শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ ভোর ৫:৫২
Home / কবিতা-গল্প / ফ্রি মাইন্ডের সর্বনাশা

ফ্রি মাইন্ডের সর্বনাশা

মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম :
শিক্ষার্থী, দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত।

নাজিয়া খাতুন।খুব ধার্মিক এক মহিলা। ধুমধাম করে বড় আয়োজনে বড় ছেলে রাফেকে বিয়ে করান পাশের গ্রামের সুন্দরী এক কন্যা দেখে । পুত্রবধুকে ঘরে তুলেন সাত রঙে সাজিয়ে । স্বপ্ন দদেখেন সুন্দর এএক ফ্যামিলি গড়ার।চার সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের লাগাম ধরে নতুন বউ ফাহিমার দাম্পত্য জীবন শুরু হয় । স্বামীর ছোট ভাই রাব্বি ছাড়া সংসারে দ্বিতীয় পুরুষ বলতে কেউ নেই ফাহিমার।রাব্বি কলেজের ক্লাস নাইনের ছাএ । বয়স সবে মাত্র ১৩। বিয়ের এক বছর পর স্বামী  রাফে  প্রবাসে চলে যান।স্ত্রী ফাহিমা ফসলের জমি বিক্রি করে স্বামীর ভিসার মুল্য পরিশোধ করেন। স্বামী প্রবাসে যাওয়ার পর ফাহিমা বাহিরের আনুষঙ্গিক কাজ ছোট্ট দেবর রাব্বিকে দিয়েইই সম্পাদন করান। দৈনিক বাজারসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু দেবর রাব্বি হাসি মুখে করে দেয় । সাংসারিক কাজে দেবরের সাথে কথাবার্তা , তার সামনে খোলা-মেলা পরিবেশে চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া এক সঙ্গেই হয়। একজন সাবালক দেবরের প্রতি যতটুকু আগলে চলা দরকার সেটুকু তেমন একটা করেন নি ফাহিমা। আর ভাবির সাথেও যতটুকু দৃষ্টি অবনত করে চকার দরকার রাব্বিও সেটুকুতে ছিলো উদাসীন। স্কুলের সহপাঠী অনেকেইই অবগত রাব্বির বাড়িতে তার ভাবী রয়েছে। সবাই একটু আধটু ঢং তামাশা এবং মজা করে তাকে নিয়ে । এর মধ্যে রাব্বিকে  বিকৃত মন-মানুসিকতার সহপাঠী দু’জন উস্কানি দেয় ভাবীর সাথে ইয়ারকি আড্ডা মারতে। তখন থেকে বাড়িতে এসে সে ভাবীকে নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে । গান-গল্প,একসাথে ফেইসবুক,চ্যাটিং,মুবি দেখা, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ভাবীর সাথে হাসাহাসিতে ব্যস্ত থাকে সবসময়।কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে রাব্বি ফ্রি মাইন্ড বলে উড়িয়ে দেয়।

বৃদ্ধা মা নজিবা খাতুনের এদিকে দৃষ্টি নেই। বয়সের গড়া পঞ্চাশ পেরিয়া যাচ্ছে। রাব্বি ক্লাস শেষে বিভিন্ন মেলা এবং শপিংমহল থেকে  বিভিন্ন রকমের উপহারসামগ্রী ভাবীকে দিয়ে মন জয়ের অবিরত চেষ্টা চালায়। এক সময় ভাবী নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দেবরের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে । বৃদ্ধ মায়ের নজর এড়িয়ে এক পর্যায় দু’জন পাপের জগতে হারিয়ে যায়। সাব্বির ও তার ভাবীর ফষ্টি-নষ্টি আশেপাশের অনেকে দেখে । গ্রামে গুন্ঞ্জন শুরু হয়ে যায় । ভাবী ফাহিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে । ডাক্তার দেখালে ধরা পড়ে- তার গর্ভে সন্তান আসবে । পাপের ফসল হিসাবে একটি সন্তানের জন্ম হয় ।

পুরো গ্রামে হৈ চৈ পড়ে যায় । গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ লোকজন একত্রিত হয়ে পরামর্শ করেন – কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় । নজিবা খাতুনের প্রবাসী ছেলে রাফেকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়ে বাড়িতে দ্রুত আসতে অনুরোধ করা হয় । রাফে চিঠি পেয়ে তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফিরে সকল ঘটনা শুনে নির্বাক হয়ে যায় । অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের গুণীজন বিচারে যে রায় দিবেন , সে তা মেনে নিবেন । তার পূর্বে ক্ষোভে সে ফাহিমাকে তালাক দেয় ।

নির্ধারিত দিনে গ্রামে সালিশ বৈঠকের রায় ঘোষিত হয় রাফে পরিবারের মানসম্মান হানির জন্য ফাহিমাকে দু‘লক্ষ টাকা জরিমানা ও গ্রামছাড়া করা হবে আর অভিযুক্ত রাব্বিকে বেত্রাঘাতের মাধ্যেমে শাস্তি প্রদান করা হবে । বিচারের রায় সবাই মেনে নেয়। রাফে মানুসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । ভাবতে থাকে কি হয়ে গেল । অশান্তির কালো নখের থাবায় পড়ে সংসার হয়ে গেল লন্ডভন্ড । সামাজিক ভাবে লান্ঞ্ছনা ও অপমানের শিকার কেন ? নিশ্চয় কোথাও ভুল আছে । তাহলে সে ভুল কোথায় ? নিশ্চয় ধর্মীয় বিধানের আলোকে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা না করার ফলেই এই শাস্তি পেলাম। আজকের ফ্রি মাইন্ডই নিয়ে গেলো আমাদের অনেক নিম্নে।আর দেরি না করে রাফে ফজরের আজান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর দরবারে ভুলের ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হলো।এবং বুঝতে পারলো ফ্রি মাইন্ড’র ভয়াবহ পরিণাম ও বেপর্দার হওয়ার অন্তরালে অশান্তি দাবানল।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...