শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:৪২
Home / প্রতিদিন / ৭ নভেম্বর ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, কেন?

৭ নভেম্বর ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, কেন?

যাকুয়ান রিদা ::

%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%acশুরু হলো নভেম্বর। ঐতিহাসিক নানা ঘটনা-রটনার মাস। সামনে ৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ দিনটি খুবই আলোচিত। সমালোচিতও কম নয়। এবার ৭ নভেম্বর ঘিরে আরো আগেই রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ উত্তেজনা বাড়ছে প্রতিদিনই। ইতিমধ্যেই বিএনপি দিনটি পালন উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আরো কয়েকটি দল ও সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের তরফে হুঁশিয়ারিও ঘোষিত হয়েছে, সিপাহি বিপ্লবের নামে ৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসররা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

দেশের দ্বিতীয় বড় দল বিএনপি ৭ নভেম্বর পালন করে ‌‌জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিন হিসেবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দল দিনটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি দেয়। কর্মসূচি পৃথক দিলেও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিন হিসেবেই তারা পালন করে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পালন করে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিন হিসেবে। মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার দিন হিসেবে পালন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান`সহ আওয়ামী লীগপন্থি কিছু সংগঠন।

এ বছর দিনটি পালন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই বিএনপি ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটির স্ট্যানডিং কমিটির মেম্বার ও ঢাকা সিটি কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি এ উপলক্ষে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশের চমক দেখাবে।

বিএনপির কর্মসূচি ও প্রস্তুতি

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিন উদযাপন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, এ উপলক্ষে আগামী ৫ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ১০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি।

৭ নভেম্বর সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক অফিস এবং সারাদেশে বিএনপির অফিসগুলোতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ফুলের তোড়া অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। দিনটি উপলক্ষে পোস্টার, বিভিন্ন মিডিয়ায় বিশেষ প্রতিবেদন ও মতামত ছাপা হবে। নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও।

অনুমতি মিললে ৭ অথবা ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ আয়োজন করা হবে। ঢাকা সিটি বিএনপি মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কর্মসূচি ঘোষণার পর গত শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী ভবন মিলনায়তনে ঢাকা সিটি বিএনপি যৌথসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতি ছিলেন বিএনপির স্ট্যানডিং কমিটির মেম্বার ও ঢাকা সিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। সভাশেষে তিনি ঘোষণা দেন, বিএনপি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিপ্লব ও সংহতি দিন’ উপলক্ষে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। আশা করছি, সরকার আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেবে। সমাবেশ সফল করতে তিনি সিটি বিএনপির প্রতিটি এলাকায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, পুলিশি জুলুম বন্ধ করুন। দেখুন, বিএনপি সংগঠিত কি না। দেখুন, বিএনপির সভা-সমাবেশে কত লোকের সমাগম হয়।

জাসদ (ইনু)-র কর্মসূচি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সূত্রে জানা গেছে, এ দিন তারা  আলোচনা সভার আয়োজন করবে। প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জাসদ সিপাহি জনতার অভ্যুত্থান দিন হিসেবে পালন করে।

জাসদ (জেএসডি)-র কর্মসূচি

জেএসডি সূত্রে জানা গেছে, ‘বিএনপি বিপ্লব ও সংহতি দিন হিসেবে পালন করলেও এটিকে তারা ভিন্নভাবে দেখে। দিনের নামের চাইতে উপলব্ধিটা তাদের কাছে বড় বিষয়। এ দিন কেন্দ্রীয় অফিসে আলোচনা সভা হবে। এতে জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বক্তব্য রাখবেন।

আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি

৭ নভেম্বর কেন্দ্রিক ‌সিপাহি বিপ্লবের নামে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে চাইলে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সিপাহি বিপ্লবের নামে ৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসররা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

সোমবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা সিটি উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তারা এই হুঁশিয়ারি দেন।

সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাই প্রথম। এই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোরভভাবে দমন করা হবে। বক্তব্যের শুরুতে তিনি কাব্যিক ভাষায় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদদের স্মরণ করেন। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এ সময় আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের নেতা। তিনিই একমাত্র নেতা, যাকে সবসময় আমি কল দিয়ে পাই। সে রাত ২টা হোক, সকাল ৫টা হোক। তিনি সবসময় নেতা-কর্মীদের খোঁজ নেন। কেউ ভাল পদ-পদবি না পেলে হতাশ হবেন না। ধৈর্য ধরুন, সময় আপনার কাছে পদ নিয়ে আসবে। এ সময় তিনি নিজেকে এর বাস্তব উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সিপাহি বিপ্লবের নামে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসররা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তারা সিপাহি বিপ্লবের নামে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আড়াল করতে চায়।

সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন। আরো অংশ নেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হহানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম প্রমুখ।

ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর

ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর শুরু হওয়া রক্তাক্ত এক অধ্যায়ের অবসান ঘটে এই দিনে। রক্তস্নাত অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এই দিনে তৎকালীন সেনা উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে ওই সময়ের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির আপাত অবসান ঘটে। বিএনপি দিনটিকে `জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিন` হিসেবে পালন করলেও জাসদ `সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান দিন` হিসেবে উদযাপন করে। কয়েকটি সংগঠন `মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যার দিন` হিসেবে পালন করে থাকে।

১৯৭৫ সালের এই দিনে জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে সিপাহি-জনতা আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশা প্রতিহত করে দেয় বলে বিএনপির ভাষ্য। দলটির দাবি, এভাবে তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। জাসদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পুনর্দখলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের এই দিনে `সিপাহি-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান` ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বরের ওই অভ্যুত্থান ঘটে। গত চার দশকের অধিকাংশ সময় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিন সরকারিভাবে পালিত হয়েছে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দিনটিতে সরকারি ছুটি ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ ছুটি বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ছুটি পুনর্বহাল করে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ছুটি আবার বাতিল করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সে সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...