শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:২০
Home / অনুসন্ধান / প্রসঙ্গ টকশো : আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ও রুহি ; একটি নির্মোহ পর্যালোচনা
মাসুম আহমদ

প্রসঙ্গ টকশো : আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ও রুহি ; একটি নির্মোহ পর্যালোচনা

মাসুম আহমদ

মাসুম আহমদ ::

৩ অক্টোবর ২০১৬ সোমবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন –এর বার্তা সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীন এর উপস্থাপনায় এডিটর’স পিক অনুষ্ঠানে কওমী মাদ্রাসা’র স্বীকৃতি প্রসঙ্গে একটি রিপোর্ট দেখানো হয়। এই প্রসঙ্গে লাইভ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ হাফিজাহুল্লাহ ও মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী।

মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব দেশের শীর্ষ আলেমদের একজন। কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি বিতর্কিত। কিন্তু আমাদের মুরব্বীদের একজন হিসেবে তাঁকে মেনে নিতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয় ছিলেন, আছেন…. ভবিষ্যৎ আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।

মাইনুদ্দীন রুহী সাহেবকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বেশ অপছন্দ করি। ফেসবুকে অনেকবার প্রমাণসহ বলেছি, কেন মাইনুদ্দীন রুহীকে আমার সন্দেহভাজন মনে হয়। এখন আর এসব বলতে ভালো লাগে না। আবেগ দরদ দুশ্চিন্তার বিপরীতে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়।

ভাবতে কষ্ট হয়, কওমী মাদরাসার স্বীকৃত প্রসঙ্গে বৃহৎ অংশের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন রুহী সাহেবের মতো একজন ব্যবসায়ী। তিনি আবার ভালো আলেমও নন। বোর্ডের প্রতিনিধি তো ননই। তবুও না হয় মেনে নেয়া যেতো, যদি তিনি যোগ্য হতেন। তিনি কেমন অযোগ্য জানতে চান?

এডিটর’স পিক অনুষ্ঠানে কওমী মাদরাসা প্রসঙ্গে ১৮ মিনিট কথাবার্তা হয়েছে। ৩ মিনিটের রিপোর্ট বাদ দিলে সরাসরি আলোচনা হয়েছে ১৫ মিনিট। মনে করি উপস্থাপক ও দুজন আলোচক যদি সমভাবে আলোচনা করেন, তবে প্রত্যেকেই ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। আসুন, দেখি মাইনুদ্দীন রুহী সাহেব এই ৫ মিনিটে কি কি কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

মাইন উদ্দিন রুহি
মাইন উদ্দিন রুহি

(১) বক্তব্যের শুরুতে তিনি বিনা কারণে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন এর মাধ্যমে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। > আমি জানি না, রাষ্ট্রীয় কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন না হয়ে পুরো দেশবাসীকে অকারণে এরূপ ধন্যবাদ দেয়ার রীতি কওমী অঙ্গনের বাইরে আছে কিনা। বিষয়টি হাস্যকর দেখায়।

(২) তিনি ‘উদ্যোগ’ শব্দটি দু’বার বলতে চেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে উচ্চারিত হয়েছে ‘উদ্বেগ’। বলেছেন : সরকার যে উদ্বেগ নিয়েছে…… > মাদরাসায় পড়ুয়ারা বাংলা জানে না এই অপবাদ তো ছিলো। সহজ সরল বাংলা শব্দের উচ্চারণ জানে না এই কথাও অনেকের জানা হয়ে গেলো। রুহী সাহেব এই কারণে ধন্যবাদ পেতেই পারেন।

(৩) মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী সাহেব দাবী করলেন, দেশের ৮০/৯০% কওমী মাদরাসার প্রতিনিধিত্ব করে বেফাক্ব। > বেফাক্ব দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু ৯০% মাদরাসা বেফাক্বের অধীনে পরিচালিত কথাটি পুরোপুরি বানোয়াট। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে অধিক কওমী মাদরাসা অবস্থিত। সবচেয়ে প্রাচীন বোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারা সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তো সিলেটের অবস্থা না বললেও চলে। চট্টগ্রামের অবস্থাও স্বচক্ষে দেখা হয়েছে। দেশের ২য় বৃহৎ মাদরাসা পটিয়া, ঐতিহ্যবাহী দারুল মায়ারিফসহ অনেক মাদরাসা আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের অধীনে পরিচালিত।
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব এই দাবীর প্রেক্ষিতে বলেন, “দেশে কমবেশ ২০,০০০ কওমী মাদরাসা রয়েছে। বেফাক্বুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার অধীনে পাঁচ/ছয় হাজার মাদরাসা পরিচালিত। এছাড়া অন্যান্য মাদরাসা আঞ্চলিক বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়”।
বিশ হাজার আর পাঁচ হাজার সংখ্যার বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে রুহী সাহেবের দাবী যে ভুয়া সন্দেহের অবকাশ নেই। আর টেলিভিশনের পর্দায় নির্দ্বিধায় এমন ভুয়া দাবী যিনি করতে পারেন, তার সম্পর্কে তেমন কিছু না বললেও চলে।

(৪) বয়স বিবেচনায় মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব রুহী সাহেবের উস্তাদ এমনকি দাদা উস্তাদও হতে পারেন। কিন্তু যেভাবে তিনি নাম বললেন, তাতে মনে হবে যেন সমসাময়িক কিংবা ছোট কারও সাথে কথা বলছেন। শুরুতে একবার বললেন ‘মাওলানা মাসউদ সাহেব’। শেষের দিকে একই সাথে তিনবার উচ্চারণ করলেন ‘মাওলানা মাসউদের প্রণয়ন-কৃত, মাওলানা মাসউদের প্রণয়ন-কৃত, মাওলানা মাসউদের প্রণয়ন-কৃত’।> কমন্সেন্স যাঁদের আছে, তারা এটুকু বিষয় বুঝেন যে, কারও নাম বললে কিংবা সম্বোধন করলে পুরো নাম উল্লেখ করে সম্বোধন করাই হচ্ছে ভদ্রতা। আর সম্বোধিত ব্যক্তি যদি সম্মানী ব্যক্তি হন, তবে উপাধিসহ সম্বোধন করার রীতি তো জ্ঞানীগুণীরা জানেন। যেমন : মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ’র নাম বলার পর বললেন ‘মাদ্দা জিল্লুহুল আলী’। কিন্তু রুহী সাহেব একজন মুরব্বী মানুষের নাম যেভাবে টেলিভিশনের পর্দায় বললেন, তাতে ভদ্র মানুষ মাত্র লজ্জা পাবে।

(৫) মাইনুদ্দীন রুহী সাহেব বললেন : ২০১০ ও ২০১৬ শিক্ষা আইনের মধ্যে সংঘর্ষ রয়েছে। উপস্থাপক পাল্টা প্রশ্নে কি সংঘর্ষ জানতে চাইলে নিরুত্তর! > যদি কোনও বিষয় সঠিকভাবে জানা না থাকে, তবে সেই বিষয়ে পাবলিক প্লেসে আলোচনা করা বোধসম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না। সবাই জানে, শিক্ষানীতিতে ঝামেলা আছে। কি কি সমস্যা সবগুলো না জানলেও অল্প কিছু তো জানার কথা। কোনও উত্তর না দেয়ার দ্বারা দাবী হাস্যকর হয়ে উঠলো না! অন্তত ২/১ সমস্যার কথা বললেও তো ইজ্জত রক্ষা হতো। অনুষ্ঠানের দর্শকরা অন্তত বুঝতে পারতো যে, মাইনুদ্দীন রুহী সাহেবের এই বক্তব্য সঠিক। অজ্ঞতা অযোগ্যতার কারণে সত্যও কখনো কখনো মিথ্যায় পর্যবসিত হয় রুহী সাহেব তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

(৬) ২০১৩ খৃস্টাব্দে গঠিত কওমী শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন হযরাতুল আল্লাম মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ। মাইনুদ্দীন রুহী বললেন, হযরতকে বাদ দিয়ে নতুন কমিশন ঘোষণা করা হয়েছে।>>> রুহী সাহেবের এমন দাবীর পরপরই মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব জানান, “এমন দাবী সঠিক নয়। নতুন কমিশন গঠিত হয়নি। পুরনো কমিশনের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে একটি অস্থায়ী কমিটি বানানো হয়েছে মাত্র। তাই তো এতে কাউকে চেয়ারম্যান করা হয়নি। একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে মাত্র”।
এই বক্তব্য সঠিক। ৯ সদস্যের যে কমিটি সরকার কর্তৃক বানানো হয়েছে, তাতে একজনকে আহ্বায়ক ও একজনকে সদস্য সচিব বানানো হয়েছে। এতে বুঝা যায়, গঠিত কমিটি অস্থায়ী। বাদবাকি আল্লাহ্‌ তায়ালা ভালো জানেন। তবে এটুকু বিশ্বাস করি, হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ সক্রিয় হলে তিনিই কওমী কমিশনের প্রধান হবেন।

ফরিদ উদ্দিন মাসউদ
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

(৭) যাক নবগঠিত কমিশন সম্পর্কে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের বক্তব্যের পর রুহী সাহেব আর মুখ খুলতে সাহস পাননি। তিনি আলোচনা নিয়ে যান ভিন্ন-দিকে। দাবী করে বসেন, হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ নাকি মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবকে অপছন্দ করেন। এই দাবীর প্রেক্ষিতে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ যে উত্তর প্রদান করেছেন, তা হৃদয়কে আলোড়িত করতে বাধ্য।
তিনি বলেন : আমার মনে হয় না যে, হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ আমাকে অপছন্দ করেন। আর উনি এমন ব্যক্তিত্বও না যে, আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষকে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আসবে।

(৮) এতোগুলো উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে বেকায়দায় পড়ে মাইনুদ্দীন রুহী সাহেব সরাসরি আক্রমণে গেলেন। বলে উঠলেন : ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবকে আমি বড় আলেম হিসেবে চিনতাম। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোটায়। তার কারণে শোলাকিয়ার মতো ঈদগাহ, যেখানে ২/৪ লাখ মানুষ নামাজ পড়তো। এবার মাত্র ২০০ জন নামাজ পড়েছে।

উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন যখন বললেন, কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির সাথে ব্যক্তি ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের জনপ্রিয়তার কি সম্পর্ক? জবাব আসলো, কওমী মাদরাসা হচ্ছে জনগণের মাদরাসা। এখানে জনপ্রিয়তা মেইন। এজন্য স্বীকৃতির প্রশ্নে জনপ্রিয়তা লাগবে। যিনি জনগণের কাছে জনপ্রিয় নন, তাঁর সুপারিশে জনগণের আস্থা থাকবে না। > কি হাস্যকর জবাব। রুহী সাহেবের দাবী, কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়ে এমন ব্যক্তি কাজ করবেন, যিনি জনগণের কাছে জনপ্রিয়। এটি কি নির্বাচনী বিষয় যে জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা থাকতে হবে। পুরোপুরি বাচ্চাদের মতো অর্থহীন আলাপ। উদ্দেশ্য আর উচ্চারণে কোনও মিল নেই। জনপ্রিয় গেইম টেম্পল রানের এলোমেলো পথের মতো এলোপাথাড়ি কথাবার্তা। সিলেটী একটা প্রবাদ আছে। ‘কই আব্বাস আর কই ডাবগাছ’।

যাক, মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী সাহেবের এমন বিদ্বেষী কথাবার্তার জবাবে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের জবাব কেমন ছিলো দেখলে অবাক হবেন। তিনি স্থিরতার সাথে বললেন : ‘আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই… আমার শ্রদ্ধেয় ছোট ভাই’। এরূপ বিনয় শুধু বড়দের কাছেই পাওয়া সম্ভব।

আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে অযোগ্য মানুষদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসার তাওফীক্ব দান করুন।

মাসুম আহমদের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।

টকশো ভিডিও লিংক https://www.youtube.com/watch?v=Zt8kGAw9e40

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...