বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৪৪
Home / কওমি অঙ্গন / মাওলানাদের জীবনের অসাধারণ একটি গল্প

মাওলানাদের জীবনের অসাধারণ একটি গল্প

লাবীব আব্দুল্লাহ:

সেই মাওলানা ভাবছেন…

14317597_1770317113211343_5697430864481675603_nআমার পরিচিত এক নবীন আলেম৷ আলেম না বলে আমি মাওলানা বলি৷ দাওরা পর্যন্ত পড়লেই আলেম হয় না৷ তাদেরকে ফারেগ বা মাওলানা বলা যেতে পারে৷ কেউ কেউ হয়তো আলেম হোন৷ সবাই আলেম নন৷ আলেম হওয়া কঠিন বিষয়৷ দীর্ঘ সাধনার বিষয়৷ আলেমের যে গুনাবালী থাকা প্রয়োজন তা দাওরা পড়লেই অর্জিত হয় না৷
এই বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করার ইচ্ছে নেই৷ সব আলেম মাওলানা কিন্তু সব মাওলানা আলেম নন৷ এই নবীন মাওলানাকে ব্যবসা করতে পরামর্শ দিলাম কিন্তু তিনি দীনের খেদমত করবেন৷ বললাম, দীনের খেদমত ও পেশাকে পৃথক রাখো৷ সে বিষয়টি উপলব্দি না করেই মাদরাসায় দীনের খেদমত শুরু করলো৷ প্রথমে অনেক জজবা৷ তাকে নাযেমে তালীমাতের সহকারী বানানো হলো৷ দায়িত্ব দেওয়া হলো নাযেমে দারুল ইকামার৷ ছাত্রাবাসের দায়িত্বশীল৷
তাকে বললাম, দায়িত্ব না নিয়ে শুধু তালীমের কাজে লেগে থাকো৷ অতিরিক্ত দায়িত্ব তোমার ক্ষতি করবে৷ ইলমী ক্ষতি৷
সে তার তোয়াক্কা করলো না৷
মাদরাসার মুহতামিম পীর সাহেব৷ তিনি নানা প্রকার হাদিয়া পান৷ বেতন তো আছেই৷ আবার তিনি বক্তাও৷ সেখান থেকেও উপরি টাকা৷ গাড়ি হাকিয়ে ছয় মাস পার করেন৷ মাদরাসার কতটুকু দায়িত্ব পালন করেন তা তিনিই জানেন৷ মুহতামিম মাদরাসার শিক্ষকদের যথা সময়ে বেতন দেওয়াকে বাজে কাজ মনে করেন৷ সেটি কোনো কাজই না৷ শিক্ষকরা পড়াবেন আবার বেতন কেন? তিনি ইখলাসের ওয়াজ করেন৷ নিজে কিন্তু পীরালি, ওয়াজগিরি ও মুহতামিমের কাজে টাকা নিতে একশ একশ৷ অন্যের বেলায় তিনি ইখলাসের ওয়াজ করেন৷ সেই নবীন মাওলানার বিয়ের সময় হয়৷ পিতা মাতার চাপে বিয়ে করে৷ বিয়ের সময়ও অল্প খরচের বিয়ের ওয়াজ করে মুহতামিম বেতন দেন না৷ নতুন মাওলানা মনে মনে কষ্ট অনুভব করে৷ বিয়ের খরচ, শশুড় বাড়িতে যাতায়াত খরচ কিছু থাকে না পকেটে৷ পিতা মাতা মনে করেন ছেলে তো চাকুরি করে৷ ছেলে মনে করে আমি তো দীনের খেদমত করি৷ নতুন বউ মনে করে আমার জামাই কি কিপটা৷ কিপ্টুস? প্রয়োজনের সামান পত্রও দেয় না৷ বছরের আট মাস বেতন বাকি৷ বাধ্য হয়ে একটি মসজিদের ইমামতি নেয়৷ ইমামতির বেতন পনর শত টাকা৷ কমিটির ধমক ফ্রি৷ ছুটির কোনো সুযোগ নেই৷ নতুন বউ অপেক্ষায় থাকে এই তো জামাই আসবেন কিন্তু জামাই মাসে একবার আসেন তাও খালি হাতে৷ ছেলে ও মেয়ের স্বপ্নগুলো কাঁদতে থাকে৷ নীরব কান্না৷
মুহতামিমকে বেতনের কথা বললে তিনি উত্তর দেন আপনি নতুন শিক্ষক৷ বেতন বেতন করেন কেন? মেহনত করতে থাকেন৷ ইলমের তরক্কি হবে৷ কালেকশনের মৌসুমে ধান ও চামড়া কালেকশন করে বেতন নিয়ে নিবেন৷ ওয়াজ মাহফিলের সময় কুপন নিবেন৷ নতুন মাওলানা লাজুক৷ ছাত্র জীবনে নিজের টাকায় পড়েছে৷ কালেকশন পছন্দ করে না৷
বছর শেষে মাদরাসা ও মসজিদ ছেড়ে দিলো৷ ইচ্ছে অন্যকোনো চাকুরি করবে৷ তাকে বললাম কী করতে পারবে?
সে সরলভাবে উত্তর দিলো, মাদরাসায় পড়ালেখা ছাড়া এক যুগে তো কিছু শিখি নাই৷
বললাম,
নতুন করে কিছু শিখো৷ উপার্জনের কত পথ খোলা৷ আগেই তো বলেছিলাম, পেশা ও খেদমত পৃথক রাখো৷
বিয়ের এক বছর পূর্তিতে তার ঘরে একটি ছেলেও অতিথি হয়েছে৷ নতুন চিন্তা পরিবারে৷ পিতার চাপ তুমি নিজে কিছু করো৷ বউয়ের চাপ টাকা পাওয়া যায় এমন কিছু করো৷
তারও ইচ্ছে কিছু করবে৷ কিন্তু এই অসহায় সময়ে কাছে কেউ নেই৷ আছে হতাশা৷ অন্ধকার৷ নীরব দুঃখ৷
আমার কাছে এলো একদিন সে৷ বললাম,
ইলমে দীন সেটি আখেরাতের জন্য৷ এটি শিখেছো শুকরিয়া আদায় করো আল্লাহর৷ কৃতজ্ঞ হও অভিভাবক ও উস্তাদের প্রতি৷ কিন্তু তোমাকে বাস্তববাদী হতে হবে৷ পেশা হিসেবে কিছু একটি প্রশিক্ষণ নিতে পারো৷ নতুন করে শিখো৷
সে হতাশার সূরে বলে,
ইংরেজিটাও শিখি নি তাহলে ভালো করে কম্পিউটার পারতাম৷ আউটসোর্সিং করতাম৷ বাংলাও ভালো পরি না তাহলে বই পত্র অনুবাদ করতাম৷ কী করলাম তাহলে মাদরাসায়?
আমি চুপ থাকলাম৷
মনে মনে বললাম,
বাংলা নোট পড়ে বোর্ডে ভালো রেজাল্ট করেছো৷ আড্ডা ও তর্ক তরেছো বেহুদা বিষয় নিয়ে৷ সুযোগ পেলেই ঘুম৷
পেশামূলক কিছু করার চিন্তাও করো নি৷ ভেবেছো খেদমত করবো৷ খেদমত তো করতে গেলেই ফিরে এলে কেন?
তাকে সাহস দিয়ে বললাম,
সকালে বা বিকেলে মকতব পড়াও এটি দীনের বড় খেদমত এবং বাকি সময় দোকানদারি করো তা হোক মুদির দোকান৷ আগ্রহ থাকলে গাড়ি চালাও৷
এতে হালাল উপার্জন হবে৷ রককত হবে ফ্রেস৷ বউ বাচ্চা খাবে হালাল৷ মানসিক তৃপ্তি পাবে৷
সেই নবীন মাওলানা ভাবছে কী করবে?
আমিও ভাবছি এ প্রজন্মের মাওলামাদের নিয়ে৷

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...