি প্রতিটি মুহূর্ত অনৈতিক ভাবনা ও অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তার কানে নবীর জীবনচরিত ও সুন্নতের কথা কোনোভাবে ঢুকিয়ে দিলে তার অজান্তে হলেও মনের মধ্যে কিছুটা দাগ কাটবে। সে হয়ত রাতারাতি সঠিক পথের পথিক হবে না,কিন্তু তার ভেতরে সুন্নতে নববীর যে আঁচড় লেগেছে তা কি মিটে যাবে না। হয়ত মজলিসে দাওয়াতুল হকের এই ছোট্ট একটি কথা কিংবা নসিহত মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।

জুমার নামাযের পর সৌদিআরব থেকে আগত বিশেষ অতিথি আওলাদে রসূল আল্লামা নাসির বিল্লাহ মক্কী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বয়ান করেন। এরপর সৌদিমেহমানের প্রত্যাশা পূরণার্থে মুহিউস সুন্নাহ মাহমূদুল হাসান তাকে বায়াত করে নেন এবং খেলাফত প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি ছিলেন হযরত রসূলে কারীম সা. এর ৪২তম বংশধরের একজন।

সময় যত বাড়তেই থাকে, মজলিস তত ঘনীভূত হতে থাকে। লোকে লোকারণ্য হতে থাকে ময়দান। বাংলাদেশের দেশবরেণ্য উলামা-মাশায়েখের পদচারণায় চরখরিচা ছিলসত্যিই মুখরিত। একেক জনের বক্তব্যের প্রভাবে হয়ত অনেকের দেহ-মন কাঁপিয়ে তুলেছে। সৎ পথে পরিচালনার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। নবীচরিতের মতো নিজেদের জীবন রাঙাতে অনেককেই করেছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

মাহফিলে যারা বয়ান করেছেন, তাদের অন্যতম হলেন গাজীপুর দাওয়াতুল হক মাদরাসার নাযিম, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, আল্লামা আবদুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আলফরিদী, মাওলানা মুনাওয়ার হুসাইন, মুফতি নূরুল ইসলাম, হাফেজ ক্বারী আব্দুল হক ও ড. শামছুল হক সিদ্দিক প্রমুখ।

বয়ানের ধারাবাহিকতা শেষ হতে রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই। তারপর চরখরিচা মাদরাসার ছাত্রদের খতমে কোরআন ও খতমে বোখারীর পর্ব শুরু হয়। আমীরুল উমারা আল্লামা মাহমূদুল হাসানের হাতেই হাফেজ ও মাওলানা ছাত্রদের শেষ সবক ও সম্মাননা পাগড়ি প্রদান করা হয়। এরপর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এই তরবিয়তি ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি: এফবিআই

কমাশিসা ডেস্ক:: ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’ নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে ...