শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:৫০
Home / আকাবির-আসলাফ / আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত

আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত

মুফতি শায়খ জিয়া রাহমান ::

bokhariএটাই আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অনন্য বিশেষত্ব যে, আমরা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি, তাদের ফযীলত ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আহলে বাইতের প্রতি মহববত পোষণ করি। আর আমাদের এই প্রাচুর্য নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এই মিলনায়তনটি যার স্মৃতি বহন করছে (ইমামে আহলে সুন্নত হযরত মাওলানা আব্দুশ শাকুর ফারূকী রাহ.) আমি নিজে সাক্ষ দিচ্ছি, তার নিজেরও মতাদর্শ এটাই ছিল। এটাই ছিল হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ. এবং তার বংশধরদের মতাদর্শ। এ মতাদর্শটি লালন করতেন হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী রাহ.। আমি পড়েছি, স্পষ্ট মনে আছে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাহ.-এর পিতার (হযরত শায়খ আব্দুল আহাদ সেরহিন্দী রাহ.) ইন্তেকালের সময় যখন ঘনিয়ে এল, একদম উর্ধ্বশ্বাস জারি হয়ে গেল তখন মুজাদ্দিদে আলাফেসানী বললেন, আববাজান! আপনি তো বহুবার বলেছেন, আহলে বাইতের প্রতি মহববত পোষণ মানুষের ঈমানসহ সুন্দর মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখে।’ উত্তরে তার আববা বললেন-আমি তো সেরকমই দেখতে পাচ্ছি।’

ওই কিতাবে এ ঘটনা বর্ণনার পর পরই এই কবিতাটি লেখা হয়েছে-

الہى بحق بنى فاطمہ + كہ بر قول ايماں كنى خاتمہ
অর্থ : হযরত ফাতেমা রাযি.-এর সন্তানদের অসিলায় হে আল্লাহ!/ঈমানসহ আমাদের মৃত্যু দান কর।

এই মতাদর্শই আমাদের শিআর-ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য। কোনো মূল্যের বিনিময়েই এ মতপথ আমরা ছাড়তে প্রস্তুত নই। এই ধারাবাহিকতার সঙ্গেই আমরা খোলাফায়ে রাশেদীনকে (সব মানুষের মাঝে খেলাফতের সবচেয়ে বেশি হকদার) বিশ্বাস করি। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্যও এই ধারাবাহিকতার সঙ্গে নির্ধারিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. দ্বিতীয় হযরত ওমর ফরূক রাযি. তৃতীয় হযরত উসমান গণী রাযি. এবং চতুর্থ হযরত আলী রাযি.-এই ধারাবাহিকতার প্রতি আমরা বিশ্বাস পোষণ করি। আমরা তাদের ধারাবাহিকতা, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও খেলাফতের সত্যতার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থাশীল। একই সঙ্গে আমরা আহলে বাইতের প্রতিও মহববত পোষণ করি এবং হযরত হাসান-হোসাইন রাযি.-এর পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ সঠিক মনে করি।

আমাদের নির্ভরযোগ্য মুজতাহিদ ও ইমামদের সবাই ইয়াযীদের মাধ্যমে অনাচার ও পাপাচার সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে দ্বিধাহীন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. সম্পর্কে পরিষ্কার একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, তার সাহেবযাদা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আববাজান! কেউ কেউ বলে যে, আপনি ইয়াযীদকে পছন্দ করেন। তিনি উত্তর দিলেন, বেটা! যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস করে সে কি ইয়াযীদকে পছন্দ করতে পারে? সাহেবযাদা তাকে বললেন, তাহলে তাকে লা’নত করেন না কেন? তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার বাবাকে কখনও কারও প্রতি লা’নত করতে শুনেছ? (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৪৩)

ইমাম ইবনে তাইমিয়ারও মতাদর্শ ছিল এটাই। যখন তাতারী নেতা বোলায়ীর সঙ্গে তার কথোপকথন হয় তখন তিনি ইয়াযীদ সম্পর্কে কঠোর নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেন। বোলায়ী তখন ইয়াযীদপ্রীতি থেকে নিজের দূরত্বের কথা ব্যক্ত করে এবং ইয়াযীদের কর্মকান্ডের ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরে। (ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া, খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫১১)

হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাহ. শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. এবং আমাদের সব পূর্বসূরীর মতাদর্শ ও মাসলাকও ছিল এটাই। ইমামে আহলে সুন্নত মাওলানা আব্দুশ শাকুর রাহ.কে আমি জানতাম। আহলে বাইতের প্রতি, হযরত হোসাইন রাযি.-এর প্রতি তার গভীর মহববত ছিল। এমনকি আহলে বাইতের সঙ্গে সম্পর্কিত ও যুক্তজনদের প্রতিও তাঁর কী পরিমাণ ভালোবাসা ছিল-সেটা সবাই জানি। এই বিশেষত্ব থেকে আমাদেরকে কখনো দূরে সরানো যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের কখনো কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া চলবে না। না সাহাবায়ে কেরামের প্রতি সম্মাননার বিষয়ে, না খোলাফায়ে রাশেদীনের ধারাক্রমের বিষয়ে এবং না হযরত হাসান-হোসাইন রাযি.-এর কর্মের সঠিকতা ও তাদের পদক্ষেপের শুদ্ধতা ও বরকতময়তা সম্পর্কে। এসব বিষয়ে তাদের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধার অটুট অবস্থান বজায় রাখতে হবে।

টীকা:
* ইয়াযীদের জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য হতে পারে তার ছেলে মুআবিয়া ইবনে ইয়াযীদের বক্তব্য। শাসন ক্ষমতায় না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকরা লিখেন-

তিনি তার বাবার শাসন ক্ষমতার আলোচনা করতে গিয়ে তার বাবার অসঙ্গত আচরণ ও কর্মকান্ড, তার নিজের ওপর অত্যাচার, উম্মতে মুহাম্মদিয়ার খেলাফতে উযমার বিষয়ে তার অযোগ্যতা, জুলুম-নির্যাতন, আল্লাহর বিধানের বিষয়ে দুঃসাহসী আচরণ আর রাসূলের বংশধরদের চরম অবমাননা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তার দু’চোখে অশ্রু ভরে যায়। দীর্ঘক্ষণ তিনি কাঁদতে থাকেন। (তারীখুল খামীস, দ্বিতীয় খন্ড, প্রণেতা : শায়খ হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান দিয়ারবকরী, পৃষ্ঠা-৩৩৬ মুদ্রণ : ১৩০২ হিজরী)

এছাড়াও কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার পাশাপাশি খোদ মদীনার হাররাতেও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। এতে রাসূলের শহর-দারুল হিজরার চরম অসম্মান এবং ওখানকার বাসিন্দাদের চূড়ান্ত অবমাননা হয়েছে। এটিও কম নিন্দাযোগ্য কোনো ঘটনা ছিল না।

(দেখুন : ইতিহাসের বিভিন্ন গ্রন্থ)
মূল: সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ,
অনুবাদ: শরীফ মুহাম্মদ

(মাসিক আল-কাউসার, নভেম্বর: ২০১২)

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

হজরত মুয়াবিয়া রাজিয়াল্লাহু আনুহু

মুহাম্মাদ ফায়সাল:: হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ৬০৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। রাসুল (সা.)-এর হিজরতের সময় তাঁর বয়স ...