শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:০৮
Home / প্রতিদিন / ফারাক্কার স্মৃতি

ফারাক্কার স্মৃতি

farakkaমেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান : উনিশ শত একাওর সালের অক্টোবর/ নভেম্বর মাস হবে। আমি এবং আমার কাটলা মুক্তিফৌজ ক্যাম্পের স্বতীর্থ সহযোদ্ধা আনিসুর রহমান ( মৃত ) সহ কোলকাতায় যাচ্ছি বাসে করে। উদ্দেশ্য আমরা উভয়ে সেকেন্ড বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে অফিসার্স ক্যাডেট হিসাবে প্রায় দুই মাস পুর্বে সাত নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার তরঙ্গপুরে সিলেকশন বোর্ডের সামনে বাংলাদেশ আর্মিতে কমিশন্ড অফিসার সিলেক্ট হওয়ার পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু কোনো খবর পাচ্ছিলামনা যে আমরা সিলেক্ট হলাম কিনা? তাই আমরা উভয়ে কলকাতা যাচ্ছি ওখানে গিয়ে দিনাজপুরের এম এন এ অধ্যাপক ইউসুফ আলীর ( মুজিব নগরে প্রবাসী সরকারকে শপথ বাক্য পাঠকারী ) সাথে সাক্ষাৎ করে সঠিক সংবাদ অবহিত হওয়া। এদিকে আমাদের মনে হচ্ছিল যদি দেরী হয়ে যায় তবে আমাদের অফিসার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া সম্ভব হবেনা। এনিয়ে আনিসের চেয়ে আমি বেশী উদ্বিগ্ন ছিলাম। ফারাক্কাতে আমাদের বাস থামলো। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। আমরা বাস থেকে নামলাম। অনেককে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কি হচ্ছে? তারা জানালো আজ ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধন হবে। তারা আরো বললো আমাদের রেল মন্ত্রী হুনুমান তাইয়া বাঁধের উপর দিয়ে রেলে করে যাবেন । আমি এবং আনিস ফারাক্কা বাঁধ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। পুর্বে ফারাক্কা বাঁধের কথা শুনিনি। বাঁধ কি এবং এর প্রতিক্রিয়া ভাটির দেশে কি হয় সে হম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা সেসময় আমার ছিলোনা। আমাদের বাস কেয়েক ঘন্টা ধরে ফারাক্কাতে থেমে আছে, আমরা কলকাতা যেতে পাচ্ছি না এমন একটা বিরক্তি নিয়ে ফারাক্কা বাঁধের যা কিছু সেদিন দেখেছিলাম আজ তার কোনো কিছুই মনে নাই। যদি জানতাম ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের মরণ ফাঁদ তাহলে অন্য ভাবে ফারাক্কাকে হয়তো দেখতাম। আমি ফারাক্কা বাঁধ সম্বন্ধে কিছুই জানতামনা বলে বাঁধ নিয়ে তমন আগ্রহও আমার ছিলোনা। তবে ফারাক্কা জায়গাটা দেখতে চাপাই নবাব গঞ্জের মতো। গাছপালা কম ফাঁকা । রাস্তার ধারে বাবলা গাছের সারি মনে আছে । রেল আসলো। রেলমন্ত্রী হুনুমান তাইয়াকে দেখলাম ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে। ইস্ফিত উদর পরনে ভারতের জাতীয় পোষাক মাথায় নেহরু টুপি। দুই/ একদিনের ঘটনা ভারত ফারাক্কা বাঁধের একশত চারটি পানি নিষ্কাশনের একশতটি গেট খুলে দিয়েছে বিহারকে বন্যা মুক্ত করতে। এদিকে বাংলাদেশে জোর আলোচনা হচ্ছে বিহারের মুখ্য নিতিশ কুমার নাকি ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলেছেন ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলতে? কথা সত্য। তবে আমার ভুল ভাঙ্গলো ভারতের দি হিন্দু পত্রিকা পড়ে। এই পত্রিকা পড়ে আমার মনে হয়েছে বিহারের মুখ্য মন্ত্রী ফারাক্কা বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ তুলেছেন বিহারের আবুলদের শান্ত করতে যারা ফারাক্কা বাঁধের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ঘরবাড়ি, সহায়সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে। এটা নিতিশের রাজনৈতিক বক্তব্য । নিতিশ কুমারের ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলার আওয়াজে শুধুযে বিহারের আবুলরা শান্ত হয়েছে তানয় বাংলাদেশের অনেক আবুল আনন্দে দিগম্বর হয়ে নৃত্য করতে রাস্তায় নামলো বলে! নিতিশ কুমার ভারত সরকারের কাছে দুটি দাবী তুলেছেন :

এক। হয় ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলো।

দুই। নাহয় ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা নদিতে যে পলি বা সিল্ট জমেছে তার ম্যানেজমেন্ট করো। অর্থাৎ একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে প্রতিভাত হবে নিতিশের মূল দাবি হলো ভারত সরকারের কাছে গঙ্গার সিল্ট ম্যানেজমেন্ট করা ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলা নয়।

সিল্ট ম্যানেজমেন্ট এমন একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নদীর কিংবা ক্যানালের জমে যাওয়া পলি বা সিল্টকে পানি থেক আলাদা করে নীচে প্রবাহিত করা । তাই যদি হয় তবে ভারত গঙ্গার তাদের অংশে জমে যাওয়া পলি বা সিল্ট এক্সক্লুড করে যদি নীচে বাংলাদেশের অংশের পদ্মায় প্রবাহিত করে তবে ভারতের গঙ্গার পলি বাংলাদেশের অংশের পদ্মায় এসে জমবে। কারণ ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের চাপাই নবাব গঞ্জ থেকে মাত্র ষোল কিলোমিটারের মতো দুরত্বে অবস্হিত। ভারত ফারাক্কার স্পিলওয়ে খুলে দিলে ভারতের এই ষোল কিলোমিটারের মধ্যে স্রতের তোড় বেশী হবার ফলে গঙ্গায় ভারতের অংশে কোনো পলি বা সিল্ট জমতে পারবেনা। অন্য দিকে বাংলাদেশের অংশে ভারত থেকে আসা গঙ্গার পলি বা সিল্ট যুক্ত পানি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গপসাগরে পড়ার পুর্বে বাংলাদেশের পদ্মাতে জমা হতে থাকবে ফলে পদ্মা ভবিষ্যতে আরো নাব্যতা হারিয়ে ভারতের পলির ভাগাড়ে পরিনত হবে এবং ধীরে ধীরে পদ্মা মরানদিতে পরিনত হয়ে খরায় মরুময়/ চরময় এবং বর্ষায় ভারতের পানিতে প্রমত্তা হয়ে জনজীবনে প্রলয় ডেকে আনবে। আমরা আশা করবো বর্ষায় যেমন ভারত ফারাক্কার একশোটি গেট খুলে দিয়েছে তেমনি শীত মৌসুমেও এই একশোটি গেট ভারত ফারাক্কায় খোলা রাখবে।

লেখক : প্রাক্তন মহাপরিচালক, বিডিআর

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...