শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:০৯
Home / আমল / বিশ্ব ইজতেমা ও ফাজায়েলে আ’মাল, কিছু ছিঁচকে হাদীস বিশারদদের চেঁচামেচি

বিশ্ব ইজতেমা ও ফাজায়েলে আ’মাল, কিছু ছিঁচকে হাদীস বিশারদদের চেঁচামেচি

মুফতি রেজাউল কারীম আবরার :

মুসল্লীদের পদভারে মুখরিত হতে শুরু করেছে কহর দরিয়ার তীর। আগামী পরশু থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। ফেইসবুকে বেশ সরব তাবলীগ বিরোধীরা। আক্রমণের শোণিত ধারায় থমকাতে চাচ্ছেন দাওয়াতের এই ধারাকে। শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া রহঃ লিখিত ‘ফাজায়েলে আ’মাল’ নিয়ে তাদের তীব্র বিষোধগার সত্যি হাস্যকর!তাদের কথা হল পুরো ‘ফাজায়েলে আ’মাল’ হল ভিত্তিহীন, জাল হাদীসে পরিপূর্ণ। আর তাবলীগিরা না জেনে সেগুলো হজম করে! আগে বিশ্ব ইজতেমাকে বেদয়াত বলে ফতোয়া উগড়াতেন। এখন আর ইজতেমাকে বেদয়াত বলেননা। কারণ তারা এখন হাদীসের নামে মাসিক ইজতেমা করেন! কেউ কেউ সুন্নাতে ভরা ইজতেমা করেন! তাদের রাগ এখন গিয়ে পড়েছে ‘ফাজায়েলে আ’মালের’ উপর। তাই এ সম্পর্কে কিছু কথা নিম্নে পেশ করা হল।হাদীস বিশেষজ্ঞরা,বিবেকের দরজা খুলে পড়বেন আশা করি।

দুনিয়াতে এমন কোন হাদীসের কিতাব নেই,যার হাদীস নিয়ে মুহাদ্দিসরা আপত্তি তুলেননি। এমনকি বুখারী শরীফের অনেক হাদীস সম্পর্কে ইমাম দারা কুতনীর (৩৮৫হিঃ) মত ইমাম আপত্তি করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার (৮৫২হিঃ)তার লিখিত বুখারীর অমর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারীর” ভূমিকা “হাদয়ূস সারী’তে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মুসলিমের হাদীস সম্পর্কে স্বয়ং আহলে হাদীসের মাথার তাজ মাওলানা আলবানী আপত্তি তুলেছেন এবং সেগুলোকে জয়ীফ প্রমাণিত করার কসরত করেছেন। যদিও আলবানীর আপত্তির শক্ত জবাব দিয়েছেন শায়খ সাঈদ মামদুহ মাহমুদ তার লিখিত “তানবীহুল মুসলিম ইলা তাআদ্দীল আলবানী আলা সহীহ মুসলিম” গ্রন্থে। এছাড়া তিরমিযী,আবু দাউদেও যয়ীফ এমনকি জাল হাদীসও রয়েছে। ইবনে মাজায়তো জাল হাদীস ভুরিভুরি। আপনি শুধু ইবনুল জাওযীর (৫৯৭হিঃ) “কিতাবুল মাওযুয়াত”পড়ুন, তাহলে দেখতে পারবেন যে, ইবনে মাজার অনেক হাদীসকে তিনি জাল বলেছেন । এছাড়াতো ইমাম আহমদ (২৪১হিঃ) লিখিত “মুসনাদে আহমদ” এবং বুখারী মুসলিম সহ অধিকাংশ মুহাদ্দীসদের উস্থাদ ইমাম আবু বকর ইবনে আবি শায়বা লিখিত “মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা” আপনি পড়ুন। সেগুলোতেও জয়ীফ এবং জাল হাদীস রয়েছে। আপনি হাকেম নিশাপুরির(৪০৫হিঃ)“আল মুসতাদরাক” দেখুন। সেটাকে তালখীস করেছেন ইমাম যাহাবী (৭৪৮হিঃ)। সে কিতাবে শত শত জয়ীফ এবং জাল হাদীস রয়েছে।

কিন্তু দুনিয়ার কোন মুহাদ্দিসতো জাল হাদীস থাকার কারণে ইবনে মাজাহ সহ বাকী কিতাবগুলোর বিরুদ্ধে কখনো বিদ্ধেষমূলক বক্তব্য দেননি। কিতাবগুলোকে জালিয়ে দেওয়ার কথা বলেননি।‘ফাজায়েলে আ’মাল’ জাল হাদীসে পূর্ণ, এজন্য সেটা ফাজলামি আমাল যারা বলে, তাদেরকে ইবনে মাজাহ শরীফ ধরিয়ে বলেন, পন্ডিত মহাশয় হাদীস পড়ুন এবং বলুন, এখানের কোন হাদীস জাল? দেখবেন কথা বন্ধ। হাদীস কোনটা জাল, কোনটা জয়ীফ? সেটা নির্ণয় করা বহুত দুর কি বাত! শুদ্ধ করে হাদীস পাঠ করতে ও পারবেনা। ভাই,শুধুমাত্র জয়ীফ এবং জাল হাদীস থাকার কারণে যদি ফাজায়েলে আমাল ফাজলামী হয়ে যায়, তাহলে আপনি দুনিয়ার আর কোন হাদীসের কিতাব পড়তে পারবেননা! সবগুলোকে তালাক দিতে হবে।

এছাড়া শায়খুল হাদীস জাকারিয়া রহঃ এর পূর্বে ফাজায়েল সংক্রান্ত আরো অনেকে বই লিখেছেন। উদাহরণ স্বরুপ ইমাম বায়হাকীর (৪৫৭হিঃ) “ফাজায়িলুল আওকাত” এবং শুআবুল ঈমানের” কথা বলুন। আপনি কিতাব দুটি তাহকীক করে পড়ার কথা বলছিনা,(অবশ্য জানি যে,আপনাদের সে যোগ্যতা নেই)শুধু মুহাক্কিকের বক্তব্য সহ কয়েক পৃষ্টা পড়ুন, দেখবেন অনেক জয়ীফ এমনকি জাল হাদীসও রয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ের প্রসিদ্ধ কিতাব ইমাম মুনযীরি (৬৫৬হিঃ) লিখিত “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” দেখুন। শত শত জয়ীফ এবং জাল হাদীস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিতাবের পাতায় পাতায়। আলবানী মরহুমতো কিতাবকে দুই ভাগ করে “সহীহুত তারগীব” এবং “যয়ীফুত তারগীব” নামে ছাপিয়েছেন। তাহলে এবার বুঝূন সে কিতাবে জয়ীফ হাদীসের সংখ্যা কত!

ইবনে রাজাব হাম্ভলীর (৭৯৫হিঃ)মত বিচক্ষণ মুহাদ্দিসও “লাতায়িফুল মাআরিফে” বিভিন্ন দিনের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে জয়ীফ এবং জাল হাদীস এনেছেন। কিতাবের মুহাক্কিক শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আমের অনেক জায়গায় ইবনে রজাবের উপর আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন যে,তার মত মুহাদ্দিসও এরকম হাদীস এনেছেন!

মোটকথা হল,ফাজায়েলের বিষয়ে যারাই কিতাব লিখেছেন,তারাই তাসাহুলের স্বীকার হয়েছেন। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রহঃ লিখিত ‘ফাজায়েলে আমালে’ অনেক জয়ীফ এবং জাল হাদীস রয়েছে, তা আমরা মানি!কিন্তু সহীহ হাদীসের সংখ্যা বেশি। আপনি ফাজায়েলে আমালের শুধু সহীহ হাদীসগুলো একত্রিত করুন, তাহলে এক বিশাল ভান্ডার হবে। এছাড়া কিতাবটির তাখরীজ এবং তা’লীকের ও কাজ চলছে। ইতিমধ্যে শায়খ আব্দুল হাফিজ মাক্কী দাঃ বাঃ এর তত্বাবধানে “তাহকীকুল মাকাল” নামে একটি তাখরীজ ছেপে এসেছে। যদিও সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। আলহামদুলিল্লাহ,পূর্নাঙ্গ তাখরীজের কাজও চলছে।

ফাজায়েলের অন্যান্ন কিতাবগুলি সর্বযুগে সমাদৃত এবং পঠিত।সেগুলো জাল এবং জয়ীফ হাদীসে ভরা,কিন্তু সেগুলোকে তারা ফাজলামী বলেন না। ব্যঙ্গ করেন না! দোষ শুধু তাবলীগিদের ‘ফাজায়েলে আ’মালের’!

তাবলীগিরী তাহকীক ছাড়া ফাজায়েলে আমাল পড়ে,তাতেই উনাদের যত আপত্তি!অথচ উনারা মতি,মুযাফফার বিন মুহসিন,মুরাদ বিন আমজাদ,আসাদুল্লাহিল গালিবের মত বিশ্বখ্যাত মিথ্যুক, এবং ভাওতাবাজরা যা লিখে এবং বলে, সব গ্রোগাসে গিলেন। সেগুলো তাহকীক করার প্রয়োজন অনুভব করেননা।অথচ সেগুলোতে ইচ্ছাকৃত এমন নিপুণভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে,যেগুলো ঐ ছিঁচকে মাথা মোটা হাদীস বিশারদরা বুঝতে পারবে না! নিজেরা জালিয়াতিকারীদের বটতলার বই পড়ে চোখ বুঝে! যত দোষ তাবলীগওয়ালারা ফাজায়েলে আমাল পড়লে!

তুরাগ, তোমার পারের পবিত্র পরিবেশকে আমি ভালবাসি। রহমত স্নাত হতে আমিও আসছি ইনশাআল্লাহ তোমার কোলে আগামীকাল রাতে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...